ওমেগা-৩ হলো অসম্পৃক্ত চর্বি বা আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট। মানবদেহে খাবারের বিপাকক্রিয়া ও শরীর সুস্থ রাখতে এর বিকল্প নেই। ওমেগা-৩ ফ্যাট রয়েছে ১১ ধরনের। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি হলো ইপিএ, ডিএইচএ ও এএলএ। ইপিএ ও ডিএইচএ প্রধানত চর্বিযুক্ত মাছের মতো প্রাণিজ খাবারে পাওয়া যায়। আর এএলএ পাওয়া যায় প্রধানত উদ্ভিদে।

শিশুর বিকাশে কেন গুরুত্বপূর্ণ

শিশুর মনোযোগের ঘাটতি ও হাইপার অ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডারের মতো সমস্যা প্রতিরোধে ওমেগা-৩-এর ভূমিকা আছে। গবেষণায় দেখা গেছে, এর ঘাটতি থাকলে শিশুর বুদ্ধিমত্তা, স্মৃতিশক্তি ও শেখার উন্নতি কম হয়। তাই শিশুদের অল্প বয়স থেকে ওমেগা-৩ আছে এমন খাবার দেওয়া উচিত।

হাঁপানি একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা, যা প্রায়ই শিশুদেরও হতে দেখা যায়। ওমেগা-৩ শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ কমাতেও সাহায্য করে। ১৮ বছরের কম বয়সী প্রায় ৪ শতাংশ শিশু বিভিন্নভাবে ঘুমের সমস্যায় ভোগে। ওমেগা-৩-এর মাত্রা কম থাকলে ঘুমের সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, ওমেগা-৩–সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণে শিশুর ঘুমের মান উন্নত হয়।

ওমেগা-৩ শিশুর মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে পারে। বিশেষ করে শেখার ক্ষেত্রে। স্মৃতিশক্তি রক্ষায়ও ওমেগা-৩ কার্যকর ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি শিশুর বদমেজাজ ও বিষণ্নতা প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে ওমেগা-৩।

কোন খাবারে পাবেন ওমেগা-৩

চারণভূমির ঘাস খাওয়া পশুর মাংস ও সামুদ্রিক খাবারে প্রচুর ওমেগা-৩ পাওয়া যায়। দেশি ডিমেও ওমেগা-৩ পাওয়া যায় বেশি পরিমাণে। আরেকটি ভালো উৎস সামুদ্রিক খাবার ও সামুদ্রিক মাছ যেমন স্যামন, সার্ডিন ইত্যাদি। ইলিশ, টুনা, রুই, কাতলা, চিংড়ি, কড মাছের তেলে ওমেগা-৩ পাওয়া যায়। সপ্তাহে যদি এক টুকরা তেলযুক্ত মাছ খান তাহলে ইপিএ ও ডিএইচও মিলিয়ে পাবেন ৩ দশমিক ৬ গ্রাম ওমেগা-৩। যদি ১ দিন রুই, কাতলা, চিংড়ি মাছ খান, তাহলে ইপিএ ও ডিএইচ পাবেন ৫০০ মিলিগ্রাম।

ওমেগা-৩ আছে লইট্টা ও কোরাল মাছেও। উদ্ভিজ্জ খাবারের মধ্যে চিয়া ও তিসি বীজ, তিল, সয়াবিন, আখরোট, সামুদ্রিক শৈবাল স্পিরুলিনায় ওমেগা-৩ পাওয়া যায়। একমুঠো তিসি বীজ থেকে ২ হাজার ৪০০ মিলিগ্রাম ও তিনটি আখরোট থেকে ১ হাজার ২৮০ মিলিগ্রাম এএলএ পাওয়া যেতে পারে। ফলের মধ্যে অ্যাভোকাডো, পেঁপে, কিউই, কলায় ওমেগা-৩ আছে। নিরামিষাশী হলে এসব খাবারের সঙ্গে লেবুজাতীয় সাইট্রাস ফল ও প্রোবায়োটিক–সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে পারেন।

পরামর্শ

যেসব শিশু মাছ খেতে চায় না বা খাবারে পর্যাপ্ত ওমেগা-৩ পায় না, চিকিৎসকের পরামর্শে তাদের ওমেগা-৩ সাপ্লিমেন্ট দেওয়া যায়।

যাঁরা নিরামিষাশী, তাঁরা উদ্ভিদভিত্তিক ওমেগা-৩–সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন। 

বাইরের কোনো খাবার থেকে ওমেগা-৩ গ্রহণ করতে চাইলে অবশ্যই খাবারের লেবেল দেখুন।

শিশুর খাবার ওমেগা-৩–সমৃদ্ধ তেল দিয়ে রান্না করুন।


লিনা আকতার, পুষ্টিবিদ, রাইয়ান হেলথ কেয়ার হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার, দিনাজপুর

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সমস য গ রহণ

এছাড়াও পড়ুন:

