টাঙ্গাইলের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে অবাধে তামাক চাষ, চাষিদের স্বাস্থ্য
Published: 19th, January 2025 GMT
টাঙ্গাইলের বিভিন্ন উপজেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে ব্যাপকহারে তামাক চাষ হচ্ছে। তামাক ও তামাকজাত পণ্য চাষের ক্ষেত্রে সরকারি অনুমোদন নেওয়ার আইনগত বিধান থাকলেও তার তোয়াক্কা না করেই অধিক লাভের আশায় প্রতিবছর নতুন নতুন ফসলি জমি তামাক চাষে যুক্ত হচ্ছে।
কৃষকরা দীর্ঘ মেয়াদে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে বেশি লাভ ও বহুজাতিক কোম্পানির অর্থায়ন এবং প্রলোভনে প্রতিবছর যুক্ত হচ্ছে তামাক চাষে। তামাক চাষে ‘কারগিল’ নামক সার প্রয়োগের ফলে চাষি ও তার পরিবারের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে, ফসলি জমির উর্বরা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে। এ ছাড়া জেলায় কমছে ফসলি জমির পরিমাণ।
এদিকে তামাক চাষ নিয়ে উদাসীন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। তাদের কাছে জেলার তামাক চাষের কোনো ধরনের তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ আশেক পারভেজ।
জানা গেছে, টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী, জগৎপুরা, বামনহাটা, চর নিকলা, নিকরাইল, পালিমা, আমুলা, কালিহাতী উপজেলার সল্লা, দেউপুর, চর হামজানী, কদিম হামজানী, পটল, বেরী পটল, জোকারচর, গোহালিয়াবাড়ী, কুর্শাবেনু, গোবিন্দপুর, ধলাটেঙ্গর, টাঙ্গাইল সদরের কাকুয়া, হুগড়া, কাতুলী, মামুদ নগর, চর পৌলী, দেলদুয়ার উপজেলার এলাসিন, দেউলী, লাউহাটি, নাগরপুরের পাকুটিয়া, ভাদ্রা, বেকরা, আটাপাড়া, সলিমাবাদ, ধুবুরিয়া, মোকনা, বনগ্রাম, শাহজানী প্রভৃতি অঞ্চলে ঢালাওভাবে তামাক চাষ হচ্ছে।
এর মধ্যে ভূঞাপুর, কালিহাতী, টাঙ্গাইল সদর ও নাগরপুর উপজেলায় তামাক চাষের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি।
বহুজাতিক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি লিমিটেড, জাপান টোব্যাকো কোম্পানি লিমিটেড, আবুল খায়ের টোব্যাকো কোম্পানিসহ বিভিন্ন বিড়ি, সিগারেট ও জর্দা তৈরির প্রতিষ্ঠানসহ আরো কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব প্রতিনিধির মাধ্যমে স্থানীয় কৃষকদের তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করছে।
সরেজমিনে কালিহাতী উপজেলার চরাঞ্চল দুর্গাপুর ইউনিয়নের চরহামজানী, কদিমহামজানী গ্রামে গিয়ে দেখা যায় অধিকাংশ কৃষকই তামাক চাষের সাথে যুক্ত।
তামাক চাষি আমির আলী, হারেছ মিয়া, শুকুর মামুদসহ অনেকেই জানান, কোম্পানি (তামাক ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান) থেকে তাদের বীজ, সার, কীটনাশক, ত্রিপল ও কাগজসহ উৎপাদনের যাবতীয় সামগ্রী সরবরাহ করা হয়। আবার কোম্পানিগুলোই তামাক পাতা কিনে নেয়। টাঙ্গাইল জেলায় মূলত ব্রিটিশ-অ্যামেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি ও জাপান টোব্যাকো কোম্পানি তামাক চাষে কৃষকদের সহযোগিতা দিয়ে থাকে বলে জানান তারা।
তামাক চাষি জব্বার মিয়া জানান, তিনি দীর্ঘ ৮ বছর ধরে তামাক চাষ করছেন। তামাক চাষে অন্য ফসলের তুলনায় দ্বিগুণ লাভ হয়। তার মতে, এতে শরীরের ও পরিবেশের ক্ষতি হলেও লাভের অংক অনেক বেশি। তাই তামাক চাষ করেন। পাতার আকার ও সংরক্ষণের প্রকারভেদে কোম্পানি দাম কমবেশি নির্ধারণ করে। কোম্পানির লোক ছাড়া বাইরের কেউ তামাক কেনে না- বিক্রি করারও সুযোগ নেই।
টাঙ্গাইল জেলায় তামাক চাষে লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ-অ্যামেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি ও জাপান টোব্যাকো কোম্পানির স্থানীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে তারা কোম্পানির দেওয়া দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে থাকেন বলে জানান।
টাঙ্গাইলের পরিবেশ উন্নয়ন কর্মী সোমনাথ লাহিড়ী জানান, তামাক চাষে জড়িত চাষি ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে তামাক মারাত্মক নিউরো-টক্সিক ইফেক্ট তৈরি করে। শরীরের দীর্ঘদিন এর প্রভাব থাকে। এছাড়া তামাক চাষ পরিবেশ ও প্রতিবেশের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। তামাক চাষে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের সার ও কীটনাশক জমির উর্বরতা হ্রাস করে। বাংলাদেশ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী তামাক চাষের পূর্বে অনুমতি নিতে হয়।
তিনি বলেন, “আমি যতদূর জানি, টাঙ্গাইলে তামাক চাষের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অনুমতি নেওয়া হয় না। এছাড়া তামাক ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান দাদন দিয়ে কৃষকদের তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করে। গ্রামের অসহায় কৃষক না বুঝে তাদের জমি ও জীবনের চরম ক্ষতি করছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে গণসচেতনতা এবং তামাকজাত পণ্যের ওপর অতিরিক্ত কর আরোপ করা দরকার।”
তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে ডা.
