তিন দলের ‘ইগো’ ঐকমত্যের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করছে: এবি পার্টি
Published: 17th, October 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকারের ‘আস্থাভাজন’ তিনটি রাজনৈতিক দলকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু। তিনি বলেছেন, এই তিন দলের ‘ইগো (অহংবোধ)’ ঐকমত্যের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করছে।
শুক্রবার জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শেষে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় এবি পার্টির চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন। চেয়ারম্যানের পাশাপাশি দলটির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদও সনদে স্বাক্ষর করেন।
এর আগে বিকেল পাঁচটায় জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এ স্বাক্ষর করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজসহ কমিশনের সদস্যরাও জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছেন।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বলেন, বিএনপি সবচেয়ে বড় দল, তারা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় ছিল এবং লম্বা সময় ধরে নির্যাতন–নিপীড়ন সয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে, তাদের মতো অভিজ্ঞ দল দ্বিতীয়টি নেই; এটা তাদের ইগো। জামায়াত সবচেয়ে সুসংগঠিত দল, চরম দমন–নিপীড়ন সয়েও তারা হাল ছাড়েনি, এই মুহূর্তে তাদের জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা ঊর্ধ্বমুখী; এটা হলো জামায়াতের ইগো।
তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যাঁরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাঁরা ছিলেন জুলাই অভ্যুত্থানের শীর্ষ হিরো। তাঁদের আহ্বান ও নেতৃত্বে ফ্যাসিবাদের চূড়ান্ত পতন হয়েছে— দুর্ভাগ্যজনকভাবে এটাও তাদের মধ্যে ইগোর জন্ম দিয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার এই তিন দলকে নানা সময়ে বড় দল, সরকারের অংশ বা খুব গুরুত্বপূর্ণ দল আকারে মর্যাদা দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন মজিবুর রহমান। তিনি বলেন, এখন দেখছি এই তিন দলের ইগো ঐকমত্যের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করছে। ইগো পরিহার করে অন্তর্বর্তী সরকারের আস্থাভাজন সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সহযোগিতার আহ্বান জানান এবি পার্টির চেয়ারম্যান।
এর আগে জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন ২৫টি রাজনৈতিক দলের নেতারা। এর মধ্যে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), খেলাফত মজলিস, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, আমার বাংলাদেশ পাটি (এবি পার্টি), জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, গণ অধিকার পরিষদ (জিওপি), বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা, বাংলাদেশ এলডিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণফোরাম, জাকের পার্টি, জাতীয় গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট এবং আমজনতার দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
তবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেনি। এ ছাড়া বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদও সনদে স্বাক্ষর করেনি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ল ই সনদ সরক র র ঐকমত য ত ন দল ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
পূর্বাচলে গ্লোবাল সোর্সিং এক্সপো ২০২৫ ঢাকা’ এর উদ্বোধন করলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা
গ্লোবাল সোর্সিং এক্সপো ২০২৫ ঢাকা’র উদ্বোধন করেছেন বাণিজ্য, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
