বাংলাদেশে গত বছরের ৫ আগস্টে আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ক্ষমতার অংশ হওয়া আন্দোলনকারী ছাত্রদের ঘনিষ্ঠরা দল গঠনের যে উদ্যোগ নিয়েছে, সে বিষয়ে নিজেদের আপত্তির কথা জানিয়েছে দেশের এই মুহূর্তের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি।

এ নিয়ে বিএনপি ও আন্দোলনকারী ছাত্র এবং তাদের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের জেরে রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন প্রশ্নও উঠছে যে, বিএনপি কেন নতুন দল গঠনের এ উদ্যোগ নিয়ে উদ্বিগ্ন? সরকার ঘনিষ্ঠ ছাত্ররা দল গঠন করলে তাতের বিএনপির বিরোধিতা করারই বা কারণ কি?

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড.

খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু দুজনেই বিবিসি বাংলাকে বলেছেন নতুন দল গঠনকে বিএনপি ভয় পাচ্ছে না। তারা বলেন, ‘তবে অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষ সরকার হিসেবে সামনে নির্বাচন আয়োজন করবে। এখন কেউ ক্ষমতায় থেকে দল গঠন করলে সেটি আর নিরপেক্ষ থাকবে না। এজন্যই ক্ষমতায় থেকে দল গঠন বা নির্বাচনের পক্ষে আমরা নই।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ সাইফুল আলম চৌধুরী বলছেন, আমারও ধারণা, দল হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে নয়, বরং নির্বাচনকালীন সরকার নিরপেক্ষতা হারালে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত কেমন হবে- এই আশঙ্কা থেকে হয়তো বিএনপি এর বিরোধিতা করছে।

‘বিএনপি একটি উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে এখানে এসেছে। ২০০৭ সালে বিএনপি ভেঙ্গে কিংস পার্টি গঠনের চেষ্টা দলটি সামাল দিয়েছে। তবে তাদের মধ্যে এই ভয় কাজ করতে পারে যে সরকারের কারও দল থাকলে নির্বাচনে সেই দল বিশেষ সুবিধা পেতে পারে।’, বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।


আলোচনায় কথিত ‘কিংস পার্টি’

সাধারণ রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে কেউ কোন দল করলে রাজনীতির পরিভাষায় তাকে ‘কিংস পার্টি’ বলা হয়। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় থেকেই বিএনপি ও আরেক সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ জাতীয় পার্টি গঠন করেছিলেন।

আওয়ামী লীগ আমলে সরকারের প্রচ্ছন্ন সমর্থনে বিভিন্ন সময়ে গঠিত হয়েছিলো বিএনএফ, বিএনএম ও তৃণমূল বিএনপি। ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত সরকারের সময়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাদের ভাগিয়ে পিডিপি গঠনের চেষ্টা হলেও তা খুব একটা সফল হয়নি।

এবার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতদের একাংশ কিংবা তাদের ঘনিষ্ঠরা গত ৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় নাগরিক কমিটি নামের প্ল্যাটফর্ম গঠন করলে বিএনপির দিক থেকে দলটির নেতাদের কেউ কেউ ‘কিংস পার্টি’র প্রসঙ্গ টেনে এনে এর সমালোচনা শুরু করেন।

তখন এ নিয়ে বিতর্ক জোরালো হলে ক্ষমতায় থেকে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বিএনপি গঠনের কথা উল্লেখ করে নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক মুহাম্মদ নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বিএনপিকেই ‘কিংস পার্টি’ বলে আখ্যা দিলে বিএনপির নেতারা আরও সোচ্চার হয়ে ওঠেন।

এর ধারাবাহিকতায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে নতুন দল গঠনের চেষ্টার অভিযোগ করেন।

সবশেষ গত বৃহস্পতিবার জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন জানিয়েছেন যে, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা আসবে। নাগরিক কমিটি এর মধ্যেই দেড়শ’র মতো উপজেলা ও থানায় তাদের কমিটি গঠন সম্পন্ন করেছে। সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন নেতা সারজিস আলমকে ওই কমিটির মুখ্য সংগঠক করা হয়েছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুজন সংগঠক নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে উপদেষ্টা হিসেবে আছেন।


সবশেষ বিবিসির সাথে এক সাক্ষাৎকারে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকারে নিজেদের প্রতিনিধি রেখে জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীরা নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলে অন্য দলগুলো সেটি মেনে নিবে না।

ফখরুল বলেন, ‘..ছাত্ররা তারা একটা রাজনৈতিক দল তৈরি করার কথা চিন্তা করছেন। সেখানে যদি ছাত্রদের প্রতিনিধি এই সরকারে থাকে, তাহলে তো নিরপেক্ষ থাকতে পারবে না। ওইটা হচ্ছে, সম্ভাব্য কথা। কিন্তু যদি তারা মনে করে যে, (সরকারে) থেকেই তারা নির্বাচন করবেন, তাহলে তো রাজনৈতিক দলগুলো মেনে নেবে না।’

তার এ বক্তব্য প্রচার হওয়ার পর পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানান সরকারের দুই তরুণ উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।

