গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত রাঙামাটিতে খুনসহ বিভিন্ন অপরাধ কিছুটা বেড়ে যায়। তবে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আইনশৃঙ্খলার দৃশ্যমান উন্নতি হয়েছে। কমেছে অপরাধসহ মামলা দায়েরের সংখ্যা। গত সাত মাসে জেলার ১২ থানা ও আদালতে ৭৯৮টি মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে আদালতে ৬০৬টি ও থানায় ১৯২টি মামলা নথিভুক্ত হয়েছে।
গত ২০ সেপ্টেম্বর রাঙামাটি জেলা শহরে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের ঘটনায় অনিক চাকমা নামের এক কলেজছাত্র নিহত ও অর্ধশতের বেশি আহত হয়। এসময় পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষক কার্যালয়সহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়। তখন সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে নিহতের ঘটনায় আতঙ্কিত ছিল মানুষ। তবে পরের দিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়।
প্রায় সাত লাখ মানুষ অধ্যুষিত রাঙামাটি জেলায় ১০টি উপজেলা রয়েছে। রাঙামাটি সদর, কাউখালী, রাজস্থলী, বরকল, জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি, লংগদু, নানিয়ারচরে একটি করে থানা থাকলেও বাঘাইছড়ি ও কাপ্তাইয়ের দুটি করে থানা রয়েছে। গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের ১২ মার্চ পর্যন্ত ১২ থানা ও আদালতে ৭৯৮টি মামলা হয়েছে। আদালতে মামলা (সিআর মামলা) হয়েছে ৬০৬টি। এর মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা রয়েছে ৪৬টি। থানায় মামলা (জিআর) হয়েছে ১৯২টি। গত বছরের আগষ্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫ মাসে ১২৬টি এবং চলতি বছরের আড়াই মাসে ৬৬টি মামলা দায়ের হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত সাত মাসে রাঙামাটি জেলায় খুন, চাঁদাবাজি, চুরিসহ নানা অপরাধ কিছুটা বেড়েছে। তবে দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় এ অপরাধের সংখ্যা কম। আগষ্ট থেকে ডিসেম্বর পর্ষন্ত কিছুটা অপরাধ বাড়তি থাকলেও জানুয়ারি থেকে তা কমে এসেছে। ৭ নভেম্বর বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়নে নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান চালিয়ে একটি বন্দুক ও গোলাবারুদ উদ্ধার করে।
গত ২৪ ডিসেম্বর কাপ্তাইয়ের রাইখালী ইউনিয়নের বালুখালী এলাকায় ২ নম্বর রাইখালী যুবলীগের সহ-সভাপতি ওবায়েদ উল্লাহকে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ২৬ জানুয়ারি নানিয়ারচর উপজেলার বেতছড়িতে দুর্বৃত্তরা চাঁদা না পেয়ে ৪টি মোবাইল টাওয়ারের তার কেটে দেয়। ১৫ জানুয়ারি নিরাপত্তা বাহিনী ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠনের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে একজন সন্ত্রাসী নিহত হয়। ২ ফেব্রুয়ারি কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া এলাকায় শিলা নামে তৃতীয় লিঙ্গের একজনকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এর পরদিন এক শ্রমিকের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
কাউখালী থানায় গত সাত মাসে ২৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ২টি খুন, ১টি নারী নির্যাতন, ১টি ধর্ষণ, ১টি চুরি, ১টি বিস্ফোরক মামলা, ১৬টি মাদক মামলা, ১টি চোরাচালান মামলা ও অস্ত্র মামলা ১টি।
জেলা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট প্রতীম রায় পাম্পু বলেন, ‘রাঙামাটিতে অপরাধের ঘটনা অন্য জেলা থেকে তুলনামূলকভাবে কম। তবে সাম্প্রদায়িক মামলা কিছুটা বেড়েছে। ২০ সেপ্টেম্বর একটি মারাত্মক ঘটনা ঘটেছে। আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের বিরোধে খুনের মামলা হয়েছে ১টি। রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ মামলার মধ্যে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে রাঙামাটি সদর, কাপ্তাই ও কাউখালীতে ৩টি মামলা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক কতোয়ালী থানায় ২টি মামলা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘৫ আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মামলার সংখ্যা বাড়তির দিকে থাকলেও চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মধ্য মার্চ পর্যন্ত মামলা কিছুটা কমে গেছে।’
রাঙামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মারুফ আহমেদ বলেন, ‘চাদাঁবাজির বিশেষ কোন মামলা হয়নি। এছাড়া ডাকাতির মামলাও থানায় হয়নি। তবে আদালতের মাধ্যমে একটি মামলা হয়েছে। আর যেসব খুন মারামারিসহ অপরাধমূলক ঘটনা ঘটছে তাৎক্ষণিকভাবে দোষীদের চিহ্নিত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে কাউখালীতে শিলা হত্যা ও কাপ্তাইয়ে ব্যবসায়ী হত্যা মামলায় পুলিশ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। অপরাধ ও মামলার সংখ্যা বাড়েনি।’
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
উৎসবমুখর পরিবেশে হবে দুর্গাপূজা: ডিএমপি কমিশনার
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল আছে। আগের মতোই সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা অনুকূল পরিবেশে ও নির্বিঘ্নে হবে।
আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীতে ডিএমপির সদর দপ্তরে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে আয়োজিত প্রস্তুতি সভায় তিনি এসব কথা বলেছেন।
আরো পড়ুন:
গোপালগঞ্জে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় বৃদ্ধা নিহত
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত
এবার ঢাকা মহানগরীতে ২৫৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা হবে, জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেছেন, মণ্ডপভিত্তিক নিরাপত্তা পরিকল্পনার বাইরে পৃথক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও থাকবে। প্রতিমা বিসর্জনের দিন সার্বিক নিরাপত্তা দেওয়া হবে।
প্রস্তুতি সভায় বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, উপাধ্যক্ষ রামকৃষ্ণ মিশন মঠসহ সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। তারা শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গৃহীত নিরাপত্তা পরিকল্পনা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং ধন্যবাদ জানান।
সভায় ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (সিটিটিসি) মো. মাসুদ করিম, অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মো. শফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত কমিশনার (লজিস্টিকস) হাসান মো. শওকত আলী, অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. জিললুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকতা এবং সশস্ত্র বাহিনী, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও সেবা সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/এমআর/রফিক