সবজি-মাছের চড়া দাম, বাজারে নাভিশ্বাস অবস্থা
Published: 17th, October 2025 GMT
রাজধানীর বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে বাড়তে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। টমেটো, গাজর, শিম, কাঁচা মরিচসহ প্রায় সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে হু হু করে।
পাশাপাশি মাছ ও ডিমের দামেও দেখা দিয়েছে উল্লেখযোগ্য ঊর্ধ্বগতি। এতে করে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষ।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) যাত্রাবাড়ী ও শনির আখড়া বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শীতকালীন সবজির সরবরাহ শুরু হলেও দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। বরং কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে কিছু পণ্যের।
যাত্রাবাড়ী বাজারে কেনাকাটা করতে আসা রাহিস নামের এক ক্রেতা বলেন, “শীতের সবজি বাজারে এসেছে, ভাবছিলাম দাম কমবে। কিন্তু বাস্তবতা উল্টো। গাজর আর শিম কিনতে গিয়ে মনে হলো যেন মাংস কিনছি।”
যাত্রাবাড়ী বাজারের সবজি বিক্রেতা কলিমুল্লার দাবি, টানা বৃষ্টিতে ফসল নষ্ট হওয়ায় বাজারে সরবরাহ কম, ফলে পাইকারি পর্যায়েই দামে আগুন। বাজারে টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা, গাজর ১৬০ টাকা, শিম ২২০ টাকা, পেঁয়াজ ৮০ টাকা, কাঁচা মরিচ ২০০ টাকা এবং আলু ২৫ টাকা।
শনিরআখড়া বাজারের সবজি বিক্রেতা আনিস বলেন, “যেভাবে কিনছি, সেভাবে বিক্রি করতে গেলে লোকসান হচ্ছে। আমরাও দাম বাড়িয়ে দিচ্ছি বাধ্য হয়ে।”
অন্যদিকে, মাছের বাজারেও ক্রেতাদের হাঁসফাঁস অবস্থা। সাময়িকভাবে ইলিশ আহরণ বন্ধ থাকায় দেশি চাষের মাছের প্রতি চাহিদা বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে দামেও। বোয়াল কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা, কোরাল ৮৫০–৯০০ টাকা, রুই ৩০০–৪৫০ টাকা এবং ট্যাংরা ৬০০ টাকা।
শনিরআখড়া বাজারের মাছ বিক্রেতা শফিকুল বলেন, “ইলিশ না থাকায় এখন সবাই দেশি মাছ নিচ্ছে। চাহিদা বাড়লে দাম তো বাড়বেই।”
লাল ডিম ডজনপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়, সাদা ডিম ১৩০ টাকায়। যদিও সরকার সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করেছে, বাজারে এখনো অনেক দোকানে পুরোনো দরে তেল বিক্রি হচ্ছে। এক লিটারের বোতল ১৮৯ টাকা, পাঁচ লিটারের বোতল ৯২২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে অনেক দোকানে।
মুরগির দামে বড় কোনো পরিবর্তন না থাকলেও, অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এই স্থিতিশীলতাও ক্রেতাদের জন্য স্বস্তির কারণ হচ্ছে না। ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৮০–৩০০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৫৫০–৬০০ টাকায়।
একাধিক বিক্রেতা জানিয়েছেন, পরিবহন ব্যয় ও সরবরাহ ঘাটতির কারণে দাম বাড়ছে। তবে পরের সপ্তাহে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কিছু পণ্যের দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
ঢাকা/এএএম/এস
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বিশ্ব অর্থনীতিতে ট্রাম্পের শুল্কের প্রভাব এখনো তেমন একটা পড়েনি: আইএমএফ
মার্কিন শুল্কবৃদ্ধি নিয়ে বিশ্বজুড়ে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল, বাস্তবে তার প্রভাব এখন পর্যন্ত অনেকটাই সীমিত। তবু তার কোনো প্রভাব পড়েনি—এমনটা ভাবার সময় আসেনি। তেমনটা ভাবা হলে বিষয়টি ভুল হবে—এমন সতর্কবার্তা দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক’ শীর্ষক প্রতিবেদনে আইএমএফ ২০২৫ সালের জন্য বৈশ্বিক ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কিছুটা বাড়িছে। সংস্থাটি বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কবৃদ্ধির মাত্রা প্রত্যাশার চেয়ে কম হওয়ায় কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।
