তিন ফসলি জমিতে খাল খনন, চাষিদের প্রতিবাদ
Published: 29th, January 2025 GMT
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে তিন ফসলি জমিতে কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) খাল খনন করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের হাজিশ্বরাই ও জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের গোপীনাথপুর এলাকায় ওই খাল খনন করা হচ্ছে। ব্যক্তিমালিকানা জমিতে ক্ষতিপূরণ দেওয়া ছাড়াই বিএডিসির খাল খননে ক্ষোভ জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
জানা গেছে, বিএডিসি স্মলহোল্ডার এগ্রিকালচারাল কম্পিটিটিভনেস প্রজেক্টের (এসএসিপি) আওতায় উপজেলার হাজিশ্বরাই ও গোপীনাথপুর এলাকায় ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার খাল খননের কাজ শুরু করে। কৃষকদের অভিযোগ, যে জায়গায় খাল খনন করা হচ্ছে, সেগুলো ব্যক্তিমালিকানাধীন তিন ফসলি কৃষিজমি। কৃষকদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে এবং ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া ছাড়াই এক সপ্তাহ ধরে এক্সক্যাভেটর দিয়ে ৩৩ ফুট প্রশস্ত ও ১০ ফুট গভীর করে মাটি কেটে খাল খননকাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সরদার এন্টারপ্রাইজ। প্রতিবাদে কৃষকরা কয়েদিন ধরে খাল কাটার বিরোধিতার পাশাপাশি বিক্ষোভ করে আসছিলেন।
খবর পেয়ে গতকাল বুধবার দুপুরে সরেজমিন এলাকা পরিদর্শন করেন ইউএনও মাহফুজা জেরিন, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায়, বিএডিসি চট্টগ্রাম জোনের সহকারী প্রকৌশলী (নির্মাণ) তমাল দাশ, বিএডিসি মিরসরাই (ক্ষুদ্র সেচ) উপসহকারী প্রকৌশলী জাহিদ হাসান, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন প্রমুখ।
গোপীনাথপুর গ্রামের কৃষক নিজাম উদ্দিন বলেন, আগে তাদের জমিতে ছোট একটি ড্রেন ছিল। খননের ফলে এখন তা বড় খালে পরিণত হয়েছে। এতে তাঁর প্রায় ১০ শতক জমি নষ্ট হয়ে গেছে। খাল কাটার পর পাড়ে রাখা মাটি একটি চক্র রাতের আঁধারে নিয়ে বিক্রি করে দিচ্ছে। ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে ইউএনও কৃষকদের আশ্বাস দিয়ে গেছেন। ক্ষতিপূরণ না পেলে তারা বৃহত্তর পরিসরে আন্দোলনে নামবেন।
উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন বলেন, বিএডিসি কৃষকদের জমি অধিগ্রহণ কিংবা কোনোরূপ ক্ষতিপূরণ না দিয়ে খাল খনন করে ফেলেছে। কৃষকদের ক্ষতি করে এভাবে খাল খনন করায় তারা ক্ষোভে ফুঁসছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য দাবি জানান তিনি।
বিএডিসি চট্টগ্রাম জোনের সহকারী প্রকৌশলী (নির্মাণ) তমাল দাশ বলেন, কৃষকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গোপীনাথপুর গ্রামে দেড় কিলোমিটার বারোমসি ছড়া-খাল খননের প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল। ৩৩ ফুট প্রশস্ত ও ১০ ফুট গভীর করে প্রায় ৬০০ মিটার খাল উতোমধ্যে খনন করা হয়েছে। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার কথা রয়েছে। খাল খনন শুরু হওয়ার পর জমির মালিকরা ক্ষতিপূরণের দাবিতে খাল খননের বিরোধিতা করছেন। কৃষকদের দাবির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
ইউএনও মাহফুজা জেরিন বলেন, গোপীনাথপুর ও হাজিশ্বরাই গ্রামে ফসলি জমিতে ক্ষতিপূরণ ছাড়া খাল খননের বিষয়ে কৃষকরা অভিযোগ করেছিলেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিএডিসি প্রকৌশলীদের নিয়ে তিনি সেখানে সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করবেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: খ ল খনন ক খ ল খনন র ক ষকদ র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
