চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ব্যাংকের ভেতরেই অবস্থান কর্মকর্তার, যা জানা গেল
Published: 21st, February 2025 GMT
তখন দিবাগত রাত একটা। চট্টগ্রাম নগরের জাকির হোসেন সড়কের একটি ব্যাংকের কার্যালয়ের বাইরে মানুষের ভিড়। সেখানে প্রবেশের ফটকেও তালা। উপস্থিত ব্যক্তিরা বলছেন, ভেতরে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে আটকে রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত এমন বেশ কয়েকটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলোয় বলা হয়, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের খুলশী শাখায় বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে আটকে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে নারী কর্মীদেরও বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। বাইরে তাঁদের স্বজনেরা উৎকণ্ঠায় আছেন। আরেকটি ভিডিওতে বলা হয়, ভেতরে এক কর্মকর্তা আত্মহত্যার চেষ্টা করছেন।
ভিডিওগুলো ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে ব্যাংকটির চট্টগ্রামের আঞ্চলিক শাখা, খুলশী শাখা ও পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। জানা যায়, মূলত এক কর্মকর্তা তাঁর বদলি আদেশ মানতে রাজি ছিলেন না। বদলি প্রত্যাহার করা না হলে তিনি শাখা থেকে বের হবেন না বলে হুঁশিয়ারি দেন। তিনি আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছিলেন। পরে তাঁকেসহ রাত আড়াইটার দিকে সব কর্মকর্তা বের হন।
ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ওই কর্মকর্তার নাম মো.
এরপর মো. আবদুল কাদের রাত ১০টার দিকে ফেসবুক লাইভে আসেন। তিনি অক্ষত থাকলে, তাঁর ওপর হামলা না হলে কিছুক্ষণ পর লাইভে আবার আসবেন জানিয়ে তিনি চলে যান। এরপর অবশ্য তিনি আর লাইভে আসেননি। পরে রাতে সেখানে চটগ্রাম অঞ্চলের (উত্তর) ঊর্ধতন কর্মকর্তারা আসেন। শাখার ব্যবস্থাপক ও অন্য কর্মকর্তারাও আসেন।
এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, বদলির আদেশ আসার পর উনি আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। দুই বছরের বেশি সময় ধরে খুলশী শাখায় কর্মরত তিনি। ফলে বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি সহজে। চট্টগ্রামের দুজনকে বদলি করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনি একজন। তবে ফেসবুকে ছড়ানো বিষয়গুলো সত্য নয়। যাচাই না করেই এসব ছড়ানো হচ্ছে।
খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মজিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেছি, এটি ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এক কর্মকর্তা বদলি হয়েছেন, কিন্তু তিনি যেতে চাইছেন না। বিষয়টি সমাধানের পর আমরা চলে এসেছি।’
জানতে চাইলে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের খুলশী শাখার ব্যবস্থাপক মো. নবীনুর ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, অঞ্চল ও শাখার কর্মকর্তারা তাঁকে সঙ্গে নিয়েই রাতে বের হয়েছেন। দুজন সহকর্মী রাতে তাঁর সঙ্গে পাঠানো হয়েছে নিরাপত্তার জন্যে। তাঁরা রাতে তাঁর সঙ্গেই ছিলেন।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সুরা নাস: বাংলা অর্থসহ এবং সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
