পাল্টা শুল্ক নিয়ে চার উপদেষ্টাকে উদ্বেগ জানালেন ব্যবসায়ীরা
Published: 10th, July 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্টা শুল্ক নিয়ে আলোচনা চলমান থাকা অবস্থায় বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। পণ্য রপ্তানির বড় এই বাজারের শুল্ক আলোচনায় ব্যবসায়ীদের সম্পৃক্ত করা হয়নি। ফলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। তা ছাড়া ১ আগস্ট থেকে এই বাড়তি শুল্ক আরোপ হলে বাজারটিতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প, বন্দর ও রাজস্ব আদায় কার্যক্রম অধিকতর গতিশীল রাখার লক্ষ্যে গঠিত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সঙ্গে বৈঠক করে এই উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতারা। ওয়াশিংটনে চলমান আলোচনায় আশাব্যঞ্জক ফলাফল না এলে পরবর্তী দর-কষাকষিতে আরও ১-২ জন অভিজ্ঞ উপদেষ্টাকে অংশ নিতে অনুরোধ করেন তাঁরা। প্রয়োজনে লবিস্ট নিয়োগের পরামর্শও দেন ব্যবসায়ী নেতারা।
রাজধানীর রেল ভবনের সম্মেলনকক্ষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কার্যক্রমে দ্রুত গতি ফেরানোর পাশাপাশি গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট মোকাবিলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন ব্যবসায়ী নেতারা। সভায় উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং নৌপরিবহন ও শ্রম উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.
অন্যদিকে ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি) বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, আইসিসি বাংলাদেশের সহসভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে আজাদ, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ, তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান (বাবু), মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সহসভাপতি ও ট্রান্সকম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সিমিন রহমান এবং লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর।
গত সোমবার বাংলাদেশের পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানসহ মোট ১৪টি দেশের ওপর নতুন করে শুল্কহার নির্ধারণের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউসের ৯০ দিনের শুল্ক বিরতির সময়সীমা শেষ হওয়ার আগমুহূর্তে এই ঘোষণা দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে লেখা এক চিঠিতে বিষয়টি জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যঘাটতি নিরসনের বিষয়ে সমাধান না এলে ১ আগস্ট থেকে দেশটিতে পণ্য রপ্তানিতে বর্ধিত হারে শুল্ক দিতে হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি।
উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সঙ্গে বৈঠক শেষে বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আসলে আজকে আামাদের কেন ডেকেছে, তা আগে থেকে জানতাম না। তবে এখানে আসার পরে বৈঠকে উপদেষ্টাদের কাছে আমরা আমাদের উদ্বেগগুলো জানিয়েছি। আমরা বলছি, আপনারা (অন্তর্বর্তী সরকার) কোনো কিছুতে ব্যবসায়ীদের সম্পৃক্ত করেন না। শুল্ক আলোচনাতেও ব্যবসায়ীদের সম্পৃক্ত করছেন না। এগুলো তো ঠিক না।’
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, ব্যবসায়ী নেতারা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক আলোচনায় দেশের ব্যবসায়ীদের যুক্ত করা হয়নি। অথচ এই আলোচনায় ব্যবসায়ীরা গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হওয়ার কথা। কী হচ্ছে, না হচ্ছে সেটি ব্যবসায়ীদের জানা প্রয়োজন। তৈরি পোশাকের বিদেশি ক্রেতারা (বায়ার) অভিযোগ করে বলছেন, তোমাদের সরকার তো কিছুই করছে না। অন্য দেশ যেভাবে দর–কষাকষি করছে, তোমারা সেভাবে করতে পারছ না। বিদেশি ক্রেতারা মনে করেন, পাল্টা শুল্কের আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশ যথাযথভাবে বোঝাতে বা রাজি করাতে পারছে না।
ব্যবসায়ী নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে আলোচনায় জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খানকেও যুক্ত হওয়ার পরামর্শ দেন। তাঁরা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় যাঁরা অংশ নিচ্ছেন, তাঁরা তুলনামূলক অনভিজ্ঞ। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের দূতাবাসের কর্মকর্তারাও নতুন। তাই দর–কষাকষিতে অভিজ্ঞ জ্বালানি উপদেষ্টাকে যুক্ত করা যেতে পারে।
পরে জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা পাল্টা শুল্ক নিয়ে আমরা উদ্বেগ জানিয়েছি। চলমান আলোচনায় আশাব্যঞ্জক ফলাফল না এলে আমরা পরবর্তী দর–কষাকষিতে আরও ১-২ জন উপদেষ্টাকে অংশ নিতে অনুরোধ করেছি। প্রয়োজনে লবিস্ট নিয়োগ করা যেতে পারে। উপদেষ্টারা আমাদের বলেছেন, তাঁরা আশাবাদী, আলোচনায় ইতিবাচক ফলাফল আসবে। ৩৫ শতাংশ শুল্ক থাকবে না।’
গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট কাটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রূপান্তরের জন্য নতুন একটি ভাসমান টার্মিনাল নির্মাণকাজ দ্রুত সম্পন্ন করার তাগিদ দেন ব্যবসায়ী নেতারা। এ বিষয়ে মাহমুদ হাসান খান বলেন, নতুন টার্মিনাল না করে শুধু বেশি এলএনজি আমদানি করলে হবে না। তাই আমরা দ্রুত টার্মিনালের নির্মাণকাজ করতে জোর দিয়েছে। ইতিমধ্যে অবশ্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
এনবিআর নিয়ে কী আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ জানান, এনবিআর পৃথক হোক সেটি ব্যবসায়ীরাও চান। তবে এই ভাগ যাতে ঠিকমতো হয়, কার্যকর ও পেশাদার হয়, ডিজিটাল ব্যবহার যাতে হয় সেগুলো দেখতে হবে। কারণ, এসব ক্ষেত্রে এনবিআর প্রস্তুত নই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যবসায়ী নেতা প্রথম আলোকে বলেন, এনবিআর কর্মকর্তাদের কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি প্রত্যাহারের হলেও সংস্থাটিতে কাজের গতি নেই। এই মুহূর্তে আন্দোলনে থাকা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে ধীরে চলো নীতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা। তাঁরা বলেছেন, এনবিআর সমস্যা সমাধানে মধ্যস্থতা করেছেন ব্যবসায়ীরা। আন্দোলনরত কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না এই আশ্বাস দিয়ে তাঁদের কাজে ফেরানো হয়। তাই ব্যবসায়ীদের দেওয়া আশ্বাসের প্রতি সরকারকে সম্মান দেখানোর অনুরোধ জানান ব্যবসায়ী নেতারা।
ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সাংবাদিকদের বলেন, আগামী রোববার সার্বিক বিষয়ে জানানো হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস য় দ র ন ব যবস য় ব যবস য় র উপদ ষ ট ক কর মকর ত ব যবস থ ক ত কর সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
কুষ্টিয়ায় বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত নেতার অনুসারীদের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে বিএনপির স্থানীয় সরকারবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিন দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন তাঁর অনুসারী নেতা-কর্মীরা। আজ সোমবার রাত ৯টার দিকে শহরের মজমপুর রেলগেটে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে এ বিক্ষোভ করেন তাঁরা।
সেখানে বিক্ষোভকারীরা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভের পাশাপাশি প্রতিবাদ মিছিলও করেন। এ ছাড়া সদর উপজেলার মধুপুর-লক্ষীপুর এলাকাতেও সোহরাব উদ্দিনের সমর্থকেরা সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন।
বিক্ষোভকারী নেতা-কর্মীদের দাবি, সোহরাব উদ্দিন কুষ্টিয়া-৩ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য। তিনি দীর্ঘদিন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এর বদলে এখানে অন্য কাউকে প্রার্থী হিসেবে মেনে নেওয়া হবে না। তাই অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে সোহরাব উদ্দিনকে পুনরায় মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানান তাঁরা।
এর আগে সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব জাকির হোসেন সরকার।
এ বিষয়ে মনোনয়নবঞ্চিত সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘শুনেছি আমার সমর্থকেরা বিক্ষোভ করছেন। আমি শহরের বাইরে আছি।’ এর বেশি কথা বলেননি তিনি।
জানতে চাইলে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জাকির হোসেন সরকার বলেন, কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যিনি মনোনয়ন পাবেন, তাঁর পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। তবে এ নির্দেশনা যদি কেউ না মানেন, তাহলে কেন্দ্র ব্যবস্থা নেবে।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হাসেন বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণ করেছি।’
কুষ্টিয়ার অন্য তিনটি সংসদীয় আসনে বিএনপির প্রার্থীরা হলেন কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনে সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি রেজা আহম্মেদ বাচ্চু মোল্লা, কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভোড়ামারা) আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রাগীব রউফ চৌধুরী, কুষ্টিয়া-৪ (খোকসা-কুমারখালী) আসনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমি।