ত্রাণ সংগ্রহ করতে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের হত্যা করতে সাইলেন্সার যুক্ত অস্ত্র ব্যবহার করছে ইসরায়েলি সেনারা। ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েল প্রথমবারের মতো এই অস্ত্র ব্যবহার করছে বলে শুক্রবার জানিয়েছে আল-জাজিরা অনলাইন।
 
উত্তর গাজায় আল জাজিরার আরবি সংবাদদাতা আনাস আল-শরিফ জানিয়েছেন, তিনি একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর সাথে কথা বলেছেন যারা বেইত লাহিয়ার কাছে সুদানী এলাকায় সাইলেন্সার ব্যবহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সেখানে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী একটি সাহায্য কেন্দ্রের আশেপাশের লোকদের লক্ষ্য করে সাইলেন্সারযুক্ত অস্ত্র ব্যবহার করেছিল।

তিনি জানান, এর অর্থ হল ইসরায়েলি সেনারা নিজেদের বেপরোয়াভাবে ত্রাণ সংগ্রহকারীদের হতাহত করার চেষ্টা করছিল। শুক্রবার মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্টিভ উইটকফ এবং ইসরায়েলে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি কয়েক ঘন্টা ধরে গাজা সফর করার সময় এই ঘটনাটি ঘটেছে।

গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন বা জিএইচএফ হচ্ছে একটি মার্কিন সমর্থিত একটি ত্রাণকেন্দ্র পরিচালনাকারী সংস্থা। একে সমর্থন দিয়েছে ইসরায়েল। গাজায় সরবরাহ পৌঁছানোর জন্য জিএইচএফ বেসরকারি মার্কিন নিরাপত্তা ও সরবরাহ কোম্পানি ব্যবহার করে। এটি জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন একটি ব্যবস্থাকে এড়িয়ে চলে। গাজায় জিএইচএফ মে মাসের প্রথম দিকে কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে খাবারের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকদের প্রায় প্রতিদিন গুলি করার জন্য কুখ্যাত হয়ে উঠেছে। এ পর্যন্ত ১ হাজার ৩৭৩ জন ফিলিস্তিনি জিএইচএফের ত্রাণকেন্দ্রগুলোতে ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন।

ঢাকা/শাহেদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ এইচএফ ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের ভুলে আজারবাইজান যেভাবে ইসরায়েলের দিকে ঝুঁকে পড়ল

ইরানের প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও সাবেক প্রেসিডেন্ট আকবর হাশেমি রাফসানজানি তাঁর স্মৃতিকথায় ১৯৯৩ সালের নভেম্বরে প্রথম নাগোর্নো-কারাবাখ যুদ্ধের সময় আজারবাইজানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হেইদার আলিয়েভের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের কথা স্মরণ করেছেন। রাফসানজানির মতে, আর্মেনিয়ার সঙ্গে সংঘাতে ইরানের সামরিক সহায়তা চেয়েছিলেন আলিয়েভ।

রাফসানজানি লিখেছেন, ‘বারবার করে বলা তাঁর (আলিয়েভ) একটি মন্তব্য ছিল যে আর্মেনিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের সুযোগ নিয়ে ইরানের উচিত আজারবাইজানে তার উপস্থিতি বাড়ানো। মাঝেমধ্যে তিনি এ–ও বলতেন, আজারবাইজান একসময় ইরানের অন্তর্ভুক্ত ছিল। আমাদের (ইরান) সেখানে এসে এটিকে (আজারবাইজান) রক্ষা করতে ও নিয়ন্ত্রণ নিতে অনুরোধ করতেন।’ তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে ইরান যদি আজারবাইজানকে তার প্রভাববলয়ে নিয়ে আসে, তবে তা পুরো ককেশাসে রাশিয়ার আধিপত্যকে নাড়িয়ে দেবে।

৩২ বছর পর পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। আজারবাইজানের কর্মকর্তারা এখন আর বাকুর বিষয়ে তেহরানের সম্পৃক্ততা চান না।

এখন ইরানের রাজনৈতিক নেতারাও এই ছোট প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক কীভাবে এগিয়ে নেবে তা নিয়ে অনিশ্চিত। আজারবাইজান ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে, কিন্তু গোলস্তান (১৮১৩) এবং তুর্কমেনচায় (১৮২৮) চুক্তির মাধ্যমে রুশ সাম্রাজ্যের কাছে হস্তান্তরের আগে এটি একসময় ইরানের অংশ ছিল।

গত দশকে দুটি দেশের (ইরান ও আজারবাইজান) মধ্যে ক্ষমতার গতিশীলতা উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। আজারবাইজানের অনেকে ও দেশটির গণমাধ্যম এখন ইরানেরই কিছু অংশকে আজারবাইজানের সঙ্গে সংযুক্ত করার দাবি তুলছে।

এদিকে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের সাম্প্রতিক ১২ দিনের যুদ্ধ তেহরান ও বাকুর রাজনৈতিক বিভেদকে আরও গভীরতার দিকে নিয়ে গেছে। তেহরানে আজারবাইজানের ইসরায়েলের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সামরিক ও গোয়েন্দা সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।

ইসরায়েলি ড্রোন কোথা থেকে এল?

ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরপরই ইরানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের কাছে বসবাসকারীরা আজারবাইজানের দিক থেকে ইসরায়েলি ড্রোন প্রবেশের খবর দেন। পরবর্তী সময়ে ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যমও এই খবর নিশ্চিত করে। প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছে যে তেহরান, তাবরিজ, উরমিয়াসহ বিভিন্ন শহরে ইসরায়েলের হামলায় ব্যবহৃত ড্রোনগুলো আজারবাইজান থেকে ইরানে প্রবেশ করেছিল।

বিষয়টি তখন এতটাই আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে যে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংবাদ সম্মেলনে জানায় যে তারা বিষয়টি দেখছে। তবে কয়েক দিন পর ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেন যে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ তাঁকে আশ্বস্ত করেছেন যে ইসরায়েল আজারবাইজানের ভূখণ্ড ব্যবহার করে হামলা চালায়নি।

যদিও এটি ইরানের অনেককে আশ্বস্ত করতে পারেনি। সংবাদমাধ্যম বা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের কেউই আজারবাইজানের এ বক্তব্যকে গ্রহণ করেনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তেহরানের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের একজন অধ্যাপক বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রেসিডেন্ট উভয়ই এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন তার মানে ইরান এটি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে।

ওই বিশেষজ্ঞের মতে, ইরান যদি আজারবাইজান সীমান্ত থেকে ইসরায়েলের যুক্ত থাকার বিষয়ে নিশ্চিত না হতো, বিষয়টি এতটা উচ্চপর্যায়ে গুরুত্বসহকারে নেওয়া হতো না।

তিনি আরও যুক্তি দেন যে আলিয়েভের আশ্বাস সম্পর্কে পেজেশকিয়ানের মন্তব্য ককেশাস অঞ্চলে ইরানের পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতা তুলে ধরে। অধ্যাপক বলেন, ‘পেজেশকিয়ান যা বলেছেন, তা কেবল কূটনৈতিক ভাষা। বাস্তবে শেষ কারাবাখ যুদ্ধের পর থেকে ইরান আজারবাইজানের সঙ্গে কীভাবে মোকাবিলা করবে তা জানে না। এর পর থেকে আজারবাইজান একটি বন্ধুত্বপূর্ণ বা অন্তত নিরপেক্ষ দেশ থেকে বরং একটি শান্ত কিন্তু গুরুতর হুমকির দেশে পরিণত হয়েছে।’

তিনি বাকু ও তেল আবিবের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার আরও প্রমাণ হিসেবে আজারবাইজানীয় ও ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের কথা উল্লেখ করেন।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আজারবাইজান ইসরায়েলের অন্যতম প্রধান তেল ও গ্যাস সরবরাহকারী হয়ে উঠেছে এবং দেশটি উন্নত মানের ইসরায়েলি সামরিক ও গোয়েন্দা সরঞ্জাম আমদানি করছে। কিছু প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ইসরায়েল আজারবাইজানের সামরিক অস্ত্রের প্রায় ৭০ শতাংশ সরবরাহ করেছে।ইরানের দোরগোড়ায় ইসরায়েল

সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর আজারবাইজান প্রথমে ইরানের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী তুরস্কের কাছাকাছি আসে। পরবর্তী সময়ে দেশটি ইসরায়েলের সঙ্গেও তার সামরিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীর করে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আজারবাইজান ইসরায়েলের অন্যতম প্রধান তেল ও গ্যাস সরবরাহকারী হয়ে উঠেছে এবং দেশটি উন্নত মানের ইসরায়েলি সামরিক ও গোয়েন্দা সরঞ্জাম আমদানি করছে। কিছু প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ইসরায়েল আজারবাইজানের সামরিক অস্ত্রের প্রায় ৭০ শতাংশ সরবরাহ করেছে।

এখন আজারবাইজান নতুন সিরীয় সরকারের সঙ্গেও কাজ করছে। বাশার আল-আসাদের পতনের পর নতুন সিরীয় সরকার ইরান থেকে সরে এসেছে।

ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘ককেশাস অঞ্চলে কোনো স্পষ্ট কৌশল না থাকায় ইরান এখন দেখছে যে তেল আবিব তার সীমান্তের দিকে আরও কাছাকাছি আসছে।’

তিনি জোর দিয়ে বলেন যে ইসরায়েল, সিরিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে একটি নতুন আঞ্চলিক জোট দ্রুতই তুরস্কের মাধ্যমে ইসরায়েলকে ইরানের দোরগোড়ায় নিয়ে আসতে পারে। একমাত্র বাধা হলো আর্মেনিয়া ও ইরানের মধ্যকার ৪৩ কিলোমিটার স্থলপথ, যার মাধ্যমে আজারবাইজান তার ছিটমহল এলাকা নাখচিভানের সঙ্গে যুক্ত।

যুক্তরাষ্ট্রের হামলার প্রতিবাদে ইরানে বিক্ষোভ। তেহরান, ইরান, ২২ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হ‌বিগ‌ঞ্জের শাহজীবাজার কেন্দ্রে আগুন, ১৫ ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু
  • যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ব্যবসা বাড়ানোর সুযোগ আসবে
  • গাজায় ত্রাণ নেওয়ার কয়েক মিনিট পর হত্যা করা হয় ক্ষুধার্ত শিশুটিকে: সাবেক মার্কিন সেনা কর্মকর্তা
  • বেড়েছে মাছ, মুরগি ও ডিমের দাম
  • ইরানের ভুলে আজারবাইজান যেভাবে ইসরায়েলের দিকে ঝুঁকে পড়ল
  • গাজায় দুর্ভিক্ষের অংক
  • ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতে যেসব খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে
  • কাফকো সার কারখানায় গ্যাস বিক্রির চুক্তি সই
  • গাজায় ত্রাণ বিতরণে ইসরায়েলের ওপরই ভরসা ট্রাম্পের