সুরা নাস কুরআনের ১১৪তম এবং শেষ সুরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ বলে মাক্কী সুরা নামে পরিচিত। এতে মোট ৬টি আয়াত রয়েছে। এই সুরাটি মানুষকে শয়তানের প্রতারণা ও মন্দ প্রভাব থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করতে শেখায়। এটি ‘মু’আওয়িযাতাইন’ (দুটি আশ্রয়প্রার্থী সুরা: সুরা ফালাক ও সুরা নাস)–এর একটি।
সুরা নাসের বাংলা উচ্চারণ, অর্থ এবং সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা আলোচনা করা হলো।
বাংলা উচ্চারণ ও অর্থউচ্চারণ: কুল আউজু বিরাব্বিন নাস। মালিকিন নাস। ইলাহিন নাস। মিন শাররিল ওয়াসওয়াসিল খান্নাস। আল্লাজি ইউওয়াসউইসু ফি সুদুরিন নাস। মিনাল জিন্নাতি ওয়ান নাস।
অর্থ: বলো, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করি মানুষের রবের কাছে। মানুষের অধিপতির কাছে। মানুষের উপাস্যের কাছে। মন্দ প্রবৃত্তির কুমন্ত্রণা থেকে, যে পিছনে লুকায়। যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে। জিন ও মানুষের মধ্য থেকে।
আরও পড়ুনসুরা ফাতিহার বাংলা উচ্চারণ অর্থ ও ফজিলত২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪সুরা নাসের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসুরা নাস মানুষকে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করতে শিক্ষা দেয়। এই সুরায় আল্লাহকে তিনটি গুণে সম্বোধন করা হয়েছে:
রব্বিন নাস (মানুষের রব): আল্লাহ মানুষের সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা।
মালিকিন নাস (মানুষের অধিপতি): তিনি মানুষের উপর সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী।
ইলাহিন নাস (মানুষের উপাস্য): তিনিই একমাত্র উপাসনার যোগ্য।
সুরাটি শয়তানের মন্দ প্রভাব থেকে সুরক্ষা প্রার্থনায় জোর দেয়। কেননা, শয়তান ‘ওয়াসওয়াস’ (কুমন্ত্রণা) দেয় এবং ‘খান্নাস’ (পিছনে লুকিয়ে থাকে)। এই কুমন্ত্রণা জিন ও মানুষ উভয়ের থেকে আসতে পারে, যা মানুষের অন্তরে মন্দ চিন্তা ও পাপের প্রতি প্ররোচিত করে।
হাদিসে আছে, মহানবী (সা.) প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক এবং সুরা নাস পড়তেন, হাতে ফুঁ দিয়ে শরীরে মুছে নিতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫০১৭)
বোঝা যায়, সুরা নাস পড়া শয়তানের প্রভাব ও অন্যান্য ক্ষতি থেকে সুরক্ষা দেয়।
আরও পড়ুনসুরা কাহাফের ৪ কাহিনিতে সফলতার ৪ শিক্ষা২০ জুলাই ২০২৫সুরা নাসের ফজিলতসুরা নাসের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে বর্ণিত আছে, নবীজি (সা.)–কে যখন জাদু করা হয়, তখন সুরা ফালাক ও সুরা নাস নাজিল হয় এবং তিনি এই দুই সুরা পড়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন এবং আরোগ্য লাভ করেন। (সুনান নাসাঈ, হাদিস: ৫৪৩৭)
এই সুরা পড়া শয়তানের কুমন্ত্রণা, জাদু, হিংসা এবং অন্যান্য ক্ষতি থেকে সুরক্ষা প্রদান করে। তাফসিরে ইবনে কাসিরে বলা হয়েছে, “সুরা নাস মানুষকে শয়তানের মানসিক ও আধ্যাত্মিক আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।” (তাফসির ইবনে কাসির, পৃষ্ঠা: ৮/৫৩৬, দারুস সালাম প্রকাশনী, ২০০০)।
সুরা নাস একটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ সুরা, যা মানুষকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনার মাধ্যমে শয়তানের মন্দ প্রভাব থেকে রক্ষা করে। আধুনিক জীবনে, যখন আমরা প্রতিনিয়ত নানা প্রলোভন ও মানসিক চাপের মুখোমুখি হই, তখন এই সুরা আমাদের ঈমানকে দৃঢ় করতে পারে। এই সুরা নিয়মিত পাঠ, বিশেষ করে সকাল-সন্ধ্যায় এবং ঘুমানোর আগে, মুমিনের জীবনে শান্তি ও সুরক্ষা নিয়ে আসে।
আরও পড়ুনসুরা আর-রহমান: সারকথা ও ফজিলত০৮ আগস্ট ২০২৫