চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে তিন ফসলি জমিতে কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) খাল খনন করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের হাজিশ্বরাই ও জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের গোপীনাথপুর এলাকায় ওই খাল খনন করা হচ্ছে। ব্যক্তিমালিকানা জমিতে ক্ষতিপূরণ দেওয়া ছাড়াই বিএডিসির খাল খননে ক্ষোভ জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

জানা গেছে, বিএডিসি স্মলহোল্ডার এগ্রিকালচারাল কম্পিটিটিভনেস প্রজেক্টের (এসএসিপি) আওতায় উপজেলার হাজিশ্বরাই ও গোপীনাথপুর এলাকায় ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার খাল খননের কাজ শুরু করে। কৃষকদের অভিযোগ, যে জায়গায় খাল খনন করা হচ্ছে, সেগুলো ব্যক্তিমালিকানাধীন তিন ফসলি কৃষিজমি। কৃষকদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে এবং ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া ছাড়াই এক সপ্তাহ ধরে এক্সক্যাভেটর দিয়ে ৩৩ ফুট প্রশস্ত ও ১০ ফুট গভীর করে মাটি কেটে খাল খননকাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সরদার এন্টারপ্রাইজ। প্রতিবাদে কৃষকরা কয়েদিন ধরে খাল কাটার বিরোধিতার পাশাপাশি বিক্ষোভ করে আসছিলেন। 
খবর পেয়ে গতকাল বুধবার দুপুরে সরেজমিন এলাকা পরিদর্শন করেন ইউএনও মাহফুজা জেরিন, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায়, বিএডিসি চট্টগ্রাম জোনের সহকারী প্রকৌশলী (নির্মাণ) তমাল দাশ, বিএডিসি মিরসরাই (ক্ষুদ্র সেচ) উপসহকারী প্রকৌশলী জাহিদ হাসান, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন প্রমুখ। 

গোপীনাথপুর গ্রামের কৃষক নিজাম উদ্দিন বলেন, আগে তাদের জমিতে ছোট একটি ড্রেন ছিল। খননের ফলে এখন তা বড় খালে পরিণত হয়েছে। এতে তাঁর প্রায় ১০ শতক জমি নষ্ট হয়ে গেছে। খাল কাটার পর পাড়ে রাখা মাটি একটি চক্র রাতের আঁধারে নিয়ে বিক্রি করে দিচ্ছে। ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে ইউএনও কৃষকদের আশ্বাস দিয়ে গেছেন। ক্ষতিপূরণ না পেলে তারা বৃহত্তর পরিসরে আন্দোলনে নামবেন। 

উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন বলেন, বিএডিসি কৃষকদের জমি অধিগ্রহণ কিংবা কোনোরূপ ক্ষতিপূরণ না দিয়ে খাল খনন করে ফেলেছে। কৃষকদের ক্ষতি করে এভাবে খাল খনন করায় তারা ক্ষোভে ফুঁসছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য দাবি জানান তিনি। 

বিএডিসি চট্টগ্রাম জোনের সহকারী প্রকৌশলী (নির্মাণ) তমাল দাশ বলেন, কৃষকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গোপীনাথপুর গ্রামে দেড় কিলোমিটার বারোমসি ছড়া-খাল খননের প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল। ৩৩ ফুট প্রশস্ত ও ১০ ফুট গভীর করে প্রায় ৬০০ মিটার খাল উতোমধ্যে খনন করা হয়েছে। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার কথা রয়েছে। খাল খনন শুরু হওয়ার পর জমির মালিকরা ক্ষতিপূরণের দাবিতে খাল খননের বিরোধিতা করছেন। কৃষকদের দাবির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। 

ইউএনও মাহফুজা জেরিন বলেন, গোপীনাথপুর ও হাজিশ্বরাই গ্রামে ফসলি জমিতে ক্ষতিপূরণ ছাড়া খাল খননের বিষয়ে কৃষকরা অভিযোগ করেছিলেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিএডিসি প্রকৌশলীদের নিয়ে তিনি সেখানে সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করবেন। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: খ ল খনন ক খ ল খনন র ক ষকদ র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ফেস্টুন অপসারণ করায় ইউএনওকে শাসালেন বিএনপি নেতা 

ফেস্টুন অপসারণ করায় রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফয়সাল আহমেদকে শাসিয়েছেন এক বিএনপি নেতা। তিনি ইউএনওকে আগের স্থানেই ফেস্টুন লাগিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, “তা না হলে যেটা করা দরকার, সেটাই করব।”

এই বিএনপি নেতার নাম কে এম জুয়েল। তিনি রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক। গোদাগাড়ী উপজেলার রিশিকুলে তার বাড়ি। 

গত মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) গোদাগাড়ী উপজেলা সদরের সড়ক বিভাজকে থাকা বিভিন্ন দলের ফেস্টুন অপসারণ করেন ইউএনও ফয়সাল আহমেদ। বিষয়টি জানতে পেরে ইউএনওকে ফোন করে ধমকান জুয়েল।

কে এম জুয়েলের ফোনকল রেকর্ড পাওয়া গেছে। এতে শোনা গেছে, কে এম জুয়েল বলেছেন- “আজকে একটা ঘটনা ঘটেছে, আমি শুনেছি। আমি ইঞ্জিনিয়ার কে এম জুয়েল বলছি, সম্ভাব্য ক্যান্ডিডেট। আপনার গোদাগাড়ী থানার প্রোপারে যে পোস্টার সরিয়েছেন, এই বিষয়ে কিছুক্ষণ আগে আমাকে ইনফর্ম করা হয়েছে। সেখানে আমার পোস্টার ছিল। জামায়াত-বিএনপির পোস্টার ছিল। আপনি যে হটাইছেন, এর কারণ কী? কোনো পরিপত্র আছে, না ইচ্ছে করেই?”

ইউএনও তখন বলেন, “জনগণ অভিযোগ দিয়েছে।” জুয়েল বলেন, “জনগণ তো অনেক অভিযোগ দিয়েছে। সমগ্র গোদাগাড়ী থানাতে ভর্তি হয়ে আছে পোস্টার। তোলেন, সব তোলেন।”

এ সময় ইউএনও কিছু বলতে চাইলে তাকে থামিয়ে দিয়ে জুয়েল বলেন, “শোনেন, আমি যেটা বলছি লিগ্যাল রাইট নিয়ে বলছি, সেটার সঠিক অ্যানসার করবেন। আপনি কেন ওই জায়গার পোস্টার তুলেছেন, আর অন্য জায়গার তুলছেন না কেন? আমি ঢাকাতে আছি, আমি আসতেছি।”

ইউএনও বলেন, “আচ্ছা ঠিক আছে।” জুয়েল বলেন, “না, আপনি যেখান থেকে পোস্টার তুলেছেন, সেখানে আপনি সাবমিট করবেন পোস্টার।” কথা না বাড়িয়ে ইউএনও বলেন, “ঠিক আছে।”

এ সময় আরো ক্ষুব্ধ হয়ে বিএনপি নেতা জুয়েল বলেন, “কালকে যেন আমরা ওখানে দেখতে পাই, পোস্টার যেখানে ছিল। ঠিক আছে মানে কী? অবশ্যই করবেন। না হলে যেটা করা দরকার সেটাই করব। আপনার এগেইনেস্টে যেরকম স্টেপ নেওয়া দরকার, সেটাই আমি করব। বিশেষ করে আমরা করব। আমার নেতার ছবি তুলেছেন আপনি ওখান থেকে। জাস্ট রিমেম্বার ইট।”

জুয়েল বলতে থাকেন, “নরসিংদী বাড়ি দেখান আপনি, না? কোন দল থেকে আসছেন আপনি? কোন দল থেকে এসেছেন? কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেছেন আপনি? কালকে পোস্টার ভদ্রলোকের মতো লাগাবেন। ফাইজলামি! এহ, বিশাল ব্যাপার। উনি টিএনও হয়ে গোদাগাড়ীতে আসছেন।”

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ইউএনও ফয়সাল আহমেদ বলেন, “ডাইংপাড়া মোড়ে ব্যানার-ফেস্টুন এরকম পর্যায়ে ছিল যে, যান চলাচলে সমস্যা হচ্ছিল। পাশাপাশি পৌরসভার সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছিল বলে অভিযোগ ছিল। স্থানীয় জনগণ এ ব্যাপারে অভিযোগ করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পৌরসভা থেকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে সরানোর জন্য। দুই-তিনবার মৌখিকভাবে ও লিখিত আকারে জানানো হয়েছিল। না সরানোর কারণে ব্যানার-ফেস্টুন সরিয়ে পৌরসভায় রাখা হয়েছে।”

তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির একাধিক সভাতেও আলোচনা হয়েছিল। সেখান থেকে সকল রাজনৈতিক দলের পোস্টারই পৌরসভার পক্ষ থেকে সরানো হয়েছে। তবে, বিএনপি নেতা কে এম জুয়েলের ফোনে শাসানোর বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা কে এম জুয়েল বলেন, “ইউএনওর কাছে জনগণ অভিযোগ করেছে, আর আমরা কি মানুষ না? আমরা জানোয়ার? আমার ছবি তুলে ফেলুক আপত্তি নাই। আমার নেতার ছবিতে হাত দিয়েছে কেন? তার কাছে কি নির্বাচন কমিশন থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পোস্টার তুলে ফেলতে? তিন মাসের মধ্যে কি নির্বাচন? উনি জাস্টিস করতেন, আমার কোনো আপত্তি ছিল না। কিন্তু গরু-ছাগলের মতো আচরণ করবেন, তা তো হয় না।”

বিষয়টি নিয়ে কোথাও আলোচনা হয়নি, ইউএনও কোনো চিঠিও দেননি, দাবি করে এই বিএনপি নেতা বলেন, “গতকাল আমার এক লোককে ডেকে ইউএনও বলেছেন, যেখানে পোস্টার ছিল, দয়া করে আপনারা লাগিয়ে নেন। কিন্তু, আমরা তো লাগাব না। ইউএনওকেই লাগাতে হবে।”

উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির একজন সদস্য জানান, প্রায় দুই মাস আগে উপজেলা সদরের এসব ব্যানার-ফেস্টুন ও পোস্টারের বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উত্থাপন করেন এক ব্যক্তি। এক মাসেও সেগুলো অপসারণ না হওয়ায় পরবর্তী মাসের সভাতেও বিষয়টি আলোচনায় ওঠে। ওই সভায় ট্রাফিক পুলিশ আপত্তি করেছিল যে, ফেস্টুনের কারণে রাস্তার একপাশ থেকে অন্যপাশ দেখা যায় না। এতে দুর্ঘটনা ঘটছে। এ দুটি সভার মধ্যে প্রথম সভায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম শাওয়াল ছিলেন না। দুই সভার মাঝে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটি পুনর্গঠন করা হলে তিনি পরবর্তী সভায় উপস্থিত ছিলেন।

তবে, কোনো আলোচনা হয়নি দাবি করে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম শাওয়াল বলেন, “আমি আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য। পোস্টার নিয়ে কোনো আলোচনা সভায় হয়নি। ইউএনও আমাদের না জানিয়ে এভাবে ফেস্টুন অপসারণ করে ঠিক করেননি। সেখানে আমাদের নেতার ছবি ছিল।”

ঢাকা/কেয়া/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিএনপির সাবেক নেতার হুমকি, সরিয়ে ফেলা পোস্টার ইউএনওকেই লাগাতে হবে
  • ফেস্টুন অপসারণ করায় ইউএনওকে শাসালেন বিএনপি নেতা 
  • মেঘনায় নদীতে অবৈধ বালু তোলায় ব্যবহৃত ৭টি খননযন্ত্র ও ১টি বাল্কহেড জব্দ