সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগ প্রস্তাব বাতিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, সরকারের এ সিদ্ধান্ত দেশের ভবিষ্যৎ শিল্পচর্চা ও সাংস্কৃতিক অগ্রগতির জন্য বড় হুমকি।

সমাবেশে শিক্ষার্থীরা ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন। এগুলো হলো প্রাথমিকে সংগীত বিষয়ে শিক্ষক পদ বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার, চলমান নিয়োগপ্রক্রিয়ায় সংগীত শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি, মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিকে সংগীত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া, বিসিএস ক্যাডারে সংগীত বিভাগ সংযুক্তকরণ, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানে সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ও সার্টিফিকেট কোর্সকে স্নাতকের সমমান না দেওয়ার বিষয়ে দ্রুত গেজেট প্রকাশ করা ইত্যাদি।

আরও পড়ুনপ্রাথমিকে সংগীতের শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্তে এইচআরএফবির উদ্বেগ১৬ ঘণ্টা আগে

সমাবেশে শিক্ষার্থীরা ‘সংগীত শিক্ষা বন্ধ নয়, শিশুর হাসি নষ্ট হয়’, ‘সংগীতহীন স্কুল নয়, সৃজনশীলতার মৃত্যু হয়’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

সংগীত বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও নবাব ফয়জুন্নেছা হল সংসদের সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক প্রত্যাশা চাকমা বলেন, ‘সাহিত্য-সংস্কৃতি ছাড়া কোনো দেশ বা জাতি বিকশিত হয় না। অন্য দেশে যেখানে সংগীতকে বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে, সেখানে আমাদের দেশে সংগীত শিক্ষাকে কোণঠাসা করার অপচেষ্টা চলছে।’

আরও পড়ুনসংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগ বাদ দেওয়ার বিষয়ে যে ব্যাখ্যা দিল অন্তর্বর্তী সরকার০৪ নভেম্বর ২০২৫

একই বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি জাকিরুল ইসলাম (জশদ জাকির) বলেন, ‘ বর্তমানে সংগীত শুধু শিক্ষা নয়, চিকিৎসাক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন বা মানসিক সমস্যায় ভোগা মানুষকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সংগীত কার্যকর ভূমিকা রাখে—এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার আগস্ট মাসে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলেও গত মাসে তা হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়। কেন বন্ধ হলো—এর যৌক্তিক কারণ কেউ দেখাতে পারেনি।’

সংগীত বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জারিন সুভা এ সমাবেশের  সঞ্চালনা করেন।

আরও পড়ুনস্কুলে সংগীত শিক্ষক পদ বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানাল উদীচী০৪ নভেম্বর ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে শিশু–কিশোরদের মানসিক সুস্থতা জরুরি কেন

শিশু–কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্যে আমরা আদতে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছি? এই প্রশ্নের উত্তরের আগে আরেকটি প্রশ্ন ছুড়ে দিই। মানসিক স্বাস্থ্য মানে কী? অধিকাংশই বলবেন, ‘মানসিক রোগ না থাকা।’ কিন্তু এটি আরও অনেক বড় বিষয়। এটি ব্যক্তির আবেগীয়, মানসিক ও সামাজিকভাবে ভালো থাকা বোঝায়, যা প্রভাবিত করে তার চিন্তা, অনুভূতি ও আচরণকে। অন্যের সঙ্গে সম্পর্ক, চাপ মোকাবিলার দক্ষতা এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও এর সঙ্গে সম্পর্কিত।

শৈশবের পরের ধাপটাই কৈশোরকাল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বয়ঃসন্ধিকাল ১০ বছর বয়স থেকে শুরু করে ১৯ বছর পর্যন্ত চলে। সময়টা অফুরান প্রাণশক্তি, উদ্দাম আবেগ আর সীমাহীন সম্ভাবনার। সবকিছুতে কৌতূহল, শরীরে নতুন অনুভূতির রোমাঞ্চ, স্বাধীনচেতা মনোভাব অথবা বিদ্যমান নিয়মরীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা—এ রকম আরও অনেক বৈশিষ্ট্য কৈশোরকালকে করে তোলে অনন্য।

