‘আমার চোখের সামনে বউ-পোলাপানসহ চাইরজন সদস্য মইরা গেল। সাত বছরের মেয়েসহ সবাই রোজা আছিল। বাসের ধাক্কায় নিমিষেই আমার পরিবারটা ধ্বংস হইয়া গেল। আমি তারারে বাঁচাইতে পারলাম না। আল্লাহ যে ক্যান আমারে বাঁচাইয়া রাখল। আমি এই জীবন দিয়া কী করবাম এহন? আমার পরিবারের সবাই এহন কবরে। ব্যাডা মানুষ কানবারও পারি না। তাই বুকে পাথর বাইন্ধা বউ-পোলাপানের কবরের সামনে খাড়ইয়া থাহি সারাদিন।’ 
কথাগুলো বলছিলেন ময়মনসিংহের গৌরিপুরের ভাংনামারী ইউনিয়নের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম মানিক। ঈদুল ফিতরের আগের দিন একই উপজেলার গাজীপুর এলাকার প্রগতি ফিড মিলের সামনে ময়মনসিংহগামী বাসের সঙ্গে গৌরীপুরগামী ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে চারজনের মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে প্রীতি (৭) ও রীতি (১৪) মানিকের মেয়ে, দিলরুবা (৪০) তাঁর স্ত্রী এবং কুলসুমা বেগম (৯৫) তাঁর শাশুড়ি।
গতকাল শনিবার সরেজমিন ভাংনামারি ইউনিয়নের আকন্দ বাড়িতে গেলে সমকালের সঙ্গে কথা হয় বাড়ির লোকজনের। মানিক বলেন, তিনি ময়মনসিংহ নগরীর স্বদেশী বাজার এলাকায় একটি ছোট দোকান নিয়ে ব্যবসা করেন। এটি তাঁর পারিবারিক ব্যবসা। তবে অল্প পুঁজির ব্যবসা হওয়ায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভাড়া বাসায় দিন চলছিল তাঁর। ঈদের আগের দিন সাহ্‌রি খেয়ে নাটক ঘরলেনের ভাড়া বাসা থেকে গ্রামের বাড়িতে রওনা দিয়েছিলেন তারা। পরে বাসের ধাক্কায় চারজনের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনার পর শোকে স্তব্ধ হয়ে যান স্ত্রী-সন্তান হারানো মানিক। দুই মেয়ে তাৎক্ষণিক মারা গেলেও আরেক মেয়ে মারিয়া আক্তার মাহি (১৪) গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন। মানিক জানান, মাহি এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। নগরীর সিটি স্কুলের ছাত্রী সে। মেয়ের এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া নিয়ে শঙ্কিত তিনি। স্কুলের শিক্ষকদের কাছে আকুতি জানিয়েছেন তাঁর মেয়ে যাতে পরীক্ষায় বসতে পারে।
মানিক বলেন, তিন মেয়েকে স্কুলে আনা-নেওয়া ও সংসারের কাজেই সারাদিন ব্যস্ত থাকতেন তাঁর স্ত্রী। প্রতিদিন সন্ধ্যার পরেই তাড়াতাড়ি বাসায় যাওয়ার জন্য তাগিদ দিতেন বলেই কেঁদে ফেলেন তিনি।
প্রীতি ও রীতির মামা ফজলুল হক আকন্দ জানান, সাত ভাই-বোনের মাঝে ষষ্ঠ ছিল দিলরুবা। ছোটবেলা থেকেই তিনি অত্যন্ত দয়ালু ছিলেন। পরিবারের সবার খোঁজখবর রাখতেন। সংসার সামলেও দিনে এক-দুবার তাঁকে ফোন দিয়ে বাড়ির খোঁজখবর নিতেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আমাদের জীবনে আর কোনো ঈদ আসবে না। এ বাড়িতে আর কোনো দিন আনন্দ হবে না।’
রীতির মামি শিলা আক্তার স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘রীতির মা আমাকে বোনের মতো দেখত। আমাদের আপদ-বিপদে সে সবার আগে এগিয়ে আসত। আমরা কোনো দিন হাসপাতালে গেলে সে একাই সব সামলাত। বাড়িতে আসার আগেই ছোট মাছ আর শুঁটকি রান্না করে রাখতে বলত। তিন মেয়ের মধ্যে দুটো মেয়ে ঘটনাস্থলে মারা গেল। আল্লাহ একটি মেয়েকে বাঁচিয়ে রেখেছে। আগে আমার এক মেয়ে ছিল। এখন থেকে মাহি আমার আরেক মেয়ে।’
অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে শিলা বলেন, ‘তাদের রেখে আল্লাহ যদি আমাকেই উঠিয়ে নিত, তাহলে আমার কোনো দুঃখ থাকত না। এই দুর্ঘটনা আমাদের জীবনটাকে তছনছ করে দিয়েছে। আমাদের মুখে আর কোনো দিন হাসি ফুটবে না। মাহিকে তার মা ডাক্তার বানাতে চেয়েছিল। আমরা আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করব তার মায়ের আশা পূরণ করতে।’ তাঁর ক্ষোভ, এত বড় একটি দুর্ঘটনা ঘটে গেল কোনো সরকারি-বেসরকারি সংস্থা তাদের সান্ত্বনা জানাতে আসেনি। কেউ তাদের কোনো খোঁজখবর নেয়নি।
গৌরিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম সাজ্জাদুল হাসান সমকালকে জানান, ঈদে অফিস বন্ধ থাকায় তারা যেতে পারেননি। তাদের বিষয়ে অবগত আছেন। অফিস খোলা হলে তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আম দ র র স মন পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

অসুস্থ জামায়াত নেতা মাও. মঈনুদ্দিনের খোঁজখবর নিলেন বিএনপি নেতা টিপু 

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সাবেক আমীর অসুস্থ মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমাদের শারীরিক অবস্থার খোঁজ খবর নিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু।

বুধবার (১ অক্টোবর) বিকেলে সাইনবোর্ড প্রো-অ্যাক্টিভ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমাদ দেখতে ছুটে যান তিনি। 

এসময়ে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু তার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন এবং তার সুস্থতা জন্য দোয়া করেন। 

এসময়ে আরও উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর আমীর মাওলানা আঃ জব্বার, মহানগর ১৮নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদকসহ আল আরিফ, ১২নং ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মাসুম, কৃষক দলনেতা মাহবুল আলম, ১৩নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা মাসুম খান প্রমুখ।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ক্যান্সার আক্রান্ত ছরোয়ারের পাশে থাকার আশ্বাস প্রশাসনের
  • অসুস্থ জামায়াত নেতা মাও. মঈনুদ্দিনের খোঁজখবর নিলেন বিএনপি নেতা টিপু 
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি