রাজনৈতিক দল সংস্কার একবারে হয় না
Published: 18th, April 2025 GMT
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো এখনো পরিবারতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ, কেন্দ্রীভূত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও পৃষ্ঠপোষকতাভিত্তিক রাজনীতিতে আটকে আছে। কিন্তু স্বীকার করতে হবে, বাংলাদেশ একেবারে হঠাৎ করে পুরোনো কাঠামো ভেঙে ফেলতে পারবে না। আমাদের সংস্কারগুলো যদি দেশের সমাজ-রাজনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণভাবে নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে কৌশলগতভাবে পর্যায়ক্রমিকভাবে সম্পন্ন করা যায়, তাহলে তা টেকসই হবে।
রাতারাতি পরিবর্তনের ধারণাজনগণের আশা, বাংলাদেশে বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থা থেকে দ্রুত সম্পূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক, মেধাভিত্তিক দলকাঠামোতে রূপান্তরিত হবে। আমাদের দেশে পৃষ্ঠপোষকতাব্যবস্থার শিকড় অনেক গভীরে। আইনের শাসন এখানে দুর্বল। স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীগুলোর আধিপত্য প্রবল।
যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐতিহাসিক বিকাশ দেখলে বোঝা যায় যে সেখানে সংস্কার কীভাবে ধাপে ধাপে ঘটেছে। অর্থবহ দলকাঠামো গড়তে তাদের প্রায় এক শতাব্দী লেগেছে। আর উল্লেখযোগ্য অভ্যন্তরীণ সংস্কার বাস্তবায়নে লেগেছে আরও এক শতাব্দী।
প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার আগেই আমূল পরিবর্তন চাপিয়ে দিলে তা অগ্রগতির বদলে অস্থিতিশীলতা ডেকে আনতে পারে। ফলে আমাদের ইন্দোনেশিয়া ও মেক্সিকোর মতো ধীরে ধীরে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্বচ্ছ শাসনের দিকেই যেতে হবে।
অভ্যন্তরীণ জবাবদিহি শক্তিশালী করাএই ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে দলের ভেতরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় না গিয়ে বিদ্যমান দলকাঠামোর মধ্যে আবশ্যকীয় নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা নিশ্চিত করা। ইন্দোনেশিয়ায় ১৯৯৮ সালে সুহার্তোর পতনের পর একসময়ের কর্তৃত্ববাদী শাসক দল ‘গোলকার’ আঞ্চলিক চেয়ারম্যানদের জন্য মেয়াদসীমা চালু ও অভ্যন্তরীণ নির্বাচনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ শুরু করে। পরিবারতান্ত্রিক গোষ্ঠীগুলো প্রভাবশালী থাকলেও এসব সংস্কার তরুণ উপযুক্তদের মূল পদগুলোতে যেতে সহায়তা করেছে।
ব্রিটিশ কনজারভেটিভ পার্টি ছিল অভিজাতদের এক ক্লাব। ঊনবিংশ শতাব্দীতে তারা ধাপে ধাপে আরও গণতান্ত্রিক সংগঠন হয়ে ওঠে। প্রথমে ১৮৩০-এর দশকে স্থানীয় সংগঠন প্রতিষ্ঠা, এরপর ১৮৬০-এর দশকে আনুষ্ঠানিক সদস্যকাঠামো চালু করে তারা। এভাবে বিংশ শতাব্দীতে আরও উন্মুক্ত নেতৃত্ব নির্বাচনপ্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়।
বাংলাদেশে জেলা সভাপতির মতো মধ্যবর্তী স্তরের নেতাদের জন্য মেয়াদসীমা আরোপ এবং শীর্ষ পদগুলোর জন্য নির্বাচকমণ্ডলী সম্প্রসারণ করা হলে পর্যায়ক্রমে পরিবারতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ কমে আসবে।
আর্থিক স্বচ্ছতা বৃদ্ধির পদক্ষেপঅস্বচ্ছ অর্থায়ন নিয়ে হঠাৎ করে কঠোর আর্থিক নিয়ন্ত্রণ চাপিয়ে দিলে দলীয় কার্যক্রম বিঘ্নিত হতে পারে। ১৯৯০-এর দশকে ব্রাজিলে আংশিক সরকারি অর্থায়নের পাশাপাশি নির্দিষ্ট সীমার ওপর অনুদান জনসমক্ষে প্রকাশের বাধ্যবাধকতা জারি করা হয়। পাকিস্তানের ২০১৭ সালের নির্বাচন আইন প্রার্থীদের আর্থিক আয় ও ব্যয়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছিল। বাংলাদেশে আর্থিক হিসাব প্রকাশের বিধান বাস্তবায়ন এখনো অসম্পূর্ণ।
ধারাবাহিক আর্থিক নিয়ন্ত্রণের একটি ঐতিহাসিক নমুনা হলো যুক্তরাষ্ট্র। ১৯০৭ সালের টিলম্যান অ্যাক্ট দ্বারা করপোরেট দান নিষিদ্ধ, ১৯২৫ সালের ফেডারেল করাপ্ট প্র্যাকটিসেস অ্যাক্ট দ্বারা অনুদান বিষয়ে তথ্য প্রকাশ বাধ্যতামূলক করা হয়। ১৯৭১ সালের ফেডারেল ইলেকশন ক্যাম্পেইন অ্যাক্টের মাধ্যমে আরও ব্যাপক সংস্কার করা হয়। তারপরও সেখানে অর্থ নির্বাচনকে প্রভাবিত করেই চলছে।
বাংলাদেশে প্রথমে ১০ লাখ টাকার ওপর দানসংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ বাধ্যতামূলক করা যায়। এরপর ধীরে ধীরে কঠোর অডিট এবং শেষে দলগুলোর জন্য সরকারি অর্থায়নের দিকে যাওয়া যেতে পারে। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে জার্মানি এ ধরনের ধারাবাহিক পদ্ধতি অনুসরণ করেছিল।
প্রার্থী নির্বাচনের ধারাবাহিক বিকেন্দ্রীকরণদক্ষিণ আফ্রিকার আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের (এএনসি) বর্ণবাদ–পরবর্তী সময়ে একটি মিশ্র পদ্ধতি বাস্তবায়ন করে। অর্থাৎ, স্থানীয় শাখাগুলো প্রার্থী মনোনয়ন দেয়, কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিটি চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করে।
মার্কিন রাজ্যগুলো ১৯০০ সালের শুরুতে প্রাইমারি পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করলেও ১৯৭০-এর দশক পর্যন্ত এটি ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়নি। এখনো অনেক রাজ্য প্রাইমারির পাশাপাশি দলীয় সম্মেলন বজায় রেখেছে। ভারতের বিজেপিতে যদিও চূড়ান্ত প্রার্থী নির্বাচন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের হাতে, তবে স্থানীয় মতামত প্রকাশের সুযোগ আছে।
বাংলাদেশে পরামর্শমূলক মনোনয়নের মাধ্যমে শুরু করা যেতে পারে। স্থানীয় নেতারা কেন্দ্রীয় অনুমোদনের জন্য প্রার্থী প্রস্তাব করতে পারেন। কম ঝুঁকিপূর্ণ স্থানীয় নির্বাচনে আরও উন্মুক্ত নির্বাচনপদ্ধতি চালু করা যায়। যেমন যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টি বিংশ শতাব্দীজুড়ে ধারাবাহিকভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনপ্রক্রিয়া অনুসরণ করেছে।
নীতিভিত্তিক প্রতিযোগিতার জন্য ধারাবাহিক ব্যবস্থাব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতি থেকে নীতিভিত্তিক প্রতিযোগিতার দিকে যেতে দলগুলোর মধ্যে সক্ষমতা গড়ে তুলতে হবে। ২০০০-এর দশকে দক্ষিণ কোরিয়ার দলগুলো কোরিয়া ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট দ্বারা পর্যালোচিত নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ শুরু করে। অন্যান্য দেশে দলনিরপেক্ষ থিঙ্কট্যাংকগুলো দলগুলোর ইশতেহারে উদ্ধৃত অঙ্গীকারের আর্থিক মূল্যায়ন ভোটারদের সামনে উপস্থাপন করছে। ফলে ভোটাররা লাভবান হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক দল ধাপে ধাপে বিকশিত হয়েছে। ঊনবিংশ শতাব্দীর আনুষ্ঠানিকতা থেকে ১৮৪০-এর দশকে আরও আনুষ্ঠানিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজন করেছে। বর্তমানে আর্থিক মূল্যায়নসহ ‘নীতি দলিল’ প্রকাশ করছে। চীনও একদলীয় ব্যবস্থার কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখে পাইলট কর্মসূচিগুলো স্থানীয় পর্যায়ে দলীয় সদস্যদের নির্দিষ্ট নেতৃত্বদানকারী পদে ও নীতি অগ্রাধিকারে ভোট চালু করেছে।
বাংলাদেশে দলগুলো অর্থনৈতিক নীতির ওপর অভ্যন্তরীণ বিতর্কপ্রক্রিয়া চালু করে রাজনীতিতে স্বচ্ছতা আনতে পারে। সুইডেনের উদাহরণ অনুসরণ করে বিশ্লেষণের জন্য স্বাধীন সংস্থার কাছে ইশতেহার জমা দিতে পারে। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে ফলাফল প্রকাশ করেও নীতি আলোচনাকে উৎসাহিত করা যেতে পারে।
বিরোধী দলগুলোর অধিকার সুদৃঢ় করাব্যাপক সাংবিধানিক পরিবর্তনের দাবি করার বদলে ছোট ছোট পদক্ষেপ গঠনমূলক ভিন্নমতের জন্য জায়গা তৈরি করা যায়। মালয়েশিয়ার ২০১৮-পরবর্তী সংস্কার সরকারের সঙ্গে পূর্ণ সমতা সৃষ্টি না করেও সংসদীয় কমিটির আসন প্রদান ইত্যাদির মাধ্যমে বিরোধী দলের প্রতি হয়রানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়েছে। নেপালের সাংবিধানিক বিধান (অনুচ্ছেদ ৯১) গণতন্ত্রে বিরোধী দলের ভূমিকাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে।
বিরোধী দলের অধিকারের ঐতিহাসিক বিকাশ ও ধারাবাহিক প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের একটি মডেল হচ্ছে যুক্তরাজ্য। ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ‘লিডার অব দ্য অপজিশন’ উপাধির অনানুষ্ঠানিক স্বীকৃতি, ১৯৩৭ সালে সরকারি বেতন এবং শেষে সংসদীয় পদ্ধতিতে বিরোধী ভূমিকা আনুষ্ঠানিকীকরণ করেছে তারা। বাংলাদেশেও আইন আছে, বাস্তবায়নের বিশাল ঘাটতি দৃশ্যমান। এ ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার সময়ের দাবি।
ধারাবাহিক সংস্কারের কৌশলবৈশ্বিক ও ঐতিহাসিক উদাহরণগুলো থেকে দেখা যায় যে ধারাবাহিক, পর্যায়ক্রমিক সংস্কার অর্থবহ পরিবর্তন আনতে পারে। বাংলাদেশের জন্য মূল বিষয় হলো আস্থা ও সক্ষমতা গড়ে তোলার জন্য পরিচালনা করা যায়, এমন পরিবর্তন দিয়ে শুরু করা। যেমন মধ্যবর্তী স্তরের নেতাদের জন্য মেয়াদসীমা, রাজনৈতিক অনুদান প্রকাশের বাধ্যবাধকতা, পরামর্শমূলক মনোনয়ন, স্বাধীন ইশতেহার পর্যালোচনা এবং বিরোধী দলের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা। এভাবে আরও কাঠামোগত সংস্কারের দিকে এগোনো সম্ভব।
