জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে শহীদুল ইসলাম নামের এক দোকান কর্মচারীকে গুলি করে খুনের মামলায় সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীসহ ২৩২ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের ছোড়া গুলিতে শহীদুল নিহত হয়েছেন। তাঁর বুক, পেট ও পিঠে ১০টি গুলি লাগে।

গত ২৪ জুলাই চট্টগ্রাম আদালতে অভিযোগপত্রটি জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও চান্দগাঁও থানার উপপরিদর্শক মো.

ফয়সাল। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হতাহতের ঘটনায় চট্টগ্রামে হওয়া ১৫১টি মামলার মধ্যে এটিই প্রথম অভিযোগপত্র। নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ২৫ আগস্ট অভিযোগপত্র গ্রহণের বিষয়ে আদালতে শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।

পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়, আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের ছোড়া ১০টি গুলি লেগেছে শহীদুলের শরীরে। শটগান ও বন্দুক থেকে এসব গুলি ছোড়া হয়। তবে কার কার ছোড়া গুলিতে শহীদুলের মৃত্যু হয়েছে, সেটি অভিযোগপত্রে সুনির্দিষ্ট করা হয়নি।

২০২৪ সালের ৩ আগস্ট নগরের জুবিলি রোড এলাকায় জুতার দোকানের কাজ শেষে বাজারসদাই নিয়ে চান্দগাঁওয়ের বাসায় ফিরছিলেন শহীদুল ইসলাম। বাসার পাশে বহদ্দারবাড়ি এলাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর লাঠিসোঁটা, হকিস্টিক ও অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা হয়। সেদিন সন্ধ্যা সাতটার দিকে আন্দোলনকারীদের ওপর ছোড়া গুলি এসে লাগে শহীদুল ইসলামের বুক, পেট ও পিটে। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হলে পরদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহত শহীদুলের ভাই শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে গত বছরের ১৯ আগস্ট চান্দগাঁও থানায় মামলা করেন। এতে আটজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় ৩০০ থেকে ৪০০ জনকে আসামি করা হয়।

পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়, আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের ছোড়া ১০টি গুলি লেগেছে শহীদুলের শরীরে। শটগান ও বন্দুক থেকে এসব গুলি ছোড়া হয়। তবে কার কার ছোড়া গুলিতে শহীদুলের মৃত্যু হয়েছে, সেটি অভিযোগপত্রে সুনির্দিষ্ট করা হয়নি। জানতে চাইলে চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আফতাব উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, নিহত ব্যক্তির শরীরে ১০টি গুলি লেগেছে। যাঁরা ঘটনাস্থলে ছিলেন আর যাঁদের নির্দেশে গুলি করা হয়েছে, তাঁদের অভিযোগপত্রে আসামি করা হয়েছে।

পিস্তল হাতে চান্দগাঁও থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি মহিউদ্দিন ফরহাদ, যুবলীগ কর্মী মো. জালাল ওরফে ড্রিল জালাল ও মো. মিজানকেও দেখা গেছে। শটগান হাতে ছিলেন যুবলীগ কর্মী মো. তৌহিদ। তাঁরা সবাই আওয়ামী লীগের সাবেক কাউন্সিলর মো. এসরালের অনুসারী। এসরাল আ জ ম নাছিরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। অস্ত্র হাতে থাকা ফিরোজ, জালাল, তৌহিদ ও ঋভু মজুমদার এরই মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন।

অভিযোগপত্রে রয়েছে, ঘটনার দিন শটগান থেকে গুলি করা যুবলীগ কর্মী তৌহিদুল ইসলামকে গত বছরের ২২ নভেম্বর গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে আরেক অস্ত্রধারী মো. ফিরোজকে গ্রেপ্তার করা হয়। তৌহিদ আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে খুনের ঘটনায় জড়িত আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের ১৪২ জনের নাম বলেন। বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া ১৫টি ভিডিও ও ৪১টি স্থিরচিত্রে বিশ্লেষণ করেও ঘটনায় জড়িত আসামিদের শনাক্ত করে পুলিশ। এসব ভিডিও ও ছবি যে সম্পাদিত নয়, তা ঢাকায় সিআইডির ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয় পুলিশ।

