সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাকে ডেকে নিয়ে ‘চাঁদাবাজি, মারধর’, শ্রমিক দল নেতা গ্রেপ্তার
Published: 11th, March 2025 GMT
সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাকে ডেকে নিয়ে চাঁদাবাজি, মারধর এবং জোর করে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে অর্থ আদায়ের চেষ্টার অভিযোগে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের নেতাসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে যৌথ বাহিনী। তাঁদের কাছ থেকে একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর মতিঝিলে সোনালী ব্যাংকের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের অষ্টম তলায় সোনালী ব্যাংক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের (সিবিএ) কার্যালয় থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা হলেন শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিবিএর সভাপতি মোহাম্মদ জাকির হোসেন (৫৯) এবং তাঁর সহযোগী সিবিএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সিরাজ উদ্দিন (৫৫)।
পুলিশ জানায়, সিবিএ নেতা জাকির হোসেন ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, মারধর এবং জোর করে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে অর্থ আদায়ের চেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়েছে। মামলার বাদী সোনালী ব্যাংকের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কল্যাণ শাখার কর্মকর্তা (ক্যাশ) এমদাদুল হক। আজ বিকেলে তিনি মতিঝিল থানায় মামলাটি করেছেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, আজ বেলা দুইটার দিকে একজন ফোন করে এমদাদুল হককে সিবিএ সভাপতির কার্যালয়ে যেতে বলেন। সেখানে গিয়ে তিনি দেখতে পান, জাকির হোসেন, আল-আমিন, সিরাজ উদ্দিনসহ পাঁচ থেকে সাতজন তাঁর সহকর্মী মিজানুর রহমানকে মারধর করছেন। তিনি কক্ষে প্রবেশ করার পর আসামিরা তাঁর ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে নগদ ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। এরপর তাঁকে মারধর করে বেসরকারি একটি ব্যাংকের একটি চেক ছিনিয়ে নেওয়া হয়। সেই চেকে ৫০ লাখ টাকা বসিয়ে তাঁর স্বাক্ষর নেন আসামিরা। এ ছাড়া আসামিরা তাঁর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে ১৫০ টাকা মূল্যের পাঁচটি সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেন।
মামলার এজাহারে এমদাদুল হক বলেন, তিনি সিবিএ কার্যালয় থেকে বেরিয়ে গুলিস্তান সেনা ক্যাম্পে গিয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। পরে সেনাবাহিনীর একটি দল মতিঝিল থানা-পুলিশের সহায়তায় সোনালী ব্যাংকের সিবিএ কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করে। সেখান থেকে একটি পিস্তল এবং তাঁর স্বাক্ষর করা স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয়।
মামলার বাদী এমদাদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, সোনালী ব্যাংকের বিভিন্ন কর্মকর্তাকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে জাকির হোসেন চাঁদা আদায় করেন। চাঁদা না দিলে নেমে আসে নির্যাতন। কিছুদিন আগে তাঁর কাছে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন জাকির হোসেন। এর মধ্যে তিনি জাকিরকে ৪০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। বাকি টাকার জন্য আজ তাঁকে সিবিএ কার্যালয়ে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁকে মারধর করে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে কাছে থাকা নগদ ৫০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। পাশাপাশি একটি চেকে ৫০ লাখ টাকা লিখে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়া হয়।
এমদাদুল হক বলেন, গত ডিসেম্বরে জাকির হোসেনের চাকরির মেয়াদ শেষ হয়েছে। তারপরও তিনি সিবিএর সভাপতি হয়েছেন। তিনি বিএনপির নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম করে যাচ্ছেন।
সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন জাকির ও তাঁর সহযোগীরা। বিভিন্ন সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ শুরু করেন তাঁরা। পাশাপাশি বিভিন্ন কর্মকর্তাকে জিম্মি করে অর্থ আদায় করেন। তাঁর এমন কর্মকাণ্ডে কর্মকর্তারা ক্ষুব্ধ হলেও ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না।
মতিঝিল থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আবু বকর সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, যৌথ বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার দুজন এখন মতিঝিল থানা হেফাজতে আছেন। তাঁদের কাছ থেকে পিস্তলসদৃশ একটি বস্তু উদ্ধার করা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র কর মকর ত কর মকর ত ক মত ঝ ল থ ন ম রধর
এছাড়াও পড়ুন:
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে গুরুত্ব আরোপ
কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কার্যত সামরিক সংঘাতে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। এ পরস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে ফোন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। বুধবার দুজনকে করা এ ফোন কলে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া উত্তেজনা কমানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এছাড়া দুই
ফোনালাপের বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে দেওয়া পৃথক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় মার্কো রুবিও বলেন, তিনি পেহেলগাম হামলায় নিহতদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তবে তিনি আরও বলেন, ভারত যেন পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করার আগে সতর্ক থাকে, কারণ এখনও পর্যন্ত ভারত এই হামলায় পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার কোনও প্রমাণ প্রকাশ করেনি।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক বিবৃতিতে বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণহানির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনা কমাতে এবং শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে ভারতকে পাকিস্তানের সঙ্গে কাজ করার জন্য বলেছেন।
পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে ফোনালাপে রুবিও- ২২ এপ্রিল ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পর্যটন কেন্দ্র পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।
তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, রুবিও এই অযৌক্তিক হামলার তদন্তে পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ বলেন, ভারতের উস্কানিমূলক আচরণ শুধু উত্তেজনাই বাড়াচ্ছে এবং পাকিস্তানের সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টাকে বিভ্রান্ত করছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা ভারতের ওপর দায়িত্বশীল আচরণ ও ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে চাপ প্রয়োগ করে।
এর আগে গত ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে কাশ্মীরের পেহেলগাম জেলার বৈসরণ তৃণভূমিতে বন্দুকধারীদের হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হন, যাদের প্রায় সবাই পর্যটক। হামলার দায় স্বীকার করে রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট নামে একটি সংগঠন। এটিকে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়্যেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে মনে করা হয়।
এ ঘটনায় আরও বেশ কয়েকজনকে আহত হন। যাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, তারা সবাই পুরুষ। বস্তুত, ২২ এপ্রিলের হামলা ছিল ২০১৯ সালের পুলোয়ামা হামলার পর জম্মু ও কাশ্মীরে সবচেয়ে বড় প্রাণঘাতী হামলা। বর্তমানে এ ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
পেহেলগামের ভয়াবহ ওই হামলার জেরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। দুই দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে ভারত। জবাবে সিমলা চুক্তি স্থগিত ও ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান।
তাছাড়া, হামলার পরে দুই দেশই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের ভিসা বাতিল করে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। সূত্র-এএফপি