চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বাংলাদেশ জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে অবস্থিত মডার্ন সিনটেক্স নামের একটি কারখানায় চাকরি স্থায়ী করাসহ ১৪ দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছেন শ্রমিকেরা। আজ শনিবার সকাল ১০টা থেকে কাজ বন্ধ রেখে তাঁরা কারখানার ফটকে অবস্থান করছেন।

শ্রমিকেরা জানান, মডার্ন সিনটেক্স কারখানায় পলিয়েস্টার সুতা ও কাঁচামাল তৈরি করা হয়। প্রতিদিন প্রায় ৪৫০ টন উৎপাদন ক্ষমতার এই কারখানায় দিনে তিন ধাপে অন্তত ১ হাজার ৬০০ শ্রমিক কাজ করেন। শ্রমিকদের যেসব আশ্বাসে কারখানায় যোগ দিতে বলা হয়েছিল, তার অধিকাংশই বাস্তবায়ন হয়নি বলে অভিযোগ শ্রমিকদের। তাই কর্মবিরতি পালন করা হচ্ছে বলে জানান তাঁরা।

আন্দোলনরত শ্রমিকদের প্রতিনিধি পরিচয়ে মোহাম্মদ আরাফাত নামে একজন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মডার্ন সিনটেক্স কারখানা কর্তৃপক্ষ আমাদের ১২ ঘণ্টা কাজ করিয়ে ৮ ঘণ্টার বেতন দেয়। নির্দিষ্ট সময় পর নিয়োগপত্র দিয়ে চাকরির স্থায়ী করার কথা থাকলেও সেটি তারা করছে না। এটি ছাড়াও আমাদের সর্বনিম্ন বেতন ১৮ হাজার টাকা করা, বন্ধের দিন কাজ করলে ওভারটাইম দেওয়া, দুপুরে খাবারের ব্যবস্থা করা, সরাসরি কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ দেওয়ার সুযোগ দেওয়া, ঈদের সময় কারখানা বন্ধ রাখাসহ ১৪ দাবিতে আমরা কর্মবিরতি পালন করছি। দাবি না মানলে আমাদের কর্মবিরতি ও আন্দোলন চলমান থাকবে’।

জানতে চাইলে মডার্ন সিনটেক্স কারখানার ব্যবস্থাপক (মানবসম্পদ) ইয়াসির আরাফাত প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকালে থেকে হঠাৎ করে কারখানার কিছু শ্রমিক কাজ বন্ধ রেখে মূল ফটকে অবস্থান নিয়েছেন। আমরা তাদের কাছে দাবি-দাওয়ার বিষয়ে জানতে চেয়ে আলোচনায় বসে সমাধান করার অনুরোধ করেছি। দুপুর ১২টা পর্যন্ত তারা আমাদের আহ্বানে সাড়া দেননি। শ্রমিকেরা আলোচনায় বসলে তাদের দাবির যুক্তিসংগত দিকগুলো আমলে নেব আমরা।’

বাংলাদেশ জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের শিল্প পুলিশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তপন সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘শনিবার সকাল থেকে মডার্ন সিনটেক্স কারখানার শ্রমিকদের একটি অংশ দাবিদাওয়া আদায়ে কারখানা ফটকে অবস্থান নিয়েছেন। কারখানা এলাকায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আমাদের শিল্প পুলিশের সদস্যরা সেখানে সতর্ক অবস্থানে আছে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অবস থ ন বন ধ র আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

কোটিপতি হলেও পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কাজ করেন তিনি

পর্যাপ্ত অর্থ সঞ্চয় করতে পারলেই আমাদের অনেকে কায়িক পরিশ্রম ছেড়ে দেন। আরাম-আয়েশে জীবন কাটান। কিন্তু সবাই তা করেন না। এমন একজন জাপানের কোইচি মাতসুবারা। ৫৬ বছর বয়সী এই জাপানি নাগরিকের বার্ষিক আয় প্রায় ৩ কোটি ইয়েন (প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা) হওয়া সত্ত্বেও তিনি এখনো নিয়মিত পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করেন।

মাতসুবারা সপ্তাহে তিন দিন, প্রতিদিন চার ঘণ্টা করে কাজ করেন। তিনি সরকারি পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। এ কাজের অংশ হিসেবে তাঁকে ছোটখাটো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করতে হয়।

এ কাজ থেকে মাতসুবারা মাসে ১ লাখ ইয়েন (প্রায় ৮২ হাজার ৬৪ টাকা) আয় করেন, যা টোকিওর গড় বেতনের তুলনায় অনেক কম। তারপরও তিনি এ কাজ করেন। কারণ, তিনি এটাকে শারীরিক সক্রিয়তা ও মানসিক প্রশান্তির উপায় হিসেবে দেখেন।

মাতসুবারা ছোটবেলা থেকেই সঞ্চয়ী ছিলেন। মাধ্যমিকের পর তিনি একটি কারখানায় মাসে ১ লাখ ৮০ হাজার ইয়েন (প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা) বেতনে কাজ শুরু করেন। খরচ বাঁচিয়ে কয়েক বছরে প্রায় ৩০ লাখ ইয়েন (২৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা) সঞ্চয় করে তিনি প্রথম স্টুডিও ফ্ল্যাট কিনেছিলেন।

পরে বাড়ি কেনার ঋণ আগেভাগে পরিশোধ করে ধীরে ধীরে আরও ফ্ল্যাট কেনেন এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেন মাতসুবারা। এখন টোকিও ও এর শহরতলিতে তাঁর সাতটি ফ্ল্যাট রয়েছে, যার সবই ভাড়া দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করেছেন।

ধনবান হলেও মাতসুবারা সাদাসিধে জীবন যাপন করেন। এখনো তিনি সস্তা ফ্ল্যাটে থাকেন, নিজের খাবার নিজে বানান, নতুন জামাকাপড় কেনেন না, সাধারণ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন এবং প্রধানত সাইকেলে চলাচল করেন। তাঁর জীবনদর্শন—‘প্রতিদিন কিছু না কিছু করার আশা করি, সুস্থ থাকতে চাই এবং নিজেকে নিয়ে চিন্তা করতে চাই।’

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে মাতসুবারাকে ‘অদৃশ্য কোটিপতি’ বলে উল্লেখ করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর গল্প ছড়িয়ে পড়েছে। জাপানে ধনীদের এমন সাধারণ জীবনধারা অস্বাভাবিক নয়। দেশটিতে সাদাসিধে জীবনযাপন অনেকের মধ্যে দেখা যায়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