সোমবার (১ নভেম্বর) সকালে পূর্বাচলের বাংলাদেশ চায়না ফ্রেডশিপ এক্সিভিশন সেন্টারে এ “গ্লোবাল সোর্সিং এক্সপো ২০২৫ ঢাকা “ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তিনি। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্প এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার (বিগ ওয়েভ), পূর্বাচল, ঢাকায় আয়োজিত এক্সপোতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, গ্লোবাল সোর্সিং এক্সপো, আমাদের আটটি সবচেয়ে সমৃদ্ধ রপ্তানি খাতকে এক ছাদের নীচে একত্রিত করে, বাংলাদেশকে বৈশ্বিক মূল্য শৃঙ্খলে তার একীকরণকে শক্তিশালী করতে এবং আমরা যে পণ্য রপ্তানি করি এবং যে বাজারগুলি পরিবেশন করি তা উভয়কেই প্রসারিত করতে সহায়তা করার জন্য আয়োজন করা হয়েছে।
এই উদ্দেশ্যটি আমাদের জাতীয় অগ্রাধিকারগুলিকে সম্পূর্ণরূপে সমর্থন করে কারণ আমরা আরও প্রতিযোগিতামূলক, স্থিতিস্থাপক এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত অর্থনীতি গড়ে তোলার জন্য কাজ করি।
তিনি বলেন, আজকের দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্ব বাণিজ্য পরিবেশে, রপ্তানি প্রবৃদ্ধি টেকসই করার জন্য আমাদের পণ্যের ভিত্তিকে বৈচিত্রময় করা, আমাদের সরবরাহ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের সাথে নতুন সম্পর্ক গড়ে তোলা প্রয়োজন।
এই এক্সপোটি সঠিকভাবে এই লক্ষ্যগুলিকে মাথায় রেখে ডিজাইন করা হয়েছে। এটি দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞ, নির্মাতা, নীতিনির্ধারক, বিনিয়োগকারী এবং উদ্ভাবকদের একত্রিত করে, অর্থপূর্ণ আলোচনা, সহযোগিতা এবং দীর্ঘমেয়াদী ব্যবসায়িক অংশীদারিত্বের দ্বার উন্মুক্ত করে।
যেহেতু এটি গ্লোবাল সোর্সিং এক্সপোর প্রথম সংস্করণ, তাই আমরা স্বীকার করি যে আমরা শুরুতেই প্রতিটি প্রত্যাশা পূরণ করতে পারি না। তবে, এখানে আপনার উপস্থিতি এবং এই নতুন উদ্যোগের প্রতি আপনার আস্থা যা মূলত রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো দ্বারা আয়োজিত আমাদের ভবিষ্যতের সংস্করণগুলিকে আরও কার্যকর, আরও ব্যাপক এবং বিশ্বব্যাপী আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলতে উৎসাহিত করে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ শীঘ্রই স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) বিভাগ থেকে উত্তরণ করতে চলেছে। এই মাইলফলক আমাদের অগ্রগতি তুলে ধরেছে, তবে এটি নতুন চ্যালেঞ্জও নিয়ে এসেছে। আমরা বর্তমানে যে কিছু অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা এবং ছাড় সুবিধা ভোগ করছি তা ধীরে ধীরে হারাবো।
এই রূপান্তর সফলভাবে পরিচালনা করার জন্য, আমাদের পণ্য এবং রপ্তানি বাজারের বৈচিত্র্যকরণ, আমাদের প্রতিযোগিতামূলকতা উন্নত করা এবং দূরদর্শী বাণিজ্য নীতি গ্রহণে দ্রুত এগিয়ে যেতে হবে। এই প্রেক্ষাপটে, গ্লোবাল সোর্সিং এক্সপো আয়োজন কেবল সময়োপযোগীই নয় - এটি আমাদের ভবিষ্যতের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরও বলেন, এক্সপোটি নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হবে যাতে এটি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় - অনেকটা ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার মতো, যা বাংলাদেশের বাণিজ্যিক পরিচয়ের একটি বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছে।
আমরা এই এক্সপোকে একটি বিশ্বস্ত আন্তর্জাতিক সোর্সিং প্ল্যাটফর্মে রূপান্তরিত করার কল্পনা করি, যা আমাদের উৎপাদন ক্ষমতার প্রদর্শনী, নতুন বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগের চালিকাশক্তি এবং উন্মুক্ততা, উদ্ভাবন এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রতি বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।
আমাদের দেশীয় উৎপাদক এবং রপ্তানিকারকদের প্রতি, আমি আপনাদের এই সুযোগটি কাজে লাগানোর জন্য অনুরোধ করছি। আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ করুন, বাংলাদেশী উদ্যোগের শক্তি উপস্থাপন করুন এবং বৈচিত্র্য ও উদ্ভাবনের জন্য নতুন পথ অন্বেষণ করুন। আপনাদের গতিশীলতা এবং দৃঢ় সংকল্প বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের ভবিষ্যৎকে রূপ দেবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বাণিজ্য সচীব মাহবুবুর রহমান, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাসহ রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম, ওসি তরিকুল ইসলাম।