তিনি বলেন, “তামাকজাত দ্রব্য এড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং কঠোর আইন প্রয়োগ করা অত্যন্ত জরুরি।”
টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ আশেক পারভেজ জানান, তামাক চাষের বিষয়ে সরকারিভাবে তাদের কোনো নির্দেশনা নেই। তাই এ ক্ষেত্রে তারা কোনো মতামত ও তামাক চাষে হস্তক্ষেপ করেন না। তবে তামাক চাষ রোধে গণসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি সরকারেরও ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।”
ঢাকা/কাওছার/এস
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
মাইলস্টোন স্কুলে হতাহতদের স্মরণে দোয়া মাহফিল ও মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দূর্ঘটনার হৃদয় বিদারক ঘটনায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত ও আহতদের আশু সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিল ও মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বৃহস্পতিবার ৩১ জুলাই বিকাল ৪টায় নারায়ণগঞ্জ শহরের ডিআইটি মার্কেট জিমখানা মোড় এলাকায় মহানগর বিএনপি সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হাসান আহাম্মেদ এর নির্দেশনায় এ দোয়া মাহফিল ও মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক চৌধুরী দিপু।
প্রধান অতিথি বক্তব্যে বলেন, এদেশে বিগত ১৭ বছর কি হয়েছে আপনারা জানেন। বাংলাদেশের মালিকানা ছিলো শেখ হাসিনার বেনেটি ব্যাগের ভিতরে। গত ১৬ বছর বাংলাদেশের কোন মালিকানা ছিলো না। মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিলো হাসিনা সরকার।
২৪শের ছাত্র জনতার আন্দোলনে হাজার হাজার মানুষকে নিজের হুকুমে গুলি করে হত্যা করিয়েছে শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার হুকুমে হাজার হাজার ছাত্র জনতার উপর বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে সরকারি বাহিনী। এরপর ছাত্র জনতার গণ-অভ্যুত্থানের ফলে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, ড. মো. ইউনুস সাহেব বাংলাদেশের জনগণ আপনাকে অনেক সম্মান করে। আপনি এই সম্মান ধরে রাখুন। কোন দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে নির্বাচন দুরে সরাবেন না। কোন দলের প্ররোচনায় পড়ে নির্বাচনকে প্রভাবিত করে কালক্ষেপণ দেরি করবেন না। তাহলে দেশে আবার ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনা পূর্ণবাসিত হতে পারে।
আর এই বিষয়ে যদি কোন অরাজকতা সৃষ্টি হয় তাহলে তার দায় বার ইউনুস সাহেব আপনাকে নিতে হবে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে কোন তালবাহানা চলবেনা। শেখ হাসিনাকে আবারও পূর্নবাসনের জন্য পায়তারা চলছে তা কোন ভাবেই সফল হতে দেয়া যাবে না।
পরিশেষে আহবান জানাই বিমান দূৃর্ঘটনায় নিহততের পরিবারকে ৫ কোটি করে ক্ষতি পূরন দিতে হবে বলে দাবী জানাই। তাছাড়া বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সুস্বাস্থ্য কামনা সহ আমাদের নেতা নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হাসান আহাম্মেদ এর আশু রোগ মুক্তি সহ দ্রুত সুস্থতা কামনায় করি।
সরকারি তোলারাম কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. সাইদুর রহমান এর সভাপতিত্বে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি ১৬নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মাহাবুব রহমান, সদর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক মোঃ জাহাঙ্গীর বেপারী, জাতীয়তাবাদী তরুণ দল কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শিকদার বাপ্পি চিশতী, মহানগর কৃষক দলের প্রচার সম্পাদক আর. আহামেদ মনির, কাশীপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ, ১৭নং ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক মো. ইসমাইল, সদস্য স্বপন, মো. মোশাররফ, মো. রাসেল, মো. সবুজ, আদাবর থানা বিএনপি যুগ্ম আহবায়ক পারভেজ, যুবদল নেতা মো. হারুন, মো. খোরশেদ, মো. ফয়সাল, মো. রনি, ব্লগার বাপ্পি, মেজর সুমন প্রমুখ।
আলোচনা ও মত বিনিময় সভা শেষে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। মিলাদ পরিচালনা করেন, মাওলানা মো. আমান উল্লাহ। দোয়া মাহফিলে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের রূহের মাগফিরাত কামনা করা হয়। তাছাড়া দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সুস্বাস্থ্য কামনায় দোয়া করা হয়।
পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান আহাম্মেদ এর আশু রোগ মুক্তি কামনা সহ দ্রুত সুস্থতা কামনায় বিশেষ দোয়া করা হয়।