প্রকৃতিতে শরতের শান্ত ঘ্রাণ। চারদিকে মৃদু বাতাসের সঙ্গে ভিন্ন রকম প্রশান্তির প্রত্যাশা করছেন সবাই। রাজধানীতে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) পাঁচ দিনব্যাপী শরৎ মেলার আয়োজন করেছে। মেলায় মাটির তৈরি গয়না, নকশিকাঁথা ও কাঠের তৈরি শিশুদের খেলনাসহ পাওয়া যাচ্ছে কয়েক শ ধরনের কারুশিল্প পণ্য। ৪০ জন উদ্যোক্তা এসব বাহারি পণ্য নিয়ে মেলায় এসেছেন।

বিসিকের উদ্যোগে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বিসিক ভবনে আজ রোববার সকাল থেকে এই মেলা শুরু হয়েছে। ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে। এই মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত আছে। আজ সকালে বিসিক ভবনে এ মেলার উদ্বোধন করে সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো.

সাইফুল ইসলাম

কী কী পাওয়া যাচ্ছে

এবারের মেলায় পাটজাত, বাটিক, বুটিক, চামড়া, বাঁশ ও কাঠের তৈরি পণ্যের আধিক্য রয়েছে। মেলায় বাঁশের ফ্রেমের তৈরি আয়না, মগ ও ঘড়িসহ নানা ধরনের পণ্য নিয়ে মেলায় অংশ নেয় ব্যাম্বো ক্র্যাফট অ্যান্ড ফার্নিচার নামের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী আসমা বেগম বলেন, ‘বিসিক থেকে হস্তশিল্পের পণ্য তৈরি প্রশিক্ষণের পর এই ব্যবসা শুরু করি। বর্তমানে আমরা ১৫ ধরনের বাঁশের পণ্য তৈরি করি। প্রতি মাসে আমরা প্রায় পাঁচ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করি।’

এবারের মেলায় এসেছে কাঠের পণ্য তৈরির প্রতিষ্ঠান ইনভেন্ট ক্র্যাফটস। প্রতিষ্ঠানটি কাঠের কলম, চিরুনি, পলিথিন হোল্ডার, হ্যাঙ্গার, চাবির রিং ও শিশুদের খেলনাসহ নানা পণ্য নিয়ে মেলায় এসেছে। কাঠের তৈরি এসব পণ্য পাওয়া যাচ্ছে ১০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যে।

প্রান্তিক নারী উদ্যোক্তাদের উদ্যোগ

গ্রামীণ নারী উদ্যোক্তাদের পণ্য বিক্রি ও বিপণন জটিলতা নিরসনে ২০০০ সালে যাত্রা শুরু করে বেসরকারি সংগঠন গ্রাসরুট রিজিওনাল আর্টিসান মুভমেন্ট (জিআরএএম)। বর্তমানে এই সংগঠনে ৩০ হাজারের বেশি প্রান্তিক নারী উদ্যোক্তা রয়েছে। সংগঠনটির ঢাকা, জামালপুর ও সিলেটে বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। মেলায় তাদের স্টলে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন বাটিক, বুটিক ও সুতির থ্রি–পিস। আরও পাওয়া যাচ্ছে কাঠ ও কাপড়ের তৈরি পুতুল। এ ছাড়া শ্রীমঙ্গলের নারী উদ্যোক্তাদের চা, বাঁশের তৈরি টিস্যু বক্সসহ নানা ধরনের পণ্য।

মেলায় অংশ নেওয়া সংগঠনের সাবেক সহসভাপতি ও বনশ্রী বিক্রয় কেন্দ্রের শোরুম ইনচার্জ শাহনাজ বেগম বলেন, ‘বর্তমানে এই সংগঠনের আওতায় ৫৯ জেলার নারী উদ্যোক্তারা আছেন। আমাদের মূল কাজ হলো, নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসার জন্য সহজে ব্যাংকঋণ পেতে সহায়তা করা। পাশাপাশি এসএমই ফাউন্ডেশন ও বিসিকের প্রশিক্ষণে প্রান্তিক নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ বাড়ানো।

