স্বাধীনভাবে চলতে মামলামুক্ত হতে তৎপর হেফাজত
Published: 6th, May 2025 GMT
হেফাজতে ইসলামের গত শনিবারের ঢাকার মহাসমাবেশ থেকে তোলা নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলের দাবি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হলেও কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনটির প্রধান লক্ষ্য মামলা থেকে মুক্তি। ইতোমধ্যে পাঁচ জেলায় ২২০ মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়েছে। সরকার মামলা প্রত্যাহারে রাজি হলেও ধীরগতিতে নাখোশ হেফাজত নেতাদের ভাষ্য, মুক্তভাবে কার্যক্রম চালাতে মামলা থেকে মুক্তি জরুরি।
হেফাজতের আবেদনে ঢাকা জেলায় ৭৩ মামলার মধ্যে ৪৬টি প্রত্যাহারযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে সরকারি কমিটির যাচাই-বাছাইয়ে। বাকি ২৭ মামলার যাচাই চলছে। নেতাদের ভাষ্য, ২০১৩ ও ২০২১ সালের সহিংসতার মামলা ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ সরকার হেফাজতকে নিয়ন্ত্রণ করত। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে মামলা প্রত্যাহার না হলে, নির্বাচনের সময়ে এই মামলাগুলো চাপের কারণ হতে পারে হেফাজতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের জন্য। পরবর্তী নির্বাচিত সরকারও হেফাজতকে নিয়ন্ত্রণে মামলাগুলো ব্যবহার করতে পারে।
মামলা প্রত্যাহারে হেফাজত নেতারা প্রধান উপদেষ্টা ড.
হেফাজতের নায়েবে আমির মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী সমকালকে বলেন, ২২০ মামলা চিহ্নিত করে প্রহ্যাতারের আবেদন করা হয়েছে। এর বাইরে ৫০টির মতো মামলা রয়েছে বিভিন্ন জেলায়। সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে সরকারকে।
কত মামলা
হেফাজতের সূত্র সমকালকে জানিয়েছে, ঢাকার ১৮ থানায় ৭৩, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৮২, নারায়ণগঞ্জের তিন থানায় ২৮, মুন্সীগঞ্জের দুই থানায় ১১ এবং চট্টগ্রামে ২৬টি মামলা রয়েছে। এসব মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কাছে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর আওয়ামী লীগ আমলে দায়ের করা গায়েবি এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়। আসিফ নজরুলের নেতৃত্বাধীন কমিটি গত ২০ এপ্রিল পর্যন্ত ৮ হাজার ২৯৪ মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে।
নিয়ম অনুযায়ী, মামলা প্রত্যাহারে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বাধীন কমিটির কাছে আবেদন করতে হয়। যাচাই-বাছাইয়ে তা পাবলিক প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে পাঠানো হয়। সেখানে মামলা হয়রানিমূলক বলে চিহ্নিত হলে প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়।
বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের আবেদনে ঢাকায় জেলায় ৯৬৯ মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে কমিটি। মামলা দেখভাল করা হেফাজত নেতা মাওলানা শরিফ হোসাইন সমকালকে জানিয়েছেন, এর মধ্যে ১৬টি মামলা হেফাজত-সংক্রান্ত। এসব মামলায় বিএনপি, জামায়াতের নেতাদেরও আসামি করা হয়েছিল।
হেফাজত সূত্র জানিয়েছে, ঢাকায় ৭৩ মামলার মধ্যে ৪৬টির বাছাই শেষ হয়েছে। মামুনুল হক ৫ আগস্টের পর নারায়ণগঞ্জের এবং ঢাকার দুটি মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন। প্রত্যাহারের আবেদন করা ২২০ মামলার মধ্যে কমবেশি ৩০টিতে চার্জশিট হয়েছে বলে জানিয়েছেন শরিফ হোসাইন।
হেফাজত এই মামলাগুলোরও প্রত্যাহার চাইলেও কীভাবে তা হবে– এ বিষয়ে আইন উপদেষ্টার বক্তব্য জানতে পারেনি সমকাল।
মামলা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ
নারী উন্নয়ন নীতিমালার বিরোধিতায় ২০১০ সালে শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয় হেফাজত। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের প্রধান বিরোধী হিসেবে উঠে আসে হেফাজত। ওই বছরের ৫ মে ঢাকা ঘেরাওয়ের কর্মসূচি করে শাপলা চত্বরে অবস্থান নেন হেফাজত নেতাকর্মীরা। দিনভর সংঘাত, সংঘর্ষের পর দিবাগত রাতে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে শাপলা চত্বরে অভিযান চালায়।
সরকারি হিসাবে ৫ এবং ৬ মে সারাদেশে ৫৮ জন নিহত হন। গতকাল সোমবার হেফাজতের প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিহতের সংখ্যা ৯৩। ২০১৩ সালে ঢাকাসহ পাঁচ জেলায় হেফাজত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দেড় শতাধিক মামলা হয়েছিল।
২০২১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের প্রতিবাদে হেফাজত মাঠে নামলে আবার সরকার দমনপীড়ন চালায়। নিহত হন অন্তত ২১ জন। সেবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জে আরও শ খানেক মামলা হয়। হেফাজত নেতাকর্মী ছাড়াও মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এসব মামলায় আসামি হয়ে বছরের পর বছর আদালতে চক্কর কাটছেন।
হেফাজতের একাধিক নেতা সমকালকে বলেছেন, ২০১৩ সালের পর এই মামলাগুলোকেই ব্যবহার করে হেফাজতের অধিকাংশ নেতাকে নিয়ন্ত্রণে এনেছিল তৎকালীন সরকার। হেফাজত নেতারা মামলা প্রত্যাহারের আবেদন নিয়ে প্রায়ই সাক্ষাৎ করতেন শেখ হাসিনার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে। গণভবনেও যেতেন। আহমদ শফীও গিয়েছিলেন। ২০১৮ সালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ থেকে শেখ হাসিনাকে ‘কওমি জননী’ খেতাব দেয় কওমি মাদ্রাসার নিয়ন্ত্রক সংস্থা আল হাইয়াতুল উলায়া। সংস্থাটির চেয়ারম্যান আহমদ শফীসহ হেফাজতের জ্যেষ্ঠ নেতারাও ছিলেন সমাবেশে। ২০১৩ সালের মামলায় পড়ে কারাগারে যাওয়া এবং পরবর্তী সময়ে জামিনে মুক্ত সংগঠনটির অনেক নেতাই শেখ হাসিনাকে সরাসরি সমর্থন দেন আওয়ামী লীগ আমলে।
হেফাজতসংশ্লিষ্ট ইসলামী ঐক্যজোট ২০১৭ সালে বিএনপির সঙ্গ ছাড়ে। এর পর আর দলটির নেতাদের মামলার চাপে পড়তে হয়নি। ২০২১ সালের জুলাইয়ে বিএনপির জোট ছাড়ে হেফাজতসংশ্লিষ্ট দুই দল খেলাফত মজলিস এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। পরের এক মাসে দল দুটির অন্তত ৬০ নেতা জামিন পান।
আবার সক্রিয়, তবে মামলা প্রহ্যাতারে জোর
আওয়ামী লীগ আমলে শত শত মামলার কারণে চাপে পড়া হেফাজত আর কখনও ২০১৩ সালের মতো সক্রিয় হতে পারেনি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর, নিজেকে অরাজনৈতিক দাবি করা সংগঠনটি সক্রিয় হয়েছে। চার দাবিতে গত শনিবার তারা ঢাকায় মহাসমাবেশ করেছে।
রাজনৈতিক অঙ্গনে বলা হচ্ছে, হেফাজতের সমাবেশ হয়েছে নারী কমিশনের বিরুদ্ধে। যদিও সংগঠনটি ২৮ মার্চ চট্টগ্রামের সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, ৩ মে ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে। নারী কমিশন প্রতিবেদন দেয় ১৯ এপ্রিল। পরের দিন হেফাজত নারী কমিশন বাতিলের দাবি যুক্ত করে।
শনিবারের মহাসমাবেশ থেকে হেফাজত আগামী তিন মাসে বিভাগীয় শহরে সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আগামী ২৩ মে বিক্ষোভ করবে। তবে মামলা প্রত্যাহারে সরকারকে দুই মাসের আলটিমেটাম দিয়েছে। সংগঠনটির নেতারা প্রশ্ন তুলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মামলা প্রত্যাহার হলে, হেফাজত নেতারা কেন নিষ্কৃতি পাবেন না।
হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেছিলেন, ‘ফ্যাসিবাদের আমলের মিথ্যা মামলা তুলে নিতে নেতারা ড. ইউনূসের সঙ্গে অনেকবার সাক্ষাৎ করে বিনয়ের সঙ্গে আবেদন করেছেন। কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে, সোজা আঙুলে ঘি উঠবে না। আগামী দুই মাসের মধ্যে যদি হেফাজতের মামলা প্রত্যাহার না হয়, তাহলে যা করতে হয় তাই করবে হেফাজত।’
রাজনীতির পথেও বাধা মামলা
হেফাজত অরাজনৈতিক সংগঠন হলেও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত আন্দোলনের নেতারা হেফাজতেরও নেতা। যেমন বাংলাদেশ খেলাফতের আমির মামুনুল হক হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব।
হেফাজতসংশ্লিষ্ট দলগুলো আগামী নির্বাচনকে সামানে রেখে ঐক্যবদ্ধ হতে চেষ্টা করছে। এ উদ্যোগে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনও রয়েছে। যদিও দলটির নেতারা সরাসরি হেফাজতে নেই। এই দলগুলো ঘোষণা দিয়েছে, আগামী নির্বাচনে ইসলামপন্থি দলগুলোর ভোট এক বাক্সে আনাই লক্ষ্য। নেতারা সমকালকে জানিয়েছেন, এ ঐক্যে হেফাজতও নিয়ামক শক্তি।
একটি রাজনৈতিক দলের যুগ্ম মহাসচিব সমকালকে বলেছেন, ইসলামী দলের মোর্চা আগামী নির্বাচনে বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী হতে চাইছে। আদর্শিক বিরোধী জামায়াতের সঙ্গে জোট হলে, ইসলামপন্থিদের আগামী সংসদে প্রধান বিরোধী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে পুরোনো মামলা গলার কাঁটা হতে পারে।
