ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আল ফিকহ্ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের নাম পরিবর্তন করে ‘আল ফিকহ্ অ্যান্ড ল’ করার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। 

শনিবার (১৭ মে) দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে বিভাগের মূল ফটক অবরুদ্ধ করে বিভাগটির শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচি পালন করেন।

এর আগে, দুপুর দেড়টায় বিভাগের সভাপতির কক্ষে এ বিষয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রায় ২ ঘণ্টা আলোচনা হয়। আলোচনায় কোনো সমাধান না হওয়ায় দাবি আদায়ে বিভাগের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা।

আরো পড়ুন:

রাবি শিক্ষার্থীদের নতুন হলে আসন মিলবে ডিসেম্বরেই

জাবি ও ঢাবির দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রীতি ক্রিকেট

আগামী একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিংয়ে বিভাগের নাম পরিবর্তনের বিষয়টি ওঠানোর দাবি করে তারা জানান, বিভাগটি চালুর পর থেকে বিভাগের নাম ছিল আল ফিকহ্। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা ফিকহের সঙ্গে ‘ল’ যুক্ত করার দাবি তোলেন। দাবি মানা হলেও বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তৎকালীন আওয়ামী প্রশাসন ‘ল’ এর পরিবর্তে লিগ্যাল স্টাডিজ যুক্ত করে ‘আল ফিকহ্ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ’ নামকরণ করেন। এই বিভাগকে দমিয়ে রাখার জন্যই এমন ষড়যন্ত্র করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমাদের দাবি একটাই। বিভাগের নামের সংস্কার চাই। বাংলাদেশের এলএলবি ডিগ্রি প্রদানকারী কোনো প্রতিষ্ঠানে বিভাগের নাম লিগ্যাল স্টাডিজ নেই। আমরা পরিচয়হীতায় ভুগছি। সাধারণভাবে এই নাম কেউ চেনে না। আবার অনেকে ইসলামিক স্টাডিজ মনে করে।”

তিনি বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের পর শিক্ষকদের নিকট আমরা দাবি জানালেও তার কোনো কার্যকরি পদক্ষেপ এখনো নেওয়া হয়নি। আমাদের দাবি আগামী একাডেমিক কাউন্সিল মিটিংয়ে বিভাগের নাম সংস্কার করে ‘আল ফিকহ্ অ্যান্ড ল’ করা হোক। অন্যথায় আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব।”

বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড.

মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, “আমি এ বিষয়ে অনেক আগে থেকেই কাজ করে যাচ্ছি। বিভাগের কোনো বিষয় সিন্ডিকেট মিটিয়ে পাঠাতে হলে সব শিক্ষক ঐক্যমত থাকতে হয়। কিছুদিন আগে আমি এ বিষয়ে সবাইকে ডাকলেও কয়েকজন শিক্ষক এতে সাড়া দেননি।”

তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীদের পূর্বের দাবিতে দুটি নামের কথা উল্লেখ থাকায় কয়েকজন শিক্ষক দ্বিমত পোষণ করেন। ফলে তা আর এগোনো সম্ভব হয়নি। এবার শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে একমত এবং বিভাগের নাম `আল ফিকহ্ অ্যান্ড ল' করার দাবি জানিয়েছে। আশাকরি এবার তা সংস্কার করা সহজ হবে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের চাওয়া অনুযায়ী আসন্ন একাডেমিক কাউন্সিল সভায় নাম সংস্কারের বিষয়টি উত্থাপন করব। আগামীকালই এ বিষয়ে রেজুলেশন করা হবে। আমরাও বিভাগের নাম সংস্কার চাই।”

ঢাকা/তানিম/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অবর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

অভ্যুত্থানে স্বামী হারিয়েছেন এখন সন্তান নিয়ে উদ্বিগ্ন

‘আমার স্বামী যখন ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন, তখন আমি তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা। বর্তমানে ছয় মাসের মেয়েই আমার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। বাবার নামের সঙ্গে মিল রেখে মেয়ের নাম রাখা হয়েছে সাবরিনা বিনতে সিদ্দিক। আমার স্বামী দেশের মানুষের বৈষম্য দূর করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন, আমি ও আমার সন্তান যেন বৈষম্যের শিকার না হই।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে সমকালকে কথাগুলো বলছিলেন সাদিয়া খাতুন।
গত বছরের ২০ জুলাই ময়মনসিংহের গৌরীপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন নূরে আলম সিদ্দিক। এ ঘটনার মাত্র ছয় মাস আগে ১২ জানুয়ারি তাদের বিয়ে হয়। নিজ বাড়ি গৌরীপুর উপজেলায় হলেও ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার কোনাপাড়া মাদ্রাসায় চাকরি করতেন সিদ্দিক। এই এলাকায় চাকরির সুবাদে বিয়ে করেন সাদিয়া খাতুনকে। স্বামীর স্মৃতি কোনোভাবেই ভুলতে পারছেন না তিনি।
সাদিয়া বলেন, সারাদেশে আন্দোলন যখন শুরু হচ্ছে, তার প্রথম দিন থেকেই সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল নূরে আলম সিদ্দিকীর। ১৮ ও ১৯ জুলাই আন্দোলনে যাওয়ার পর ভয় ঢুকে যায় মনে। এর ঠিক পরদিন গৌরীপুরের কলতাপাড়ায় আন্দোলনে অংশ নিলে পুলিশ সদস্যরা কাছ থেকে গুলি করে মেরে ফেলে তাঁকে। ওইদিন তাঁর সঙ্গে আরও দু’জন শহীদ হন।
স্বামী নিহত হওয়ার পর শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে চলে আসেন সাদিয়া। বাবার আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো না। বাবা ও ভাই কোনো রকম উপার্জন করে চালিয়ে নিচ্ছেন। তাদের খোঁজখবর নেন না শ্বশুর-শাশুড়ি। সরকারি যা সহযোগিতা করা হয়েছে, তার অধিকাংশ টাকা তারা নিয়ে গেছেন বলে দাবি সাদিয়ার। তিনি বলেন, ‘সন্তান জন্মদানের জন্য আমি যখন হাসপাতালে ভর্তি, তখন জুলাই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা দেয় সরকার। আমি ভেবেছিলাম আমার শ্বশুরের কাছে সরকার সরাসরি টাকা দিলেও আমার সন্তানের জন্য কিছু টাকা দেবেন। পরে তারা আমাকে কিছুই দেননি।’
জেলা ও উপজেলা পর্যায় থেকেও আন্দোলনে নিহতদের অনেক আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ১ টাকাও পাননি বলে জানান সাদিয়া। তিনি বলেন, ‘আমি সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। আজ যদি আমার স্বামী থাকত, তাহলে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ত না।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা এসব কথা শুনতে পেয়ে সাদিয়া খাতুনের পাশে দাঁড়ান। সর্বশেষ জেলা পরিষদ থেকে অনুদানের ১ লাখ ২৫ হাজার টাকার চেক তুলে দেওয়া হয় তাঁর হাতে। সাদিয়ার দাবি, শহীদ পরিবারকে সঞ্চয়পত্রের ১০ লাখ টাকা যেন প্রকৃত ওয়ারিশ শনাক্ত করে বণ্টন করে দেওয়া হয়। এই টাকা যদি তাঁর সন্তান না পায়, তবে তাঁকে ভরণপোষণ করা কঠিন হয়ে যাবে।
সাদিয়ার ভাই মাহমুদুল হাসান শামীম বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করেন। নিজের সংসারের খরচ জোগানোর আগে স্বামীহারা বোনের কথা চিন্তা করেন তিনি। তাঁর ভাষ্য, সরকার যেন প্রতিটি শহীদের পরিবারের দায়িত্ব নেয়। প্রশাসনের প্রতি তাঁর আহ্বান, ‘যাদের কারণে আপনারা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছেন, তাদের যেন স্মরণে রাখেন।’
বিচার দেখে যেতে চান শহীদ বিপ্লবের বাবা
গৌরীপুরের কলতাপাড়া বাজারের বাসিন্দা বাবুল মিয়া। ২০ জুলাই বাড়ির পাশে আন্দোলনে গিয়ে গুলিতে মারা যান তাঁর ছেলে বিপ্লব হাসান। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে আছেন তিনি। ছেলে হত্যার বিচার দেখে যাওয়াই তাঁর জীবনের শেষ ইচ্ছা। উপজেলা সদরে ছোট একটি চাকরি করতেন বিপ্লব হাসান। ঘটনার দিন সকালে নাশতা খাওয়ার জন্য মায়ের কাছ থেকে ৫০ টাকা নিয়ে ঘর থেকে বের হন তিনি। এরপর ফেরেন লাশ হয়ে। পরে বাবুল মিয়া ছেলে হত্যার ঘটনায় ১১ জনকে আসামি করে মামলা করেন। এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। 
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সদস্য সচিব মোহাম্মদ আল নূর আয়াশ জানান, জুলাই আন্দোলনে ময়মনসিংহ জেলার ৪১ জন বাসিন্দা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শহীদ হয়েছেন। সরকার এখন পর্যন্ত তাদের আশানুরূপ আর্থিক সহযোগিতা করতে পারেনি। শহীদ পরিবারের প্রতিটি সদস্য যাতে সচ্ছলভাবে চলতে পারেন, সে ব্যাপারে কাজ করছেন তারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