মাটির গয়না ও চামড়াজাত পণ্য

মাটির তৈরি গয়না ও টেরাকোটা নিয়ে মেলায় এসেছে গৃহসজ্জা নামের প্রতিষ্ঠান। শহিদুল আলম নামের একজন মৃৎশিল্পী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের মৃৎশিল্প বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষে নিজের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। শহিদুল আলম বলেন, ‘আমি এখন পর্যন্ত প্রায় তিন কোটি টাকার মাটির গয়না তৈরি করেছি। বর্তমানে পোড়ামাটির টেরাকোটা দিয়ে গয়নার পাশাপাশি টেরাকোটা দিয়ে পটারি ও ইন্টেরিয়র ডিজাইনসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরি করছি। এ ছাড়া আমার তৈরি গয়না বিভিন্ন পরিচিত বন্ধু ও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে পাওয়া যাচ্ছে।’

মেলায় চামড়াজাত পণ্য নিয়ে প্রদর্শনী ও বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছেন এক দম্পতি। ২০১২ সালে বেসরকারি একটি ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে ফাজিতাস নামে একটি রেস্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করেন শাহানা ইয়াসমিন। বর্তমানে রেস্টুরেন্টের পাশাপাশি বিএক্সএল ফুটওয়্যার নামে চামড়াজাত পণ্য তৈরির প্রতিষ্ঠান শুরু করেছেন। মেলায় ছেলেদের জুতা, বেল্ট ও মানিব্যাগ নিয়ে অংশগ্রহণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। শাহানা ইয়াসমিন বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যবসার জন্য খুব ভালো জায়গা। আমাদের এক শর বেশি নকশার পণ্য রয়েছে। ভবিষ্যতে আমাদের তৈরি পণ্য বিদেশি রপ্তানির পরিকল্পনা রয়েছে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উদ য ক ত দ র ম ল য় এস ছ র জন য স গঠন ব যবস ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

৯ ব্রোকার হাউজকে ফিক্স সার্টিফিকেশন দিল ডিএসই

নয় ব্রোকারেজ হাউজকে ফিক্স সার্টিফিকেশন ও একটি ব্রোকারেজ হাউজকে রিসার্টিফিকেশন প্রদান করেছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। এপিআই সংযোগের মাধ্যমে নিজস্ব ওএমএস চালুকরণের লক্ষ্যে ডিএসই প্রতিষ্ঠানুগলোকে ফিক্স সার্টিফিকেশন প্রদান করে।

বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) ডিএসই’র বোর্ডরুমে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ফিক্স সার্টিফিকেশন প্রদান করেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান পরিচালনা কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আসাদুর রহমান৷

আরো পড়ুন:

ডিএসইর চিঠির জবাব দেয়নি খুলনা প্রিন্টিং

ইস্টার্ন কেবলসের প্রথম প্রান্তিকে লোকসান কমেছে ৫৬.২৫ শতাংশ

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডিএসই’র প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা ড. মো. আসিফুর রহমান, আইসিটি ডিভিশনের জেনারেল ম্যানেজার মো. তারিকুল ইসলাম, উপ-মহাব্যবস্থাপক হাসানুল করিমসহ ডিএসইর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

ডিএসইর প্রকাশনা ও জনসংযোগ বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. শফিকুর রহমান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।

ব্রোকারেজ হাউজগুলো পক্ষে সার্টিফিকেশন গ্রহণ করেন বাংলাদেশ ফাইন্যান্স সিকিউরিটিজ লিমিটেডের এমডি এবং সিইও খন্দকার মাহমুদুল হাসান; ফিনট্রা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের এমডি অজিত কুমার বণিক; আইডিএলসি সিকিউরিটিজ লিমিটেডের এমডি এ. এইচ. এম. নাজমুল হাসান; আইআইডিএফসি সিকিউরিটিজ লিমিটেডের সিইও মোঃ নাজমুল হাসান চৌধুরী; লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ পিএলসির সিইও খন্দকার সাফাত রেজা; এমটিবি সিকিউরিটিজ লিমিটেডের েসিইও মোঃ নজরুল ইসলাম মজুমদার; এসএআর সিকিউরিটিজ লিমিটেডের পরিচালক শরীফ তাশরুবা রহমান; সাউথ এশিয়া সিকিউরিটিজ লিমিটেডের সিইও মোঃ আলা উদ্দিন পাটোয়ারী এবং ওয়াইফাং সিকিউরিটিজ লিমিটেডের সিইও মোঃ মাসুদুজ্জামান। এর মধ্যে লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ পিএলসির রিসার্টিফিকেশন দেওয়া হয়েছে।

ফিক্স সার্টিফিকেশন প্রদান অনুষ্ঠানে ডিএসই'র প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আসাদুর রহমান বলেন, ‘‘পুঁজিবাজারের ডিজিটাল রূপান্তরের অংশ হিসেবে ডিএসই কাজ করছে। নিয়ন্ত্রক মান বজায় রেখে ডিএসইকে গ্রাহক–কেন্দ্রিক সেবাধর্মী সংস্থায় রূপ দেওয়াই যার লক্ষ্য। স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়াতে ইতিমধ্যে বিজিএমইএ, সিরামিক ও এগ্রো–কেমিক্যালসহ বিভিন্ন শিল্প খাতের সঙ্গে বৈঠক করেছে। ডিএসই আশা করছে, ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে ওয়েবসাইটের আধুনিক ল্যান্ডিং পেজ, ট্রেকহোল্ডারদের অনলাইন ডকুমেন্ট সাবমিশন ব্যবস্থা এবং স্টেকহোল্ডার–ফিডব্যাক ভিত্তিক কমপ্লায়েন্স ও ডেটা–প্রবাহ উন্নয়নসহ নতুন ডিজিটাল সেবা উদ্যোগ উন্মোচিত হবে।’’ 

ডিএসইর প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা ড. আসিফুর রহমান বলেন, ‘‘স্টক এক্সচেঞ্জের প্রযুক্তি ব্যাংকিং থেকে ভিন্ন—এখানে এক মুহূর্তের সার্ভিসও পুরো বাজারে তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই আমাদের সবসময় সতর্ক, মনোযোগী এবং স্ট্যান্ডার্ড-কমপ্লায়েন্ট থাকতে হয়। সাম্প্রতিক সেন্ট্রালাইজড সিস্টেম ইন্টিগ্রেশনের মাধ্যমে আমাদের প্রযুক্তির অবস্থান এখন গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ডের খুব কাছাকাছি, কিছু ক্ষেত্রে আরও এগিয়েও। ওএমএস এপ্লিকেশনে স্থানীয় টিমকে সুযোগ দেওয়া কেবল প্রযুক্তিগত অগ্রগতি নয়—এটি দেশের জন্য একটি গর্বের অর্জন।’’ 

২০২০ সাল থেকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এপিআই (অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম ইন্টারফেস) ভিত্তিক বিএইচওএমএস চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করে। এরই প্রেক্ষিতে ৭২টি ব্রোকারেজ হাউজ নাসডাক ম্যাচিং ইঞ্জিনে এপিআই সংযোগ নিয়ে নিজস্ব অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে লেনদেন করার জন্য ডিএসইতে আবেদন করেন। আজকের ৮টিসহ মোট ৪৭টি ব্রোকার হাউজকে ফিক্স সার্টিফিকেশন প্রদান করা হয়েছে৷ এর মধ্যে ৩৫টি ব্রোকার হাউজ ফিক্স সার্টিফিকেশন পাওয়ার পর তারা এপিআই সংযোগের মাধ্যমে নিজস্ব ওএমএস চালু করেছে।

ঢাকা/এনটি/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