হাছান মাহমুদ, মহিবুল হাসান, সাইফুজ্জামান ছাড়াও অভিযোগপত্রের ২২৩ আসামির মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও রেজাউল করিম চৌধুরী; সাবেক সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নদভী, এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, এম এ লতিফ, এস এম আল মামুন, মহিউদ্দিন বাচ্চু, আবদুচ সালাম, দিদারুল আলম, নোমান আল মাহমুদ; চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি মাহবুবুল আলম; চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর এসরারুল হক, শৈবাল দাশ, জহুরুল আলম প্রমুখ। তাঁদের মধ্যে আবু রেজা মুহাম্মদ নদভী, এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী এবং এম এ লতিফ গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন।

অস্ত্র হাতে যাঁরা ছিলেন

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, ঘটনার দিন পিস্তল হাতে ছিলেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাবেক উপ-অর্থ সম্পাদক হেলাল আকবর চৌধুরী। তিনি সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। কাটা বন্দুক হাতে ছিলেন যুবলীগের নেতা পরিচয় দেওয়া তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী মো. ফিরোজ। তিনি নিজেকে আ জ ম নাছিরের অনুসারী পরিচয় দেন। তবে তিনি কোনো পদে নেই। শটগান হাতে ছিলেন নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সংগঠক মো. দেলোয়ার। তিনি হেলাল আকবরের অনুসারী। পিস্তল হাতে ছিলেন যুবলীগের কর্মী এন এইচ মিঠু ও ঋভু মজুমদার। তাঁরা দুজন নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিমের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। নুরুল আজিম শিক্ষামন্ত্রীর অনুসারী।

পিস্তল হাতে চান্দগাঁও থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি মহিউদ্দিন ফরহাদ, যুবলীগের কর্মী মো. জালাল ওরফে ড্রিল জালাল ও মো. মিজানকেও দেখা গেছে। শটগান হাতে ছিলেন যুবলীগের কর্মী মো. তৌহিদ। তাঁরা সবাই আওয়ামী লীগের সাবেক কাউন্সিলর মো. এসরালের অনুসারী। এসরাল আ জ ম নাছিরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। অস্ত্র হাতে থাকা ফিরোজ, জালাল, তৌহিদ ও ঋভু মজুমদার এরই মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন।

মৃত্যুর আগে ছেলের হত্যাকারীদের বিচার দেখে যেতে চান নিহত শহীদুল ইসলামের মা শামসুন নাহার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘যারা গুলি করে মেরেছে, তাদের ফাঁসি না দেখে যেন আমার মৃত্যু না হয়।’

পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হতাহতের ঘটনায় চট্টগ্রামের ১৫১টি মামলার মধ্যে ৬৯টি হয়েছে নগর ও জেলার ৯টি থানায়। বাকিগুলো আদালতে হওয়া নালিশি মামলা (সিআর)। এসব মামলায় নাম উল্লেখ থাকা আসামির সংখ্যা ১৩ হাজার ৪৫০। অজ্ঞাতপরিচয় আসামির সংখ্যা অন্তত ৩০ হাজার। আসামিদের মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীর নাম যেমন রয়েছে, তেমনি আবার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন এমন ব্যক্তি, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন পেশার মানুষও রয়েছেন। থানায় হওয়া ৬৯ মামলায় ১৫ জুলাই পর্যন্ত আসামি গ্রেপ্তার হয়েছেন ১ হাজার ২০১ জন। আসামির বিপরীতে গ্রেপ্তার ৫ শতাংশ। ৬৯টি মামলার মধ্যে ১৫টিই হত্যা-মামলা।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ছ ল ন য বল গ র কর ম দ র ছ ড় গ র প ত র হয় য বল গ র ক র র অন স র হয় ছ ন পর চ ত মন ত র আস ম র শটগ ন প রথম ঘটন য় আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য আহরণ শুরু হচ্ছে শনিবার মধ্যরাতে

