সিলেটে হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ১৪ বছর পর গ্রেপ্তার
Published: 6th, November 2025 GMT
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে ১৪ বছর পর গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। সাজা থেকে বাঁচতে এই দীর্ঘ সময় ধরে পালিয়ে ছিলেন তিনি। গতকাল বুধবার রাতে সিলেট নগরের আম্বরখানা গোল্ডেন টাওয়ার থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম মজাম উদ্দিন ওরফে তেরা মিয়া (৪৮)। তিনি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সুন্দাউড়া গ্রামের বাসিন্দা।
র্যাব সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে একটি হত্যাকাণ্ডে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হন মজাম উদ্দিন। এর পর থেকে তিনি পলাতক ছিলেন। গতকাল র্যাবের একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে র্যাব-৯ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কে এম শহিদুল ইসলাম জানান, গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে কোম্পানীগঞ্জ থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রতন শেখ জানান, র্যাবের হস্তান্তরের পর ওই ব্যক্তিকে আদালতে পাঠানো হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নিজের অপূর্ণতা লিটনদের দিয়ে পূর্ণতা দিতে চান আশরাফুল
তার সময়কার প্রায় প্রত্যেকেরই দাবি, সময়ের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। উইকেটের চারিপাশে শট খেলার দক্ষতা, চোখ জুড়ানো একেকটি শট হৃদয়ে গেঁথে থাকতো লম্বা সময়। বোলারকে বুঝতে পারা, ম্যাচ পরিস্থিতি পড়তে পারার সামর্থ্য অন্যদের থেকে তাকে আলাদা করেছিল। বল বয় থেকে মুহূর্তেই হয়ে গিয়েছিলেন দেশের ক্রিকেটের পোস্টারবয়।
কিন্তু এক আকাশ আক্ষেপ, অভিমান ছিল সব সময়ই। আশরাফুল এক ম্যাচে রান করবেন তো, কয়েক ম্যাচ আড়ালে থাকবেন। যা ভক্তদের পোড়াতো বেশ। সমর্থকদের হৃদয়ে বাড়াত কষ্ট। ভুগতো দলও। তার অভাব অনুভূত হতো বেশ। ফলে তার ব্যাটিং পরিসংখ্যানও থাকত তলানিতে। অথচ শক্তি, সামর্থ্য, প্রতিভা, যোগ্যতা যে মানের ছিল তাতে তিনি হতে পারতেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় সুপারস্টার, বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান।
আরো পড়ুন:
টানা দুই জয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল ভারত
৪১১ রানের টি-টোয়েন্টি ম্যাচে মাত্র ৩ রানে হারল উইন্ডিজ
তা হয়নি। এ নিয়ে আক্ষেপ তারও আছে বোঝা গেল, ‘‘আমার ক্রিকেট জীবনে ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করতে পারিনি। আমার জীবনে অনেকগুলো ভালো ইনিংস আছে। আবার খারাপ ইনিংসও আছে।’’
নিজের ক্রিকেট জীবনের এই অপূর্ণতা পূর্ণতায় রূপ দেওয়ার একটা সুযোগ আশরাফুল পেয়েছেন। বাংলাদেশ জাতীয় দলের ব্যাটিং কোচ হিসেবে তাকে নিয়োগ দিয়েছে বিসিবি। তাকে সুযোগ করে দিয়েছেন বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম। যিনি তাকে আইসিসিতে লেভেল থ্রি কোচিং কোর্স করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
আশরাফুল শোনালেন সেই গল্পও, ‘‘প্রত্যেকটা মানুষের স্বপ্ন থাকে। আমি ক্রিকেটে খেলার জীবন শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয় জীবনটাকে বেছে নিয়েছিলাম কোচ হব। তিন বছর আগে একটা সুযোগ এসেছিল লেভেল থ্রি কোচিং করার আবুধাবিতে। আমিনুল ইসলাম বুলবুল ভাই আমাকে ফোন দিয়ে বলেছিল কোচিংটা করতে। আমি নিজের খরচে গিয়ে লেভেল থ্রি কোর্সটা করেছি।’’
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দুই টেস্ট ও তিন টি-টোয়েন্টি সিরিজে তিনি দলের সঙ্গে থাকবেন। মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, সাদমান, ইসলাম, মাহমুদুল হাসান জয়, মুমিনুল হকদের কোচ হিসেবে কাজ করবেন। মাত্র এক সিরিজের জন্য দায়িত্ব পেলেও লেভেল থ্রি কোচিং কোর্স সম্পন্ন করা আশরাফুল এই সুযোগটিকেও বড় করে দেখছেন, ‘‘এক সিরিজ নিয়ে আসলে আমি চিন্তা করছি না। যখন যেখানে কাজের সুযোগ পাব সেটা করব। সুযোগ পেয়েছি দেশের হয়ে কাজ করার। এক ম্যাচের জন্য কাজ করতে পারাও বড় বিষয়। তারপর আমাকে পুরো সিরিজ দিয়েছে। আমার চেষ্টা থাকবে নিজের সেরাটা দেওয়ার।’’
