আসামি স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার ঘরে আবারও আগুন
Published: 4th, March 2025 GMT
বরিশাল নগরের কাউনিয়া এলাকায় যুবদল নেতা সুরুজ গাজীকে (৩৫) কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় আসামি স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা শাহীন হাওলাদারের বাড়িতে আবারও আগুন দিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। গতকাল সোমবার রাত ১০টার দিকে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউনিয়া হাউজিং এলাকার তাঁর টিনশেড ঘরে আগুন দেওয়া হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট প্রায় সোয়া এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
আসামি শাহীন হাওলাদার ৩ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা। অন্যদিকে নিহত সুরুজ গাজি একই ওয়ার্ডের যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।
কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শীর সূত্রে জানা গেছে, জমি বিক্রি নিয়ে বিরোধ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত রোববার রাত আটটার দিকে কাউনিয়া শের-ই-বাংলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পেছনে শাহীন ও সুরুজের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। এর জেরে শাহীনের নেতৃত্বে কয়েকজন সুরুজকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন। এ সময় তাঁকে রক্ষা করতে এগিয়ে গেলে একই ওয়ার্ড যুবদলের আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক নয়ন গাজীকেও কোপানো হয়। গুরুতর অবস্থায় তাঁদের দুজনকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সুরুজকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। রোববার রাতে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ লোকজন শাহীনের বাড়িতে আগুন দেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন গিয়ে তা নিয়ন্ত্রণে আনেন।
গতকাল বিকেলে বরিশাল সদর উপজেলার লামছড়ি গ্রামে জানাজা শেষে সুরুজের দাফন সম্পন্ন হয়। জানাজায় বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান, সদস্যসচিব জিয়া উদ্দিন সিকদার, সাবেক সদস্যসচিব মীর জাহিদুল কবির, বিএনপি নেতা আনোয়ারুল হক প্রমুখ অংশ নেন।
গতকাল সোমবার রাত ১০টার দিকে কাউনিয়া হাউজিং এলাকার শাহীন হাওলাদারের বাড়িতে আবারও আগুন দেন স্থানীয় লোকজন। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা গিয়ে আগুন নেভান।
এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্যসচিব শহিদুল হাওলাদার বলেন, ‘শাহীন দলের হাইব্রিড নেতা। দলের দুঃসময়ে সুরুজের ত্যাগ আছে। মূলত শাহীনের অপকর্মের প্রতিবাদ করা নিয়ে ঝামেলার সূত্রপাত হয়। এই হত্যাকাণ্ডের কিছুক্ষণ আগেও বিষয়টির সমাধানের জন্য তাঁরা উভয় পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসেছিলেন। সেখান থেকে ডেকে নিয়ে সুরুজকে হত্যা করা হয়। এটি আমাদের দলের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক। শাহীন ও তাঁর গোটা পরিবার নগরের নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। আমরা এমন অপরাধী পরিবারের কঠোর শাস্তি চাই।’
আরও পড়ুনবরিশালে যুবদল নেতাকে কুপিয়ে হত্যা, অভিযুক্ত ব্যক্তির বাড়িতে স্থানীয়দের আগুন০২ মার্চ ২০২৫এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গতকাল কাউনিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেছে সুরুজের পরিবার। এতে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা শাহীন হাওলাদারসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে আরও সাত-আটজনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুল নিশাত বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে আসামিদের গ্রেপ্তার করা যায়নি। গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।
শাহীনের বাড়িতে আবার আগুন দেওয়ার বিষয়ে ওসি বলেন, ‘অন্ধকারের মধ্যে কারা আগুন দিয়েছে, তা কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি। অতি উৎসাহী নাকি বিক্ষুব্ধ জনতা আগুন দিয়েছে, তা তদন্ত না করে নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না। আপাতত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বর শ ল য বদল ল কজন গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
অনুমোদনের প্রথম দিন সেন্ট মার্টিন যায়নি কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ
দীর্ঘ ৯ মাস পর শনিবার থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু প্রথম দিন কোনো জাহাজ সেন্ট মার্টিনে না যাওয়ার কারণে পর্যটকেরা দ্বীপে যেতে পারেননি। হাজারো পর্যটক সেন্ট মার্টিনে যেতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। অন্যদিকে জাহাজমালিকেরা বলছেন, সরকারের বিভিন্ন শর্তের কারণে পর্যটকদের আগ্রহ না থাকায় জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্বীপটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলে সরকারের কোনো বাধা নেই। লিখিতভাবে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে দিনে গিয়ে দিনেই চলে আসতে হবে; রাতে থাকা যাবে না।
এদিকে রাতে থাকার সুযোগ না থাকায় পর্যটকেরা যেতে আগ্রহী হচ্ছেন না। কারণ, দীর্ঘ সময় ভ্রমণ করে দ্বীপে গিয়ে আবার সেদিনই চলে আসতে হবে। এ কারণে জাহাজমালিকেরাও জাহাজ চালাতে অনীহা প্রকাশ করছেন। তাঁদের দাবি, দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত নয়।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম বলেন, জাহাজমালিকেরা যদি জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখেন, সেটা তাঁদের ব্যাপার। সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের জারি করা ১২টি নির্দেশনা এবার কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করবে জেলা প্রশাসন।
শাহিদুল আলম বলেন, আগে টেকনাফ থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করলেও নিরাপত্তার কারণে এখন কক্সবাজার শহর থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াত করবে।
সি ক্রুজ অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (স্কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে জাহাজ ছেড়ে গেলে সেন্ট মার্টিন পৌঁছাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগে। ফলে পর্যটকেরা কিছুই ঘুরে দেখতে পারবেন না। দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা যেমন কষ্টসাধ্য, তেমনি ব্যবসার জন্যও তা অলাভজনক। এ কারণেই অনেক পর্যটক সেন্ট মার্টিন যেতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।
হোসাইন ইসলাম আরও বলেন, রাতযাপন করার সুযোগ না থাকলে সেন্ট মার্টিনের পর্যটন মৌসুম জমে না। পর্যটকেরা রাতের সৈকত দেখতে চান, ঢেউয়ের শব্দ শুনতে চান। সেটাই তো সেন্ট মার্টিনের আসল আকর্ষণ।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনা কঠোরভাবে কার্যকর করা হবে। এ লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনসেন্ট মার্টিনে নিষেধাজ্ঞা উঠছে কাল, তবে জাহাজ চলবে কি৩১ অক্টোবর ২০২৫