তিন মাস দুই দিন পর কাপ্তাই হ্রদে শুরু হচ্ছে মৎস্য আহরণ। শনিবার (২ আগস্ট) মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরতে পারবেন জেলেরা। 

কাপ্তাই হ্রদে পর্যাপ্ত পানি থাকায় কয়েক বছরের মধ্যে এবার নির্দিষ্ট সময়ে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে জেলা প্রশাসন। অন্যান্য বছর ২-৩ দফা সময় বাড়িয়ে প্রায় চার মাস পর মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হতো। কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের বংশবৃদ্ধি, প্রজনন এবং অবমুক্ত করা মাছের বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছর তিন মাস কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা দেয় জেলা প্রশাসন।

এদিকে, মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর শুধু জেলে পাড়া নয়, কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে জেলার সবচেয়ে বড় মৎস্য অবতরণকেন্দ্র বিএফডিসি ঘাট। মাছ পরিবহন ও সংরক্ষণের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে ড্রাম, বরফ ভাঙার মেশিন। দীর্ঘ ৯২ দিনের কর্মহীন জীবনের অবসান ঘটাতে প্রহর গুনছেন জেলেরা। ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সেরে রেখেছেন ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি)। 

বিএফডিসি সূত্র বলছে, কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন, অবমুক্ত করা পোনা মাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধির জন্য ১ মে থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে তিন মাস মাছ শিকার বন্ধ রাখা হয়। এ সময়ে হ্রদে প্রায় ৬০ মেট্রিক টন কার্প জাতীয় মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়। কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন প্রায় ২৬ হাজার জেলে। 

রাঙামাটির শহরের পুরান পাড়া জেলা পল্লীর বাসিন্দা নেপাল দাশ জানিয়েছেন, মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞাকালে যে সরকারি সহায়তা পাওয়া যায়, তাতে পরিবার নিয়ে চলা কঠিন। দীর্ঘ তিন মাস পর মাছ ধরতে নামতে পারব, এতে খুশি আমরা। 

নতুন পাড়ার জেলে অমর কান্তি দাশ বলেছেন, হ্রদে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মাছগুলো বড় হওয়ার সুযোগ পাবে। তবে, পানিতে ঢেউ থাকায় শুরুতে বেশি মাছ পাওয়া যাবে না। পানি কিছু কমে আসলে ও স্থির হলে ভালো মাছ পাব, আশা করি। হ্রদে নামার জন্য যা যা প্রস্তুতি, সবকিছু শেষ করেছি। জাল ও নৌকা মেরামত করা হয়েছে। এখন শুধু লেকে নামার অপেক্ষা। 

রাঙামাটি মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি উদয়ন বড়ুয়া বলেছেন, এবার নিষেধাজ্ঞার শুরু থেকে পর্যাপ্ত বৃষ্টির ফলে কাপ্তাই হ্রদে যথেষ্ট পানি থাকায় মাছ প্রথম থেকেই প্রজনন এবং বড় হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। আশা করছি, এবার পর্যাপ্ত মাছ পাওয়া যাবে। ব্যবসায়ীরা সব প্রস্ততি নিয়েছেন। রবিবার সকাল থেকে বিএফডিসি ঘাটে মাছ আসবে।

বিএফডিসির রাঙামাটি অঞ্চলের ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো. ফয়েজ আল করিম বলেছেন, নিষেধাজ্ঞাকালীন আমাদের উপকেন্দ্রগুলোর যেসব অবকাঠামো সংস্কারের প্রয়োজন ছিল, সেসব আমরা শেষ করেছি। অন্যান্য যেসব প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন, সেসবও শেষ হয়েছে। আশা করছি, গত বছরের মতো এবছরও ভালো মাছ পাওয়া যাবে।

ঢাকা/শংকর/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