বাণিজ্য নিয়ে কয়েক দিন অস্থিরতার পর অবশেষে সমঝোতার পথে এগোচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইইউর ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের যে হুমকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দিয়েছিলেন, তা সাময়িক স্থগিত করেছেন। আজ সোমবার ইইউপ্রধান উরসুলা ভন ডার লেনের সঙ্গে আলাপের পর এ সিদ্ধান্ত নেন তিনি। বাণিজ্য আলোচনার বিষয়েও একমত হয়েছেন দুজন।

গত মাসে বিভিন্ন দেশের ওপর উচ্চ হারে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। ঝাপটা এসেছিল ইইউর ওপরও। পরে সেই শুল্ক স্থগিত করা হলেও গত শুক্রবার আবার বেঁকে বসেন ট্রাম্প। হতাশা প্রকাশ করে জানিয়ে দেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা দ্রুত এগিয়ে নিতে মোটেও আগ্রহ দেখাচ্ছে না ইইউ। তাই জুন মাসের ১ তারিখ থেকে জোটটির ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে চান তিনি।

এরই মধ্যে আজ ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শুল্ক নিয়ে আগের দিন রোববার উরসুলা ভন ডার লেন ও ট্রাম্পের মধ্যে ফোনালাপ হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বাণিজ্য আলোচনায় নতুন গতি এসেছে। এর অংশ হিসেবে আজ স্থানীয় সময় বিকেলে ইইউর বাণিজ্যবিষয়ক কমিশনার মার্কোস সেফকোভিক ও মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিকের আলোচনায় বসার কথা রয়েছে।

উরসুলা ভন ডার লেন ও ট্রাম্পের মধ্যে আলাপের বিস্তারিত জানায়নি ইইউ। তবে রোববার নিউ জার্সির মোরিসটাউন বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘ভন ডার লেন এখন গুরুতর আলোচনায় বসতে চান। তিনি অনুরোধ করেন ১ জুনের পরিবর্তে ৯ জুলাই পর্যন্ত সময় দেওয়া হোক। আমি তাতে রাজি হয়েছি।’ ফোনালাপ ‘দারুণ ছিল’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

অন্যদিকে ভন ডার লেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লেখেন, ‘ট্রাম্পের সঙ্গে ভালো আলোচনা হয়েছে। ইউরোপ প্রস্তুত। আমরা দ্রুতই দৃঢ়তার সঙ্গে আলোচনায় বসতে চাই। ভালো চুক্তি করতে হলে আমাদের ৯ জুলাই পর্যন্ত সময় লাগবে।’

‘চুক্তিতে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে’

ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চলমান বাণিজ্য বাধা ও নিজেদের বাণিজ্যঘাটতি নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছেন। দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, ২০২৩ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি ছিল ২৩৬ বিলিয়ন বা ২৩ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। এরই জেগে গত ২ এপ্রিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছিলেন ট্রাম্প।

পরে সেই শুল্ক স্থগিত করা হলেও ন্যূনতম ১০ শতাংশ শুল্ক এখনো বহাল রাখে ট্রাম্প প্রশাসন। এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোয় উৎপাদিত গাড়ি, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ২৫ শতাংশ মার্কিন শুল্ক রয়েছে। এর মধ্যে নতুন করে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ হলে জার্মানির গাড়ি থেকে শুরু করে ইতালির অলিভ অয়েল, ফ্রান্সের হাতব্যাগসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে যেত।

তবে ট্রাম্প ও উরসুলা ভন ডার লেনের মধ্যে বৈঠকের পর পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হবে বলে মনে করেন জার্মানির কমার্জ ব্যাংকের কৌশলবিদ মাইকেল ফিসটার। তিনি বলেন, আগামী ৯ জুলাইয়ের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব। তবে ফোনকলের পর মৌলিক সমস্যাগুলোয় কী পরিবর্তন এসেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প র ওপর উরস ল

এছাড়াও পড়ুন:

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যে ১৫ শতাংশ শুল্ক বসাবে যুক্তরাষ্ট্র

দীর্ঘ আলোচনার পর অবশেষে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) একটি বাণিজ্য চুক্তি কাঠামোয় পৌঁছেছে। চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে ইইউর সব রপ্তানি ওপর শুল্ক থাকবে ১৫ শতাংশ। অন্যদিকে, ইউরোপীয় বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু পণ্যে শুল্ক থাকবে শূন্য শতাংশ।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে সম্ভাব্য বাণিজ্যযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে স্থানীয় সময় রোববার (২৭ জুলাই) স্কটল্যান্ডের টার্নবেরিতে গলফ রিসোর্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন।

বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ একটি নতুন বাণিজ্য চুক্তিতে সম্মত হয়। ঘোষণা আসে, যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি হওয়া সব ইউরোপীয় পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ হারে একক শুল্ক আরোপ করা হবে। এই হারটি পূর্বঘোষিত ৩০ শতাংশ শুল্কের অর্ধেক, যা ট্রাম্প শুক্রবার থেকে কার্যকর করার হুমকি দিয়েছিলেন। 

আরো পড়ুন:

ট্রাম্পের মধ্যস্থতার পরও কম্বোডিয়া-থাইল্যান্ড সংঘাত অব্যাহত

পুতিন-জেলেনস্কির বৈঠক হতে চলেছে: ট্রাম্প

ভন ডার লায়েন এই চুক্তিকে ‘স্থিতিশীলতা আনার একটি বড় সুযোগ’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, “এই চুক্তি আমাদের দুই পক্ষের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ করবে, যা বৈশ্বিক বাণিজ্যের এক-তৃতীয়াংশ প্রতিনিধিত্ব করে।”

অন্যদিকে ট্রাম্প এই ‍চুক্তিকে ‘এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড়’ চুক্তি আখ্যা দেন। ট্রাম্প আরো বলেন, “এটা একটি ভালো চুক্তি, সবার জন্যই লাভজনক। এটি আমাদের একত্রিত করবে।”

ভন ডার লায়েন ট্রাম্পকে “একজন কঠিন আলোচক, কিন্তু একইসঙ্গে একজন দক্ষ চুক্তিকারক” হিসেবে প্রশংসা করেন।

চুক্তির অংশ হিসেবে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন আগামী তিন বছরে যুক্তরাষ্ট্রে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ করবে, যার মধ্যে থাকবে মার্কিন সামরিক সরঞ্জাম ও জ্বালানি খাতে ৭৫০ বিলিয়ন ডলারের খরচ। এই বিনিয়োগ ইউরোপকে রাশিয়ার জ্বালানি নির্ভরতা থেকে সরিয়ে আনতে সহায়ক হবে বলে মন্তব্য করেন উরসুলা ভন ডার লায়েন।

বিমানের যন্ত্রাংশ, কিছু রাসায়নিক ও কৃষিপণ্যসহ নির্দিষ্ট কিছু পণ্যে কোনো শুল্ক বসানো হবে না। সেমিকন্ডাক্টর নিয়ে একটি আলাদা চুক্তির ঘোষণা শিগগিরই আসতে পারে।

তবে বিশ্বব্যাপী স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামে ট্রাম্পের আরোপিত ৫০ শতাংশ শুল্ক বহাল থাকবে বলে জানানো হয়েছে।

ইইউর পাশাপাশি, ট্রাম্প যুক্তরাজ্য, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন এবং ভিয়েতনামের সঙ্গেও ইতিমধ্যে শুল্ক চুক্তি করেছেন, তবে তিনি ‘৯০ দিনে ৯০টি চুক্তি’ করার লক্ষ্য অর্জন করতে পারেননি।

এদিন, আলোচনার আগে মার্কিন বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক বলেন, ১ আগস্টের পর আর কোনো সময়সীমা থাকবে না। যারা আলোচনায় ব্যর্থ হবে, তাদের জন্য শুল্ক কার্যকর হবে। তবে বড় অর্থনীতিগুলোর জন্য ভবিষ্যতে আলোচনা চালু রাখা যেতে পারে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যে ১৫ শতাংশ শুল্ক বসাবে যুক্তরাষ্ট্র