শিশুর মানসিক বিকাশে ওমেগা-থ্রির গুরুত্ব 

ওমেগা-৩ হলো অসম্পৃক্ত চর্বি বা আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট। মানবদেহে খাবারের বিপাকক্রিয়া ও শরীর সুস্থ রাখতে এর বিকল্প নেই। ওমেগা-৩ ফ্যাট রয়েছে ১১ ধরনের। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি হলো ইপিএ, ডিএইচএ ও এএলএ। ইপিএ ও ডিএইচএ প্রধানত চর্বিযুক্ত মাছের মতো প্রাণিজ খাবারে পাওয়া যায়। আর এএলএ পাওয়া যায় প্রধানত উদ্ভিদে।

শিশুর বিকাশে কেন গুরুত্বপূর্ণ

শিশুর মনোযোগের ঘাটতি ও হাইপার অ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডারের মতো সমস্যা প্রতিরোধে ওমেগা-৩-এর ভূমিকা আছে। গবেষণায় দেখা গেছে, এর ঘাটতি থাকলে শিশুর বুদ্ধিমত্তা, স্মৃতিশক্তি ও শেখার উন্নতি কম হয়। তাই শিশুদের অল্প বয়স থেকে ওমেগা-৩ আছে এমন খাবার দেওয়া উচিত।

হাঁপানি একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা, যা প্রায়ই শিশুদেরও হতে দেখা যায়। ওমেগা-৩ শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ কমাতেও সাহায্য করে। ১৮ বছরের কম বয়সী প্রায় ৪ শতাংশ শিশু বিভিন্নভাবে ঘুমের সমস্যায় ভোগে। ওমেগা-৩-এর মাত্রা কম থাকলে ঘুমের সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, ওমেগা-৩–সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণে শিশুর ঘুমের মান উন্নত হয়।

ওমেগা-৩ শিশুর মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে পারে। বিশেষ করে শেখার ক্ষেত্রে। স্মৃতিশক্তি রক্ষায়ও ওমেগা-৩ কার্যকর ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি শিশুর বদমেজাজ ও বিষণ্নতা প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে ওমেগা-৩।

কোন খাবারে পাবেন ওমেগা-৩

চারণভূমির ঘাস খাওয়া পশুর মাংস ও সামুদ্রিক খাবারে প্রচুর ওমেগা-৩ পাওয়া যায়। দেশি ডিমেও ওমেগা-৩ পাওয়া যায় বেশি পরিমাণে। আরেকটি ভালো উৎস সামুদ্রিক খাবার ও সামুদ্রিক মাছ যেমন স্যামন, সার্ডিন ইত্যাদি। ইলিশ, টুনা, রুই, কাতলা, চিংড়ি, কড মাছের তেলে ওমেগা-৩ পাওয়া যায়। সপ্তাহে যদি এক টুকরা তেলযুক্ত মাছ খান তাহলে ইপিএ ও ডিএইচও মিলিয়ে পাবেন ৩ দশমিক ৬ গ্রাম ওমেগা-৩। যদি ১ দিন রুই, কাতলা, চিংড়ি মাছ খান, তাহলে ইপিএ ও ডিএইচ পাবেন ৫০০ মিলিগ্রাম।

ওমেগা-৩ আছে লইট্টা ও কোরাল মাছেও। উদ্ভিজ্জ খাবারের মধ্যে চিয়া ও তিসি বীজ, তিল, সয়াবিন, আখরোট, সামুদ্রিক শৈবাল স্পিরুলিনায় ওমেগা-৩ পাওয়া যায়। একমুঠো তিসি বীজ থেকে ২ হাজার ৪০০ মিলিগ্রাম ও তিনটি আখরোট থেকে ১ হাজার ২৮০ মিলিগ্রাম এএলএ পাওয়া যেতে পারে। ফলের মধ্যে অ্যাভোকাডো, পেঁপে, কিউই, কলায় ওমেগা-৩ আছে। নিরামিষাশী হলে এসব খাবারের সঙ্গে লেবুজাতীয় সাইট্রাস ফল ও প্রোবায়োটিক–সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে পারেন।

পরামর্শ

যেসব শিশু মাছ খেতে চায় না বা খাবারে পর্যাপ্ত ওমেগা-৩ পায় না, চিকিৎসকের পরামর্শে তাদের ওমেগা-৩ সাপ্লিমেন্ট দেওয়া যায়।

যাঁরা নিরামিষাশী, তাঁরা উদ্ভিদভিত্তিক ওমেগা-৩–সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন। 

বাইরের কোনো খাবার থেকে ওমেগা-৩ গ্রহণ করতে চাইলে অবশ্যই খাবারের লেবেল দেখুন।

শিশুর খাবার ওমেগা-৩–সমৃদ্ধ তেল দিয়ে রান্না করুন।


লিনা আকতার, পুষ্টিবিদ, রাইয়ান হেলথ কেয়ার হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার, দিনাজপুর

সম্পর্কিত নিবন্ধ