ওয়াশিংটনের হিসাবমতে, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যে বাণিজ্যচুক্তিগুলো করেছে, সেগুলোর ফলে শুল্কহার এপ্রিলের চেয়ে কম—বেশির ভাগ দেশের জন্য তা ১০ থেকে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে।
আইএমএফের নতুন পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ২ শতাংশ। জুলাই মাসের পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, চলতি বছর প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশের চেয়ে কিছুটা বেশি হলেও মহামারির আগের গড় প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৭ শতাংশের তুলনায় কমই হবে। সংস্থাটির ধারণা, চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ২ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে ২ দশমিক ১ শতাংশ।
আইএমএফের প্রধান অর্থনীতিবিদ পিয়ের-অলিভিয়ার গুরিঞ্চাস ব্লগ পোস্টে লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্র একাধিক দেশের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি করেছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রেই তারা ছাড় দিয়েছে। অন্যদিকে বেশির ভাগ দেশ পাল্টা শুল্ক আরোপ থেকে বিরত আছে। তাঁর ভাষায়, ব্যবসায়ীরাও সময় নষ্ট করেননি—শুল্কবৃদ্ধির আগেই আমদানি বাড়িয়েছেন, সরবরাহব্যবস্থা নতুন করে সাজিয়েছেন।
গুরিঞ্চাস সতর্ক করেছেন, বাণিজ্য–উত্তেজনা এখনো প্রশমিত হয়নি। এসব চুক্তি কতটা টিকবে, তারও নিশ্চয়তা নেই। সেই সঙ্গে মার্কিন আমদানিকারকেরা শেষ পর্যন্ত বাড়তি খরচের বোঝা ভোক্তার ঘাড়েই চাপিয়ে দিতে পারেন। তাঁর মন্তব্য, অতীতের অভিজ্ঞতা বলে, পুরো চিত্র ফুটে উঠতে সময় লাগে।
চলতি বছর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র যেন এক বিশৃঙ্খল বাণিজ্যযুদ্ধের ক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে আছে। কখনো শুল্ক বাড়ানো, কখনো তা স্থগিত রাখা, আবার কখনো হঠাৎ নতুন চুক্তি—এই ওঠানামার মধ্যে বিশ্বজুড়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে।
এর মধ্যে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য–সম্পর্ক আবারও টান টান হয়ে উঠেছে। বিরল খনিজ রপ্তানি নিয়ে বিবাদের জেরে ট্রাম্প চীনের ওপর অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। ১ নভেম্বর থেকে তা কার্যকর হবে—এমন দিনক্ষণও ঠিক করে রেখেছেন তিনি। বর্তমানে চীনের পণ্যে শুল্ক আছে ৩০ শতাংশ। নতুন করে ১০০ শতাংশ শুল্ক যোগ হলে মোট শুল্কভার দাঁড়াবে ১৩০ শতাংশ।
গুরিঞ্চাস বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর অভিবাসননীতির কারণে দেশটির শ্রমবাজারে চাপ পড়ছে। এ কারণে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে। তাঁর ভাষায়, ‘আমরা দেখছি, যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে বিদেশে জন্ম নেওয়া কর্মীর সংখ্যা দ্রুত কমছে—শুল্কবৃদ্ধির সঙ্গে এ বিষয়ও সরবরাহ খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।’
গুরিঞ্চাসের মন্তব্য যেন বিশ্ব অর্থনীতির সারকথাই তুলে ধরে—যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধির গতি কমে গেলে সেই অভিঘাত কেবল যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সীমিত থাকে না; পৃথিবীর সবার ওপর তার প্রভাব পড়ে। কেননা, বিশ্বের বৃহৎ অর্থনীতিগুলোর জিডিপির মূল উৎস হচ্ছে রপ্তানি। সেই রপ্তানির মূল গন্তব্য আবার যুক্তরাষ্ট্র।