শেখ হেলাল ও শেখ তন্ময়ের নামে চাঁদাবাজির মামলা
Published: 6th, May 2025 GMT
বাগেরহাট-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দীন ও তার ছেলে বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়সহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে ২০০ কোটি টাকার চাঁদাবাজির মামলা দায়ের হয়েছে। স্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মান্নান তালুকদার সোমবার (৫ মে) বাগেরহাট মডেল থানায় এ মামলা করেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন, শেখ হেলালের ব্যক্তিগত সহকারী মো.
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর রাতে শেখ হেলাল উদ্দীন, শেখ তন্ময়সহ পাঁচজন আব্দুল মান্নান তালুকদারের শহরের সরুই কার্যালয়ে গিয়ে দুইশত কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া, মিথ্যা মামলায় জড়ানোসহ মেরে ফেলার হুমকি দেন আসামিরা। তখন মামলার বাদী আব্দুল মান্নান তালুকদার নিজের ব্যবসা রক্ষার স্বার্থে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রাহকের রক্ষিত টাকা থেকে ৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা আসামিদের হাতে তুলে দেন। তারা বাকি টাকা দ্রুত দিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে তখনকার মতো চলে যান।
আরো পড়ুন:
পঞ্চগড়ের সাবেক ৩ এমপি ও ডিসি-এসপির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা
নারায়ণগঞ্জে হত্যা মামলায় ৪ আসামির মৃত্যুদণ্ড
পরে ২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি আসামিরা আবারো তার অফিসে এসে বাকি টাকা পরিশোধের জন্য হুমকি দেন। তখন জীবন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রক্ষায় মান্নান তালুকদার শেখ শহিদুল ইসলামের মাধ্যমে আসামিদের আরো ১২ কোটি ৭০ লাখ টাকা চাঁদা দেন। এ নিয়ে দুই দফায় আসামিরা আব্দুল মান্নান তালুকদারের কাছ থেকে ২০ কোটি টাকা চাঁদা নেয় বলে মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে।
আসামিরা ফ্যাসিবাদী সরকারের প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় আগে তিনি থানা বা আদালতে মামলা করতে সাহস পাননি। এখন পরিবেশ তৈরি হওয়ায় মামলা করেছেন বলে জানান ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান তালুকদার।
বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহামুদ-উল-হাসান বলেন, ইতোমধ্যে এ মামলার এজাহারনামীয় ৩ নম্বর আসামি শেখ শহীদুল ইসলামকে (৩৭) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্যান্য আসামিদের ধরতে পুলিশ তৎপর রয়েছে বলেও জানান ওসি।
ঢাকা/শহিদুল/বকুল
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
রোহিঙ্গা শিবিরে বন্ধ শিক্ষাকেন্দ্র চালু হচ্ছে, ডিএমএইচ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগ
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের আশ্রয়শিবিরে বন্ধ থাকা রোহিঙ্গা শিশুদের লার্নিং সেন্টার (শিক্ষাকেন্দ্র) পুনরায় চালুর উদ্যোগ নিচ্ছে আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা ‘ডাক্তার মোস্তফা-হাজেরা (ডিএমএইচ) ফাউন্ডেশন’। পাশাপাশি সংস্থাটি ৮০০ রোহিঙ্গা রোগীকে বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধ দিয়েছে।
গতকাল বুধবার আশ্রয়শিবির ঘুরে এসে সন্ধ্যায় কক্সবাজার শহরের একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এ কে এম গোলাম কিবরিয়া। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ফটোসাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলম, হেলথ সিস্টেম ডেভেলপমেন্টের সাবেক পরিচালক সুলতানা খানম প্রমুখ।
