রাজধানীতে বিসিকের শরৎ মেলা চলছে; মাটির গয়না, কাঠের খেলনা, নকশিকাঁথা পাওয়া যাচ্ছে
Published: 12th, October 2025 GMT
প্রকৃতিতে শরতের শান্ত ঘ্রাণ। চারদিকে মৃদু বাতাসের সঙ্গে ভিন্ন রকম প্রশান্তির প্রত্যাশা করছেন সবাই। রাজধানীতে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) পাঁচ দিনব্যাপী শরৎ মেলার আয়োজন করেছে। মেলায় মাটির তৈরি গয়না, নকশিকাঁথা ও কাঠের তৈরি শিশুদের খেলনাসহ পাওয়া যাচ্ছে কয়েক শ ধরনের কারুশিল্প পণ্য। ৪০ জন উদ্যোক্তা এসব বাহারি পণ্য নিয়ে মেলায় এসেছেন।
বিসিকের উদ্যোগে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বিসিক ভবনে আজ রোববার সকাল থেকে এই মেলা শুরু হয়েছে। ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে। এই মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত আছে। আজ সকালে বিসিক ভবনে এ মেলার উদ্বোধন করে সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো.
কী কী পাওয়া যাচ্ছে
এবারের মেলায় পাটজাত, বাটিক, বুটিক, চামড়া, বাঁশ ও কাঠের তৈরি পণ্যের আধিক্য রয়েছে। মেলায় বাঁশের ফ্রেমের তৈরি আয়না, মগ ও ঘড়িসহ নানা ধরনের পণ্য নিয়ে মেলায় অংশ নেয় ব্যাম্বো ক্র্যাফট অ্যান্ড ফার্নিচার নামের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী আসমা বেগম বলেন, ‘বিসিক থেকে হস্তশিল্পের পণ্য তৈরি প্রশিক্ষণের পর এই ব্যবসা শুরু করি। বর্তমানে আমরা ১৫ ধরনের বাঁশের পণ্য তৈরি করি। প্রতি মাসে আমরা প্রায় পাঁচ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করি।’
এবারের মেলায় এসেছে কাঠের পণ্য তৈরির প্রতিষ্ঠান ইনভেন্ট ক্র্যাফটস। প্রতিষ্ঠানটি কাঠের কলম, চিরুনি, পলিথিন হোল্ডার, হ্যাঙ্গার, চাবির রিং ও শিশুদের খেলনাসহ নানা পণ্য নিয়ে মেলায় এসেছে। কাঠের তৈরি এসব পণ্য পাওয়া যাচ্ছে ১০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যে।
প্রান্তিক নারী উদ্যোক্তাদের উদ্যোগ
গ্রামীণ নারী উদ্যোক্তাদের পণ্য বিক্রি ও বিপণন জটিলতা নিরসনে ২০০০ সালে যাত্রা শুরু করে বেসরকারি সংগঠন গ্রাসরুট রিজিওনাল আর্টিসান মুভমেন্ট (জিআরএএম)। বর্তমানে এই সংগঠনে ৩০ হাজারের বেশি প্রান্তিক নারী উদ্যোক্তা রয়েছে। সংগঠনটির ঢাকা, জামালপুর ও সিলেটে বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। মেলায় তাদের স্টলে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন বাটিক, বুটিক ও সুতির থ্রি–পিস। আরও পাওয়া যাচ্ছে কাঠ ও কাপড়ের তৈরি পুতুল। এ ছাড়া শ্রীমঙ্গলের নারী উদ্যোক্তাদের চা, বাঁশের তৈরি টিস্যু বক্সসহ নানা ধরনের পণ্য।
মেলায় অংশ নেওয়া সংগঠনের সাবেক সহসভাপতি ও বনশ্রী বিক্রয় কেন্দ্রের শোরুম ইনচার্জ শাহনাজ বেগম বলেন, ‘বর্তমানে এই সংগঠনের আওতায় ৫৯ জেলার নারী উদ্যোক্তারা আছেন। আমাদের মূল কাজ হলো, নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসার জন্য সহজে ব্যাংকঋণ পেতে সহায়তা করা। পাশাপাশি এসএমই ফাউন্ডেশন ও বিসিকের প্রশিক্ষণে প্রান্তিক নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ বাড়ানো।
মাটির গয়না ও চামড়াজাত পণ্য
মাটির তৈরি গয়না ও টেরাকোটা নিয়ে মেলায় এসেছে গৃহসজ্জা নামের প্রতিষ্ঠান। শহিদুল আলম নামের একজন মৃৎশিল্পী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের মৃৎশিল্প বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষে নিজের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। শহিদুল আলম বলেন, ‘আমি এখন পর্যন্ত প্রায় তিন কোটি টাকার মাটির গয়না তৈরি করেছি। বর্তমানে পোড়ামাটির টেরাকোটা দিয়ে গয়নার পাশাপাশি টেরাকোটা দিয়ে পটারি ও ইন্টেরিয়র ডিজাইনসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরি করছি। এ ছাড়া আমার তৈরি গয়না বিভিন্ন পরিচিত বন্ধু ও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে পাওয়া যাচ্ছে।’
মেলায় চামড়াজাত পণ্য নিয়ে প্রদর্শনী ও বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছেন এক দম্পতি। ২০১২ সালে বেসরকারি একটি ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে ফাজিতাস নামে একটি রেস্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করেন শাহানা ইয়াসমিন। বর্তমানে রেস্টুরেন্টের পাশাপাশি বিএক্সএল ফুটওয়্যার নামে চামড়াজাত পণ্য তৈরির প্রতিষ্ঠান শুরু করেছেন। মেলায় ছেলেদের জুতা, বেল্ট ও মানিব্যাগ নিয়ে অংশগ্রহণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। শাহানা ইয়াসমিন বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যবসার জন্য খুব ভালো জায়গা। আমাদের এক শর বেশি নকশার পণ্য রয়েছে। ভবিষ্যতে আমাদের তৈরি পণ্য বিদেশি রপ্তানির পরিকল্পনা রয়েছে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উদ য ক ত দ র ম ল য় এস ছ র জন য স গঠন ব যবস ধরন র
এছাড়াও পড়ুন:
সম্পদ ও সন্তান লাভের জন্য প্রার্থনা
জীবনের এমন অনেক মুহূর্ত আসে যখন মনে হয়, সবকিছু যেন থমকে দাঁড়িয়েছে। আয়ের উৎস শুকিয়ে যাওয়া, পরিবারের উদ্বেগ বাড়তে থাকা বা জীবনে বরকতের অভাব—এসব চাপে মানুষের মন ভারী হয়ে ওঠে। ইসলামে এমন সময়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
এমন একটি দোয়া মহানবী মুহাম্মদ (সা.) তাঁর সেবক আনাস ইবনে মালিক (রা.)-এর জন্য করেছিলেন। এই দোয়া শুধু ধন-সম্পদ ও সন্তানের বৃদ্ধি চায় না, বরং সবকিছুতে আল্লাহর বরকত কামনা করে।
দোয়ার উৎস ও প্রেক্ষাপটহাদিসে বর্ণিত, আনাস (রা.)-এর মা উম্মে সুলাইম নবীজিকে বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনার এই সেবক আনাসের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করুন।’ তখন নবীজি (সা.) দোয়া করেন: ‘আল্লাহুম্মা আকসির মালাহু ওয়া ওয়ালাদাহু, ওয়া বারিক লাহু ফীমা আ'তাইতাহু।’
এই দোয়ার ফলাফল অবিশ্বাস্য: আনাস (রা.) ১০৩ বছর বেঁচে ছিলেন এবং পৌত্রাদি মিলিয়ে তিনি ১২০-এরও বেশি সন্তান লাভ করেন। তাঁর জীবন ছিল বরকতের জীবন্ত উদাহরণ।আরও পড়ুনতাকওয়া মুমিনের সবচেয়ে বড় সম্পদ৩০ জুন ২০২৫অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তার ধন-সম্পদ ও সন্তান বাড়িয়ে দাও এবং তুমি যা দান করেছ, তাতে তার জন্য বরকত দান করো। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৩৪৪)
আনাস (রা.) তখন মাত্র দশ বছরের একটি ছেলে, যিনি নবী (সা.)-এর সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। এই দোয়ার ফলাফল অবিশ্বাস্য: আনাস (রা.) ১০৩ বছর বেঁচে ছিলেন এবং তাঁর তিনি পৌত্রাদি মিলিয়ে ১২০-এরও বেশি সন্তান লাভ করেন (সহিহ মুসলিম থেকে বর্ণিত)। তাঁর জীবন ছিল বরকতের জীবন্ত উদাহরণ।
দোয়ার উদ্দেশ্য শুধু ধন নয়, বরকতএই দোয়ার সৌন্দর্য এতে যে এটি ধন-সম্পদের পাশাপাশি বরকতের জন্য প্রার্থনা করে। ইসলামে ধনকে শুধু সঞ্চয় নয়, বরং আল্লাহর নেয়ামত হিসেবে দেখা হয়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘ধন বেড়ে গেলেও যদি বরকত না থাকে, তাহলে তা ধুলোর মতো উড়ে যায়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৪৩৯)
আরও পড়ুনসন্তান প্রতিপালনে ধর্মের দাবি১৯ মে ২০২৫ধন বেড়ে গেলেও যদি বরকত না থাকে, তাহলে তা ধুলোর মতো উড়ে যায়।’সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৪৩৯আধুনিক জীবনে এর প্রাসঙ্গিকতা আরও বেশি। অর্থনৈতিক সংকট, চাকরির অনিশ্চয়তা বা পরিবারের চাপে অনেকে কষ্ট পান। কিন্তু এই দোয়া স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সত্যিকারের সমৃদ্ধি আল্লাহর রহমতে। সন্তানের ক্ষেত্রেও তাই—সন্তান লাভের সঙ্গে তাদের সুস্থতা, শান্তি ও ইমানের বরকত চাওয়া জরুরি।
আজকের দিনে, যখন পরিবারের আকার ছোট হচ্ছে এবং অর্থের চাপ বাড়ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ধর্মীয় অনুশীলন (যেমন দোয়া) মানসিক চাপ কমায় এবং জীবনে ইতিবাচকতা বাড়ায়। ইসলামি ঐতিহ্যে এই দোয়া শুধু ব্যক্তিগত নয়, পরিবারের জন্যও ব্যবহার করা যায়।
দোয়ার সঙ্গে সদকা দেওয়া, কোরআন তিলাওয়াত এবং হালাল উপার্জনের চেষ্টা করুন—এগুলো বরকতের দরজা খোলে।
আরও পড়ুনসন্তান প্রতিপালনে মহানবী (সা.)-এর ১০টি নির্দেশনা২০ আগস্ট ২০২৫