‘আমি কে, কী চাই, কীভাবে দেখব আমার জীবন’—আত্মপরিচয়ের এই অনুসন্ধানের পথ ধরেই কৈশোরের চারিত্রিক বিকাশ ঘটতে থাকে। মস্তিষ্কের দ্রুত স্নায়বিক বিকাশ ও হরমোনের প্রভাবে শরীরের যেমন পরিবর্তন হয়, তেমনই মন দ্রুত বদলায়। এ বিকাশ নির্ভর করে তার জিনগত বৈশিষ্ট্য, পারিবারিক পরিবেশ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও চারপাশের ওপর।

আরও পড়ুনমন ও মস্তিষ্কের ১২টি গোপন সত্য, আপনি কয়টা মানেন?০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫সাফল্য ও ঝুঁকির দ্বন্দ্ব

শিশু–কিশোরের সাফল্য অনেকাংশেই নির্ভর করে মানসিক সুস্থতার ওপর। আবার প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের চিন্তাপদ্ধতি, আবেগীয় রূপ ও সামাজিক ভূমিকা অনেকাংশেই নির্ধারিত হয় শৈশব ও কৈশোরকালীন মনের যত্নের ভিত্তিতে। আবেগের প্রবলতা, অনুসন্ধিৎসু মন, নিজেকে প্রকাশের চেষ্টা এ সময়কে যেমন বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করে, তেমনই অপরিপক্বতা ও ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা এই সময়কে করে তোলে নাজুক।

সারা বিশ্বে বর্তমান প্রজন্ম বেড়ে উঠছে এক পরিবর্তনশীল ও অস্থির সময়ের সন্ধিক্ষণে। ভোগবাদী ব্যবস্থা নির্ধারণ করছে দৈনন্দিন জীবনযাপন, ইচ্ছা-অনিচ্ছা ও সম্পর্ক। শক্তি আর প্রতিযোগিতার খেলায় সবাই জয়ী হতে চাইছে। আমদের ভাবনা, দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তাপদ্ধতি, এমনকি অনুভূতিও নিয়ন্ত্রণ করছে মুঠোফোন বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।

শিশুরা বাস্তব জগতের বদলে মোহাচ্ছন্ন হয়ে বেড়ে উঠছে ভার্চ্যুয়াল জগতের অবাস্তব স্বপ্নমায়ায়। ছোটবেলা থেকেই পরিচিত হচ্ছে সাইবার ক্রাইম, সহিংস ভিডিও গেম, মাদকাসক্তি ও আত্মহত্যার মতো বিপজ্জনক বিষয়গুলোর সঙ্গে।

বর্তমান সময় শিশু–কিশোরদের মানসিক বিকাশে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে প্রযুক্তি ও সমাজ। জীবনকে সহজ করার নামে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইকে মানুষের জায়গায় প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। এতে মানুষ থেকে দ্রুত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে মানুষ। শিশু–কিশোরেরা বন্ধুদের সময় দেওয়ার বদলে সময় কাটাচ্ছে এআই বা অনলাইন গেমে। এতে সামাজিক মেলামেশা ও খেলাধুলা থেকে যে আবেগীয় গঠন ও জীবনদক্ষতা তৈরি হওয়ার কথা, তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিচ্ছিন্নতা ও আত্মকেন্দ্রিকতায়। মানসিক রোগের ঝুঁকি উঠতি বয়সে সব সময় বেশি হলেও বর্তমান যুগের এসব উপাদান বাড়তি ঝুঁকি যোগ করছে।

বর্তমান সময় শিশু–কিশোরদের মানসিক বিকাশে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে প্রযুক্তি ও সমাজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