নাহিদ ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, সরকারে থেকে কেউ নির্বাচনে অংশ নিবে না। ‘কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে হলে একটা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সরকার ছেড়ে দিবে। দল গঠনে প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে চাইলে সরকার ছেড়ে দিবো।’

এদিকে সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল গতকাল রোববার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, বিএনপির সঙ্গে ছাত্রনেতাদের বা গণঅভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর মধ্যে কোনো দূরত্ব বা ভুল বোঝাবুঝি কাম্য নয়।

তিনি লিখেছেন,‘..... ছাত্রনেতারা সরকারে থাকা অবস্থায় কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করছেন না বা এতে যোগ দিতে যাচ্ছেন না।’

বিএনপির উদ্বেগের কারণ কী

বিএনপি নেতারা বলছেন, নতুন দল গঠন নিয়ে তাদের কোনো প্রতিক্রিয়াই নেই। কারণ, তাদের বিশ্বাস, নতুন দল জনমনে তেমন কোন প্রভাব ফেলতে পারবে না। বরং তাদের উদ্বেগের একমাত্র জায়গা হলো -নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হয় সেটি।

দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলছেন, নতুন দল নিয়ে কোনো ভয়, আশঙ্কা বা উদ্বেগ তাদের মধ্যে কাজ করছে না। তিনি আরও বলেন, ‘যে কেউ নতুন দল করতে পারে। আপত্তি নেই। কিন্তু বর্তমান সরকার নিজেরা নিজেদের নির্দলীয় ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বলছে। এখন এ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় দল হলে সরকার নিরপেক্ষতা হারাবে। যেটা দেশ ও জনগণের জন্য ভালো হবে না।’

তার মতে, অন্তর্বর্তী সরকার বলেছে, নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের অধিকার তারা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিবে। ফলে নির্বাচনে যাতে জনগণ স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে সেটি নিশ্চিত করার দায়িত্ব তাদের। কিন্তু ক্ষমতায় থেকে কেউ যদি নির্বাচন করে তাহলে সেই নির্বাচন যে নিরপেক্ষ হয় না সেটা তো শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন বারবার। তিনি গায়ের জোরে নির্বাচন করতে চেয়েছেন বলেই তাদের আজ এ পরিণতি। এজন্যই আমরা কারও ক্ষমতায় থেকে বা ক্ষমতার অংশীদার থেকে দল করা বা নির্বাচন করাকে সমর্থন করছি না’, বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মোশারফ।

দলের স্থায়ী কমিটির আরেকজন সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলছেন, ছাত্রউপদেষ্টারা পদ ছেড়ে দল বা নির্বাচন করলে বিএনপির আপত্তি থাকবে না। তারা বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে অনেক কথা বলেছে। কিন্তু বিএনপি বড় দল। তাই সব বিষয়ে কথা হয়তো বলছি না। তবে এটা নৈতিকতার বিষয়। ক্ষমতায় থেকে দল করা কিংবা নির্বাচন করার চিন্তা করা অনৈতিক।

ভোটের হিসাবনিকাশ?

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইফুল আলম চৌধুরী বলছেন, বিএনপি ভয় বা উদ্বেগের কথা স্বীকার না করলেও ভোট ব্যাংকের বিষয়টি বিবেচনায় নিলে বিএনপি কিছুটা চিন্তিত হতেই পারে। ছাত্ররা যেই মোটো নিয়ে এখন কাজ করছে তাহলো- প্রো-ইসলামিক, ভারতবিরোধী ও আওয়ামী লীগবিরোধী সেন্টিমেন্ট। বিএনপি ও জামায়াতের ভোট ব্যাংকটাও সেখানে। বিএনপি ভাবতে পারে যে, ছাত্রদের দল হলে সেটি তাদের ভোট ব্যাংকে প্রভাব ফেলার আশঙ্কা তৈরি করতে পারে।

সাইফুল আলম অবশ্য বলছেন, বড় দল হিসেবে বিএনপি এমন সব রাজনৈতিক উত্থান-পতন বিভিন্ন সময় দেখেছে এবং অস্থিতিশীল পরিবেশে কিংস পার্টি কিংবা বিএনপি ভেঙে সংস্কারপন্থীরা কিংস পার্টি গঠনের চেষ্টা করেও সফল হয়নি। সেদিক দিয়ে বিবেচনা করলে তাদের উদ্বেগের কিছু নেই। তবে বিএনপি মনে করতে পারে উপদেষ্টারা কিংবা তাদের ঘনিষ্ঠরা বা অনুসারীরা নির্বাচনের মাঠে সরকারের সমর্থন পেতে পারে। তাই নির্বাচনে নিরপেক্ষতার অভাব দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। আমার মনে হয় এটিই তাদের বর্তমান অবস্থানের মূল কারণ,’ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ গঠন র চ ষ ট ক ল ন সরক র ক ষমত য় থ ক দ র ঘন ষ উপদ ষ ট ব এনপ র সরক র র সরক র ন কম ট র সদস য আশঙ ক সমর থ বলছ ন ইসল ম ন করল

এছাড়াও পড়ুন:

নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ-আ.লীগ নেতা–কর্মীদের ‘গোপন বৈঠক’ ঘিরে গ্রেপ্তার ২২, সেনা হেফাজতে মেজর

রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি কনভেনশন সেন্টারে ‘গোপন বৈঠক’ ঘিরে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগ, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের ২২ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া ওই বৈঠক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠা মেজর পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সেনাবাহিনী। আজ বৃহস্পতিবার সেনা সদরের প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।

এ ঘটনায় রাজধানীর ভাটারা থানায় একটি মামলা করেছে পুলিশ। তাতে বলা হয়েছে, গত ৮ জুলাই বসুন্ধরাসংলগ্ন কে বি কনভেনশন সেন্টারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ একটি গোপন বৈঠকের আয়োজন করে। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বৈঠকে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীরা মিলে ৩০০-৪০০ জন অংশ নেন। তাঁরা সেখানে সরকারবিরোধী স্লোগান দেন। বৈঠকে পরিকল্পনা করা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ পাওয়ার পর সারা দেশ থেকে লোকজন এসে ঢাকায় সমবেত হবেন। তাঁরা ঢাকার শাহবাগ মোড় দখল করে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে দেশে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করবেন। তাঁরা সেখানে এসব ষড়যন্ত্র করেছিলেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) ওই মামলার তদন্ত করছে। ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান আজ বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ওই মামলায় এখন পর্যন্ত ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা এখন কারাগারে আছেন।

এই মামলা তদন্তসংশ্লিষ্ট ডিবি সূত্র জানিয়েছে, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা রয়েছেন। ‘তারা প্রিয় স্বদেশ’, ‘এফ ৭১ গেরিলা’, ‘বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম’, ‘প্রজন্ম ৭১’, ‘শেখ হাসিনা’সহ বিভিন্ন হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপের সদস্য। একটি গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করে জানতে পেরেছে, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে বসুন্ধরায় ওই গোপন সভার আয়োজন করা হয়েছিল। ওই গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত ১২ জুলাই উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকার একটি বাসা থেকে যুবলীগ নেতা সোহেল রানাকে গ্রেপ্তার করে ভাটারা থানা-পুলিশ। ওই দিন একই এলাকার একটি বাসা থেকে আওয়ামী লীগের নেত্রী শামীমা নাসরিনকে (শম্পা) গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর স্বামী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। দুজনকে গ্রেপ্তারের পর ১৩ জুলাই ভাটারা থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, সোহেল রানা ও শম্পাকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করে তথ্য যাচাই করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই বৈঠকে অংশ নেওয়া মেজর সাদিকুল হক ওরফে মেজর সাদিককে হেফাজতে নেওয়া হয়।

মেজর সাদিক নামের একজন আওয়ামী লীগের লোকজনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে—এমন সংবাদের বিষয়ে আজ সেনা সদরের ব্রিফিংয়ে প্রশ্ন করেছিলেন সাংবাদিকেরা। জবাবে সেনা সদরের মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মেজর সাদিকের বিষয়ে আমরা অবগত। তাঁর বিষয়ে তদন্ত চলমান। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে বলতে পারব।’

ওই ব্রিফিংয়ে সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশনসের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা বলেন, এ রকম ঘটনা জানার পরে সেনাবাহিনীর হেফাজতেই তিনি আছেন। তদন্ত চলমান আছে। তদন্তে দোষ প্রমাণিত হলে নিঃসন্দেহে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী সেনাবাহিনী তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র বলেছে, জিজ্ঞাসাবাদে বরগুনার যুবলীগ নেতা সোহেল রানা এবং গোপালগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেত্রী শামীমা নাসরিন বলেছেন, মেজর সাদিকের নির্দেশে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তৃণমূল আওয়ামী লীগ কর্মীদের সংগঠিত করে বিভিন্ন স্থানে নাশকতা চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ভাটারা থানা এলাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ই-ব্লকের ৭ নম্বর রোডের কে বি কনভেনশন সেন্টারের দ্বিতীয় তলা ভাড়া নেওয়া হয়। মেজর সাদিক সেদিন সরকার উৎখাতে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেন।

বসুন্ধরার ওই কনভেনশন হলের ব্যবস্থাপক মুজাহিদকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে ডিবি সূত্র জানিয়েছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, তিনি পরিকল্পিতভাবে সারা দিন কনভেনশন হলের সব সিসি ক্যামেরা বন্ধ রেখেছিলেন। তাঁদের ভাষ্যমতে, সেখানে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ নেতা–কর্মীসহ সমবেতদের নাশকতার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। এর আগে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আরও অন্তত চারটি প্রশিক্ষণ হয়েছিল। তবে সবগুলো প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভিডিও ফুটেজ নষ্ট করে ফেলা হয়েছে।

মামলার তদন্ত সম্পৃক্ত ডিবির একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততা, উপস্থিতি যাচাই করা হচ্ছে। তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য যাচাইয়ের জন্য গ্রেপ্তার অন্যদেরও রিমান্ডে এনে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। গোপন এই ষড়যন্ত্রে যাঁরা জড়িত ছিলেন, সবাইকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