বাংলাদেশে ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপে মেটা এআই চালু, যা যা করা যাবে
Published: 8th, November 2025 GMT
বিশ্বের বহু দেশে আগেই চালু হলেও গতকাল ৭ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশের ব্যবহারকারীরা মেটা এআই চ্যাটবট ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে। বাংলাদেশের ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের জন্য মেটা এআই চ্যাটবট উন্মুক্ত করেছে। মেটা এআই মেটা প্ল্যাটফর্মের নিজস্ব লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল দিয়ে চালিত একটি উন্নত চ্যাটবট। ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটি ও গুগলের জেমিনির মতো চ্যাটবট বা এআই অ্যাসিস্ট্যান্টের মতো কাজ করতে পারে এই বট। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপের মতো অ্যাপে সরাসরি সংযুক্তির কারণে ব্যবহারকারীরা এখন সহজেই এআইয়ের সুবিধা ব্যবহার করতে পারছেন।
ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায়ে শিক্ষা বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক বুশরা হুমায়রা বলেন, মেটা এআই চ্যাটবটটি কেবল প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি ব্যবহারকারীকে বিভিন্ন সৃজনশীল, তথ্যমূলক এবং ব্যবহারিক কাজে সহায়তা করতে সক্ষম। এটি মূলত একটি ‘অল-ইন-ওয়ান’ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করে। ব্যবহারকারীরা যেকোনো বিষয়ে প্রশ্ন করতে পারে এবং মেটা এআই দ্রুত সেই প্রশ্নের উত্তর দেবে। সাধারণ জ্ঞান, ইতিহাস থেকে শুরু করে দৈনন্দিন সমস্যার মতো সবকিছু নিয়েই তথ্য দিতে পারে। অ্যাপের মধ্যে থেকেই মেটা এআইকে ব্যবহার করে কোনো বিষয় সম্পর্কে অনুসন্ধান করা যায়। হোয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুকের সার্চ বারেও এআই আইকনের মাধ্যমে এটি অ্যাক্সেস করা যায়।
মেটা এআই ব্যবহার করে ব্যবহারকারীরা কেবল লিখিত প্রম্পট ব্যবহার করে মুহূর্তের মধ্যে নিজস্ব ছবি বা জিআইএফ তৈরি করতে পারেন। নিদের্শনা হিসেবে ‘সমুদ্রসৈকতে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাঘের ছবি তৈরি করো’ লিখলেই দারুণ একটি ছবি তৈরি করতে পারবেন। এ ছাড়া ই–মেইল, যেকোনো বার্তা, জীবনবৃত্তান্ত বা কোনো প্রবন্ধের খসড়া তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে এই চ্যাটবট। হোয়াটসঅ্যাপ বা মেসেঞ্জার গ্রুপ চ্যাটে ইংরেজিতে ‘@মেটা এআই’ মেনশন করে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে পারেন। বাংলা বা ইংরেজি যেকোনো ভাষাকে মেটা এআইয়ের সঙ্গে আলাপ করতে পারেন ব্যবহারকারীরা।
মেটা এআই ব্যবহারকারী তাঁর ছবি আপলোড করে মেটা এআইকে বলতে পারে ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড পরিবর্তন করতে বা কোনো বস্তু সরিয়ে দিতে। শিক্ষার্থীদের হোমওয়ার্কে সহায়তা করা বা ডেভেলপারদের কোডিংসংক্রান্ত পরামর্শ নেওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া ছুটির দিনের ভ্রমণের পরিকল্পনা, বাজেট তৈরি বা কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন–সংক্রান্ত ধারণা নিতে পারে এই বট দিয়ে। মেটার ভাষ্য, মেটা এআইপ্রযুক্তি সাধারণ ব্যবহারকারী থেকে শুরু করে কনটেন্ট ক্রিয়েটর, এমনকি ছোট ব্যবসার উদ্যোক্তারা তাদের কাজে গতি আনতে সাহায্য করবে। মেটা এআই পাওয়া যাবে এই ওয়েবসাইটে ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর ব যবহ র ক চ য টবট টসঅ য প ফ সব ক এআই চ
এছাড়াও পড়ুন:
সামাজিক সমস্যা সমাধানে এআইয়ের ব্যবহার
সমাজের অনেক মানুষ সাধারণ মানুষের মতো ভাষা ব্যবহার করেন না। তাঁরা হয়তো শুনতে পান না কিংবা কথা বলতে পারেন না। বিশেষ ইশারা ভাষা ব্যবহার করেন। এসব মানুষ প্রযুক্তিগত বিভিন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত হন। তাঁদের কথা বিবেচনা করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটারবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী ফিরোজা মেহজাবিন বাংলা সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ ট্রান্সলেটর প্রকল্প তৈরি করেন।