এই নেতা সমকালকে বলেন, অতীতে দেখা গেছে, হেফাজত যখনই নড়াচড়া করার চেষ্টা করেছে, তখনই মামলার চাপে ফেলা হয়েছে। হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, মামলা প্রত্যাহার পিছিয়ে গেলে নির্বাচনের পর নতুন যে সরকার ক্ষমতায় আসবে, তারা এসব মামলাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। তাই রাজনৈতিক মামলার সঙ্গে হেফাজতের মামলাও প্রত্যাহার করা হোক।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ২০১৩ স ল র ব যবহ র কর ন উপদ ষ ট স গঠনট র জন ত ক দ র জন ত ক ল গ আমল হ র কর ন ত কর সরক র ইসল ম ব এনপ সমক ল আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
দাঁড়িপাল্লা প্রতীকসহ নিবন্ধন ফিরে পেল জামায়াত
রাজনৈতিক দল হিসেবে নিজেদের নিবন্ধন ও দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লা ফিরে পেয়েছে জামায়াতে ইসলামী। আজ মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয় এ–সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এর আগে উচ্চ আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ৪ জুন জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও দলীয় প্রতীক ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইসি।
ইসির প্রজ্ঞাপনে উচ্চ আদালতের রায়ের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে জারি করা প্রজ্ঞাপনটি বাতিল করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন দলীয় প্রতীকসহ পুনর্বহাল করা হলো।
৪ জুন বৈঠক করে জামায়াতের নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। সেদিন নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, অতিসত্বর জামায়াতে ইসলামী তাদের নিবন্ধন ফেরত পাবে, সে ব্যবস্থা ইসি গ্রহণ করছে। তবে দলীয় প্রতীকের ক্ষেত্রে একটি দাপ্তরিক প্রক্রিয়া আছে, এ জন্য একটু সময় লাগবে। জামায়াতে ইসলামী তাদের দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ইসির কাছে আবেদন করেছিল। ইসি বিশদভাবে আলোচনা করেছে। যে বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে আছে ‘স্ট্যাটাসকো এনটে’ বলতে কী বোঝায়, অর্থাৎ ২০১৩ সালে জামায়াতের দলীয় নিবন্ধনের সঙ্গে প্রতীক ছিল, সেটি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের সংশ্লিষ্ট ধারাও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
২০০৮ সালের নভেম্বরে জামায়াতকে নিবন্ধন সনদ দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে ইসির দেওয়া নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ সালে রিট করেন সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ ব্যক্তি।
চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট রায় দেন হাইকোর্টের তিন সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ। একই সঙ্গে আদালত এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সনদ দেন, যা ওই বছরই আপিল হিসেবে রূপান্তরিত হয়। পাশাপাশি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে দলটি।
হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পরপরই তা স্থগিত চেয়ে জামায়াত আবেদন করে, যা ২০১৩ সালের ৫ আগস্ট খারিজ করে দেন আপিল বিভাগের তৎকালীন চেম্বার বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী। এরপর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
জামায়াতে ইসলামীকে দেওয়া নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে দলটির করা আপিল ও লিভ টু আপিল ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর খারিজ করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। আপিলকারীর পক্ষে সেদিন কোনো আইনজীবী না থাকায় আপিল বিভাগ ওই আদেশ (ডিসমিসড ফর ডিফল্ট) দেন।
পরে দেরি মার্জনা করে আপিল ও লিভ টু আপিল পুনরুজ্জীবিত চেয়ে দলটির পক্ষ থেকে পৃথক আবেদন করা হয়। শুনানি নিয়ে গত বছরের ২২ অক্টোবর আপিল বিভাগ আবেদন মঞ্জুর (রিস্টোর) করে আদেশ দেন।
এরপর জামায়াতের আপিল ও লিভ টু আপিল শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ওঠে। গত ৩ ডিসেম্বর শুনানি শুরু হয়। আর প্রতীক বরাদ্দের বিষয়ে দলটি একটি আবেদন করে, যা গত ১২ মে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে ওঠে। সেদিন আদালত আপিল ও লিভ টু আপিলের সঙ্গে শুনানির জন্য আবেদনটি ট্যাগ (একসঙ্গে) করে দেন। আগের ধারাবাহিকতায় শুনানি শেষে ১ জুন রায় দেন আপিল বিভাগ।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গত বছরের ১ আগস্ট জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এরপর জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে জারি করা আগের প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হয়।