উইকিপিডিয়ার মতো ‘গ্রোকিপিডিয়া’ আনছেন ইলন মাস্ক
Published: 2nd, October 2025 GMT
অনলাইনে মুক্ত বিশ্বকোষ হিসেবে পরিচিত উইকিপিডিয়াকে পক্ষপাতদুষ্ট আখ্যা দিয়ে সেটির বিকল্প তৈরি করতে যাচ্ছেন এক্সএআই, স্পেসএক্স, টেসলাসহ খুদে ব্লগ লেখার সাইট এক্সের (সাবেক টুইটার) মালিক ইলন মাস্ক। মার্কিন এই প্রযুক্তি উদ্যোক্তা জানিয়েছেন, এক্সএআই নতুন এক অনলাইন বিশ্বকোষ তৈরির কাজ শুরু করবে। গ্রোকিপিডিয়া ‘অত্যন্ত উন্নত’ প্ল্যাটফর্ম হবে, যেখানে মানুষ আরও নির্ভরযোগ্য তথ্য খুঁজে পাবেন।
সম্প্রতি এক্সে (সাবেক টুইটার) উইকিপিডিয়ার পক্ষপাতিত্ব নিয়ে করা এক সমালোচনামূলক পোস্টে সাড়া দিয়ে মাস্ক লিখেছেন, আমরা গ্রোকিপিডিয়া তৈরি করছি। এটি উইকিপিডিয়ার তুলনায় উন্নত হবে।
জানা গেছে, এক্সএআইয়ের তৈরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চ্যাটবট ‘গ্রোক’–এর ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হবে গ্রোকিপিডিয়া। ২০২৩ সালের শেষ দিকে এক্সএআই এই গ্রোক উন্মোচন করে, যা মূলত ওপেনএআইয়ের তৈরি চ্যাটজিপিটির প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বাজারে আনা হয়।
উইকিপিডিয়ার বিষয়ে মাস্কের অসন্তোষ নতুন নয়। তিনি বারবার অভিযোগ করেছেন, প্ল্যাটফর্মটি রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট এবং তথাকথিত ‘ওয়োক আদর্শে’ প্রভাবিত। উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশনের অর্থায়ন মডেল নিয়েও তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, কারণ প্রতিষ্ঠানটি মূলত ব্যবহারকারীদের অনুদানের ওপর নির্ভরশীল। ২০২৩ সালে তিনি মন্তব্য করেন, উইকিপিডিয়া যদি নাম বদলে ‘ডিকিপিডিয়া’ রাখে, তবে তিনি ১০০ কাটি ডলার অনুদান দেবেন। উইকিপিডিয়ার বিষয়ে মাস্কের সমালোচনা সাম্প্রতিক সময়ে আরও তীব্র হয়েছে।
ইলন মাস্কের মালিকানাধীন গ্রোক চ্যাটবটের কার্যকারিতার বিষয়ে বেশ বিতর্ক রয়েছে। এ বছরের শুরুর দিকে এক প্রশ্নের জবাবে গ্রোক জানিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছেন ইলন মাস্ক, ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জেডি ভ্যান্স। আবার গ্রোক ৪ সংস্করণ উন্মোচনের পর দেখা যায়, চ্যাটবটটি কিছু উত্তরে হিটলারকে প্রশংসা করছে। এ নিয়ে সমালোচনা হলেও মাস্ক দাবি করেন, ব্যবহারকারীরা ইচ্ছাকৃতভাবে গ্রোককে বিভ্রান্ত করেছে। গ্রোকিপিডিয়া তৈরির জন্য এক্সএআইয়ের তৈরি গ্রোক চ্যাটবট ব্যবহারের বিষয়ে ইলন মাস্ক জানিয়েছেন, গ্রোক ভুল তথ্য শনাক্ত করতে পারে। অর্ধসত্য সংশোধন করার পাশাপাশি অনলাইনে প্রাসঙ্গিক তথ্য যোগ করতে সক্ষম।
সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উইক প ড য় র ইলন ম স ক
এছাড়াও পড়ুন:
ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে ‘আমা দাবলাম’ জয় করলেন তৌকির
ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে হিমালয়ের অন্যতম পর্বত ‘আমা দাবলাম’ জয় করছেন পাবনার সন্তান আহসানুজ্জামান তৌকির (২৭)। গত ৪ নভেম্বর নেপাল সময় দুপর ১টার দিকে ৬ হাজার ৮১২ মিটার উচ্চতার এই পর্বতের চূড়া স্পর্শ করেন তিনি।
পর্বতারোহণ বিষয়ক অর্গানাইজেশন রোপ ফোরের পৃষ্ঠপোষকতা ও তত্ত্বাবধানে এই অভিযানটি পরিচালিত হয়। তার এই অভিযানে সঙ্গী হিসাবে ছিলেন রোপ ফোরের আরেকজন তরুণ পর্বতারোহী আবরারুল আমিন অর্ণব।
আরো পড়ুন:
রঙ হারাচ্ছে অদম্য মেধাবীর ভবিষ্যতের স্বপ্ন
উপজেলায় এইচএসসিতে একমাত্র জিপিএ-৫ পেলেন অনুরাগ
আমা দাবলাম খাড়া বরফ দেয়াল, গভীর ক্রেভাস, ঝুলন্ত বরফ খণ্ড এবং কঠিন আবহাওয়ার জন্য পৃথিবীর অন্যতম চ্যালেঞ্জিং পর্বত হিসেবে পরিচিত। তৌকিরের এই অভিযানটি ছিল বাংলাদেশি পর্বতারোহণ ইতিহাসে এক গৌরবময় সংযোজন।
চূড়ায় পৌঁছার প্রতিক্রিয়ায় তৌকির বলেন, “আমা দাবলাম আমার কাছে শুধু একটা পর্বত নয়, এটা ছিল নিজের সীমা পরীক্ষা করার যাত্রা। পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর এই পর্বতের চূড়ায় দাঁড়িয়ে যখন লাল-সবুজ পতাকাটা তুলে ধরলাম, মনে হলো এটি শুধু আমার সফলতা নয়, এটি বাংলাদেশের সব তরুণের স্বপ্নের স্পন্দন।”
তিনি বলেন, “আমার এই অভিযানটা ছিল পৃথিবীর সব বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের জন্য, যাদের জীবনটা কেটে যায় অন্যের ওপর ডিপেন্ড (নির্ভর) করে এবং চার দেয়ালের আলোতে পৃথিবী দেখে। আমি বিশ্বাস করি, পৃথিবীতে আসা সব প্রাণী শক্তিশালী। আসুন, ডিপেন্ডেবল এই মানুষগুলোর ওপর আরো বিনয়ী হই, ভালোবাসা এবং সাহায্যে তৈরি করি তাদের নতুন পৃথিবী।”
যেভাবে ‘আমা দাবলাম’ জয় করলেন তৌকির
গত ১২ অক্টোবর দুঃসাহসিক এই অভিযানের জন্য দেশ ছাড়েন তৌকির। এরপর প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে শুরু হয় তার মূল অভিযান। হিমালয়ের পাহাড়ি বন্ধুর পথ ধরে ট্রেকিং করে তিনি বেস ক্যাম্পে পৌঁছান ২২ অক্টোবর। বেস ক্যাম্পে পৌঁছে তৌকির শুরু করেন উচ্চতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ায় কৌশল। যা এক্লিমাটাইজ রোটেশন নামে পরিচিত।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের ২৯ অক্টোবর সামিটের কথা থাকলেও ২৭ অক্টোবর থেকে হিমালয়ের শুরু হয় তীব্র তুষার পাত। এই তুষার পাতের মধ্যেই তৌকির অবস্থান করেন আমা দাবলাম ক্যাম্প-১ এ। যার উচ্চতা প্রায় ১৯ হাজার ফিট। ২৮ অক্টোবর আবহাওয়া আরো খারাপ হলে তাদের শেরপা লিডার সিদ্ধান্ত নেন বেস ক্যাম্পে ফিরে যাবার। তীব্র এই তুষার ঝড়ের মধ্যে লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে তাদের দল বেস ক্যাম্পে পৌঁছায়। বেস ক্যাম্পে পৌঁছে শুরু হয় নতুন দুশ্চিন্তার কারণ।
৬৮১২ মিটার উচ্চতার আমা দাবলাম পর্বত
তুষার পাতের কারণে ফিক্সড রোপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবহাওয়া ভালো হতে শুরু করলেও নতুন রুট ওপেন না করা পর্যন্ত সামিট পুশ সম্ভব হচ্ছিল না। এভাবেই কেটে যায় পাঁচদিন। তরপর সুখবর আসে রুট ওপেন হবার। নভেম্বরের ২ তারিখ শুরু হয় আবার সামিট বিট। এইদিনে তৌকির পৌঁছে যান ১৯ হাজার ফিট উচ্চতার ক্যাম্প-১ এ। এরপর ৩ তারিখ ইয়োলো টাওয়ার খ্যাত ১৯ হাজার ৬৮৫ ফিট উচ্চতার ক্যাম্প-২ এ পৌঁছান। বিশ্রাম নিয়ে শুরু করেন সামিট পুশ। তীব্র বাতাস, ফিক্সড রোপে অতিরিক্ত ট্রাফিক এবং আইস ফলকে উপেক্ষা করে ৪ নভেম্বর ২২ হাজার ৩৪৯ ফিট উচ্চতার ‘আমা দাবালাম’ চূড়ায় পৌছান তিনি।
তৌকির বিশ্বাস করেন, “স্বপ্ন যদি সত্যিকার অর্থে জ্বলে, তবে পাহাড়ও নত হয়। প্রতিটি শিখর আমাদের শেখায়, সীমা কেবল মনেই থাকে, সফলতায় নয়।”
তরুণ এই পর্বতারোহী এবারের স্বপ্ন পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়া ‘মাউন্ট এভারেস্ট’। এই লক্ষ্য নিয়েই তিনি এগোচ্ছেন। এখন প্রয়োজন তার সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তৌকির ২০২৬ সালেই পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়ায় আবারো উড়াতে চান বাংলাদেশের পতাকা।
এর আগে, গত বছরের অক্টোবরে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে নেপালের তিনটি ছয় হাজার মিটার পর্বত চূড়া স্পর্শ করেন পাবনার সন্তান আহসানুজ্জামান তৌকির। ২৭ দিনের অভিযানে গিয়ে কোন শেরপা সাপোর্ট ছাড়াই পর্বতগুলো আরোহণ করেন তিনি। পর্বতগুলো হলো ৬১১৯ মিটার উচ্চতার লবুচে পিক, ৬১৬৫ মিটার উচ্চতার আইল্যান্ড পিক ও ৬৪৬১ মিটার উচ্চতার মেরা পিক।
তারও আগে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে তৌকির খুম্বু রিজিওনের ৫০৭৬ মিটার উচ্চতার নাগা অর্জুন এবং ৬১১৯ মিটার উচ্চতার লবুচে পিক পর্বতের চূড়ায় আরোহণ করে বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা উড়িয়েছেন।
তৌকির পাবনার চাটমোহর পৌর সদরের বালুচর মহল্লার আকরাম হোসেন সাবু-সুলতানা সামিয়া পারভীন দম্পতি ছেলে। দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট তিনি। চাটমোহর রাজা চন্দ্রনাথ ও বাবু শম্ভুনাথ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা এবং অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্রিপল-ই তে বিএসসি সম্পন্ন করেছেন
ঢাকা/মাসুদ