মেহজাবিন বলেন, ‘অনেকেই ইশারা ভাষা ব্যবহার করেন। তাঁদের কথা বিবেচনা করে আমি এই ভাবনা নিয়ে কাজ করছি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা যায়, অনেকেই ভাষা–জড়তার কারণে যোগাযোগ করতে পারেন না। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান—যেমন হাসপাতাল বা করপোরেট—থেকে তাদের গ্রাহকসেবা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির অভাব রয়েছে। আমার এই উদ্ভাবনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ব্যবহার করে ইশারা ভাষাকে লেখা ও বাক্যে পরিণত করা যাবে, যেন তাঁদের সঙ্গে আমরা সাধারণ মানুষ যোগাযোগ করতে পারি। একইভাবে এআই ব্যবহার করে আমাদের ভাষাকে বাক্য ও ইশারা ভাষায় পরিণত করার মাধ্যমে তাঁরা আমাদের কথা সহজেই বুঝতে পারবেন।’
ফিরোজা মেহজাবিনের টিম ওয়াটারমেলন গ্রামীণফোনের এআইভিত্তিক ফিউচারমেকার্স প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। নারী হিসেবে এআই প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ান হওয়াকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন মেহজাবিন। প্রযুক্তি খাতে নারীদের উপস্থিতি এমনিতেই কম, সেখানে এমন আয়োজন নারীদের আরও উৎসাহ দেবে।
গ্রামীণফোনের আয়োজনে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে ফিউচারমেকার্স নামের প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড ফিনালে আয়োজন করা হয়। দেশের প্রথম জাতীয় পর্যায়ের এআইভিত্তিক আইডিয়া প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী ৭৮২টি আইডিয়ার মাধ্যমে তাঁদের সৃজনশীলতা, উদ্ভাবন ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা প্রদর্শন করেন।
প্রতিযোগিতায় প্রথম রানার্সআপ হয়েছে টিম ওপিয়ন। তাদের প্রকল্প এআই-ড্রিভেন নিউজ ক্রেডিবিলিটি প্ল্যাটফর্ম। টিম সিন্যাপজ তাদের এআই ইনক্লুশন ফর ডিফারেন্টলি-এবলড লার্নারস প্রকল্প এবং টিম লাস্তা তাদের দিশা: ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন থ্রো এআই প্রকল্পের জন্য যৌথভাবে দ্বিতীয় রানার্সআপ হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে গত সেপ্টেম্বর মাসে শুরু হয়েছিল ফিউচারমেকার্স প্রতিযোগিতা। প্রাথমিক বাছাইপর্ব শেষে নির্বাচিত দল বিচারক প্যানেলের সামনে তাদের এআইভিত্তিক ধারণাগুলো উপস্থাপন করে।
অনুষ্ঠানে গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির (সিইও) আজমান বলেন, ‘আমরা যখন এআইনির্ভর ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হচ্ছি, তখন তরুণ প্রজন্মকে সেই পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিতে প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও মানসিকতা অর্জনে সহায়তা করাটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গ্রামীণফোনে আমরা এআইকে দেখি উদ্ভাবন, উৎপাদনশীলতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির নিয়ামক হিসেবে। ফিউচারমেকার্সের মাধ্যমে আমরা এমন তরুণ উদ্ভাবকদের গড়ে তুলতে চাই, যারা ভবিষ্যতের কর্মশক্তিকে নেতৃত্ব দেবে এবং দেশের ডিজিটাল অর্থনীতিতে অবদান রাখবে।’ প্রতিযোগিতার বিজয়ীরা পুরস্কারের পাশাপাশি গ্রামীণফোনের শীর্ষ প্রতিভা উন্নয়ন কর্মসূচিগুলোতে দ্রুত অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। প্রাইজ মানির পাশাপাশি বাস্তব উদ্ভাবনী পরিবেশে কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন ও নিজেদের ধারণা আরও পরিমার্জন করার সুযোগ পাবেন, যা তাঁদের প্রযুক্তি খাতের ভবিষ্যত নেতৃত্ব হিসেবে গড়ে তুলবে।
বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন বিচারকের দায়িত্বে থাকা গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইয়াসির আজমান, চিফ হিউম্যান রিসোর্সেস অফিসার সৈয়দা তাহিয়া হোসেন, চিফ বিজনেস অফিসার আসিফ নাইমুর রশীদ ও চিফ ইনফরমেশন অফিসার ড. নিরঞ্জন শ্রীনিবাসন।