টাঙ্গাইলে দান করা ‘পদ্মমনি’ পুকুরে ৯৫ বছর ধরে প্রতিমা বিসর্জন হচ্ছে
Published: 2nd, October 2025 GMT
জমিদার গোপেশ্বর রায়চৌধুরী ‘পদ্মমনি’ পুকুরটি টাঙ্গাইল পৌরসভাকে দান করেছিলেন। তাঁর শর্ত ছিল এখানে বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জন দিতে হবে এবং মেলা বসতে হবে। ৯৫ বছর আগে দান করা সেই পুকুরে এখনো বিজয়া দশমীতে দুর্গা প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। প্রতিবছর বিজয়া দশমীর সন্ধ্যায় উৎসবমুখর হয়ে ওঠে পদ্মমনি পুকুরপাড়। এবারও প্রতিমা বিসর্জনের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ।
পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, উনিশ শতকে শহরের আকুরটাকুরপাড়া এলাকায় পৌরসভার উদ্যোগে জলাধার হিসেবে এই পুকুর খনন করা হয়। কিন্তু তহবিল সংকটে ঠিকাদারের বিল পরিশোধ করতে না পারায় পুকুরটি বিক্রি করে দেওয়া হয় নাগরপুরের জমিদারের কাছে। পরে কৈজুরীর জমিদার গোপেশ্বর রায়চৌধুরী পুকুরটি কিনে নেন এবং মায়ের নামে নাম দেন ‘পদ্মমনি’।
স্থানীয় প্রবীণদের ভাষ্য, খননের পর থেকেই পুকুরটিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ প্রতিমা বিসর্জন দিয়ে আসছেন। ধীরে ধীরে এখানে বিজয়া দশমীর মেলাও বসতে শুরু করে। ফলে দুর্গাপূজার অন্যতম কেন্দ্র হয়ে ওঠে পদ্মমনি পুকুরপাড়। ১৯৩০ সালে জমিদার গোপেশ্বর রায়চৌধুরী শর্তসাপেক্ষে পুকুরটি দান করেন পৌরসভাকে, শর্ত ছিল প্রতিমা বিসর্জনের অনুমতি দিতে হবে এবং বিজয়া দশমীর মেলা বসতে দিতে হবে।
এখন আর জমজমাট মেলা বসে না, তবে বিসর্জনের ঐতিহ্য এখনো বহমান। বিসর্জনকে কেন্দ্র করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ আনন্দে মেতে ওঠেন।
পুকুরসংলগ্ন ক্লাব রোডের বাসিন্দা ৮০ বছর বয়সী প্রবীণ চিত্তরঞ্জন ঘোষ বলেন, ছোটবেলায় বিজয়া দশমীর সকালে দোকানপাট বসা শুরু করত। দুপুরের পর থেকে মেলা জমে উঠত। বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা কারুপণ্য, মিষ্টি, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে আসতেন। শহরে দুর্গাপূজার আনন্দের অন্যতম কেন্দ্র ছিল এই মেলা। সন্ধ্যায় প্রতিমা নিয়ে আসা হতো পুকুরপাড়ে। ঢাক-ঢোল, ঘণ্টা-কাশরের বাজনায় মুখর হয়ে উঠত। আরতি-নৃত্য চলত। সেই দৃশ্য দেখতে শহরবাসী ভিড় করত।
কবি মাহমুদ কামাল জানান, সত্তরের দশকের শুরুর দিকে কিশোর বয়সে পদ্মমনি পুকুরপাড়ের মেলায় গিয়ে তিনি উৎফুল্ল হয়ে উঠতেন। জিলাপি, মুড়ি-মুড়কি, মাটির খেলনা—কত দোকান বসত।এখন মেলাটি শুধু নামে টিকে আছে। বিন্দুবাসিনী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় সড়কে দুই-চারটি দোকান বসে। তবে সন্ধ্যায় বিসর্জন উপলক্ষে পুকুরপাড় এখনো মুখর হয়ে ওঠে। পুকুরের পশ্চিম প্রান্তে প্রতিমা এনে বিসর্জন দেওয়া হয়। ঢাক-ঢোলের সঙ্গে যোগ হয়েছে আধুনিক শব্দযন্ত্র। ট্রাক বা ভ্যানে প্রতিমা নিয়ে শোভাযাত্রাসহ শহরের বিভিন্ন মণ্ডপের প্রতিমা এখানে আনা হয়।
আদালতপাড়া পূজা সংসদের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ কুমার সাহা বলেন, শহরের বেশির ভাগ দুর্গা প্রতিমা পদ্মমনি পুকুরেই বিসর্জন দেওয়া হয়। দুর্গাপূজার উৎসবের সঙ্গে পদ্মমনি পুকুরের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।
টাঙ্গাইল পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, এ বছরও প্রতিমা বিসর্জনের জন্য পদ্মমনি পুকুরপাড়ে আলোর ব্যবস্থা ও নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মোহাম্মদপুরে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ২৯
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কয়েকটি অপরাধপ্রবণ এলাকায় বুধবার দিনভর বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত অভিযোগে ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে তিনটি ছুরি, দুটি ধারালো চাকু, দুটি লোহার রড, একটি সাইকেল ও ৩০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা হয়।
বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে নিয়মিত মামলা, মাদক মামলা, পরোয়ানাভুক্ত আসামি ও বিভিন্ন অপরাধে জড়িত অপরাধী রয়েছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন হীরা (১৯), রফিক (২১), আবদুর রহমান (৩৯), নাবিদ হাসান ওরফে চয়ন (২৬), খোকন (৩১), মনসুর (৩৫), জুয়েল (৩২), সানজু (২২), মিলন (৪২), শাওন (৩৬), নোয়াজ শরীফ (২৮), সেলিম (৩৪), আসাদুজ্জামান ওরফে ইমন (২৩), আনোয়ার হোসেন (৩৬), সজল (৩০), বরকত গাজী (২৮), জুয়েল (৩৮), আরমান (৩০), বাদল (৩৮), কোরবান (২৮), নয়ন (২৭), মাসরুফ (২৩), আল আমিন (২৭), রাকিব (১৮), মিলন (২৫), ওয়াজিদ (৩৬), এরশাদ (২৫), ছালাম ওরফে সামাদ (৩৭) ও দিলসার (৩০)।