বাঘায় ‘আ. লীগ কর্মীর’ বাড়িতে ইফতারে অংশ নেওয়া নিয়ে বিএনপির দুটি পক্ষের মারামারি
Published: 27th, March 2025 GMT
রাজশাহীর বাঘায় আওয়ামী লীগের এক কর্মীর বাড়িতে ইফতারে অংশ নেওয়া নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়েছে। গতকাল বুধবার রাত আটটার দিকে উপজেলার মনিগ্রাম বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের ৯ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে একজনের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় বিএনপির কর্মী বকুল হোসেন পক্ষের কর্মী জাহিদ হাসান ফেসবুকে দুটি ছবিসহ একটি পোস্ট দেন। তাঁর সঙ্গে ক্যাপশনে লেখেন, ‘২৪শে রমজান (মঙ্গলবার) মনিগ্রাম ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আয়নাল হকের (পিন্টু) নেতৃত্বে “আওয়ামী লীগের শীর্ষ সন্ত্রাসী” গোলাপের বাড়িতে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়।’ ফেসবুক পোস্টটি গতকাল আয়নাল হক ও তাঁর সমর্থকদের নজরে আসে। বিষয়টি নিয়ে রাতে মনিগ্রাম বাজারে উভয় পক্ষের মধ্যে কথা–কাটাকাটি ও ধাক্কাধাক্কি হয়। একপর্যায়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের ৯ জন আহত হয়েছেন।
আহত নেতা–কর্মীরা হলেন উপজেলার মনিগ্রামের সোহাগ আলী (১৮), বকুল হোসেন (৩৮), রনি হোসেন (৩১), আলিফ হোসেন (২০), ফারুক হোসেন (৪০) কুদরত আলী (৪১), সোহেল রানা (৩০) ও তুলশিপুর গ্রামের জাহিদ হোসেন (৩০) ও মজিবর রহমান (৪১)। তাঁদের মধ্যে সোহাগ আলীর (১৮) অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আয়নাল হক বলেন, ‘এটা অপপ্রচার। আসল ঘটনা হচ্ছে, আমিসহ এলাকার অনেক লোকের কাছে বকুল হোসেন ও তাঁর সমর্থকেরা ঈদ উপলক্ষে চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দেওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমার বিরুদ্ধে নানা রকম অপপ্রচার করেন। তার মধ্যে ফেসবুকে লিখেছেন, আমি আওয়ামী লীগের নেতার বাড়িতে ইফতার করে বেড়াচ্ছি। এ বিষয়ে মনিগ্রাম বাজারে তাঁর কাছে জবাব চাইলে তাঁরা আমার ও লোকজনের ওপর হামলা চালিয়ে অনেককে আহত করেন এবং বাজারে রাশিদুলের গুড়ের আড়ত ভাঙচুর করেন।’
এ ব্যাপারে বকুল হোসেন বলেন, ‘ওয়ার্ডের সভাপতি আয়নাল হক ইউনিয়নের বিএনপির সভাপতিসহ নেতাদের নিয়ে আওয়ামী লীগের সমর্থক গোলাপের বাড়িতে ইফতারে যাওয়ায় জাহিদ ফেসবুকে লেখালেখি করে। এ জন্য আয়নাল হক মনিগ্রাম বাজারে যেতে নিষেধ করেন। ওই দিন রাতে জাহিদ বাজারে গেলে আয়নাল হক ও তাঁর লোকজন হামলা করেন। এতে উভয়ের মধ্যে মারামারির ঘটনায় অনেকেই আহত হয়েছেন। এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ করিনি।’
যাঁর বাড়িতে ইফতারের দাওয়াত নিয়ে এ ঘটনা, ওই ব্যক্তির নাম গোলাম মোস্তফা। বিএনপির দুই পক্ষের মারামারির বিষয়ে জানতে চাইলে গোলাম মোস্তফা বলেন, তিনি একজন সার ব্যবসায়ী। যখন যে দল ক্ষমতায় আসে, তাদের সঙ্গে চলতে হয়। আগে বিএনপির সঙ্গে চলেছেন। আওয়ামী লীগের সময় তাদের সঙ্গেও চলতে হয়েছে। তিনি কোনো নেতা নন। প্রতিবছর তাঁর মা–বাবার জন্য দোয়ার একটি অনুষ্ঠান পবিত্র রমজানের শেষের দিকে করে থাকেন। এবার ২৪ মার্চ সেই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন।
গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আমার ফুফাতো ভাই কালু বিএনপির রাজনীতি করে। সে কয়েকজন বিএনপি নেতাকে দাওয়াত করেছিল। আমি নিজেও কয়েকজনকে করেছি। এই অনুষ্ঠানে বকুল হোসেন দাওয়াত পাননি। এই ক্ষোভে তিনি ফেসবুকে আমাকে আওয়ামী লীগের “শীর্ষ সন্ত্রাসী” বলে প্রচার করেছেন। এখন কী করব বুঝে উঠতে পারছি না।’
এ ব্যাপারে বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ ফ ম আছাদুজ্জামান বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: মন গ র ম ব জ র বক ল হ স ন ব এনপ র ফ সব ক আওয় ম ইফত র
এছাড়াও পড়ুন:
গভীর রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ইফতিখারুল আমল মাসঊদের বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল বুধবার গভীর রাতে বিনোদপুরের মণ্ডলের মোড় এলাকায় তাঁর বাড়ির দরজার সামনে এ ঘটনা ঘটে। তবে এতে কেউ আহত হয়নি।
মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মালেক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সেখানে তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ করা হয়েছে। তবে কে বা কারা এটি করেছে, সে বিষয়ে এখনো কিছু জানা যায়নি। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগও কেউ করেনি। তাঁরা দুর্বৃত্তদের শনাক্তের চেষ্টা করছেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইফতিখারুল আমল মাসঊদের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে ঘটনার পর তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্টে লিখেছেন, ‘ফ্যাসিবাদী অপশক্তির জুলুম-নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলাম। কোনো রক্তচক্ষুর ভয়ংকর হুমকি অন্যায়ের প্রতিবাদ করা থেকে বিরত রাখতে পারেনি। তবে তারা কখনো বাড়ি পর্যন্ত আসার ঔদ্ধত্য দেখাতে পারেনি। কিন্তু আজ আমার বাড়ির দরজায় গভীর রাতের অন্ধকারে হামলার সাহস দেখিয়েছে কাপুরুষের দল! এরা কারা? এদের শিকড়সহ উৎপাটনের দাবি জানাই।’
এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহউপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ভেবেছিলাম বাড়ির গেটে কিংবা গেটের বাইরে। কিন্তু গিয়ে দেখলাম একেবারে বাড়িতে হামলা হয়েছে। গতকালই ওনার অসুস্থ বাবা হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে বাসায় এসেছেন। জানি না শেষ কবে একজন শিক্ষকের বাড়িতে রাতের আঁধারে এভাবে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। আমরা শঙ্কিত, স্তম্ভিত।’
এদিকে হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা চত্বরে এ সমাবেশের আয়োজন চলছে।