Prothomalo:
2025-11-02@15:57:39 GMT

জনতার ঢল ‘দ্রোহযাত্রায়’

Published: 2nd, August 2025 GMT

জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারের পাশাপাশি আটক সব শিক্ষার্থী ও সাধারণ নাগরিককে ছেড়ে দিতে ২ আগস্ট ‘দ্রোহযাত্রা’ কর্মসূচিতে জড়ো হন বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ। সেদিন বিকেলে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’–এর এই কর্মসূচির পাশাপাশি আরও একাধিক সংগঠন গণগ্রেপ্তার বন্ধ ও শিক্ষার্থী-জনতা হত্যার বিচারের দাবিতে প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হয়েছিলেন। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের কর্মসূচির নাম ছিল ‘শিক্ষার্থী-জনতার শোকযাত্রা’।

এসব কর্মসূচি ঘিরে সেদিন (২ আগস্ট ২০২৪ সাল) দুপুরে প্রেসক্লাব এলাকায় জনতার ঢল নামে। লোকে লোকারণ্য প্রেসক্লাবের সামনে কোন সংগঠনের কী কর্মসূচি, তা আলাদা করার সুযোগ ছিল না। একপর্যায়ে পুরো প্রেসক্লাবের সামনের উপস্থিতি একক গণকর্মসূচিতে রূপ নেয়। এই কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বক্তব্যে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ দাবি করেন।

সেদিন বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে আনু মুহাম্মদ তাঁর বক্তব্য শেষ করে প্রেসক্লাবের সামনে থেকে ‘দ্রোহযাত্রা’ শুরুর ঘোষণা দেন। সেখান থেকে কদম ফোয়ারা, হাইকোর্ট মোড়, দোয়েল চত্বর ও টিএসসি ঘুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যায় দ্রোহযাত্রা। শহীদ মিনারে ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে প্রথমে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। ঠিক সেই সময় সরকারের পদত্যাগ ও হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে হাজারো জনতা স্লোগান দিতে থাকেন। স্লোগান ওঠে ‘আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’, ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’, ‘খুনি সরকারের গদিতে, আগুন জ্বালো একসাথে’।

‘দ্রোহযাত্রায়’ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাংস্কৃতিক কর্মী, শিল্পী, আইনজীবী, উন্নয়নকর্মী, মানবাধিকারকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। এই কর্মসূচিতে যুক্ত ছিলেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

দ্রোহযাত্রার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণার পাশাপাশি শহীদ মিনার থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন বামপন্থী ছাত্রসংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) তৎকালীন সভাপতি রাগীব নাঈম। কারফিউ প্রত্যাহার, গণগ্রেপ্তার বন্ধ, বন্দীদের মুক্তি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পাশাপাশি সরকারের পদত্যাগ দাবি করেন তিনি।

দ্রোহযাত্রা কর্মসূচির অন্যতম উদ্যোক্তা ছিল বামপন্থী ছাত্রসংগঠনের মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট। সে সময় এই জোটের সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিলেন রাগীব নাঈম। সেই কর্মসূচি সম্পর্কে তিনি গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকারের গুলি-গণগ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে কারফিউ ভেঙে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছিল ছাত্রজোট। একপর্যায়ে সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে একটি কর্মসূচি আয়োজনের চিন্তা মাথায় আসে। সেই চিন্তা থেকে ২৮, ২৯ ও ৩০ জুলাই বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন, শিক্ষক নেটওয়ার্ক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, শ্রমিক ও নারী সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করি। মানুষকে সাহস দেওয়া এবং আরও মানুষকে যুক্ত করার জায়গা থেকে দ্রোহযাত্রার পরিকল্পনা হয়।’

শুরুতে এই কর্মসূচির নাম ‘শোকযাত্রা’ ঠিক করা হয় বলে জানান রাগীব নাঈম। তিনি বলেন, বিভিন্ন স্তরের মানুষের মতামতের ভিত্তিতে কর্মসূচি ঘোষণার এক দিনের মাথায় নাম পরিবর্তন করে ‘দ্রোহযাত্রা’ করা হয়। এক-দুই হাজার মানুষের জমায়েতের লক্ষ্য ছিল। কিন্তু দ্রোহযাত্রায় আসেন হাজার হাজার মানুষ। সেদিন শহীদ মিনারে বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা ছিলেন। সবার সম্মিলিত সিদ্ধান্তে বিপুল জনসমাবেশ থেকে তৎকালীন সরকারের পদত্যাগের দাবি ঘোষণা করা হয়।

‘দ্রোহযাত্রা’ কর্মসূচির পাশাপাশি ২ আগস্ট ঢাকার ধানমন্ডির আবাহনী মাঠের সামনে ‘গণহত্যা ও নিপীড়নবিরোধী শিল্পীসমাজ’ ব্যানারে ছাত্র-জনতার হত্যার প্রতিবাদে শামিল হন শিল্পীরা। সেদিন সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই এই সমাবেশ হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি

২ আগস্ট সারা দেশে জুমার নামাজ শেষে দোয়া ও কবর জিয়ারতের আহ্বান জানিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। মন্দির ও গির্জাতেও প্রার্থনার আহ্বান ছিল। এ ছাড়া জুমার নামাজ শেষে ছাত্র-জনতার গণমিছিলের কর্মসূচিও ছিল সেদিন। এই কর্মসূচিকে ঘিরে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের পাঁচ জেলায় সংঘর্ষ, ভাঙচুর, সংঘাত ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

ডিবি কার্যালয় থেকে ১ আগস্ট ছাড়া পাওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির ছয় সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার ও নুসরাত তাবাসসুম ২ আগস্ট গণমাধ্যমে একটি যৌথ বিবৃতি পাঠান। এতে বলা হয়, আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা-সংক্রান্ত ডিবি কার্যালয় থেকে প্রচারিত ভিডিও বিবৃতিটি তাঁরা স্বেচ্ছায় দেননি।

আজ আবারও ‘দ্রোহযাত্রা’

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় সাড়া জাগানো প্রতিবাদী কর্মসূচি ‘দ্রোহযাত্রার’ বর্ষপূর্তি আজ শনিবার। ‘ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রকাঠামোর বিলোপ, চব্বিশের গণহত্যাসহ পাহাড় ও সমতলের সব গণহত্যার বিচার এবং নব্য ফ্যাসিবাদী প্রবণতা প্রতিহতের প্রতিবাদে’ আজ বেলা সাড়ে তিনটায় ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘শিক্ষার্থী–শ্রমিক–জনতার দ্রোহযাত্রা’ ডাকা হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করবেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, যিনি গত বছরের দ্রোহাযাত্রায়ও সভাপতিত্ব করেছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র র পদত য গ ২ আগস ট স গঠন র জনত র

এছাড়াও পড়ুন:

সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী

২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।

সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।

পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু

১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।

বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।

এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।

আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।

জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুদানের এল-ফাশের শহরে ‘চরম বিপদে’ বাসিন্দারা: ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস
  • সুদানে গণহত্যার প্রতিবাদে জাবি ও জবিতে মানববন্ধন
  • জুলাইবিরোধী শক্তির শাস্তি দাবিতে ইবিতে বিক্ষোভ
  • সুদানে আরএসএফের গণহত্যায় আরব আমিরাত ইন্ধন দিচ্ছে কেন
  • সুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে
  • একাত্তরের গণহত্যার জন্য জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে: আলাল
  • সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী