চট্টগ্রামে গত এক দশকে খাল-নালায় পড়ে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে একমাত্র গত ১৮ এপ্রিল নগরীর হিজরা খালে ছয় মাস বয়সী সেহেরীশের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি হয়েছে। তবে বেঁধে দেওয়া সাত কর্মদিবসের প্রতিবেদন আড়াই মাসে দিতে পারেনি তারা। এরই মধ্যে গত বুধবার দুপুরে নগরীর উত্তর আগ্রাবাদ আনন্দিপুরে নালায় পড়ে তিন বছর বয়সী মোছাম্মত হুমায়রার মৃত্যু হলো। অবশ্য হুমায়রার মৃত্যুতে তদন্ত কমিটি হয়েছে।

জানা যায়, ২০২১ সালে চট্টগ্রামের খাল-নালায় পড়ে সর্বোচ্চ পাঁচজনের মৃত্যু হয়। ২০২৩ সালে তিনজন ও ২০২৪ সালে মারা যান দু’জন। এর আগে ২০১৫ সালে দু’জন ও ২০১৭ সালে একজনের মৃত্যু হয়। তবে চলতি বছর এরই মধ্যে দুই শিশুর মৃত্যু হলো।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একের পর এক প্রাণহানি হলেও, কী কারণে ও কাদের গাফিলতিতে মর্মন্তুদ এসব ঘটনা, তদন্ত না হওয়ায়– তা অজানা থেকে যাচ্ছে। এসব মৃত্যুর ঘটনায় কাউকে বিচারের মুখোমুখি হতে না হওয়ায় একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। এমনকি নগরীতে ছড়িয়ে থাকা খাল-নালা নামক মৃত্যুফাঁদগুলো সুরক্ষিত করতে কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই।
শিশু সেহেরীশের মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সচিব আশরাফুল আমিন বলেন, ‘তাড়াহুড়ো করে দায়সারা প্রতিবেদন দিতে চাইনি বলে দেরি হচ্ছে। তা ছাড়া মৃত্যুর কারণ সবাই জানে। ভবিষ্যতে এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা প্রতিরোধের উপায় বের করার চেষ্টা করেছি। এ জন্য চুয়েট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও স্থপতি ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ এবং নগরের বিভিন্ন সেবা সংস্থার প্রতিনিধিদের তদন্ত কার্যক্রমে যুক্ত করেছি।’ তিনি বলেন, ‘প্রতিবেদনের খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে এটি চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে আশা করছি। এরপর দ্রুত জমা দেব।’

৪১ ওয়ার্ডে ৫৬৩ মরণফাঁদ
২০২১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর আগ্রাবাদে খোলা নালায় পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী শেহেরীন মাহমুদ সাদিয়া মারা যান। এরপর নগরের ঝুঁকিপূর্ণ খাল-নালা চিহ্নিত করেছে সিটি করপোরেশন। সে সময় নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়া খালের পাড় ১৯ কিলোমিটার এবং উন্মুক্ত নালা ছিল ৫ হাজার ৫২৭ স্থানে। গত এপ্রিলে শিশু সেহেরীশের মৃত্যুর পর সিটি করপোরেশন পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে উন্মুক্ত খাল-নালার তথ্য চায়। দায়িত্বপ্রাপ্ত ছয় আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ছয়টি জোনে ৪১টি ওয়ার্ডের তালিকা প্রস্তুত করেন। এতে ৫৬৩ জায়গাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে ১ নম্বর জোনে ৪৭, দুই নম্বরে ৭৮, ৩ নম্বরে ৬৮, চার নম্বরে ৭৪, ৫ নম্বরে ৩৩ ও ৬ নম্বর জোনে ২৬৩টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থান রয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে বিভিন্ন জায়গায় নানা আকারের ৮৬৩টি স্ল্যাব, ১৪৬ স্থানে নিরাপত্তা বেষ্টনী ও কয়েকটি জায়গায় ম্যানহোলের ঢাকনা বসানোর কথা ছিল। কিন্তু এসবের তেমন কিছুই হয়নি। ফলে শিশু হুমায়রার মৃত্যুর পর সিটি করপোরেশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)-টিআইবি চট্টগ্রামের সভাপতি আখতার কবির চৌধুরী বলেন, ‘খাল-নালায় পড়ে মৃতরা সাধারণ মানুষ। রাষ্ট্রের কাছে এসব প্রাণের মূল্য নেই। এ হত্যাকাণ্ডের জন্য সিডিএ কিংবা চসিকের কাউকে বিচারের মুখোমুখি হতে হয় না। মৃত্যুফাঁদে পরিণত হওয়া খাল-নালা সুরক্ষিত না হলে প্রাণহানি থামানো সম্ভব নয়।’
এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম জানান, সেহেরীশের মৃত্যুর পর ঝুঁকিপূর্ণ খাল-নালা তারা সুরক্ষিত করেছেন। এরপরও কীভাবে অরক্ষিত জায়গা থেকে গেছে, তা তদন্তে কমিটি হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তারা প্রতিবেদন দেবে। কারও গাফিলতি পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রধান প্রকৌশলী হাসান বিন শামস মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে নালা-খালে পড়ে মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম ত য র ঘটন য় তদন ত ক রক ষ ত নগর র