এমন একটা সময় ব্যাটিং কোচের দায়িত্ব পেলেন যখন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা খুব খারাপ সময় কাটাচ্ছেন ব্যাটিংয়ে। বড় রান তো নে-ই উল্টো ২২ গজে তাদের দিতে হচ্ছে কঠিন পরীক্ষা। এমন সময়ে দায়িত্ব নেওয়া কতোটা চ্যালেঞ্জিং তা আশরাফুলের মুখ থেকেই শুনুন, ‘‘চাপ থাকবেই। ফল নির্ভর যে কোনো কাজ করতে গেলেই চাপ থাকবে। ১৩ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছি সেই চাপ আমি নিয়েছি। আমার জীবনে যে ঘটনা আছে সেই চাপ নিয়ে কিন্তু আমি ফিরে এসেছি। এই বিষয় নিয়ে আমি এতো চিন্তিত না। আমি যেখানে যাই, সেখানে সৎভাবে কাজ করার চেষ্টা করি এবং হানড্রেড পারসেন্ট কাজ করার চেষ্টা করি। যারা আমাকে জানেন তারা এটাও জানেন।’’
তবে কোচের থেকে খেলোয়াড়দের চাপটাই বেশি বলে দাবি করলেন আশরাফুল, ‘‘খেলোয়াড় হিসেবে বেশি চাপের। পারফর্ম করতে হবে। ১৮ কোটি মানুষ ব্যাটিং, বোলিংয়ের পারফরম্যান্স বিচার করে। দল পারফর্ম না করলে কোচের পারফরম্যান্স বিচার হয়। দল ভালো করছে না এই কোচ ভালো না। কিন্তু ওই ম্যাচে কিন্তু কোচের কিছু করার থাকে না। খেলোয়াড়দের আপনি বলে দিতে পারবেন এই পরিস্থিতিতে এটা ডিমান্ড করছে। এই বোলার, এই উইকেট এরকম। কিন্তু কাজ করার কাজটা কিন্তু যারা খেলবে তাদের। কোচের চাপ আমি মনে করি কম। কোনো চাপ থাকে না। সব চাপ খেলোয়াড়দের। তাদের খেলাটা বের করা কোচের কাজ। সেটাই চেষ্টা করবো তারা যেন তাদের সেরাটা দিতে পারে এবং কিভাবে তারা সেটা করতে পারে সেটাই বলার চেষ্টা করব।’’
নিজের ক্যারিয়ারের অপূর্ণতাকে কোচ হিসেবে পূর্ণতা দিতে চান আশরাফুল, ‘‘সব মানুষের একটা স্বপ্ন থাকে বাংলাদেশের হয়ে কাজ করার। যেহেতু আমি ক্রিকেটের মানুষ। আমার একটা সুযোগ এসেছে। ক্রিকেট বোর্ড আমাকে একটা সুযোগ করে দিয়েছে আয়ারল্যান্ড সিরিজে কাজ করার। যখন খেলতাম তখনও স্বপ্ন দেখতাম দলটাকে ভালো জায়গায় যেতে। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে। আশা করছি ভালো কিছু করব। এখন কোচিং লাইনে এসেছি, আমি চাই আমাদের ব্যাটসম্যানরা প্রত্যেক সেকেন্ড ইনিংসেই যেন বড় বড় রান করবে। এটাই আমার ইচ্ছা। আমাদের যেই দল এবং যে সমস্ত প্রতিভাবান ও রোমাঞ্চকর ক্রিকেটার রয়েছে, তারা পারফর্ম করে। হয়তো বা দুই-তিন ম্যাচ পরপরই। সেটা কিভাবে ধারাবাহিকভাবে করা যায় সেই চেষ্টা করব। আমি তা করতে পারিনি আমার জীবনে। কিন্তু তারা কীভাবে করবে সেটাই শেয়ার করার চেষ্টা করব এই সিরিজটাতে।’’
প্রধান কোচ ফিল সিমন্সের সঙ্গে আশরাফুলের পরিচয় ১৯৯৮ সালে। কিভাবে সেই গল্প মিরপুরে শোনালেন তিনি, ‘‘সিমন্সের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় ১৯৯৮ সালে। তখন আমি বল বয় ছিলাম। ওয়েস্ট ইন্ডিজ রানার্স আপ হয়েছিল। দক্ষিণ আফ্রিকা চ্যাম্পিয়ন। উইলস কাপে। বল বল হয়ে তাকে একবার বোলিং করেছিলাম নকিংয়ের সময়। তাকে সেকেন্ড বলটা গুগলি করেছিলাম। সে গুগলিটা রিড করতে পারেনি। তাদের দলে লুইস ছিলেন লেগ স্পিনার। সে সাথে সাথে লুইসকে ডেকে এনে বলেছিল, প্রত্যেকদিন আমার সঙ্গে ম্যাচ শেষে হাফ আওয়ার বোলিং করতে। আমার থেকে যেন গুগলিটা শিখে। সেই থেকে ফিল সিমন্সের সঙ্গে আমার সম্পর্ক। এরপর জাতীয় দলে খেললাম। সে কোচ ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। তার সঙ্গে সম্পর্কটা ওভাবেই ক্লোজ।’’
আশরাফুলের আগমনের সুরে বিদায়ঘণ্টা বাজছে মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনের। সিনিয়র সহকারী প্রধান কোচ পদ থেকে আয়ারল্যান্ড সিরিজের পর সরে যাবেন তিনি। দলকে ঠিকমতো পরিচালনা করতে না পারায় প্রবল সমালোচনার মুখে দায়িত্ব ছাড়ছেন সালাহউদ্দিন। আশরাফুলকেও এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হতে পারে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত সে। তবে রয়েশয়ে সবকিছু করার কথা বললেন তিনি, ‘‘অবশ্যই সমালোচনা করবেন। একটু রয়েশয়ে করলে ভালো। কারণ সবাই চায় সেরাটা দিতে। সমালোচনা হবে আমি জানি। স্বাভাবিক, এটাই জীবন। ভালো করলে আপনাকে আকাশে উঠাবে, খারাপ করলে নিচে নামাবে। এটা নিয়ে চিন্তা না করে আমি আমার কাজটা করার চেষ্টা করবো।’’
ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল