নিখোঁজের ৩ দিন পর নৈশপ্রহরীর হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার
Published: 12th, July 2025 GMT
নিখোঁজের ৩ দিন পর নৈশপ্রহরী গৌতম গাইনের (৩৫) হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার বিকেলে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কংশুর এলাকার মধুমতি বিলরুট চ্যানেল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
গৌতম গাইন মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড় ইউনিয়নের কলিগ্রামের বিমল গাইনের ছেলে। তিনি ওই উপজেলার জলিরপাড় জে কে এম বি মল্লিক উচ্চ বিদ্যালয়ে নৈশপ্রহরী পদে কর্মরত ছিলেন।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বৌলতলী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক মোল্যা আফজাল হোসেন জানান, গত বুধবার রাত সাড়ে ৮টায় গৌতম গাইন কর্মস্থলের উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি। পরদিন বৃহস্পতিবার স্ত্রী মিলি বৈরাগী মুকসুদপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন। শুক্রবার বিকেলে স্থানীয়রা মধুমতি বিলরুট চ্যানেলে মরদেহ ভাসতে দেখে পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে।
তিনি আরও বলেন, মরদেহের হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে এটি হত্যাকাণ্ড বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিস্তারিত জানতে মরদেহ গোপালগঞ্জ আড়াইশ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
নিহতের স্ত্রী মিলি বৈরাগী অভিযোগ করে বলেন, দেড় মাস আগে ওই বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ষড়যন্ত্র করে স্কুলের গ্রিল কেটে চুরির অপবাদ দিয়ে আমার স্বামীর কাছ থেকে ১২ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে। তারা তাদের মনোনীত একজনকে নৈশপ্রহরীর চাকরি দিতে চেয়েছিল। অন্যদিকে প্রধান শিক্ষকসহ কয়েকজন শিক্ষক আমার স্বামীকে চাকরিতে বহাল রাখেন। এরপর থেকে চারজন শিক্ষক আমার স্বামীর বিরুদ্ধে সব সময় বিরোধিতা করে আসছিলেন। যে রাতে সে নিখোঁজ হয়, তখন রাত সাড়ে ৮টায় ডিউটিতে যায়। পরে তার মোবাইল বন্ধ পাই।
তিনি আরও বলেন, পরের দিন থানায় জিডি করি। আজ বিকেলে খবর পেয়ে গিয়ে স্বামীর মরদেহ শনাক্ত করি। আমার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমি এ হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই।
ওই বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের কাজের দায়িত্বে থাকা মো.
এ বিষয়ে সিন্দিয়াঘাট পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক ও তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর বলেন, মধুমতি বিলরুট চ্যানেল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গৌতম গাইনের মোবাইল কললিস্টের জন্য আবেদন করা হয়েছে। কললিস্ট পেলে কল লিস্টের সূত্র ধরে তদন্ত শুরু হবে। দ্রুত এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গ প লগঞ জ ল শ উদ ধ র আম র স ব ম উপজ ল র তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
শরীয়তপুর রুটে বাস বন্ধের নেপথ্যে যুবদল নেতার ৫ কোটির চাঁদা!
ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় ‘শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস’ নামের একটি পরিবহনের একাধিক বাস ভাঙচুর ও শ্রমিকদের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। বাস মালিকদের দাবি চাঁদার পাঁচ কোটি টাকা না পেয়ে স্থানীয় সাবেক যুবদল নেতা মুশফিকুর রহমান ফাহিম ও তার অনুসারীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
এদিকে এ ঘটনার পর থেকে যাত্রাবাড়ী-শরীয়তপুর রুটে পরিবহনটির যাত্রীসেবা বন্ধ রয়েছে। ফলে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে এ রুটে চলাচলকারী যাত্রীরা।
এ ঘটনায় দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি ভুক্তভোগী বাস মালিকদের। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে সাবেক যুবদল নেতা মুশফিকুর রহমান ফাহিম। আর এ ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলার পুলিশ সুপার।