‘লাল পরি’ হয়ে ঘরে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শিশুটি
ঠিকমতো চোখে দেখে না আট বছরের শিশু মরিয়ম। মাদ্রাসা থেকে ঘরে ফেরার পথে নিখোঁজ হয় সে। নানা ঘটনাচক্রে একসময় পৌঁছায় কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার ( ইউএনও) কার্যালয়ে। পরে ইউএনওর সহায়তায় ঘরে ফিরেছে শিশুটি। ঘরে ফেরার আগে তার ‘লাল পরি’ সাজার ইচ্ছাপূরণও হয়েছে।
শিশু মরিয়মের বাড়ি কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলায় পূর্ব পোকখালী চরপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। সেখানেই একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে। গত বুধবার মাদ্রাসা ছুটির পর মায়ের জন্য অপেক্ষায় ছিল সে। তবে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে এক ব্যক্তি তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় কক্সবাজার সদরে।
ইউএনও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মরিয়ম কক্সবাজার পৌরসভার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় চোখেমুখে ভয় আর আতঙ্কের ছাপ নিয়ে হাঁটাহাঁটি করছিল। কৌতূহলী এক পথচারী কথা বলে তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। ওই পথচারী মরিয়মকে নিয়ে যান তিন কিলোমিটার দূরে উপজেলা পরিষদের কার্যালয়ে। সেখান থেকে এক আনসার সদস্য মরিয়মকে ইউএনও কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।
ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী এ সময় শিশু মরিয়মের সঙ্গে কথা বলে তার বিস্তারিত ঠিকানা জানার চেষ্টা করেন। শিশুটি কেবল তার বাড়ি ঈদগাঁওয়ের পোকখালী এতটুকুই বলতে পারছিল। পরে ঈদগাঁওয়ের ইউএনওর মাধ্যমে শিশুটির বাড়ির ঠিকানা নিশ্চিত হওয়া যায়।
কাপড় কিনে দেওয়ার সময় মরিয়ম বলল, সে লাল পরি সেজে বাড়ি ফিরবে। তাকে লাল জামা, লাল চুড়ি, লাল লিপস্টিক ও লাল ওড়না দিয়ে লাল পরি সাজানো হয়। নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী, ইউএনও, কক্সবাজার সদর উপজেলাশিশুটি প্রথমে পাচারকারীদের খপ্পরে পড়েছিল বলে সন্দেহ ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিনের। তিনি বলেন, আলাপে শিশুটি জানায়, সে তার তিন-চার বছর বয়স পর্যন্ত ভালোভাবেই চোখে দেখত। এরপর থেকে ক্রমে তাঁর চোখের আলো ঝাপসা হতে শুরু করে। এখন সে তেমন দেখতে পায় না। তার বাবা মারা গেছেন। মা ও বড় ভাই অন্ধ। পরিবারে অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া একটি বোন আছে, সে–ই কেবল চোখে দেখতে পায়। ঘরের কাজ সব বোনই সামলায়। তাদের পরিবার থাকে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে।
শিশুটির কাছ থেকে চোখের বিষয়টি জেনে তাকে কক্সবাজার শহরের পানবাজার এলাকার কমিউনিটি চক্ষু হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে জানান ইউএনও। তিনি বলেন, ‘শিশুটির সঙ্গে কথা বলে মনে হলো তার চোখের সমস্যা এত জটিল না। হাসপাতালে নেওয়ার পর চক্ষুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিমল চৌধুরী তার চোখের পরীক্ষা করেন। এরপর বিনা মূল্যে শিশু মরিয়মকে চশমা ও এক মাসের ওষুধ কিনে দেওয়া হয়। চশমা চোখে দিয়ে সে জানিয়েছে, আগের চেয়ে অনেক ভালো দেখতে পাচ্ছে।’
শিশুটিকে মায়ের হাতে তুলে দেন কক্সবাজার সদরের ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী