রাকসু: সাইবার বুলিং মুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়তে চান এষা
Published: 12th, October 2025 GMT
দীর্ঘ ৩৫ বছর পর হতে যাওয়া রাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেল থেকে এজিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জাহিন বিশ্বাস এষা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের এই শিক্ষার্থী রাবি শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
এই তরুণী বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে শিক্ষার্থীবান্ধব আধুনিক ক্যাম্পাস গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেছেন। তার প্রচারে ভিন্নধর্মী স্লোগান- ‘এজিএসে বদলাবে নারী নেতৃত্বের ধাঁচ, রাবিয়ানদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, ব্যালট নম্বর পাঁচ’, যা মনোযোগ আকর্ষণ করেছে অনেকেরই।
আরো পড়ুন:
রাকসু: চলছে শেষ মুহূর্তের প্রচার, বাদ যাচ্ছে না মেস
রাকসু নির্বাচন: ১০ দফা ইশতেহার দিল ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম
রাইজিংবিডিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও শিক্ষার্থীদের প্রতি তার অঙ্গীকার নিয়ে কথা বলেছেন এষা।
রাইজিংবিডি: এজিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সিদ্ধান্তটি কীভাবে এল?
এষা: এজিএস পদে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তটি আমার কাছে শুধু একটি প্রার্পিতা নয়, এটি নারী নেতৃত্বের পরিসর বাড়ানোর একটি পদক্ষেপ। আমি যখন দেখি নারী সম্পাদক ও সহ-সম্পাদক পদে অনেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে, তখন মনে হলো- ভিপি, জিএস, এজিএসের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোয়ও আমাদের নারী শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
আমরা একসঙ্গে আন্দোলন করেছি, পড়াশোনা করছি- তাহলে নেতৃত্বের দায়িত্বও আমরা একসঙ্গে নিতে পারব। আমি চাই সামনের সারি থেকে কাজ করে ক্যাম্পাসের ইতিবাচক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে। আমার বিশ্বাস, বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে শিক্ষার্থীবান্ধব, আধুনিক ক্যাম্পাস গড়ে তোলা সম্ভব।
রাইজিংবিডি: ৩৫ বছর পর রাকসু নির্বাচনের প্রচার বেশ রঙিন ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। নির্বাচনী প্রচারের অভিজ্ঞতা কেমন?
এষা: সত্যি বলতে, অনেক দিন পর নির্বাচন হচ্ছে বলে সবার মধ্যে প্রবল উৎসাহ-উদ্দীপনা কাজ করছে। শিক্ষার্থীরা নিজেদের অধিকার নিয়ে কথা বলছে, দাবি জানাচ্ছে, আলোচনা করছে। আমিও আমার ভাবনা ও দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে যাচ্ছি এবং তারা সাদরে গ্রহণ করছে। আমি চাই আমার প্রচার যেন শুধু ভোটের আহ্বান নয়, বরং একটি বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার উদাহরণ হয়। তাই প্রচারে এমন কিছু করার চেষ্টা করছি, যা ইউনিক (স্বতন্ত্র) হয়।
শিক্ষার্থীরা যেন চিন্তা করতে শেখে, ক্যাম্পাস মূলত বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার জায়গা। আমি ভালো সাড়া পাচ্ছি এবং বিশ্বাস করি, ১৬ অক্টোবর আমরা একটি অংশগ্রহণমূলক ও প্রাণবন্ত নির্বাচন উপভোগ করব। জীবনের প্রথম ভোটের আমেজ, রাজনৈতিক সচেতনতা ও আত্ম-উপলব্ধি-সবকিছুই এ নির্বাচন ঘিরে তৈরি হবে।
রাইজিংবিডি: নারী ভোট টানতে কী ধরনের কৌশল অবলম্বন করছেন?
