মুশফিকুর পারফরম্যান্স করেই নিজেকে কিংবদন্তির স্থানে নিয়ে গেছে: সিমন্স
Published: 18th, November 2025 GMT
ষোলো বছর বয়সে ২০০৫ সালে মুশফিকুর রহিমের যে যাত্রা লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে শুরু হয়েছিল, নানা পথ ঘুরে, চড়াই-উৎরাই শেষে মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনন্য এক মাইলফলকের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।
দুই দশক পর বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে শততম টেস্ট খেলার দ্বারপ্রান্তে মুশফিকুর। পেশাদারিত্ব, অধ্যবসায়, নিবেদন, পরিশ্রম সব মিলিয়ে মুশফিকুর নিজেকে নিয়ে গেছে অনন্য এক উচ্চতায়। সঙ্গে পারফরম্যান্স তো আছেই। বাংলাদেশের প্রধান কোচ ফিল সিমন্সের মতে, কিংবদন্তির জায়গাটাই দখল করেছেন মুশফিকুর। সেটা পারফরম্যান্স দিয়েই করতে পেরেছেন।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ঢাকা টেস্ট দিয়ে মুশফিকুর টেস্ট ক্রিকেটের তিন সংখ্যা ছুঁয়ে ফেলবেন। ঐতিহাসিক এই মুহূর্তটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য অনেক বড় বলেই মনে করছেন সিমন্স, ‘‘আমার মনে হয় সবার আগে আমাদের তার পেশাদারিত্ব, দীর্ঘায়ু এবং বাংলাদেশের হয়ে ক্রিকেট খেলার তার আকাঙ্ক্ষাকে স্বীকৃতি দিতে হবে কারণ ১০০ টেস্ট ম্যাচ পেতে বাংলাদেশকে অনেক সময় দিতে হয়েছে। কারণ বছরে বাংলাদেশ ১৫টিও খেলে না। তার জন্য কিছুটা সময় লেগেছে এবং আমাদের অবশ্যই এটি উপলব্ধি করতে হবে। তার সঙ্গে অল্প সময় কাজ করার ফেলে তার পেশাদারিত্ব নিয়ে অত্যন্ত উচ্চ ধারনা পেয়ছি। আগামীকাল তার যখন শততম টেস্ট খেলার সুযোগ আসবে তখন আমি খুব খুশি হবো।’’
বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন তিনি। ৯৯ ম্যাচে ৬ হাজার ৩৫১। গড় রান ৩৮.
৩৮ পেরোনো মুশফিকুর কোথায় থামবেন তা নিয়ে নিয়ে অনেক জল্পনা কল্পনা চলে। ক্রিকেটের বাকি দুই ফরম্যাট থেকে তিনি বিদায় নিয়েছেন। খেলে যাচ্ছেন টেস্ট ক্রিকেট। সমর্থক, সঙ্গীরা তাকে ২২ গজে আরো বেশি সময় দেখতে চান। মুশফিকুর কি ভাবছেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ। এ নিয়ে প্রধান কোচের সঙ্গে এখনও কোনো কথা হয়নি বলে জানালেন সিমন্স। তবে খেলা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তটা তার উপরই দিলেন কোচ।
বিশেষ করে পারফর্ম করলে কেন খেলবেন না সেই প্রশ্নও যেন তুললেন, ‘‘না (কোনো কথা হয়নি)। আমি যখন এসেছিলাম, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ চলছিল। আমি কেবল মুশিকে বলেছিলাম, এই সময় তুমি যা করছ তা উপভোগ করতে হবে এবং তুমি প্রতিদিন ক্রিজে যাও এবং উপভোগ করো। আপনি একবার পারফর্ম করলে, আপনাকেই নির্ধারণ করতে হবে যে আপনি কতদিন খেলতে চান। কারণ পারফরম্যান্স অপরিহার্য। তাই একবার সে পারফর্ম করতে থাকলে, তার পেশাদারিত্ব তাকে ততদিন এগিয়ে নিয়ে যাবে যতক্ষণ না সে না বলার জন্য প্রস্তুত হয়।’’
ঢাকা/ইয়াসিন
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রফরম স মন স বদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
পাহাড় থেকে পৃথিবীর পথে
পিঠে থুরুং (ঝুড়ি) বাঁধা এক জুমিয়া নারী। মাথায় পাগড়ির বা শিরস্ত্রাণের মতো একটা ট্যাংক। ছবির পরিসরজুড়ে বিশালাকৃতির সেই নারীর চারপাশে বন্দুকধারী অসংখ্য ছায়ামূর্তি। তাদের আকৃতি নারীর তুলনায় বহুগুণ খর্বকায়। ট্যাংকের নল দিয়ে সেসব ছায়ামূর্তির ওপর পড়ছে পাতা আর ফুল।
শিল্পী জয়দেব রোয়াজা কালি ও কলমে এই ছবি এঁকেছিলেন ২০২৩ সালে। তাঁর অন্য সব ছবির মতোই এটিও পাহাড়ের সমকালীন অবস্থাই কেবল তুলে ধরে না; বরং তাকে ভীষণভাবে ছাপিয়ে যায়। বাস্তবতা পেরিয়ে জাদুবাস্তবতার সীমায় এসে দাঁড়ায়। মানুষের জীবন, সংগ্রাম আর প্রকৃতি সব ভেঙেচুরে কবিতার একটি পঙ্ক্তির ভেতরে যেন প্রবেশ করে।
১৯৭৩ সালে খাগড়াছড়ির খামারপাড়ার একটি ত্রিপুরা পরিবারে জন্ম জয়দেব রোয়াজার। মা নীহারিকা ত্রিপুরা আর বাবা হিরণ্ময় রোয়াজা। হিরণ্ময় মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে একটি হাসপাতালে চাকরি করতেন। শান্ত নিরিবিলি পাড়ার বাসিন্দা তাঁরা। পাহাড়, ঝিরি, ঝরনা আর জুমখেত দেখতে দেখতে বড় হওয়া। স্কুলে কবিতার বইয়ের ইলাস্ট্রেশন নকল করে খাতায় আঁকতেন। কবিতার চেয়ে ভালো লাগত ইলাস্ট্রেশন। শেষে এই ভালো লাগারই জয় হলো। বাংলাদেশের এই সময়কার এক উজ্জ্বল শিল্পী জয়দেব। তাঁর শিল্পকর্মের পরিচিতি ছড়িয়েছে সারা বিশ্বে।
একনজরে জয়দেবচারুকলার নতুন মাধ্যম পারফরম্যান্স আর্ট। জয়দেব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই এই মাধ্যমের প্রতি আকৃষ্ট হন। এই ধারার শিল্পীরা নিজের শরীরকেই করে তোলেন ক্যানভাস। সঙ্গে থাকে নানা প্রকাশভঙ্গি। পারফরম্যান্স করতে গিয়ে ছবি আঁকা ছাড়েননি তিনি। চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যের যেমন স্টোরিবোর্ড, তেমনি জয়দেবের পারফরম্যান্সের প্রতিটি ভঙ্গির ছবি আঁকা থাকে তাঁর স্কেচ খাতায়। এভাবেই দুই মাধ্যমকে যুক্ত করেছেন নিজের ধরনে। পাশাপাশি বড় ক্যানভাসেও ছবি আঁকেন। কালি ও কলমেই সিদ্ধহস্ত তিনি।
ভারতের কোচি বিয়েনাল, হংকং আর্ট বেজেল, অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে এশিয়া প্যাসিফিক ট্রায়েনিয়ালে অংশ নিয়েছেন তিনি। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভারত, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের ১১টির বেশি দেশে তিনি পারফরম্যান্স করেছেন। হয়েছে চিত্র প্রদর্শনীও। যুক্তরাজ্যের লন্ডনের টেট মডার্ন মিউজিয়াম, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্ট, চীনের হংকংয়ের এম প্লাস, ফ্রান্সের প্যারিসের ক্যাডিস্ট ফাউন্ডেশন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবির গুগেনহাইম, ভারতের নয়াদিল্লির কিরণ নাদার মিউজিয়ামসহ বিশ্বের খ্যাতনামা বহু জাদুঘরে তাঁর শিল্পকর্ম রক্ষিত আছে। বাংলাদেশে তাঁর শিল্পসংগ্রহ রয়েছে সামদানি আর্ট ফাউন্ডেশন এবং দুর্জয় বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনে। শিল্পবিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রকাশনা আর্ট রিভিউ এশিয়া, আর্ট নিউজ, ফোর্বস এবং ভারতীয় দৈনিক দ্য হিন্দু পত্রিকায় তাঁর শিল্পকর্মের সমালোচনা প্রকাশিত হয়েছে। আবুধাবির গুগেনহাইম মিউজিয়াম জয়দেবের একটি শিল্পকর্ম বেশ ভালো দামে কিনে নিয়েছে। বর্তমানে তিনি মুম্বাইভিত্তিক ঝাভেরি কনটেমপোরারি গ্যালারির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ।
পাহাড় আর ঝিরির পথে পথেখাগড়াছড়ি আর রাঙামাটির ঝিরি পথে বা কাপ্তাই হ্রদের নির্জনতায় সময় কাটে জয়দেব রোয়াজার। আন্তর্জাতিক খ্যাতি এলেও জীবন কাটান পাহাড়ি জুমিয়াদের মতো। কখনো মাছ ধরতে চলে যান জেলেদের সঙ্গে। আবার কখনো ঝিরি পথে হেঁটে হেঁটে দিন কাটে তাঁর। রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার কামিলাছড়ি গ্রামে নির্জন হ্রদের ধারে গড়ে তুলেছেন স্টুডিও। সেখানে সপ্তাহের দুই দিন কাটে তাঁর। পাহাড় ও পাহাড়ের মানুষজনকে নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা বুনে তোলেন ক্যানভাসে।
জয়দেব দেশের শিল্পীসমাজ ও শিল্পবোদ্ধাদের জগৎ থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করেন। তাঁর কথায়, ঢাকা তাঁকে কখনো টানে না। দু-এক দিন ঢাকা বা দেশের বাইরে থাকলে হাঁপিয়ে ওঠেন। ভাবেন, কখন ফিরবেন পাহাড়ে।
সম্প্রতি কামিলাছড়িতে তাঁর স্টুডিওতে গিয়ে দেখা গেল আট ফুট দীর্ঘ একটি ক্যানভাসে কাজ করছেন তিনি। তিনতলা স্টুডিওর বারান্দায় এসে দাঁড়ালে অবারিত নীল হ্রদের হাতছানি। হ্রদের পাড়ে ঢেউখেলানো পাহাড়ের সারি। সেদিকে তাকালে আচ্ছন্ন হয়ে যেতে হয়। বারান্দায় বসে কথায় কথায় জানালেন নির্জন এই পাহাড়ে জঙ্গল পরিষ্কার করে ছবি বিক্রির টাকায় এই স্টুডিও গড়ে তুলেছেন। স্ত্রী হাসনাহেনা পরশের সঙ্গে মিলে জঙ্গল পরিষ্কার করেছেন। একটাই চাওয়া, একটু আড়াল, একটু নির্জনতা। ছবি আঁকার জন্য এটুকু পরিসর চেয়েছেন জীবন থেকে।
জয়দেব রোয়াজা