জাহাঙ্গীরনগরে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু
Published: 2nd, August 2025 GMT
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন একটি ভবন থেকে পড়ে মো. আরিফুল (৩০) নামের এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন নতুন গ্রন্থাগারে গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
আহত অবস্থায় আরিফুলকে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে নেওয়া হয়। সেখান থেকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে সন্ধ্যার দিকে তিনি মারা যান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের চিকিৎসক নিংতম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁকে কয়েকজন উদ্ধার করে মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে আসেন। জানানো হয়, তিনি ভবন থেকে পড়ে গেছেন। অবস্থা খারাপ দেখে সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে এনাম মেডিকেলে পাঠানো হয়। তাঁর মুখে ক্ষত ছিল এবং দাঁত পড়ে গিয়েছিল।
ভবনটি নির্মাণ করছে অনিক ট্রেডিং করপোরেশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানের প্রধান প্রকৌশলী মোমিনুল করিম বলেন, ‘আমাদের নির্মাণকাজ বর্তমানে বন্ধ আছে। তবে কিছু শ্রমিক সেখানে থাকেন। দুপুরে ফোনে জানতে পারি, একজন শ্রমিক পড়ে গেছেন। সম্ভবত অসাবধানতাবশত হাঁটাচলার সময় এ ঘটনা ঘটে। পরে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।’
এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপক সুলতান বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একজন রোগী এসেছিলেন। তিনি ছাদ থেকে পড়ে গেছেন। আমাদের হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই তাঁর মৃত্যু হয়।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম রাশিদুল আলম গতকাল রাতে বলেন, ‘খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা জানিয়েছে, একজন শ্রমিক মারা গেছেন। এমন একটি ঘটনা আমাদের আগেই জানানো হয়নি কেন, তা জিজ্ঞাস করেছি। বিষয়টি প্রো-ভিসি (প্রশাসন) দেখছেন।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গঙ্গাচড়ায় হিন্দুবাড়িতে হামলা ঠেকাতে ‘পর্যাপ্ত’ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি
তখন বেলা দুইটা। নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার সিঙ্গেরগাড়ি বাংলাবাজার থেকে একটি মিছিল তিন কিলোমিটার পশ্চিমে পাড়ের হাটের দিকে যায়। মিছিলে ৩০০-৪০০ মানুষ ছিলেন। তবে মিছিলটি যখন সিঙ্গেরগাড়ি বাংলাবাজারে ফিরে আসে, তখন লোকে লোকারণ্য। মিছিলে পাঁচ-ছয় হাজার মানুষ। এরপর তাঁরা রংপুরের গঙ্গাগড়া উপজেলার বেতগাড়ি ইউনিয়নের আলদাদপুর গ্রামের দিকে রওনা দেন।
হিন্দুদের বসতবাড়িতে হামলার আগে এভাবেই প্রস্তুতি নেওয়ার বর্ণনা দিলেন নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের মাগুরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি দেখছি, দুজন ছিল গাড়ির ভেতরে। একজন ড্রাইভার, একজন এসআই (উপপরিদর্শক)। আমি বললাম, ভাইয়া, আমার সঙ্গে থাকেন, নিবৃত্ত করি। ওরা ভয়ে মনে হয় পিছিয়ে গিয়েছে! মাইকিং করে যেহেতু এত বড় কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে, ওনাদের (পুলিশ) আরও সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া উচিত ছিল।’
আলদাদপুর গ্রামের এক কিশোরের ফেসবুকে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে ফেসবুকে অবমাননার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত রোববার মিছিল নিয়ে গিয়ে গ্রামটিতে হামলা চালানো হয়। আগের দিন শনিবারও গ্রামটিতে হামলা করা হয়। ওই দিন অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে কিশোরটিকে আটক করে থানায় নিয়ে গিয়েছিল গঙ্গাচড়া থানা–পুলিশ। সাইবার সুরক্ষা আইনে মামলা করে পরদিন রোববার ওই কিশোরকে আদালতের মাধ্যমে সম্মিলিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
আলদাদপুর গ্রামটি পাশের জেলা নীলফামারীর মাগুরা ইউনিয়নের সীমানা লাগোয়া। স্থানীয় ব্যক্তি ও ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর ভাষ্য, সিঙ্গেরগাড়ি বাংলাবাজার থেকে মিছিল নিয়ে এসে দুই দফা হামলা চালানো হয়। রোববার সকাল থেকে মাগুরা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করে সিঙ্গেরগাড়ি বাংলাবাজারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দেওয়ার কথা বলা হয়। দুপুর ১২টার দিকে স্থানীয় কয়েকটি মসজিদের মাইকেও মানববন্ধনের বিষয়টি প্রচার করা হয়।
আমি দেখছি, দুজন ছিল গাড়ির ভেতরে। একজন ড্রাইভার, একজন এসআই (উপপরিদর্শক)। আমি বললাম, ভাইয়া, আমার সঙ্গে থাকেন, নিবৃত্ত করি। ওরা ভয়ে মনে হয় পিছিয়ে গিয়েছে! মাইকিং করে যেহেতু এত বড় কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে, ওনাদের (পুলিশ) আরও সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া উচিত ছিল।মাগুরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামানগঙ্গাচড়া উপজেলা প্রশাসনের হিসাবে, ১৫টি বসতঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত যে পাঁচ তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে, তাঁদের বাড়ি মাগুরা ইউনিয়নে।
সিঙ্গেরগাড়ি বাংলাবাজার, হাজির হাট ও পাড়ের হাটের অন্তত ২০ জনের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁরা বলেছেন, সেদিন মিছিলে অনেক অপরিচিতি তরুণ ছিলেন। মাইকিং করে হাজার হাজার মানুষ সিঙ্গেরগাড়ি বাংলাবাজারে জড়ো করা হলেও পুলিশের ভূমিকা ছিল দর্শকের মতো। মাগুরার ইউপি সদস্য রুহুল আমিনও অভিন্ন অভিযোগ করেন। বেতগাড়ির ইউপি সদস্য পরেশ চন্দ্র বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গাফিলতি না করলে হামলা ঠেকানো যেত।
তবে কিশোরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল ইসলাম দাবি করেন, তাঁরা ওই দিন সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছিলেন।
বিষয়টি জানার পর থানার ওসি ও ইউপি চেয়ারম্যানকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছিলেন বলে জানান কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রীতম সাহা।
গঙ্গাচড়া থানার ওসি আল এমরান বলেন, তিনিসহ থানা ও পুলিশ লাইনসের ৩৫ সদস্য ছিলেন। কিন্তু খিলালগঞ্জ বাজার থেকে উচ্ছৃঙ্খল দেড় হাজার থেকে দুই হাজার তরুণ গ্রামটিতে ঢুকে পড়েন। তাঁদের বাধা দিতে গিয়ে এক কনস্টেবল আহত হন।