এষা: আমি মনে করি, নারী শিক্ষার্থী হিসেবে নারী ভোটারদের কাছে ভোট চাওয়ার জন্য আলাদা করে কিছু বলার প্রয়োজন নেই। কারণ আমরা সবাই একই সমস্যার মুখোমুখি হই, একই বাস্তবতায় বাস করি। একজন নারী হিসেবে আমি বুঝি, ক্যাম্পাসে নারীরা কোথায় সমস্যায় পড়ে, কোথায় তাদের আরো সহযোগিতা প্রয়োজন।
আমি পুরুষ প্রার্থীদের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, নারীদের সমস্যা একজন নারী হয়েই সবচেয়ে ভালোভাবে বোঝা যায়। আমি শুধু নারীদের বলব, আমাদের অগ্রযাত্রার পথ যেন আমরা নিজেরাই বন্ধ না করি। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে নেতৃত্বে আসতে হবে। তবেই গড়ে উঠবে সমতার ও নিরাপদ ক্যাম্পাস।
রাইজিংবিডি: নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পেছনে মূল প্রেরণা কী ছিল?
এষা: রাকসু নির্বাচন আমাদের সবার প্রাণের দাবি। ছাত্র সংসদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এটি কেবল একটি রাজনৈতিক সংগঠন নয়, বরং একটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্ল্যাটফর্ম। এখানেই শিক্ষার্থীদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ও অধিকার আদায়ের সুযোগ তৈরি হয়।
জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা অধিকার সচেতন ও রাজনৈতিকভাবে পরিপক্ক হয়েছি। আমি শুধু নিজের জন্য নয়, আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য কাজ করতে চাই। চাই, সুন্দর, সচেতন ও আধুনিক ক্যাম্পাস বিনির্মাণে প্রত্যক্ষভাবে ভূমিকা রাখতে। আমার চিন্তাভাবনা, আমার স্বপ্নগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যম হিসেবেই রাকসু নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি।
রাইজিংবিডি: নির্বাচিত হলে শিক্ষার্থীদের জন্য কোন বিষয়গুলো অগ্রাধিকার দেবেন?
এষা: প্রথমেই বলব নিরাপত্তা- ভয়ভীতি মুক্ত ও সাইবার বুলিং মুক্ত ক্যাম্পাস গঠনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেব। শিক্ষার্থীরা যেন মুক্তভাবে মত প্রকাশ করতে পারে, সেটি নিশ্চিত করব।
দ্বিতীয়ত, বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা- আমাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো যেন নিরবচ্ছিন্নভাবে কার্যক্রম চালাতে পারে, সে জন্য তাদের সহযোগিতা করব। টিএসসিসি ও কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনের ভাড়া ভারসাম্যের মধ্যে আনতে কাজ করব, যাতে শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে আর্থিক বাধা না থাকে।
তৃতীয়ত, দক্ষতা উন্নয়ন ও আবাসন সমস্যা- চাকরির বাজারে টিকে থাকতে শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে তুলতে নিয়মিত জব ফেয়ার ও ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করব। পাশাপাশি ক্যাম্পাসে আবাসন সংকট দূর করাকেও অগ্রাধিকার দেব। তবে কাজ করতে গিয়ে যদি দেখি, অন্য কোনো বিষয় আগে সমাধান করা জরুরি, সেটিকেও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করব।
রাইজিংবিডি: শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আপনার বার্তা কী?
এষা: শিক্ষার্থীদের ভোটের ওপরই নির্ভর করছে আগামী ১ বছরে রাকসুর নেতৃত্ব এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা। তাই শিক্ষার্থীদের বলব- ব্যক্তি নয়, যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রার্থী বেছে নিন। যিনি শিক্ষার্থীদের সত্যিকারের কণ্ঠস্বর হয়ে কাজ করতে পারবেন, তাকেই ভোট দিন।
আমাদের প্রত্যেকের ভোট অত্যন্ত মূল্যবান। আশা করি, সবাই নির্বাচনে অংশ নেবেন এবং যোগ্য প্রার্থীকেই নিজেদের মূল্যবান ভোট দিয়ে শিক্ষার্থীবান্ধব, নিরাপদ ও আধুনিক ক্যাম্পাস গঠনে ভূমিকা রাখবেন।
রাইজিংবিডি: আপনাকে ধন্যবাদ।
এষা: রাইজিংবিডিকেও ধন্যবাদ।
ঢাকা/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত রদল ব দ ধ ব ত ত ক চর চ র র জন য ক জ কর আম দ র সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
সম্পদ ও সন্তান লাভের জন্য প্রার্থনা
জীবনের এমন অনেক মুহূর্ত আসে যখন মনে হয়, সবকিছু যেন থমকে দাঁড়িয়েছে। আয়ের উৎস শুকিয়ে যাওয়া, পরিবারের উদ্বেগ বাড়তে থাকা বা জীবনে বরকতের অভাব—এসব চাপে মানুষের মন ভারী হয়ে ওঠে। ইসলামে এমন সময়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
এমন একটি দোয়া মহানবী মুহাম্মদ (সা.) তাঁর সেবক আনাস ইবনে মালিক (রা.)-এর জন্য করেছিলেন। এই দোয়া শুধু ধন-সম্পদ ও সন্তানের বৃদ্ধি চায় না, বরং সবকিছুতে আল্লাহর বরকত কামনা করে।
দোয়ার উৎস ও প্রেক্ষাপটহাদিসে বর্ণিত, আনাস (রা.)-এর মা উম্মে সুলাইম নবীজিকে বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনার এই সেবক আনাসের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করুন।’ তখন নবীজি (সা.) দোয়া করেন: ‘আল্লাহুম্মা আকসির মালাহু ওয়া ওয়ালাদাহু, ওয়া বারিক লাহু ফীমা আ'তাইতাহু।’
এই দোয়ার ফলাফল অবিশ্বাস্য: আনাস (রা.) ১০৩ বছর বেঁচে ছিলেন এবং পৌত্রাদি মিলিয়ে তিনি ১২০-এরও বেশি সন্তান লাভ করেন। তাঁর জীবন ছিল বরকতের জীবন্ত উদাহরণ।আরও পড়ুনতাকওয়া মুমিনের সবচেয়ে বড় সম্পদ৩০ জুন ২০২৫অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তার ধন-সম্পদ ও সন্তান বাড়িয়ে দাও এবং তুমি যা দান করেছ, তাতে তার জন্য বরকত দান করো। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৩৪৪)
আনাস (রা.) তখন মাত্র দশ বছরের একটি ছেলে, যিনি নবী (সা.)-এর সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। এই দোয়ার ফলাফল অবিশ্বাস্য: আনাস (রা.) ১০৩ বছর বেঁচে ছিলেন এবং তাঁর তিনি পৌত্রাদি মিলিয়ে ১২০-এরও বেশি সন্তান লাভ করেন (সহিহ মুসলিম থেকে বর্ণিত)। তাঁর জীবন ছিল বরকতের জীবন্ত উদাহরণ।
দোয়ার উদ্দেশ্য শুধু ধন নয়, বরকতএই দোয়ার সৌন্দর্য এতে যে এটি ধন-সম্পদের পাশাপাশি বরকতের জন্য প্রার্থনা করে। ইসলামে ধনকে শুধু সঞ্চয় নয়, বরং আল্লাহর নেয়ামত হিসেবে দেখা হয়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘ধন বেড়ে গেলেও যদি বরকত না থাকে, তাহলে তা ধুলোর মতো উড়ে যায়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৪৩৯)
আরও পড়ুনসন্তান প্রতিপালনে ধর্মের দাবি১৯ মে ২০২৫ধন বেড়ে গেলেও যদি বরকত না থাকে, তাহলে তা ধুলোর মতো উড়ে যায়।’সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৪৩৯আধুনিক জীবনে এর প্রাসঙ্গিকতা আরও বেশি। অর্থনৈতিক সংকট, চাকরির অনিশ্চয়তা বা পরিবারের চাপে অনেকে কষ্ট পান। কিন্তু এই দোয়া স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সত্যিকারের সমৃদ্ধি আল্লাহর রহমতে। সন্তানের ক্ষেত্রেও তাই—সন্তান লাভের সঙ্গে তাদের সুস্থতা, শান্তি ও ইমানের বরকত চাওয়া জরুরি।
আজকের দিনে, যখন পরিবারের আকার ছোট হচ্ছে এবং অর্থের চাপ বাড়ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ধর্মীয় অনুশীলন (যেমন দোয়া) মানসিক চাপ কমায় এবং জীবনে ইতিবাচকতা বাড়ায়। ইসলামি ঐতিহ্যে এই দোয়া শুধু ব্যক্তিগত নয়, পরিবারের জন্যও ব্যবহার করা যায়।
দোয়ার সঙ্গে সদকা দেওয়া, কোরআন তিলাওয়াত এবং হালাল উপার্জনের চেষ্টা করুন—এগুলো বরকতের দরজা খোলে।
আরও পড়ুনসন্তান প্রতিপালনে মহানবী (সা.)-এর ১০টি নির্দেশনা২০ আগস্ট ২০২৫