রূপপুর প্রকল্পের আরো ৮ কর্মকর্তা-কর্মচারী বরখাস্ত
Published: 14th, May 2025 GMT
পাবনার ঈশ্বরদীতে নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে কর্মরত নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (এনপিসিবিএল) আরো আট কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের প্রকল্প এলাকায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৩ মে) এনপিসিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রকল্প পরিচালক মো.
রূপপুর প্রকল্পের সাইট ইনচার্য রুহুল কুদ্দুস এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আরো পড়ুন:
হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ মডেল কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ বরখাস্ত
আ. লীগের মিছিলে অংশ নেওয়া কেসিসির কর্মচারী বরখাস্ত
সাময়িক বরখাস্ত আট কর্মকর্তা হলেন- এনপিসিবিএলের সহকারী ব্যবস্থাপক ইকতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিপ্লব, শামীম আহম্মেদ, মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, মো. গোলাম আজম, ঊর্ধ্বতন সহকারী ব্যবস্থাপক মো. মনির, ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী ব্যবস্থাপক গোলাম আজম, টেকনিশিয়ান রিয়াজ উদ্দিন ও ইসমাইল হোসেন।
এর আগে, গত ৮ মে একইভাবে দুইটি পত্রে প্রতিষ্ঠানটির ১৮ জন কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি ও প্রকল্প এলাকায় নিশেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
সাময়িক বরখাস্তের নোটিশে বলা হয়েছে, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকা ও এনপিসিবিএল-এ তারা শৃংখলা বিরোধী বা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছেন। কর্তব্যে অবহেলা করেছেন এবং করছেন। তাদের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা আগামী ১০ দিনের মধ্যে জানানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাদেরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
অন্যদিকে প্রকল্প এলাকায় প্রবেশাধিকার বিষয়ে অপর একটি পত্রে বলা হয়েছে, নিরাপত্তার স্বার্থে আটজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণাধীন বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প এলাকায় প্রবেশ বন্ধ করা হলো।
বরখাস্তকৃত কর্মকর্তাদের দাবি, প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় অবৈধভাবে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তারা বিষয়টি নিয়ে ঢাকায় আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রকৌশলী জানান, তারা সবাই দক্ষতার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। প্রতিষ্ঠানে ন্যায্য দাবি নিয়ে কথা বলায় তাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তারা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
নতুন ৮ জনকে সাময়িক বরখাস্তর বিষয়ে জানতে যোগাগোগ করা হলে এনপিসিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাহেদুল হাছানকে পাওয়া যায়নি।
তবে এর আগে ১৮ জনকে অব্যাহতির বিষয়ে তিনি বলেন, যথাযথ তদন্ত ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোম্পানির শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থে এই পদক্ষেপ।
প্রসঙ্গত, প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাহেদুল হাছানের অপসারণসহ বিভিন্ন দাবিতে এনপিসিবিএলের কর্মকর্তা কর্মচারীরা কিছুদিন ধরে আন্দোলন করছিলেন। গত ৬ মে তারা ঈশ্বরদী শহরে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেন। এছাড়া, প্রকল্প এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
ঢাকা/শাহীন/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বরখ স ত কর মকর ত র পপ র প
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশ সফরে আসছেন তুরস্কের প্রতিরক্ষাশিল্প সংস্থার প্রধান
বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদারের বিষয়ে আলোচনার জন্য তুরস্কের প্রতিরক্ষাশিল্প সংস্থার সচিব অধ্যাপক হালুক গরগুন ৮ জুলাই ঢাকায় আসছেন। এক দিনের সফরে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। পাশাপাশি তিনি সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খানের সঙ্গে আলোচনা করবেন।
