কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খ্যাতনামা ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জিওফ্রি হিন্টন। তাঁর দাবি, বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো এআইয়ের সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন হলেও তা প্রকাশ্যে গুরুত্ব দিয়ে দেখাচ্ছে না। হিন্টনের ভাষায়, এআই এখন এমনভাবে বিকশিত হচ্ছে, যার গতি ও জটিলতা বিজ্ঞানীদের প্রত্যাশারও বাইরে।

সম্প্রতি ‘ওয়ান ডিসিশন’ নামের একটি পডকাস্টে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হিন্টন বলেন, বড় কোম্পানিগুলোর অনেকেই এসব ঝুঁকি সম্পর্কে জানেন, কিন্তু প্রকাশ্যে সেসবে গুরুত্ব দিতে অনিচ্ছুক। কিন্তু ডেমিস হাসাবিস এই দিক থেকে ব্যতিক্রম। তিনি বিষয়টি গভীরভাবে বোঝেন এবং আন্তরিকভাবে কিছু করার চেষ্টা করছেন।

কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্ক নিয়ে গবেষণার জন্য এ বছর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন জিওফ্রি হিন্টন ও মার্কিন গবেষক জন জে হপফিল্ড। এই গবেষণাকাজই আধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছে। হিন্টন জানান, এআই এখন যে হারে উন্নত হচ্ছে, তা আগাম কল্পনার বাইরে ছিল। তাঁর মতে, এআই মডেলগুলো এখন এমন সব উপায়ে শেখার ক্ষমতা অর্জন করছে, যা অনেক সময় গবেষকেরাও পুরোপুরি ব্যাখ্যা করতে পারছেন না।

হিন্টন বলেন, ‘এই প্রযুক্তির অগ্রগতি এত দ্রুত ঘটছে যে কখন কোন দিক থেকে কোন ধরনের ঝুঁকি তৈরি হবে, তা আগে থেকে বলা কঠিন। আমি যদি আরও আগে এর সম্ভাব্য বিপদগুলো নিয়ে ভাবতাম, তাহলে হয়তো প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ থাকত। তখন মনে হয়েছিল, এসব ঝুঁকি বহু দূরের ভবিষ্যতের বিষয়।’

২০২৩ সালে দীর্ঘ এক দশকের বেশি সময় কাজ করার পর গুগল ছাড়েন হিন্টন। তখন অনেকেই ধরে নেন, গুগলের আগ্রাসী এআই কৌশলের প্রতিবাদেই প্রতিষ্ঠানটি ছাড়ছেন তিনি। তবে পডকাস্টে হিন্টন এই ব্যাখ্যাকে ‘মিডিয়ার বানানো গল্প’ বলে উল্লেখ করেন। ‘গল্পটা এমন যে একজন সৎ বিজ্ঞানী প্রতিষ্ঠান ছেড়েছেন সত্য বলার জন্য। এটা মিডিয়ার বানানো। সত্যি কথা হলো, আমি গুগল ছেড়েছি কারণ বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। আমি আর আগের মতো কোড করতে পারছিলাম না’—বলেন হিন্টন। তবে তিনি স্বীকার করেন, গুগলে থাকলে তাঁর পক্ষে সব কথা খোলাখুলি বলা সম্ভব হতো না। ‘আপনি যখন কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বেতন নেন, তখন তাদের স্বার্থ বিবেচনায় না নিয়ে কিছু বলা কঠিন।’

ডেমিস হাসাবিসের প্রসঙ্গে হিন্টনের মন্তব্য, ‘ডেমিস এমন একজন, যিনি কেবল প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছেন না, এর দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকিও বুঝতে পারছেন এবং সেটা রোধে উদ্যোগ নিতে আগ্রহী।’ ডেমিস হাসাবিস ২০১৪ সালে গুগলের মালিকানাধীন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডিপমাইন্ডের সহপ্রতিষ্ঠাতা হিসেবে দায়িত্ব নেন। বর্তমানে তিনি গুগলের এআই গবেষণা শাখার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। প্রযুক্তির অগ্রগতি নিয়ে আশাবাদী হলেও তিনি এআইয়ের অপব্যবহার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সতর্কতা প্রকাশ করে আসছেন।

চলতি বছরের শুরুর দিকে সিএনএনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে হাসাবিস বলেন, তাঁর মূল উদ্বেগ চাকরি হারানোর ঝুঁকি নয়, বরং এই প্রযুক্তি যদি ভুল মানুষের হাতে পড়ে, সেটাই বড় ভয়। তিনি বলেন, ‘একজন অসৎ ব্যক্তি যদি এই প্রযুক্তিকে ক্ষতিকর উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে চায়, তাহলে তার পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে। তাই আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই প্রযুক্তির শক্তিশালী দিকগুলো যেন কেবল সৎ ও দায়িত্বশীল মানুষের হাতেই থাকে।’ হাসাবিস মনে করেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়ন যেন একদিকে ভালো মানুষের জন্য সুযোগ তৈরি করে, আবার অন্যদিকে খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে থাকা ব্যক্তিদের কাছ থেকে এর নিয়ন্ত্রণ সুরক্ষিত রাখা যায়। সেই ভারসাম্যই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রক শ হ ন টন

এছাড়াও পড়ুন:

ভাসানীরা না থাকলে শেখ মুজিব কখনো তৈরি হতেন না: নাহিদ

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‍“ভাসানীরা না থাকলে শেখ মুজিব কখনো তৈরি হতে পারতেন না। বাংলাদেশে শুধু একজন জাতির পিতা নন, অনেক জাতির পিতা রয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম মওলানা ভাসানী।”

তিনি বলেন, “মওলানা ভাসানী কৃষক ও শ্রমিকদের জন্য লড়াই করেছিলেন। তিনি গণমানুষের জন্য লড়াই করেছিলেন। মওলানা ভাসানীর আদর্শকে ধারণ করে বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চায় জাতীয় নাগরিক পার্টি।”

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) দুপুরে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’র অংশ হিসেবে টাঙ্গাইল শহরের নিরালা মোড়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

গণঅভ্যুত্থান না হলে নির্বাচনের স্বপ্নই দেখতে পারতেন না: নাহিদ

‘পারলে শেখ হাসিনাকে পুশইন করুন’, ভারতের উদ্দেশে নাহিদ

নাহিদ বলেন, “আমরা এই সমাবেশে মওলানা ভাসানীকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে চাইা। মওলানা ভাসানীকে ইতিহাসে স্মরণ করা হয় না। ভাসানীর মতো মহান রাজনৈতিক পুরুষ, বাংলাদেশের স্থপতি থাকা সত্ত্বেও শুধু একজনকে জাতির পিতা ঘোষণা করা হয়েছে। গত ৫৪ বছর একজন ব্যক্তিকে পূজা করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “মওলানা ভাসানী শুধু বাংলাদেশ নয়, উমহাদেশের রাজনৈতিক পুরুষ ছিলেন। তার রাজনীতি শুরু হয়েছিল আসামে। সেই আসামে তিনি বাঙালি মুসলিম কৃষকদের অধিকার ও তাদের ভূমির অধিকারের জন্য লড়াই করেছিলেন। সেই লড়াই এখন পর্যন্ত আসামের বাঙালি মুসলমান ও হিন্দুদের লড়তে হয়। সেখানে তাদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে পরিচিত হতে হয়।” 

তিনি আরো বলেন, “মওলানা ভাসানী প্রথম ব্যক্তি যিনি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীদের বিদায় ঘোষণা করেছিলেন কাগমারী আন্দোলনের মাধ্যমে। মওলানা ভাসানী হচ্ছেন, এমন রাজনৈতিক পুরুষ যিনি স্বাধীনতার পরে বলেছিলেন ‘আমার পিঞ্জির ভেঙেছি, দিল্লির দাসত্ব করার জন্য নয়, দিল্লির গোলামী করার জন্য নয়’।” 

টাঙ্গাইল শাড়ি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নামে জিআই পণ্যের স্বীকৃতির কড়া সমালোচনা করে এনসিপির এই নেতা বলেন, “তাঁত শিল্পকে পুনরুদ্ধার করতে হবে। কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে, দেশকে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে আমরা কৃষকদের সংগঠিত করতে চাই।”  

সমাবেশে এনসিপির উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম  সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, উত্তরাঞ্চলের সংগঠক আজাদ খান ভাসানী , টাঙ্গাইল জেলার মুখ্য সমন্বয়কারী মাসুদুর রহমান রাসেলসহ কেন্দ্রীয় ও জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। 

এর আগে, এনসিপির নেতারা টাঙ্গাইল সার্কিট হাউজের সামনে থেকে পদযাত্রা শুরু করেন। তারা শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে  সমাবেশস্থল শহীদ মিনার চত্বরে যান।

এনসিপির পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে যে কোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে টাঙ্গাইল শহরে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করেন।

ঢাকা/কাওছার/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • স্কিন ব্যাংকে পর্যাপ্ত ত্বক থাকলে ৪০ শতাংশের বেশি দগ্ধ রোগীকেও বাঁচানো যায়
  • রাগ নিয়ন্ত্রণে হাদিসের ৭ উপদেশ
  • চুলে গুঁজে দিলেন ৭১১ গলফ ‘টি’
  • বাবা হারালেন চিত্রনায়িকা মিষ্টি জান্নাত
  • ‘নতুন একটি দলের কয়েকজন মহারথী’ বলার পর বক্তব্য বদলালেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেনে কাটা পড়ে একজনের মৃত্যু
  • ভাসানীরা না থাকলে শেখ মুজিব কখনো তৈরি হতেন না: নাহিদ
  • এআইয়ের চোখে মানুষের সেরা ২৫ অনুভূতি
  • চীনে এআই সম্মেলনে তাক লাগাচ্ছে রোবট