সম্মেলনে এ কে এম গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘ডিএমএইচ ফাউন্ডেশন বিশ্বজুড়ে নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা ও ক্ষমতায়নে কাজ করছে। এ লক্ষ্যেই ‘গ্লোবাল ফাইভ জিরো ক্যাম্পেইন’ হাতে নেওয়া হয়েছে। এর উদ্দেশ্য নিপীড়ন, অবহেলা ও মানবাধিকারে বাধাকে শূন্যে নামিয়ে আনা।
গোলাম কিবরিয়া আরও বলেন, ‘কক্সবাজারের আশ্রয়শিবিরে অন্তত ১০ লাখ রোহিঙ্গা অমানবিক জীবন যাপন করছেন। তহবিলসংকটে শত শত শিক্ষাকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্কুলপড়ুয়া শিশুদের সময় নষ্ট হচ্ছে। তারা সন্ত্রাস কিংবা মাদক চোরাচালানে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এই শিশুদের আবার শিক্ষার আলোয় ফেরানো দরকার। আমরা স্থানীয় রোহিঙ্গা শিক্ষক ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষাকেন্দ্রগুলো পুনরায় চালুর পরিকল্পনা নিয়েছি।’
রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলম বলেন, ‘শিশুরা এমন এক ক্যাম্পে জন্ম নিচ্ছে, যেখানে অন্য কোনো পৃথিবী তারা চেনে না। বৃদ্ধরা দিন কাটাচ্ছেন রাখাইনের পোড়া গ্রামের স্মৃতিতে। যুবকরা তাঁদের সম্ভাবনা নিয়ে আটকে আছেন হতাশা ও নির্ভরতার চক্রে। এটি কেবল মানবিক নয়, ন্যায়বিচার, জবাবদিহি ও আমাদের সম্মিলিত নৈতিকতারও সংকট।’
শহিদুল আলম আরও বলেন, ‘মানবিক কারণে বাংলাদেশ বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিলেও সংকটের ভার শুধু একা এ দেশের নয়। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দ্রুত কার্যকর করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। এ সংকটের নিরসন করতে হলে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দ্রুত, নিরাপদ ও মযাদাপূর্ণভাবে প্রত্যাবাসন করতে হবে। মানবতার বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের জন্য মিয়ানমার সরকারকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।’
সম্মেলনে সুলতানা খানম বলেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত জনগোষ্ঠী হচ্ছে রোহিঙ্গারা। আমাদের নীরব থাকা মানে হলো অমানবিকতাকে মেনে নিচ্ছি, সমর্থন করছি। নীরবতাই মানবতার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অপরাধ। মানবাধিকারের পক্ষে প্রতিটি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
উল্লেখ্য, বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৪ লাখের বেশি। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছেন ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর। আর গত দেড় বছরে নতুন করে আরও ১ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছেন।
শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তহবিলসংকটে আশ্রয়শিবিরের বেশির ভাগ শিক্ষাকেন্দ্রই বন্ধ রয়েছে। প্রাক্–প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান পুরোপুরি বন্ধ। আর চতুর্থ থেকে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস হচ্ছে সপ্তাহে এক দিন। তবে ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণির ক্লাস পাঁচ দিন চলছে। বন্ধ শিক্ষাকেন্দ্রগুলো চালুর জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
৮০০ রোহিঙ্গাকে স্বাস্থ্যসেবাএদিকে গতকাল উখিয়ার কুতুপালং আশ্রয়শিবিরে ডিএমএইচ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ৮০০ রোহিঙ্গাকে বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয়েছে। এতে ৪ জন চিকিৎসক ও ১৬ সদস্যের স্বেচ্ছাসেবক দল অংশ নেয়।
সেবা নেওয়া রোগীদের মধ্যে ১২০টি শিশু ও ২০০ জন চর্মরোগী ছিলেন। এ ছাড়া বাকি ১০০ জন ডায়াবেটিস, ১০০ জন উচ্চ রক্তচাপ, ৫০ জন স্ত্রীরোগ, ৫০ জন অর্থোপেডিক, ৫০ জন নাক-কান-গলা, ৩০ জন কিডনি ও ইউরোলজি, ২০ জন চোখ, ৩০ জন লিভার ও গ্যাস্ট্রিক ও ৫০ জন সাধারণ রোগী ছিলেন।