সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর) সংসদ নির্বাচন, জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে নভেম্বরে গণভোট আয়োজনসহ পাঁচ দাবিতে নতুন কর্মসূচি দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও সমমনা সাতটি দল।

তাদের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আগামীকাল সোমবার (২০ অক্টোবর) রাজধানীতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল, ২৫ অক্টোবর সব বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল এবং ২৭ অক্টোবর জেলা শহরগুলোতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল।

আজ রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমেদ আবদুল কাদের। সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার জুলাই সনদে সই করার পরও রাজপথে কর্মসূচি দেওয়ার ব্যাখ্যা দেন।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, এখনো জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি এবং এ সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে গণভোট আয়োজনের কাজ বাকি রয়ে গেছে। জুলাই সনদেও বাস্তবায়ন আদেশ ও গণভোট কখন হবে, সে তথ্য উল্লেখ নেই। এ জন্য জুলাই সনদে স্বাক্ষরের পরও মাঠের কর্মসূচি দিয়েছেন তাঁরা।

এর আগে প্রায় অভিন্ন দাবিতে জামায়াতসহ ৭টি দল সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে দুই দফা কর্মসূচি পালন করে। অন্য দলগুলো হলো ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)। আজ তাদের সঙ্গে যুক্ত হলো বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি। ফলে এই যুগপৎ আন্দোলনে দলের সংখ্যা বেড়ে হলো ৮।

তাদের পাঁচ দাবি হলো জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি ও ওই আদেশের ওপর আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যেই গণভোট আয়োজন করা; আগামী জাতীয় নির্বাচনে উভয় কক্ষে/ উচ্চ কক্ষে পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতি চালু করা; অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা; ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা; ‘স্বৈরাচারের দোসর’ জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমেদ আবদুল কাদের বলেন, ‘আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, কালোটাকার ব্যবহার বন্ধ, ভোটকেন্দ্র দখল, পেশিশক্তি প্রদর্শন ও ভোটের বিভিন্ন অনিয়ম ও অপতৎপরতা বন্ধ, কোয়ালিটিসম্পন্ন পার্লামেন্ট, দক্ষ আইনপ্রণেতা তৈরিসহ প্রতিটি ভোট মূল্যায়নের লক্ষ্যে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের জন্য জোর দাবি জানিয়ে আসছি। বাংলাদেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, কলামিস্ট, লেখক, গবেষক, শিক্ষাবিদ ও নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন।’

আরও পড়ুনপিআর নিয়ে জামায়াতের আন্দোলন রাজনৈতিক প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়: নাহিদ১ ঘণ্টা আগে

২৭ অক্টোবরের মধ্যে দাবি মানা না হলে দেশব্যাপী বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ। গোলাম পরওয়ার ছাড়াও বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুছ আলী ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ।

উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, জাগপার সহসভাপতি ও মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির যুগ্ম সম্পাদক লস্কর তাজভীর, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র গাজী আতাউর রহমান, প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন প্রমুখ।

জামায়াত সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে এলেও তার বিরোধিতা করেছে বিএনপি। এর মধ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জামায়াতের এই দাবি তোলা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

নাহিদ এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, তাঁরা ভোটের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠার দাবি তুললেও জামায়াত এবং তার সহযোগীরা তা ‘ছিনতাই’ করে তাদের ‘ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থ উদ্ধারের জন্য দর–কষাকষির একটি হাতিয়ার’ হিসেবে ব্যবহার করেছে।

আরও পড়ুনজুলাই সনদে সইয়ের পরও কেন কর্মসূচি, ব্যাখ্যা দিলেন জামায়াত সেক্রেটারি১ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ল ই সনদ র জন য গণভ ট ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই সনদকে সাংবিধানিক দলিল হিসেবে সংসদে প্রণয়ন করতে হবে: শহীদ মুগ্ধের বাবা

জুলাই বিপ্লবে শহীদ মীর মুগ্ধের বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, ‘‘জুলাই সনদকে শুধুমাত্র রাজনৈতিক ঘোষণা নয়, বরং আইনি ও সাংবিধানিক দলিল হিসেবে সংসদে প্রণয়ন করতে হবে।’’

শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) জাতীয় সংসদ ভবন চত্বরে আয়োজিত জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই কথা বলেন।

মীর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “জনগণের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চাইলে এই সনদকে সংসদের প্রথম দিন থেকেই কার্যকর করতে হবে। শুধু প্রতীকী ঘোষণায় চলবে না, প্রয়োজন বাস্তব পদক্ষেপ।’’

তিনি বলেন, ‘‘সরকারকে আগে পরিষ্কারভাবে জানাতে হবে, এই সনদের আইনি ভিত্তি কী এবং কার্যকর হওয়ার তারিখ কবে থেকে। আমরা শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে চাই, এই সনদের প্রতিটি ধারা যেন সংসদে আলোচনার মাধ্যমে আইন হিসেবে স্বীকৃতি পায়।’’

শহীদ মুগ্ধের বাবা বলেন, ‘‘জুলাই আন্দোলনে নিহত ও আহতদের পরিবার এবং আন্দোলনকারীরা দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছেন, জুলাই সনদ যেন শুধু প্রতিশ্রুতির দলিল না থাকে বরং তা সাংবিধানিক স্বীকৃতি পায়। তাদের ভাষ্য, আইনগত ভিত্তি ছাড়া এই সনদ কার্যকর হবে না এবং জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারবে না।’’

মীর মোস্তাফিজুর রহমান আরো বলেন, ‘‘আমাদের সন্তানেরা ন্যায়ের জন্য প্রাণ দিয়েছে। আমরা চাই, সেই আত্মত্যাগ যেন কেবল কাগজে নয়; বাস্তব নীতিনির্ধারণে প্রতিফলিত হয়।’’

ঢাকা/আসাদ/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নাটোরে পিআরসহ ৫ দাবিতে জামায়াতের জনসভা 
  • জুলাই সনদকে সাংবিধানিক দলিল হিসেবে সংসদে প্রণয়ন করতে হবে: শহীদ মুগ্ধের বাবা