ডলারের দাম বেশি বাড়লে বাংলাদেশ ব্যাংক হস্তক্ষেপ করবে: ডেপুটি গভর্নর
Published: 15th, May 2025 GMT
সংস্কারের বিষয়ে বাংলাদেশের যে সদিচ্ছা আছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সেই বার্তা দিতেই ডলারের দাম ‘বাজারভিত্তিক’ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, তবে কাঙ্ক্ষিত মাত্রার চেয়ে ডলারের দাম বেশি বেড়ে গেলে বাংলাদেশ ব্যাংক হস্তক্ষেপ করবে।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানীতে ‘সামষ্টিক অর্থনীতি নিয়ে মাসিক বিশ্লেষণ’ (এমএমআই) শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ কথাগুলো বলেন ডেপুটি গভর্নর মো.
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ে নিযুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. হাবিবুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন পিআরআই চেয়ারম্যান জাইদি সাত্তার।
ডেপুটি গভর্নর মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের সংস্কার উদ্যোগের অংশ হিসেবে বিনিময় হার “বাজারভিত্তিক” করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত নানাভাবে সহায়ক হবে। সংস্কারের বিষয়ে বাংলাদেশের যে সদিচ্ছা আছে, সংস্কারের যে তাগিদ আমরা অনুভব করছি, সে বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বার্তা যাবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনীতির বহিস্থ খাত যে ভালো আছে, তা–ও বোঝা যাবে।’
হাবিবুর রহমান আরও বলেন, ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করার পর গতকাল বুধবার টাকার বিনিময় হার কিছুটা ওঠানামা করলেও সেভাবে অবমূল্যায়ন হয়নি। অর্থাৎ অবমূল্যায়নের চাপ দেখা যায়নি। আরও দু–এক দিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে। তখন বোঝা যাবে, কী হতে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে সুন্দর ভারসাম্য তৈরি হয়েছে। ফলে টাকার বিনিময় হারের অনাকাঙ্ক্ষিত অবমূল্যায়ন বা চাপ আসবে বলে তিনি মনে করেন না।
তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার পর্যবেক্ষণ করবে জানিয়েছেন হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যদি মনে করে, কাঙ্ক্ষিত মাত্রার চেয়ে টাকার বেশি অবমূল্যায়ন হয়েছে, তাহলে হস্তক্ষেপ করবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সেই হাতিয়ার আছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, উন্নয়নের জন্য খুব বেশি সংস্কার প্রয়োজন হয় না। জাপানের অর্থনীতি মাত্র ১৫ বছরে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। এভাবে এশিয়া অঞ্চলের অনেক দেশের অর্থনীতি ১০–১৫ বছরের মধ্যে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং সঠিক নীতি গ্রহণ করতে হবে এবং সেগুলো বাস্তবায়নে সমন্বয় থাকতে হবে।
অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক খুরশীদ আলম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাইদি সাত্তার ও পিআরআইয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ আশিকুর রহমান। জাইদি সাত্তার বৈদেশিক খাত ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পটভূমি নিয়ে আলোচনা করেন।
মূল প্রবন্ধে আশিকুর রহমান বলেন, অর্থনীতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে; কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। এই ঘুরে দাঁড়ানোর পেছনে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তবে এই পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কিছু দুর্বলতা আছে। এই দুর্বলতার উৎস মূলত অর্থ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা। এই দুর্বলতা দূর করতে কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ হাতে নেওয়া হয়েছে। রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনা পৃথক করা এবং বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা সংস্কারের বড় দুটি উদ্যোগ।
আশিকুর রহমানের আশা, ‘এসব সংস্কার মধ্য মেয়াদে ইতিবাচক ফল বয়ে আনলে আমরা যে নিম্ন কর–জিডিপি অনুপাতের সমস্যায় আছি, তা কাটিয়ে উঠতে পারব এবং অর্থনীতি আরও ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়াবে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে অস্ট্রেলীয় হাইকমিশনের উপপ্রধান ক্লিনটন পবকে ও দ্বিতীয় সচিব জোশুয়া গ্যাসুটান।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ ব ব র রহম ন অন ষ ঠ ন দ র বলত
এছাড়াও পড়ুন:
পাটের সম্ভাবনা কখনো শেষ হবে না: কৃষি সচিব
পাট নিয়ে অনেক কিছু করার আছে, পাটের সম্ভাবনা কখনো শেষ হবে না—এমন মন্তব্য করে বাংলাদেশে পাটখাতের গবেষণা ও উৎপাদন আরও জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান।
সোমবার রাজধানীতে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) আয়োজিত ‘বার্ষিক অভ্যন্তরীণ গবেষণা পর্যালোচনা কর্মশালা-২০২৫’–এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি সচিব বলেন, পাট শুধু অর্থকরী ফসল নয়, এটি আমাদের গর্ব, আমাদের পরিচয়ের প্রতীক। পাট নিয়ে আমাদের বদ্ধ চিন্তাভাবনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বাজার, প্রযুক্তি ও বাস্তবতা বিশ্লেষণ করে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে গবেষণায় অগ্রসর হতে হবে।
সচিব বলেন, বাংলাদেশের সীমিত জমিকে কাজে লাগিয়েই পাটের উৎপাদন আরও বাড়ানো সম্ভব। তিনি গবেষকদের উদ্দেশে বলেন, সার্বিকভাবে দেখতে হবে—পাটের উন্নয়ন কীভাবে কৃষকের কাছে যায়, কীভাবে শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে আরও ব্যবহার বাড়ে এবং কীভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের অবস্থান সুদৃঢ় হয়।
কৃষি সচিব এ সময় বিদেশি বাজারে পাটের কাঁচামালের চাহিদা বিশ্লেষণ করে গবেষণায় তার প্রতিফলন ঘটানোর পরামর্শ দেন। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, পৃথিবীর অন্য প্রান্তের দেশ কিউবাও বাংলাদেশ থেকে পাট আমদানি করে দুইটি কারখানা গড়ে তুলেছে। অনেক দেশ পরিবেশগত কারণে পাট উৎপাদনে সক্ষম নয়। সেদিক থেকে পাট বাংলাদেশের জন্য একটি আশীর্বাদ।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠানে বাস্তবমুখী প্রযুক্তির সমন্বিত প্রয়োগের ওপরও গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান একত্রে কাজ করলে পাট নিয়ে আমাদের সক্ষমতা বহুগুণে বাড়বে। প্রযুক্তি যেমন বদলাচ্ছে, তেমনই বদলাতে হবে পাট চাষ, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং ব্যবহারের ধরণও।
কর্মশালায় জানানো হয়, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে দেশে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ লাখ ৫ হাজার হেক্টর জমিতে। এই চাষের জন্য প্রয়োজন হবে ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টন পাটবীজ। দেশে বর্তমানে পাটের উৎপাদন বছরে প্রায় ১৫ লাখ টন। পাটকাঠির উৎপাদন ৩০ লাখ টন এবং চারকোল উৎপাদন ৬ লাখ টন। এই চারকোল রপ্তানিতে সরকার ২০ শতাংশ নগদ প্রণোদনাও দিচ্ছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বিজেআরআই এর মহাপরিচালক ড. নার্গীস আক্তার বলেন, পাট শুধু আমাদের সোনালি আঁশ নয়, এটি আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এক গৌরবময় অধ্যায়। তিনি জানান, বিজেআরআই ইতোমধ্যে ৫৭টি পাটের জাত, ২২৩টি কৃষি প্রযুক্তি এবং ৬৯টি শিল্প ও কারিগরি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আবু জুবাইর হোসেন বাবলু, কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. নাজমুন নাহার করিম, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আব্দুল লতিফসহ কৃষি খাতের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, গবেষক এবং কৃষক প্রতিনিধি।
অনুষ্ঠানের বক্তারা বলেন, পাট ভবিষ্যতের পরিবেশবান্ধব ও টেকসই অর্থনীতির অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। গবেষণা, প্রযুক্তি ও নীতিগত সহায়তায় পাটের এই সম্ভাবনাকে বাস্তবায়ন করাই এখন সময়ের দাবি।