কার্যকর মডেলের অভাব বড় বাধা নয়। সংস্কারকে অব্যাহত রাখতে হলে নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম, রাজনৈতিক দলগুলোকে সরব থাকতে হবে, তারা যেন স্থায়ী চাপ তৈরি করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। অনেক বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাবের পাশাপাশি সেগুলো নিয়ে আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক জারি রাখা জরুরি।
স্থিতিশীলতা, বৈধতা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দলের সংস্কার প্রয়োজন। রাজনৈতিক দলগুলোকে সংস্কারে বাধ্য করতে পারলেই গণতন্ত্রের দিকে সত্যিকার অর্থে যাত্রা শুরু হতে পারে। অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে যে ধারাবাহিকতা ও অধ্যবসায় থাকলে এমনকি গভীরভাবে প্রোথিত রাজনৈতিক ব্যবস্থাও আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জবাবদিহিমূলক দিকে বিবর্তিত হতে পারে।
● ড.
রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন শ চ ত কর শ শত ব দ র জন য ম ব যবস থ দলগ ল র ইশত হ র আর থ ক পর য য় সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভোল পাল্টে’ সক্রিয় কিশোর গ্যাং, অতিষ্ঠ বাসিন্দারা
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল ইউনিয়নের উদমারা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। এলাকায় নারীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, মারামারি, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যদের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। তবে এখন ভোল পাল্টে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিড়েছে তারা।
সম্প্রতি এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীর আলম (৫২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। মসজিদের পাশে জুয়ার আসর বসানো ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ৩ এপ্রিল তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এরপর গত শনিবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় তরুণ। ওই তরুণেরা রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় মিছিল-সমাবেশে কিশোরদের ব্যবহার করে আসছেন। ফলে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাও এসব কিশোরকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশ্রয় দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল চর আবাবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দারের হাতে। তাঁরা এসব কিশোরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই কিশোরেরা ভোল পাল্টে বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছে। আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এসব তরুণকে নতুন করে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন। রহিম ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তাঁর পদপদবি নেই।
জাহাঙ্গীর আলম খুনের ঘটনায় আবদুর রহিমকেও আসামি করা হয়। মামলার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আমি প্রশ্রয় দিচ্ছি—এমন অভিযোগ প্রায় করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে।’
ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দার বলেন, ‘কিশোর গ্যাংকে আমি কখনো প্রশ্রয় দিইনি। তারা (কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা) আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত।’ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দলীয় কোনো নেতা-কর্মী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রশ্রয় দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নেতা-কর্মীর অপকর্মের দায় দল নেবে না।
জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। আদালত রায়পুর থানাকে মামলাটি গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, মসজিদের আশপাশে জুয়ার আসর ও মাদক সেবন করত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে সাব্বির হোসেন, জুবায়ের হোসেনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ৮–১০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা করেছেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে।
জানতে চাইলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন পাঠান বলেন, কিশোর-তরুণদের খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ফেরাতে না পারলে অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। কেউ যাতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে তৎপর থাকতে হবে।