জেলার বাস মালিক সমিতি সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে শরীয়তপুর থেকে ঢাকার যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা এলাকায় নিয়মিত যাত্রীপরিবহন করে আসছে শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস পরিবহনের দুই শতাধিক বাস। এ রুট ধরে প্রতিনিয়ত ঢাকা ও শরীয়তপুরে যাতায়াত করে অন্তত ৩০ হাজার যাত্রী।
সম্প্রতি এ রুটে চলা পরিবহনগুলোর মালিকদের কাছে পাঁচ কোটি চাকা চাঁদা দাবি করেন বলে অভিযোগ ওঠে যাত্রাবাড়ী থানা যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি মুশফিকুর রহমান ফাহিমের বিরুদ্ধে। এদিকে তাকে চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ২৫টি গাড়ি ভাঙচুর ও বেশ কয়েকজন শ্রমিকদের মারধরের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনার পর থেকেই বাস শ্রমিক ও মালিকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। অবিলম্বে চাঁদাবাজি বন্ধ ও অভিযুক্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস পরিবহনের চালক মাসুদ রানা বলেন, “যাত্রাবাড়ী গেলেই বিএনপির কিছু নেতা আমাদের বাস ভেঙে ফেলে। শ্রমিকদের মারধর করে। সেই ভয়ে পাঁচ দিন ধরে বাস চালাতে পারছি না। আমরা বিষয়টির সমাধান চাই। আমার পরিবার নিয়ে চলতে কষ্ট হচ্ছে।”
মারধরের শিকার হওয়া নয়ন ব্যাপারী নামের এক বাস শ্রমিক বলেন, “যাত্রাবাড়ী যাওয়ার পর হঠাৎ আমাদের বাসে হামলা চালায় ফাহিমের লোকজন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা বাসের গ্লাস ভেঙে ফেলে। আমাকেও জখম করা হয়েছে। আমরা যাত্রাবাড়ী রুটে বাস চালাতে পারছি না।”
বাস চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সাধারণ যাত্রীরা। সিদ্দিক নামের এক যাত্রী বলেন, “আগে আমরা সরাসরি ঢাকার যাত্রাবাড়ী বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে নামতাম। এখন শুনলাম চাঁদার টাকার জন্য সেখানে বাস না গিয়ে ধোলাইপাড় এলাকায় যাবে। আমরা খুবই ঝামেলার মধ্যে পড়েছি। আমরা সমস্যার সমাধান চাই।”
শরীয়তপুর আন্তঃজেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফারুক আহম্মেদ চৌকিদার অভিযোগ করে বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে যাত্রাবাড়ী রুটে চাঁদাবাজি হয়ে আসছিল, তবে সেটা সহনশীল পর্যায়ে ছিল। সম্প্রতি এক যুবদল নেতা আমাদের মালিক সমিতির কাছ থেকে পাঁচ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেছেন। তাকে টাকা না দেওয়ায় আমাদের বাস ভাঙচুর ও শ্রমিকদের মারধর করা হচ্ছে। আমরা এই সমস্যা থেকে মুক্তি চাই।”
বাস মালিক সমিতির সভাপতি ফারুক তালুকদার বলেন, “যুবদল নেতা ফাহিম চাঁদার জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তিনি প্রতিমাসে আমাদের গাড়ি থেকে সাড়ে সাত লাখ টাকা চাঁদা নিচ্ছে। তবে তিনি আরও বড় অংকের টাকা (৫ কোটি) দাবি করছেন। আমরা তার সেই দাবি না মেনে বিএনপির হাইকমান্ডকে জানিয়েছি। এরপর থেকে তিনি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে আমাদের বাসগুলোতে ভাঙচুর চালিয়েছে। আমরা চাঁদাবাজমুক্ত পরিবহন সেক্টর চাই।”
চাঁদা দাবির বিষয়টি অস্বীকার করে যাত্রাবাড়ী থানা যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি মুশফিকুর রহমান ফাহিম বলেন, “আমাদের গাড়ির রুটপারমিট থাকার পরেও শরীয়তপুরের বাস মালিক সমিতি সেগুলোকে অন্য উপজেলায় যেতে দিচ্ছে না। এখন তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছেন। আমি কারো কাছে পাঁচ কোটি টাকা দাবি করিনি। আমি চাঁদাবাজি করে থাকলে আমরা বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হোক। অভিযোগ প্রমাণ হলে আমি আমার অপরাধ মাথা পেতে নেব।”
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলার পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, “আমরা জানতে পেরেছি শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস নামের একটি পরিবহন যাত্রাবাড়িতে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। কতিপয় দুষ্কৃতকারী চাঁদাদাবি করেছে এবং বাসে ভাঙচুর করছে। আমরা ঘটনাটি জানার পর ডিএমপির সংশ্লিষ্ট ক্রাইম বিভাগের সাথে যোগাযোগ করেছি। চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধও জানিয়েছি। আমরা বিষয়টি নিয়ে ডিএমপির সাথে যৌথভাবে কাজ করছি।”
ঢাকা/আকাশ/এস