সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাকে ডেকে নিয়ে চাঁদাবাজি, মারধর এবং জোর করে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে অর্থ আদায়ের চেষ্টার অভিযোগে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের নেতাসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে যৌথ বাহিনী। তাঁদের কাছ থেকে একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর মতিঝিলে সোনালী ব্যাংকের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের অষ্টম তলায় সোনালী ব্যাংক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের (সিবিএ) কার্যালয় থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা হলেন শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিবিএর সভাপতি মোহাম্মদ জাকির হোসেন (৫৯) এবং তাঁর সহযোগী সিবিএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সিরাজ উদ্দিন (৫৫)।

পুলিশ জানায়, সিবিএ নেতা জাকির হোসেন ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, মারধর এবং জোর করে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে অর্থ আদায়ের চেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়েছে। মামলার বাদী সোনালী ব্যাংকের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কল্যাণ শাখার কর্মকর্তা (ক্যাশ) এমদাদুল হক। আজ বিকেলে তিনি মতিঝিল থানায় মামলাটি করেছেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, আজ বেলা দুইটার দিকে একজন ফোন করে এমদাদুল হককে সিবিএ সভাপতির কার্যালয়ে যেতে বলেন। সেখানে গিয়ে তিনি দেখতে পান, জাকির হোসেন, আল-আমিন, সিরাজ উদ্দিনসহ পাঁচ থেকে সাতজন তাঁর সহকর্মী মিজানুর রহমানকে মারধর করছেন। তিনি কক্ষে প্রবেশ করার পর আসামিরা তাঁর ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে নগদ ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। এরপর তাঁকে মারধর করে বেসরকারি একটি ব্যাংকের একটি চেক ছিনিয়ে নেওয়া হয়। সেই চেকে ৫০ লাখ টাকা বসিয়ে তাঁর স্বাক্ষর নেন আসামিরা। এ ছাড়া আসামিরা তাঁর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে ১৫০ টাকা মূল্যের পাঁচটি সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেন।

মামলার এজাহারে এমদাদুল হক বলেন, তিনি সিবিএ কার্যালয় থেকে বেরিয়ে গুলিস্তান সেনা ক্যাম্পে গিয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। পরে সেনাবাহিনীর একটি দল মতিঝিল থানা-পুলিশের সহায়তায় সোনালী ব্যাংকের সিবিএ কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করে। সেখান থেকে একটি পিস্তল এবং তাঁর স্বাক্ষর করা স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয়।

মামলার বাদী এমদাদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, সোনালী ব্যাংকের বিভিন্ন কর্মকর্তাকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে জাকির হোসেন চাঁদা আদায় করেন। চাঁদা না দিলে নেমে আসে নির্যাতন। কিছুদিন আগে তাঁর কাছে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন জাকির হোসেন। এর মধ্যে তিনি জাকিরকে ৪০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। বাকি টাকার জন্য আজ তাঁকে সিবিএ কার্যালয়ে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁকে মারধর করে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে কাছে থাকা নগদ ৫০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। পাশাপাশি একটি চেকে ৫০ লাখ টাকা লিখে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়া হয়।

এমদাদুল হক বলেন, গত ডিসেম্বরে জাকির হোসেনের চাকরির মেয়াদ শেষ হয়েছে। তারপরও তিনি সিবিএর সভাপতি হয়েছেন। তিনি বিএনপির নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম করে যাচ্ছেন।

সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন জাকির ও তাঁর সহযোগীরা। বিভিন্ন সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ শুরু করেন তাঁরা। পাশাপাশি বিভিন্ন কর্মকর্তাকে জিম্মি করে অর্থ আদায় করেন। তাঁর এমন কর্মকাণ্ডে কর্মকর্তারা ক্ষুব্ধ হলেও ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না।

মতিঝিল থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আবু বকর সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, যৌথ বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার দুজন এখন মতিঝিল থানা হেফাজতে আছেন। তাঁদের কাছ থেকে পিস্তলসদৃশ একটি বস্তু উদ্ধার করা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র কর মকর ত কর মকর ত ক মত ঝ ল থ ন ম রধর

এছাড়াও পড়ুন:

আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিলেন ইশরাক হোসেন

বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব দেওয়ার দাবিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনে ঈদের বিরতির পর ফের অবস্থান নিয়েছেন সংস্থাটির কর্মচারীরা। এর সঙ্গে ঢাকাবাসীর ব্যানারে নগরভবনে একত্রিত হয়েছেন ইশরাকের অনুসারীরা। সেখানে উপস্থিত হয়ে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন ইশরাক হোসেন।

আজ রোববার সকাল থেকে ইশরাকের অনুসারীরা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগরভবনে একত্রিত হয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করলেও। সকাল ১১ টার দিকে নগরভবনে প্রবেশ করেন ইশরাক হোসেন এবং আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন তিনি।

ইশরাক হোসেন বলেন, সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করেন। তাহলে অচল অবস্থা কেটে যাবে। এই সমস্যা সুরাহা না করা পর্যন্ত এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের এই আন্দোলন চলমান থাকবে। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা সংবিধান লংঘন করেছেন। আন্দোলন চলমান থাকবে। এখান থেকে ফিরে আসার কোনো সুযোগ নেই। এই লড়াই থেকে ফিরে আসার কোনো সুযোগ নেই। প্রধান উপদেষ্টাকে আহ্বান জানাবো, তিনি যেন বিষয়টি সরাসরি নিজে তত্ত্বাবধান করেন। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিচালনায় বিশ্বাস করি। এখন আমাদের আন্দোলন যেভাবে চলছে কোনো অবস্থাতেই আমরা এখান থেকে ফিরে যেতে পারি না। আদালতের রায় জনগণের রায়কে আপনারা মেনে নিন। 

ইশরাক বলেন, আমরা যদি এখান থেকে পেছনের দিকে চলে যাই, তাহলে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হবে না। সরকারকে আহ্বান জানাবো, আপনারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটা নিষ্পত্তি করেন। নইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এই সংকটে চলবেই। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের যেসব দৈনন্দিন কার্যক্রম চলবে, জনগণের জন্য ভোগান্তি না হয়। এগুলো আমাদের তত্ত্বাবধানে চলমান থাকবে।

এদিকে তারা ‘শপথ শপথ শপথ চাই, ইশরাক ভাইয়ের শপথ চাই’, ‘মেয়র নিয়ে তালবাহানা, সহ্য করা হবে না’, ‘চলছে লড়াই চলবে, ইশরাক ভাই লড়বে’, ‘নগর পিতা ইশরাক ভাই, আমরা তোমায় ভুলি নাই’- এমন নানা স্লোগান দিয়ে যাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। তাদের স্লোগানে উত্তাল ছিল পুরো নগরভবন। তাদের আন্দোলনের ফলে বিরতির আগে ১৫ মে থেকে ৩ জুন পর্যন্ত নগর ভবন থেকে দেওয়া সব নাগরিক সেবা বন্ধ ছিল। ঈদের ছুটির পর আজ থেকে ফের তারা আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন ইশরাকের অনুসারীরা।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়। সে সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফল বাতিল চেয়ে ২০২০ সালের ৩ মার্চ মামলা করেন ইশরাক।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে। এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু তাকে যেন শপথ পড়ানো না হয়; সেজন্য গত ১৪ মে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে গত ১৫ মে থেকে আন্দোলন নামেন ইশরাক সমর্থকরা। তাদের আন্দোলনের কারণে ডিএসসিসি নগর ভবন কার্যত অচল হয়ে পড়ে। কিন্তু আইনি জটিলতার কথা বলে ইশরাকের শপথের আয়োজন থেকে বিরত থাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

এরপর এ রিট মামলার ওপর কয়েক দফা শুনানির পর তা খারিজ করে আদেশ দেন হাইকোর্টের বেঞ্চ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