এছাড়াও পড়ুন:

৫ কোম্পানির শেয়ার কারসাজি: ৩ জনকে দেড় কোটি টাকা অর্থদণ্ড

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত পাঁচটি কোম্পানির শেয়ার কারসাজির অভিযোগে তিন ব্যক্তিকে মোট ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। অভিযুক্তরা এর আগে শেয়ার ব্যবসায়ী মো. আবুল খায়ের হিরুর সহযোগী হিসেবে শেয়ার কারসাজিতে জড়িত ছিলেন এবং তাদেরকে একাধিকবার জরিমানা করা হয়েছে বলে জানা গেছে। 

শেয়ার কারসাজির কোম্পানিগুলো হলো- গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স পিএলসি, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশ লিমিটেড, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, পিপলস ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড ও রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিএসইসির কমিশন সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির কর্মকর্তারা রাইজিংবিডি ডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তথ্য মতে, ২০২১ সালের ১৯ থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত সময়ে তারা একে অপরের সঙ্গে যোগসাজশ করে সিরিজ ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম বাড়িয়ে মুনাফা হাতিয়ে নিয়েছেন। ওই সময়ে অর্থাৎ ১০ দিনে কোম্পানির শেয়ারের দাম বহুগুণ বেড়ে যায়। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত সাপেক্ষে দীর্ঘদিন পর কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে।

পুঁজিবাজারে ওই সময়কালে গুঞ্জন ছিল- গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স, পিপলস ইন্স্যুরেন্স ও রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজি চলছে। কোম্পানিটির ব্যবসা ও আর্থিক অবস্থার উন্নতির কারণে নয়, বরং কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারের দাম বাড়ানো হয়েছে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন যেকোনো ধরনের কারসাজির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ১৯ থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত সময়ে ৫টি কোম্পানির শেয়ারের দাম কারসাজি করে বাড়ানোর দায়ে ৩ ব্যক্তিকে জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যে মো. সাইফ উল্লাহকে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা, মো. এ.জি. মাহমুদ ও মো. সাইফ উল্লাহকে যৌথভাবে ৪২ লাখ টাকা ও এস. এম. মোতাহারুল জানানকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সে হিসেবে অভিযুক্তদের মোট ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়েছে।

কারসাজিতে জড়িতদের পরিচিতি

স্বল্প সময়ের মধ্যে ৫টি কোম্পানির শেয়ার কারসাজি করে মো. সাইফ উল্লাহ, মো. এ.জি. মাহমুদ ও এস. এম. মোতাহারুল জানান বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। এ শেয়ার কারসাজিতে নেতৃত্ব দেন শেয়ার ব্যবসায়ী মো. সাইফ উল্লাহ। আর তাকে সহযোগিতা করেন শেয়ার ব্যবসায়ী মো. এ.জি. মাহমুদ ও এস. এম. মোতাহারুল জানান। এর মধ্যে মো. সাইফ উল্লাহর শ্যালক মো. এ.জি. মাহমুদ। আর এস. এম. মোতাহারুল জানান তাদের সহযোগী। সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল রিসোর্স লিমিটেডে অভিযুক্ত ৩ ব্যক্তির বিও হিসাব রয়েছে। তারা সিরিজ ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়ায়। তারা সবাই সমবায় অধিদপ্তরে উপ-নিবন্ধক ও বিশিষ্ট শেয়ার ব্যবসায়ী মো. আবুল খায়ের হিরুর সহযোগী।

এর আগে ২০২০ সালের সেপ্টেম্ব থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে প্রভাতি ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে শেয়ার কারসাজির জন্য মো. সাইফ উল্লাহকে ১৫ লাখ টাকা ও মো. এ.জি. মাহমুদকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজিতেও জড়িত থাকার অভিযোগে হিরুর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসানকে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা, মো. সাইফ উল্লাহকে ৫০ লাখ টাকা ও মো. এ.জি. মাহমুদকে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা আরোপ করা হয়।

ওই বছরের মে মাসে ইনডেক্স অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার নিয়ে শেয়ার কারসাজির জন্য মো. সাইফ উল্লাহকে ৩০ লাখ টাকা এবং মো. এ.জি. মাহমুদকে ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

একই বছরের আগস্টে জনতা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির অভিযোগে মো. সাইফ উল্লাহকে ৪০ লাখ টাকা এবং মো. এ.জি. মাহমুদ ও এস. এম. মোতাহারুল জানানকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

বিএসইসির তদন্ত কার্যক্রম

২০২১ সালের ১৯ থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত সময়ে যোগসাজশ করে সিরিজ ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার ২৩.৯২ শতাংশ, ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার ২৫.২৮ শতাংশ, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার ৩৪.৬৫ শতাংশ, পিপলস ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার ৩৭.৩৫ শতাংশ ও রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার ১৪.৭৪ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়। বিনিয়োগকারীদের প্রভাবিত করতে স্বল্প সময়ের মধ্যে কোম্পানিগুলো শেয়ারের দাম কৃত্রিমভাবে বাড়ায় কারসাজি চক্র। বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসির তদন্তে দীর্ঘদিন পর অবশেষে তা প্রমাণিত হয়েছে।

বিএসইসির সিদ্ধান্ত
কমিশন জানায়, অভিযুক্তরা ২০২১ সালের ১৯ থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত সময়ে গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স, পিপলস ইন্স্যুরেন্স ও রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার আইন লঙ্ঘনের মাধ্যমে কারসাজি করে অভিযুক্তরা ইচ্ছাকৃতভাবে একটি কৃত্রিম বাজার সৃষ্টি করে পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রভাবিত করার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন। উপস্থাপিত অভিযোগসমূহ সঠিক ও ইচ্ছাকৃত এবং এ কর্মকাণ্ডের ফলে পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, যা পুঁজিবাজার উন্নয়নের পরিপন্থি। তাই অভিযুক্তদের ব্যাখ্যা কমিশনের নিকট গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়নি। আইন অনুযায়ী অভিযুক্ত ব্যক্তিদের জরিমানা ধার্য করা হয়।

ঢাকা/এনটি/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কালচে হয়ে যাচ্ছে মোগল আমলের লালকেল্লা
  • সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা
  • কোটি টাকার চাঁদাবাজির মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন মেয়র শাহাদাত
  • ৫ কোম্পানির শেয়ার কারসাজি: ৩ জনকে দেড় কোটি টাকা অর্থদণ্ড