দীর্ঘদিন ধরে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ ও সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজে যুক্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘হোপ’। কিন্তু কোনো নির্বাচনে কখনো পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পালন না করেও নির্বাচন কমিশনের সাম্প্রতিক তালিকায় সংস্থাটিকে পর্যবেক্ষক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া পরিচালনা পর্ষদের এক সদস্য স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা ছিলেন।

বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের গণবিজ্ঞপ্তিতে ঘোষিত ৭৩টি নির্বাচনী পর্যবেক্ষক সংস্থার তালিকায় ১২ নম্বরে রয়েছে ‘হোপ’-এর নাম। ঠিকানা উল্লেখ আছে নবীনগর উপজেলার আলীয়াবাদ গ্রামে। অথচ এই সংগঠনের আগে কোনো জাতীয় বা স্থানীয় নির্বাচনে পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা নেই।

আরও পড়ুনদেশীয় ৭৩টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধনযোগ্য জানিয়ে ইসির গণবিজ্ঞপ্তি২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

যদিও নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন পর্যবেক্ষক নীতিমালায় বলা হয়েছে, গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে কাজ করছে এবং নিবন্ধিত গঠনতন্ত্রের মধ্যে এ বিষয়সহ সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে নাগরিকদের মধ্যে তথ্য প্রচার ও উদ্বুদ্ধকরণের অঙ্গীকার আছে, কেবল সেসব বেসরকারি সংস্থা নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে পারবে। কিন্তু হোপ এনজিওটি মূলত ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক কর্মকাণ্ডনির্ভর।

ভাড়া বাড়িতে প্রধান কার্যালয়

বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া ঠিকানা ধরে গত রোববার সকালে আলীয়াবাদে গিয়ে দেখা যায়, একটি ভাড়া বাসায় হোপের প্রধান কার্যালয়। বাইরে টানানো সাইনবোর্ডে লেখা, ‘হোপ প্রধান কার্যালয়, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি সনদ নম্বর ******।’

আলীয়াবাদ গ্রামের বাসিন্দা তিন ভাইয়ের বাড়ির একটি দোতলা, একটি একতলা ভাড়া নিয়ে প্রধান কার্যালয় এবং একই চত্বরে থাকা একটি তিনতলা ভবনের নিচতলা ভাড়া নিয়ে এটির একটি শাখার কার্যক্রম চলছে। সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে ২টি অতিথি ও ১টি প্রশিক্ষণ কক্ষসহ মোট ৯টি কক্ষ আছে। প্রধান কার্যালয়ে পাশের শাখা কার্যালয়টি তিনতলা ভবনের নিচতলায়। সেখানে একটি হলসহ তিনটি কক্ষ আছে। ভবনটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় মালিকেরা থাকেন।

১৯৯৬ সালে কার্যক্রম শুরু হলেও সংস্থাটি নিবন্ধন পায় ১৯৯৭ সালে। বর্তমানে নবীনগর উপজেলায় ৫টি, বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় ২টি, কসবায় ১টি ও আখাউড়ায় ১টি, মোট ৯টি শাখা রয়েছে। কর্মী আছেন ৭৯ জন। এর মধ্যে প্রধান কার্যালয়ে কর্মীর সংখ্যা ৯।

আরও পড়ুনসংস্থার কার্যালয় পরিত্যক্ত, ঝোপঝাড়ে ঘেরা টিনশেডে ভিমরুলের চাক৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫পরিচালনা পর্ষদ ও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা

হোপের পরিচালনা পর্ষদে আছেন সাত সদস্য। এর সভাপতি ব্যবসায়ী হুমায়ূন কবির, সহসভাপতি সাংবাদিক আবু কাওছার, অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ তাইজ উদ্দিন, কার্যনির্বাহী সদস্য কলেজশিক্ষক আমেনা খাতুন, শিক্ষক শিউলি পারভিন, কলেজশিক্ষক মোহাম্মদ মোক্তাদির ও নির্বাহী পরিচালক সাংবাদিক এ কে এম আসাদুজ্জামান।

সহসভাপতি আবু কাওছার নবীনগরের রসুল্লাহবাদ ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সহসভাপতি ছিলেন। বর্তমানে সাংবাদিকতা করছেন। রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০১৭-১৮ সাল পর্যন্ত কমিটিতে ছিলাম। এর পর থেকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নই। বর্তমানে উপজেলার মাদকবিরোধী কমিটির সভাপতি হিসেবে সামাজিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় আছি।’

নির্বাহী পরিচালক এ কে এম আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আবু কাওছারকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত দেখিনি। আমরা ক্ষুদ্রঋণ বিতরণসহ সামাজিক কর্মকাণ্ডেই সক্রিয়।’

আরও পড়ুনভোট পর্যবেক্ষণে নামসর্বস্ব সংস্থাও, অফিস বাসায়, পরিত্যক্ত ঘরে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫পর্যবেক্ষণে ‘শূন্য অভিজ্ঞতা’

সংস্থাটি কখনো কোনো জাতীয় সংসদ নির্বাচন বা স্থানীয় সরকার নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেনি। শুধু ২০১৪ সালে একবার অনুমতি পেলেও মাঠে যায়নি। সর্বশেষ ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে আবেদন করলেও অনুমতি মেলেনি।

অর্থাৎ ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে দুই দশকের অভিজ্ঞতা থাকলেও নির্বাচন পর্যবেক্ষণে একেবারেই নতুন তারা।

ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক কার্যক্রম

হোপ সূত্রে জানা যায়, সংস্থাটি মূলত ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করে দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে কাজ করে। সংস্থার গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ১ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হয়। এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে সংস্থাটি।

হোপের অন্যান্য কার্যক্রমের মধ্যে আছে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা সৃষ্টি, নারী নেতৃত্ব বিকাশ, যৌতুক, বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ রোধে সচেতনতা, নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন, চিকিৎসা অনুদান ও কম্বল বিতরণ, শিক্ষা প্রসার ও শিক্ষাবৃত্তি, স্বাস্থ্য ও প্রজননসেবা, প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহায়তা

১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও সংস্থাটি বিভিন্ন সময়ে পর্যায়ক্রমে নিবন্ধন পেয়েছে এমআরএ (২০১০), সমাজসেবা অধিদপ্তর (২০১৮), যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর (২০১৭) ও এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরো (২০২৪ সালের ৩ জুন)।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে হোপের উপনির্বাহী পরিচালক নিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘পর্যবেক্ষক মনোনয়নের আগে এনএসআই, পুলিশ ও জেলা প্রশাসন তদন্ত করেছে। প্রতি মাসে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সভায় আয়ের তথ্য উপস্থাপন করতে হয়। পিকেএসএফের বরাদ্দ করা ক্ষুদ্রঋণও আমরা বাস্তবায়ন করি।’

আরও পড়ুনসংস্থার ঠিকানা ঠিক নেই, চেয়ারম্যান চেয়েছিলেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স প ট ম বর র উপজ ল ন বন ধ র জন ত ন পর য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

নার্সদের অমর্যাদাকর অবস্থানে রাখা হয়েছে: ফরহাদ মজহার

বাংলাদেশে জনগণের স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিশ্চিত করাটা অত্যন্ত জরুরি হলেও এখানে পেশা হিসেবে নার্সদের অমর্যাদাসম্পন্ন একটা অবস্থানে রাখা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার।

ফরহাদ মজহার বলেন, ‘নার্সদের ডাক্তারি ব্যবস্থার অধীন একটা পেশা হিসেবে যে দেখা হয়, আমরা মনে করি এটা ভুল। এখান থেকে মুক্ত হতে হবে। নার্স সেবাটা স্বাস্থ্যসেবার একটা মৌলিক দিক। ফলে তাঁদের স্বাধীনভাবে এই পেশাকে চর্চা করবার সুযোগ–সুবিধা দিতে হবে।’

আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ফরহাদ মজহার। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএনএ) ও স্বাস্থ্য আন্দোলন। স্বাস্থ্য আন্দোলনের পক্ষে বক্তব্য দেন ফরহাদ মজহার।

সরকার স্বাস্থ্যকে এখন আর জনগণের অধিকার হিসেবে স্বীকার করছে না বলে অভিযোগ করেন ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, ‘এখন স্বাস্থ্যকে অধিকার নয়, বাজারজাত পণ্য বানানো হয়েছে। টাকা থাকলে চিকিৎসা পাবেন, টাকা না থাকলে নয়।’

নার্সদের স্বাধীন পেশাগত চর্চা, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ, ন্যায্য বেতন ও মর্যাদা নিশ্চিতের জন্য জাতীয় নার্সিং কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, নার্সদেরকে ডাক্তারদের হুকুমমতো চলতে হবে—এই ধারণা ভাঙতে হবে। স্বাস্থ্য মানে শুধু প্রেসক্রিপশন নয়, প্রতিরোধও একটি বড় দিক। নার্সদের মর্যাদা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত হলে জনগণ প্রকৃত স্বাস্থ্যসেবা পাবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফরহাদ মজহার বলেন, নার্সিং স্বাস্থ্যসেবার এক মৌলিক দিক। কিন্তু আমাদের সমাজে চিকিৎসাকে ডাক্তারিকরণ বা মেডিক্যালাইজেশন করা হয়েছে। অনেক রোগে ডাক্তার কিংবা ওষুধের প্রয়োজনই হয় না। এ জায়গায় নার্সরা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএনএ) সভাপতি মো. শরিফুল ইসলাম। এক মাসের মধ্যে নার্সিং কমিশন গঠনের এক দফা দাবি বাস্তবায়ন না হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনের সঞ্চালনা করেন বিএনএর সহসভাপতি মাহমুদ হোসেন তমাল। এতে উপস্থিত ছিলেন স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারপারসন জরিনা খাতুন, সহসভাপতি মনির হোসেন ভূঁইয়া এবং সংগঠনের অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতা-কর্মী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নার্সদের অমর্যাদাকর অবস্থানে রাখা হয়েছে: ফরহাদ মজহার
  • এসিসির সভায় উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়, নাকভি কথা না শুনলে আইসিসিতে অভিযোগ করবে ভারত