সংশ্লিষ্টদের যুক্ত করলে সুফল পাওয়া যায়
Published: 2nd, August 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক কমানোর সরকারি প্রতিনিধিদলের পাশাপাশি আমরা কয়েকজন বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তা ওয়াশিংটনে সফরে রয়েছি। আমরা যারা এ প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে এসেছি, আমরা মূলত যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ক্রেতা। বাংলাদেশে বসে আমরা সয়াবিনবীজ, এলপিজি, তুলা, সয়াবিনসহ নানা পণ্য কিনে থাকি যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এখন এই শুল্ক আলোচনায় অংশ নিতে সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমরা যুক্তরাষ্ট্রে এসেছি মূলত বাণিজ্যঘাটতি মেটাতে। বাড়তি পাল্টা শুল্কের কারণে আমাদের রপ্তানিকারকেরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সে জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য কেনা বাড়িয়ে আমরা তাঁদের পাশে দাঁড়াতে চাই।
সফরকালে গত কয়েক দিনের যুক্তরাষ্ট্রের তুলা, সয়াবিন, এলপিজি খাতের বড় বড় রপ্তানিকারক ও তাঁদের সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছি। এ সময় আমরা দেশটির বড় কিছু রপ্তানিকারকের সঙ্গে পণ্য আমদানির সমঝোতা চুক্তিও করেছি। আমরা তাঁদের আশ্বস্ত করেছি, বাংলাদেশের পাল্টা শুল্ক যদি কমানো হয়, তাহলে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি বাড়াতেও বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসবেন। তাতে দুই দেশের মধ্যেকার বাণিজ্যঘাটতি কয়েক বছরের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে আসবে। আমরা তাদের এ–ও বলেছি, শুধু তুলা, এলপিজি ও সয়াবিন আমদানি বাড়িয়ে আগামী এক-দেড় বছরের মধ্যে দুই বিলিয়ন বা দুই শ কোটি ডলারের বেশি বাণিজ্যঘাটতি কমানো সম্ভব হবে। তাতে বাণিজ্যঘাটতির ৭৫ শতাংশই কমে আসবে।
আমাদের সঙ্গে আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য খাতের রপ্তানিকারকেরা অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ ও সহানুভূতিশীল ছিলেন। তাঁরা আমাদের হয়ে দেশটির সরকারি বিভিন্ন পর্যায়ে যুক্তিতর্কও তুলে ধরেছেন। যার সামগ্রিক সুফল আমরা দেখেছি শুল্ক ২০ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণায়। যদিও আমরা আরও কিছুটা কম শুল্ক আশা করেছিলাম। এবারের পাল্টা শুল্ক ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী বা রপ্তানিকারকদের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী ও সরকারি পর্যায়ে সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে যে সংযোগ স্থাপিত হয়েছে, তা দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য খুবই ইতিবাচক। এই যোগাযোগকে কাজে লাগিয়ে উভয় দেশেরই লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
তবে আমরা ব্যবসায়ীরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিপুল পণ্য আমদানির উদ্যোগ নিলেও এ জন্য সরকারি নীতি সহায়তা লাগবে। সরকারি নীতি সহায়তা ছাড়া এসব উদ্যোগের বাস্তবায়ন কঠিন হবে। বিষয়টি আমরা এরই মধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানিয়েছি। তাঁরা আমাদের সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। আমরা মনে করি, সরকারি নীতি সহায়তা পেলে বেসরকারি পর্যায়ের নানা উদ্যোগেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যঘাটতি অনেকাংশে কমে আসবে।
গত কয়েক দিনের আলোচনায় আমাদের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তাতে মনে হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমাদের পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে আরও বেশি বৈচিত্র্য আনতে হবে। সস্তা দামের পোশাক রপ্তানি দিয়ে এ বাজারে আর বেশি দিন প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা যাবে না। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র অনেক ধরনের পণ্য আমদানিতে শূন্য শুল্ক–সুবিধাও দিয়ে থাকে। কিন্তু আমরা সেই ধরনের পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি করি কম। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শূন্য বা কম শুল্কের যে সুবিধা, সেটি আমরা সেভাবে ব্যবহার করতে পারছি না। এখন বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে, সরকারকে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে।
