চট্টগ্রাম থেকে মিয়ানমারে পাচারের সময় ৩৪০ বস্তা সরকারি ইউরিয়া সার জব্দ করেছে নৌ পুলিশ। গতকাল শুক্রবার একটি ফিশিং ট্রলার থেকে এসব সার জব্দ করে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কুমিরা নৌ পুলিশ ফাঁড়িতে আনা হয়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

সরকারি সার উদ্ধারের ঘটনায় গতকাল রাতেই চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলী থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা করা হয়েছে। ট্রলারমালিক ও চালককে আসামি করে মামলাটি করেন কুমিরা নৌ পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুর রহমান সওদাগর।

নৌ পুলিশ জানিয়েছে, চক্রটি চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলী থানার রাসমণিঘাট (খেজুরতলা) ট্রলারঘাট থেকে সারগুলো নিয়ে মিয়ানমারে পাচার করছে—এমন খবর পেয়ে অভিযান চালানো হয়।

কুমিরা নৌঘাটে দেখা যায়, ঘাটে ভেড়ানো আছে ‘এফবি আবদুর রহমান-১’ নামের ফিশিং ট্রলারটি। এর ডেকে দুটি চেম্বারে সারের বস্তাগুলো রাখা ছিল। বস্তাগুলোর ওপরে লেখা আছে, ‘কাফকো গ্র্যানুলার ইউরিয়া, মেড ইন বাংলাদেশ’। প্রতিটি বস্তার ওজন ৫০ কেজি। শ্রমিকেরা সারের বস্তাগুলো ট্রলার থেকে মাথায় করে নিয়ে কুমিরা পুলিশ ফাঁড়ির ভবনের নিচতলায় একটি কক্ষে জমা করেন।

ট্রলারটির ডেকে দুটি চেম্বারে সারের বস্তাগুলো রাখা ছিল.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

আলাস্কা শীর্ষ বৈঠক: ট্রাম্পের হার-জিত না হলেও বড় জয় পুতিনের

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গতকাল শুক্রবার যখন বিশ্বমঞ্চে পা রাখেন, তখন যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঙ্গরাজ্যের অ্যাঙ্কোরেজ শহরের আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন। স্থানীয় এলমেনডর্ফ–রিচার্ডসন সামরিক ঘাঁটির রানওয়েতে লালগালিচা বিছানো ছিল তাঁর জন্য। পুতিনকে বরণ করে নিতে আগে থেকে সেখানে অপেক্ষা করছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

প্রেসিডেন্ট পুতিন পৌঁছানোর পর ট্রাম্প হাততালি দিয়ে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। দুই নেতা উষ্ণ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। তাঁদের দুজনের মুখেই ছিল হাসি।

পুতিনের জন্য এটি ছিল বিশেষ এক মুহূর্ত। কারণ, ২০২২ সালে রাশিয়া পুরোদমে ইউক্রেনে হামলা শুরু করার পর থেকে পশ্চিমা দেশগুলো তাঁকে এড়িয়ে চলছিল। তখন থেকে তিনি খুব একটা বিদেশ সফরও করেননি। উত্তর কোরিয়া ও বেলারুশের মতো রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ কয়েকটি দেশের মধ্যে তাঁর সফর ছিল সীমাবদ্ধ।

আলাস্কায় পৌঁছানোর মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে এক সাংবাদিক চিৎকার করে পুতিনের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেন, ‘আপনি কি সাধারণ মানুষদের হত্যা করা বন্ধ করবেন?’ এতে পুতিন বিরক্ত হয়েছেন কি না, বোঝা যায়নি। তিনি ওই প্রশ্ন উপেক্ষা করে দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে নেন।

আলাস্কায় এ শীর্ষ বৈঠক হওয়াটাই পুতিনের জন্য একটি বড় জয়। তবে তিনি সেখানে যে ধরনের উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছেন, তা ক্রেমলিনের কল্পনারও বাইরে ছিল। মাত্র ছয় মাস আগে পর্যন্ত পশ্চিমাদের চোখে তিনি ছিলেন ‘বর্জিত’ নেতা। আর এখন যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে তিনি একজন বন্ধু ও সহযোগী হিসেবে অভ্যর্থনা পেয়েছেন।

বিদায়বেলায় একটি চমকপ্রদ ঘটনাও ঘটেছে। পুতিন নিজের রাষ্ট্রীয় গাড়ি না নিয়ে ট্রাম্পের সাঁজোয়া লিমুজিনে চড়ে বিমানঘাঁটির দিকে যান। গাড়ি ছাড়ার সময় ক্যামেরায় ধরা পড়া দৃশ্যে দেখা যায়, গাড়ির পেছনের আসনে বসে তিনি হাসছেন।

বিব্রতকর প্রশ্নের মুখোমুখি পুতিন

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ২৫ বছর ধরে পুতিন সংবাদমাধ্যমের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছেন, সাংবাদিকদের স্বাধীনতা কেঁড়ে নিয়েছেন এবং তথ্যের জায়গায় মিথ্যা প্রচারণা ছড়িয়ে দিয়েছেন। রাশিয়ার ভেতরে তিনি সাধারণত কঠোর প্রশ্ন করা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন না।

তবু আলাস্কায় পৌঁছানোর মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে এক সাংবাদিক চিৎকার করে পুতিনের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেন, ‘আপনি কি সাধারণ মানুষদের হত্যা করা বন্ধ করবেন?’ এ প্রশ্নে পুতিন বিরক্ত হয়েছেন কি না, বোঝা যায়নি। তিনি এ প্রশ্ন উপেক্ষা করে দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে নেন।

আলাস্কার শীর্ষ বৈঠকটি হয়তো ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কোনো বাস্তব অগ্রগতি দেখাতে পারেনি, তবে এতে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের উষ্ণতা বেড়েছে।

অল্প সময়ের জন্য ফটোসেশন চলে। এরপর পুতিনের দিকে একের পর এক প্রশ্ন আসতে থাকে। এর একটি প্রশ্ন ছিল—পুতিন কি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় শীর্ষ বৈঠকে বসতে প্রস্তুত হবেন। পুতিন এ প্রশ্নেও কোনো সরাসরি প্রতিক্রিয়া দেখাননি। শুধু রহস্যময় হাসি দিয়েছেন।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের কর্মীরা আলাস্কায় উপস্থিত হয়েছিলেন। তাঁদের আশা ছিল, বৈঠকের পর ট্রাম্প ও পুতিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হবেন। কিন্তু তা হয়নি। দুই নেতা শুধু বক্তব্য দিয়েছেন। তাঁরা সাংবাদিকদের কাছ থেকে কোনো প্রশ্ন নেননি।

অপ্রত্যাশিতভাবে প্রথমে পুতিনই বক্তব্য দেন। তিনি বৈঠকের পরিবেশ নিয়ে প্রশংসা করেন। তাঁর কথায়, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা বজায় রেখে গঠনমূলক পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। এরপর তিনি সংক্ষেপে আলাস্কার অতীত (রাশিয়ার অংশ থাকাকালীন) ইতিহাস তুলে ধরেন।

পুতিন কথা বলার সময় ট্রাম্প চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলেন। কয়েক মিনিট পর পুতিন ‘ইউক্রেন পরিস্থিতির’ উল্লেখ করেন, যেটি ছিল বৈঠকের মূল আকর্ষণ। তিনি বলেন, শান্তি চাইলে প্রথমে সংঘাতের ‘মূল সমস্যা’ দূর করতে হবে। তাঁর এ বক্তব্য কিয়েভসহ অন্য জায়গাগুলোর জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। যুদ্ধের শুরু থেকে যে বিষয়গুলো পুতিন যুদ্ধবিরতির পথে বাধা বলে দাবি করে আসছেন, সেসবের একটি এটি।

পুতিনের অন্য দাবিগুলোর মধ্যে আছে ক্রিমিয়া, দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝঝিয়া ও খেরসনকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া, রাশিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক কার্যকলাপ বন্ধে ইউক্রেনের সম্মতি, ইউক্রেনে বিদেশি সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ না থাকা ও দেশটিতে নতুন নির্বাচন আয়োজন। কিয়েভের কাছে এগুলো আত্মসমর্পণের শামিল। তারা এগুলো মানতে রাজি নয়। তবে সাড়ে তিন বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পরও মস্কোর কাছে এখনো এগুলো গুরুত্বপূর্ণ।

সব মিলে এটা পরিষ্কার যে বৈঠকে কোনো চুক্তি হয়নি।

আলাস্কায় প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

সম্পর্কিত নিবন্ধ