তুরস্ক থেকে একাধিক কূটনৈতিক সূত্র সোমবার প্রথম আলোকে জানিয়েছে, দুই দেশের প্রতিরক্ষাবাহিনীর মাঝে সহযোগিতা বাড়ানোর অংশ হিসেবে প্রশিক্ষণ, গবেষণা, কেনাকাটা, বিনিয়োগ ইত্যাদি নানা বিষয়ে অধ্যাপক হালুক গরগুন আলোচনা করতে পারেন।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের অধীনে সরাসরি কাজ করে প্রতিরক্ষাশিল্প সংস্থা (ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রি এজেন্সি–এসএসবি)। মূলত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তুরস্কের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক—বিশেষ করে প্রশিক্ষণ, গবেষণার মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীর বিকাশ ও বিবর্তনের বিষয়ে এসএসবি মূল ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তুরস্কের সমরাস্ত্র কেনাকাটা এবং বিনিয়োগের দেখভাল করে এসএসবি।
তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াসার গুল বিভিন্ন দেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার রাজনৈতিক দিকটি দেখভাল করেন। আর তুরস্কের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতার কৌশলগত বিষয়টির দায়িত্বে রয়েছেন হালুক গরগুন। কারণ, এসএসবি প্রতিরক্ষাশিল্প নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সরাসরি ভূমিকা রাখে। অর্থাৎ তুরস্কের প্রতিরক্ষাশিল্পের জন্য প্রধান সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা। এটি সমরাস্ত্রের নকশা ও উৎপাদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের কাছে প্রযুক্তি হস্তান্তরের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেয়।
বাংলাদেশের কূটনীতিকেরা বলছেন, সম্প্রতি ঢাকা–আঙ্কারা সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা বাড়াতে তুরস্ক নানা ধরনের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা দিয়ে থাকে। গত সাত বছরে বারাক্তার টিবি–২ ড্রোনসহ অন্তত ১৫ ধরনের আধুনিক সমরাস্ত্র কিনেছে বাংলাদেশ।
মূলত ২০১৮ সাল থেকে দুই দেশের মধ্যে সমরাস্ত্র কেনাকাটা এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে। এর পাশাপাশি উন্নত প্রযুক্তির আরও কিছু সমরাস্ত্র কেনাকাটা, বাংলাদেশে সমরাস্ত্রের কারখানা স্থাপন ও বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তি হস্তান্তর নিয়েও আলোচনা চলছে। দুই দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা দীর্ঘ মেয়াদে আরও শক্তিশালী হওয়ার নানা ইঙ্গিত আছে বলে মনে করেন ঢাকার কূটনীতিকেরা।
গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন তুরস্কের বাণিজ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ওমের বোলাত। সফরকালে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। প্রধান উপদেষ্টা তাঁকে বাংলাদেশে প্রতিরক্ষাশিল্প স্থাপন, প্রযুক্তি স্থানান্তর, বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান জানান।
উত্তরে ওমের বোলাত বলেন, বাংলাদেশ ও তুরস্ক টেক্সটাইল শিল্প ছাড়াও অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৈচিত্র্যময় করতে পারে। প্রতিরক্ষাশিল্প, স্বাস্থ্যসেবা, ওষুধশিল্প এবং কৃষিযন্ত্র খাতে অর্থনৈতিক সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে।
সমরাস্ত্রবিষয়ক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, ইতিমধ্যে আঙ্কারার কাছ থেকে কোবরা আর্মার্ড পারসোনাল ক্যারিয়ার ও স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কিনেছে ঢাকা।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, দুই দেশের বিদ্যমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতার আওতায় তুরস্ক নির্মিত মাইন থেকে সুরক্ষাকারী যান, সাঁজোয়া যান এবং বহুমাত্রিক রকেট প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কিনেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের কাছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত কামানের গোলা বিক্রির বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তি সই হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের কাছে সামরিক হেলিকপ্টার ও ট্যাংক বিক্রিতে আগ্রহী তুরস্ক। তুরস্কের একটি কোম্পানি বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিকে শেল বানানোর প্রযুক্তি দিয়েছে। এ ছাড়া নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের টহল নৌযান তৈরির জন্য প্রযুক্তি হস্তান্তরের প্রস্তাব করা হয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৮ সালে তুরস্ক থেকে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সমরাস্ত্র কিনেছে। ওই বছর গ্রাউন্ডেড সার্ভিলেন্স রাডার, কৌশলগত সাঁজোয়া যান কোবরা ২-সহ কয়েক ধরনের সাঁজোয়া যান ও বহনযোগ্য জ্যামার কেনা হয়। পরবর্তী বছরগুলোতে অফশোর ক্রেন, সাঁজোয়া যান এবং অ্যাম্বুলেন্স, মিসাইল লঞ্চিং সিস্টেম, ওরলিকন স্কাই গার্ড রাডার সিস্টেমসহ নানা ধরনের সমরাস্ত্র কেনা হয়েছে।
আরও পড়ুনতুরস্ক থেকে সমরাস্ত্র কেনা বেড়েছে২৭ ডিসেম্বর ২০২৩