সবশেষে আমরা বলব, সরকার শেষ মুহূর্তে এসে শুল্ক ইস্যুতে শুধু বাণিজ্যঘাটতি দূর করতে আমাদের কাজে লাগিয়েছেন। আমরাও আমাদের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত যোগাযোগকে কাজে লাগিয়ে সরকারকে সর্বোচ্চ সহায়তার চেষ্টা করেছি। আমরা মনে করি, বাণিজ্যিক যেকোনো দ্বিপক্ষীয় ইস্যুতে বাণিজ্য–সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে যুক্ত করলে যে ভালো ফল পাওয়া যায়, এবারও তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাই আশা রাখছি, এ অভিজ্ঞতা সরকার ভবিষ্যতে কাজে লাগাবে। তবে এবারের আলোচনায় বাণিজ্য উপদেষ্টা ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সবাইকে সঙ্গে নিয়ে শুল্ক কমাতে যে আন্তরিক উদ্যোগ নিয়েছেন সেটিও প্রশংসার দাবি রাখে।
আমিরুল হক, সভাপতি, এলপিজি অপারেটরস অব বাংলাদেশ
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র আম দ র আমদ ন এলপ জ ব যবস সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য আহরণ শুরু হচ্ছে শনিবার মধ্যরাতে
তিন মাস দুই দিন পর কাপ্তাই হ্রদে শুরু হচ্ছে মৎস্য আহরণ। শনিবার (২ আগস্ট) মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরতে পারবেন জেলেরা।
কাপ্তাই হ্রদে পর্যাপ্ত পানি থাকায় কয়েক বছরের মধ্যে এবার নির্দিষ্ট সময়ে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে জেলা প্রশাসন। অন্যান্য বছর ২-৩ দফা সময় বাড়িয়ে প্রায় চার মাস পর মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হতো। কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের বংশবৃদ্ধি, প্রজনন এবং অবমুক্ত করা মাছের বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছর তিন মাস কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা দেয় জেলা প্রশাসন।
এদিকে, মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর শুধু জেলে পাড়া নয়, কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে জেলার সবচেয়ে বড় মৎস্য অবতরণকেন্দ্র বিএফডিসি ঘাট। মাছ পরিবহন ও সংরক্ষণের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে ড্রাম, বরফ ভাঙার মেশিন। দীর্ঘ ৯২ দিনের কর্মহীন জীবনের অবসান ঘটাতে প্রহর গুনছেন জেলেরা। ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সেরে রেখেছেন ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি)।
বিএফডিসি সূত্র বলছে, কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন, অবমুক্ত করা পোনা মাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধির জন্য ১ মে থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে তিন মাস মাছ শিকার বন্ধ রাখা হয়। এ সময়ে হ্রদে প্রায় ৬০ মেট্রিক টন কার্প জাতীয় মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়। কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন প্রায় ২৬ হাজার জেলে।
রাঙামাটির শহরের পুরান পাড়া জেলা পল্লীর বাসিন্দা নেপাল দাশ জানিয়েছেন, মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞাকালে যে সরকারি সহায়তা পাওয়া যায়, তাতে পরিবার নিয়ে চলা কঠিন। দীর্ঘ তিন মাস পর মাছ ধরতে নামতে পারব, এতে খুশি আমরা।
নতুন পাড়ার জেলে অমর কান্তি দাশ বলেছেন, হ্রদে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মাছগুলো বড় হওয়ার সুযোগ পাবে। তবে, পানিতে ঢেউ থাকায় শুরুতে বেশি মাছ পাওয়া যাবে না। পানি কিছু কমে আসলে ও স্থির হলে ভালো মাছ পাব, আশা করি। হ্রদে নামার জন্য যা যা প্রস্তুতি, সবকিছু শেষ করেছি। জাল ও নৌকা মেরামত করা হয়েছে। এখন শুধু লেকে নামার অপেক্ষা।
রাঙামাটি মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি উদয়ন বড়ুয়া বলেছেন, এবার নিষেধাজ্ঞার শুরু থেকে পর্যাপ্ত বৃষ্টির ফলে কাপ্তাই হ্রদে যথেষ্ট পানি থাকায় মাছ প্রথম থেকেই প্রজনন এবং বড় হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। আশা করছি, এবার পর্যাপ্ত মাছ পাওয়া যাবে। ব্যবসায়ীরা সব প্রস্ততি নিয়েছেন। রবিবার সকাল থেকে বিএফডিসি ঘাটে মাছ আসবে।
বিএফডিসির রাঙামাটি অঞ্চলের ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো. ফয়েজ আল করিম বলেছেন, নিষেধাজ্ঞাকালীন আমাদের উপকেন্দ্রগুলোর যেসব অবকাঠামো সংস্কারের প্রয়োজন ছিল, সেসব আমরা শেষ করেছি। অন্যান্য যেসব প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন, সেসবও শেষ হয়েছে। আশা করছি, গত বছরের মতো এবছরও ভালো মাছ পাওয়া যাবে।
ঢাকা/শংকর/রফিক