কলকাতায় পুরোনো মোবাইল ফোন কিনে বিপাকে বাংলাদেশি
Published: 2nd, August 2025 GMT
সস্তায় মোবাইল কিনতে গিয়ে বিপাকে এক বাংলাদেশি ব্যক্তি। আপাতত কলকাতা পুলিশের হেফাজতে ওই বাংলাদেশি। জানা গেছে, ওএলএক্স-এ বিজ্ঞাপন দেখে কম দামে দুইটি মোবাইল ফোন কিনেছিলেন মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান নামে বাংলাদেশের রাজশাহীর এক ব্যক্তি।
সম্প্রতি চুরি যাওয়া মোবাইল ফোনের তদন্তে নেমে কলকাতার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থানার তদন্তকারী কর্মকর্তারা নিউমার্কেট এলাকা থেকে মাহমুদুল হাসান নামে ওই বাংলাদেশি নাগরিকদের গ্রেপ্তার করে।
কিন্তু কিভাবে এই ঘটনায় জড়িয়ে পড়লেন ওই বাংলাদেশি? ঘটনার সূত্রপাত ১ জুলাই। বিবাহ সম্পর্কিত সাইট ‘বেঙ্গলি ম্যাট্রিমনি’তে পরিচয় হয় জিয়া সিং ওরফ রমা কুমারীর সাথে সুদীপ বোস নামে এক ব্যক্তির। দুইজনের মধ্যে সরাসরি সাক্ষাতের সময় চেয়ে কলকাতা বিমানবন্দরের আড়াই নম্বরের সামনে একটি গেস্ট হাউসে ওঠেন সুদীপ ও রমা কুমারী। অভিযোগ, সেখানেই সুদীপ বোসকে চায়ের সঙ্গে মাদক মিশিয়ে খাইয়ে অজ্ঞান করে মোবাইল ফোন, রুপি লুট করে চম্পট দেয় রমা কুমারী।
আরো পড়ুন:
‘দ্য কেরালা স্টোরি কেরালাবাসীর জন্য চূড়ান্ত অবমাননাকর’
জুনিয়র এনটিআর কত কোটি টাকার মালিক?
পরবর্তীতে বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। সেই মামলায় শুক্রবার অভিযুক্ত রমা কুমারীকে গ্রেপ্তার করে বিমানবন্দর থানার পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে চুরি যাওয়া মোবাইল ফোন বিক্রি করা হয় বাংলাদেশের রাজশাহীর বাসিন্দা মাহমুদুল হাসানকে। এর পরেই তদন্তে নেমে তদন্তকারী কর্মকর্তারা পার্ক স্ট্রিট থানার অন্তর্গত মারকুইস স্ট্রিটের একটি গেস্ট হাউস থেকে মাহমুদুল হাসানকে গ্রেপ্তার করে।
মাহমুদুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে আসে তদন্তকারী কর্মকর্তাদের হাতে। তারা জানতে পারে, কলকাতা শহরতলী থেকে চুরি যাওয়া মোবাইল ফোন বাংলাদেশে পাচার হয়ে যেত এবং সেই মোবাইল ফোন বিক্রি হতো বাংলাদেশে।
শনিবার (৮ আগস্ট) বাংলাদেশের নাগরিক মাহমুদুল হাসানকে এবং ভারতীয় নাগরিক রমা কুমারী উভয়কেই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। আজ দুপুরে তাদের স্থানীয় আদালতে তোলা হবে।
এদিন সকালে বিমানবন্দর থানায় বাংলাদেশের রাজশাহীর বাসিন্দা মাহমুদুল হাসান জানান, “আমি চিকিৎসার জন্য কলকাতায় এসেছিলাম। আমি দুটো মোবাইল ফোন কিনেছিলাম। কিন্তু জানতাম না এগুলো চুরি যাওয়া মোবাইল। আমি পুরোনো মোবাইল কিনেছিলাম। কিন্তু এর পিছনে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না। নিজের ব্যবহারের জন্যই আমি এই ফোনগুলো কিনেছিলাম। তাছাড়া একটার বেশি মোবাইল ফোন নিয়েও যাওয়া যায় না।”
মাহমুদুল হাসানের দাবি, আরেক অভিযুক্ত রমা কুমারীর সঙ্গে তার ব্যক্তিগত কোনো পরিচয় নেই বা তাকে তিনি চিনতেন না। পণ্য কেনা বেচার সাইট ‘ওএলএক্স’ থেকেই ওই ভারতীয় মহিলার সাথে তার পরিচয়।
এদিকে এয়ারপোর্ট থানার কাছেই উত্তর ২৪ পরগনা জেলার গঙ্গানাগরের বাসিন্দা রমা কুমারী নামে ওই নারী স্বীকার করেছেন যে, বিমানবন্দরের পাশে ওই গেস্ট হাউসে সুদীপ রায় নামে ওই ব্যক্তির কাছ থেকে কেবলমাত্র মোবাইল ফোন আর অর্থ চিনিয়ে নিয়েছেন। যদিও তার দাবি, “আমি একবারই ভুল করেছি। এর আগে কখনোই আমি এই কাজ করিনি।”
অভিযুক্ত দুই ব্যক্তির বয়ানের সত্যতা যাচাই করে দেখছে তদন্তকারী কর্মকর্তারা। তাদের উভয়কেই জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে চাইছে এই চক্র কতদিন ধরে সক্রিয়, কোথায় কোথায় মোবাইল বিক্রি করা হয়েছে এবং সেই মোবাইল কোনো অপরাধমূলক কাজকর্মে ব্যবহার করা হয়েছে কিনা। যদিও তদন্তের স্বার্থে পুলিশ কোনো কিছুই বলতে চায়নি।
ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর মকর ত তদন ত কলক ত
এছাড়াও পড়ুন:
অ্যাপে পরিচয়-প্রেম, বিয়ে করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এলেন চীনের যুবক
ভাষা, সংস্কৃতি ও হাজার মাইলের দূরত্বকে হার মানিয়েছে ভালোবাসা। ভালোবাসার টানে এক তরুণীকে বিয়ে করতে বাংলাদেশে এসেছেন চীনের এক যুবক। গত শুক্রবার রাতে চীন থেকে ঢাকায় পৌঁছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে এক তরুণীর বাসায় আসেন তিনি। আজ রোববার আদালতের মাধ্যমে তাঁরা বিয়ে সম্পন্ন করবেন।
চীনের যুবকের নাম ওয়াং তাও (৩৬)। চীনের হোয়ানান প্রদেশের ওয়াং ইচাং চাওয়ের ছেলে তিনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার কুন্ডা ইউনিয়নের কোনাপাড়া গ্রামের তাহের মিয়ার মেয়ে সুরমা আক্তারের (২২) সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক আছে তাঁর। সুরমা একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন এবং ঢাকার লালবাগে থাকেন। আজ রোববার তাঁরা বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন বলে তরুণীর পরিবার জানিয়েছে।
জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার রাতে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পৌঁছান চীনের যুবক ওয়াং তাও। বিমানবন্দর থেকে চীনের যুবককে আতিথেয়তা দিয়ে নিজ বাড়ি নাসিরনগরের কুন্ডার কোনাপাড়ায় নিয়ে আসেন তরুণী সুরমাসহ তাঁর পরিবারের লোকজন।
স্থানীয় লোকজন, পুলিশ ও তরুণীর পরিবারের দাবি, দেড় থেকে দুই মাস আগে ডেটিং এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ওয়ার্ল্ড টক’ নামের একটি অ্যাপের মাধ্যমে ওয়াং তাওয়ের সঙ্গে সুরমার পরিচয় হয়। তাঁরা নিয়মিত চ্যাটে যোগাযোগ রাখতে শুরু করেন। তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্ব থেকে সম্পর্ক গড়ায় প্রেমে। বিষয়টি চীনের যুবক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তরুণী নিজ নিজ পরিবারকে জানান। উভয় পরিবারের সম্মতিতে তাঁরা একে অপরকে বিয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। পরে চীনের যুবক বাংলাদেশ ও চীনের দূতাবাসের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসেন। ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে দুপুরের পর থেকে চীনের যুবককে দেখার জন্য সুরমার বাড়িতে ভিড় করেন স্থানীয় লোকজন।
সুরমা স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, ‘ওয়ার্ল্ড টক’ অ্যাপের মাধ্যমে চীনের যুবক ওয়াং তাওয়ের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। বন্ধুত্ব থেকে সম্পর্ক প্রেমে গড়ায়। ট্রান্সলেটরের মাধ্যমে তাঁরা একে অপরের সঙ্গে চ্যাট করতেন। একপর্যায়ে তাঁরা পরিবারের সম্মতিতে বিয়ের সিদ্ধান্তে পৌঁছান।
সুরমার মা নুরেনা বলেন, ‘আমার মেয়ের ভালোবাসা পেতে চীন থেকে যুবক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে চলে এসেছে। ওই যুবক কোনো ধর্মই বিশ্বাস করে না। মেয়েকে বিয়ে করতে প্রয়োজনে সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে রাজি হয়েছে। আগামীকাল (আজ) রোববার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে মুসলিম রীতি মেনে সুরমাকে বিয়ে করবে চীনের যুবক। এতে দুই পরিবারের সম্মতি আছে। আমরা এই বিয়েতে আনন্দিত। মেয়ের খুশিই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
নাসিরনগর থানার কুন্ডা বিট উপপরিদর্শক (এসআই) জাহান-ই-আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি জানতে পেরে কুন্ডা গ্রামে যাই। পাসপোর্ট দেখে নিশ্চিত হলাম যে যুবক চীনের নাগরিক। ওই তরুণী ঢাকার লালবাগে থাকেন। ‘ওয়ার্ল্ড টক’ নামের একটি অ্যাপসের মাধ্যমে তাঁদের পরিচয়। একপর্যায়ে তাঁরা প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। চীনের যুবক ইংরেজি বোঝেন না। তাই কথা বলা সম্ভব হয়নি। তাঁরা একে অপরের সঙ্গে ট্রান্সলেটরের মাধ্যমে কথা বলতেন। তরুণী ও তাঁর পরিবার জানিয়েছে, রোববার হলফনামার মাধ্যমে চীনের যুবক মুসলিম হবেন। তারপর তাঁরা বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন।’ তরুণীর বরাত দিয়ে তিনি আরও জানান, চীনের যুবক এক থেকে দেড় মাস থাকবেন। যাওয়ার সময় হয় ওই তরুণীকে সঙ্গে নিয়ে যাবেন বা পরে নিয়ে যাবেন।