টাঙ্গাইলে যুবকদের স্বেচ্ছাশ্রমে ৬টি কাঠের সেতু নির্মিত
Published: 27th, May 2025 GMT
টাঙ্গাইলে সরকারি সহায়তার আশায় না থেকে সদর উপজেলার হুগড়া ইউনিয়নে ৬টি কাঠের সেতু স্বেচ্ছাশ্রমে তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সামাজিক সংগঠনের ‘এসি আকরাম ফাউন্ডেশন’ এর যুবকরা। ফলে আসন্ন বর্ষায় ওই ইউনিয়নের প্রায় ২৫টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের ভোগান্তি লাঘব হবে।
কাঠের সেতুগুলো হচ্ছে- দক্ষিণ হুগড়া, গায়েনপাড়া, হুগড়া পুরাতন জামে মসজিদ, উত্তর হুগড়া ডাক্তারবাড়ি, মন্ডল মোড়ের উত্তরে রহিমের বাড়ি সংলগ্ন এবং পূর্ব চিনাখালির গেদা গায়েনের বাড়ি সংলগ্ন কাঠের সেতু। প্রতিটি সেতু গড় দৈর্ঘ্য ১১০ ফুট এবং প্রস্থ ৭ ফুট। এসব সেতু দিয়ে অনায়াসে একটি ভ্যান মালামাল বা যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করতে পারবে। সেতু তৈরিতে ইট-সিমেন্ট-রডের পিলার বা খুঁটি, লোহার অ্যাঙ্গেল এবং কাঠের ফালি বা মোটা তক্তা ব্যবহার করা হয়েছে।
স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত কাঠের সেতু
স্বেচ্ছাশ্রমে নিয়োজিতদের মধ্যে হুগড়া ইউনিয়নের রিপন মন্ডল, সোলাইমান, কবির, মাসুম, সিয়াম চাকলাদার, রউফ, ইমরান মন্ডল, আমির মন্ডল, আলিম মন্ডল, খোকা, মুকুল, রফিকুল বেপারি, আকালু চাকলাদার, লতিফ উল্লেখযোগ্য। তারা প্রতিদিন সময় বের করে স্বেচ্ছাশ্রমে অংশ নেন। এছাড়া স্থানীয় অন্য যুবকরাও কাজে অংশগ্রহণ করেন।
স্থানীয়রা জানান, এলাকার ছোট-বড় খালে সাঁকো বা সেতু না থাকায় প্রতি বর্ষায় মানুষের চরম ভোগান্তি হচ্ছিল। এজন্য প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো সুফল হয়নি। বাধ্য হয়ে এলাকার যুবকরা জনভোগান্তি লাঘবে স্বেচ্ছাশ্রমে সেতু তৈরির উদ্যোগ নেয়। ঘটনাটি যুব সমাজের জন্য একটি দৃষ্টান্ত। যদিও সেতু তৈরিতে কাঠ-লোহা, পিলার বা খুঁটি, লোহার অ্যাঙ্গেল সহ যাবতীয় অবকাঠামো স্থানীয় সামাজিক সেবামূলক ‘এসি আকরাম ফাউন্ডেশন’ এর অর্থায়নে সরবরাহ করা হয়েছে। স্থানীয় যুবকরা উৎসাহী হয়ে হুগড়া ইউনিয়নের গণমানুষের ভোগান্তি লাঘবে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করেছেন। এটি দেখে আশপাশের বিভিন্ন এলাকার যুব সমাজ স্বেচ্ছাশ্রমে আগ্রহী হচ্ছে।
যুবকদের স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত কাঠের সেতু
এলাকার বাসিন্দা মুকুল মন্ডল, সিয়াম চাকলাদার, আমির মন্ডল, খলিল মন্ডলসহ অনেকেই জানান, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মধ্যে চরাঞ্চলের এই হুগড়া ইউনিয়ন সবচেয়ে অবহেলিত। প্রতিবছর বর্ষা এলেই চরাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। বর্ষার আগেই চরাঞ্চলের হুগড়া ইউনিয়নের যেসব এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ার আশঙ্কায় থাকে সেসব এলাকায় তারা স্বেচ্ছাশ্রমে কাঠের সেতু তৈরি করছেন।
তারা জানান, সেতুগুলো তৈরি করার আগে কয়েকজন বয়সী যুবক ইউনিয়ন ঘুরে দুর্ভোগ এলাকার চিহ্নিত করেন। পরে সেতু তৈরির প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে তা এসি আকরাম ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে জানান ও অবকাঠামো ব্যবস্থা করার আবেদন করেন। শুধু কাঠের সেতুই নয় যেখানে যা প্রয়োজন তা দিয়েই কাজ করার মানসিক প্রস্তুতি তাদের রয়েছে। যেমন বৃষ্টিতে নষ্ট হওয়া রাস্তা মাটি ভরাট করে চলাচলের উপযোগী করা, কারো ফসল বৃষ্টির পানিতে ভিজে গেলে সহায়তা করা কিংবা ফসল বানের পানিতে ডুবতে থাকলে সহযোগিতা করা ইত্যাদি।
তারা আরও জানান, সরকারি প্রকল্পের জন্য অপেক্ষা না করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এসি আকরাম ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে এবং যুবকদের স্বেচ্ছাশ্রমে ইউনিয়নের ছোট-খাটো কাঠের সেতু তৈরি করে দিচ্ছেন। তারা সরকারের কাছে অবহেলিত হুগড়া ইউনিয়নের কাজগুলোর স্থায়ী রূপ দেওয়ার দাবি জানান।
হুগড়া ইউপি চেয়ারম্যান নুরী-ই-আলম তুহিন জানান, তার ইউনিয়নটি যমুনা নদীতীর ঘেঁষা। এ ইউনিয়নে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বসবাস। এর আগে ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় দুর্ভোগ ছিল নদী ভাঙন। বর্তমানে ভাঙন প্রতিরোধ করা হয়েছে। এরপরও যমুনা নদীতীর ঘেঁষা হওয়ায় প্রতি বছর বর্ষার পানিতে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। তাদের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য দীর্ঘদিন ধরে ছোট-খাটো কাঠের সেতু তৈরি করে যাচ্ছেন।
এছাড়া বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জে অবহেলিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য টিউবওয়েল স্থাপন ও
স্যানিটারিসহ বেশ কিছু কাজ করার জন্য ‘এসি আকরাম ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, এসি আকরাম ফাউন্ডেশনকে সহযোগিতা করে থাকেন এলাকার ছাত্র-দিনমজুররা। তারা খুব সহজেই মানুষের ভোগান্তি লাঘবে পাশে দাঁড়ায। স্বেচ্ছায় যারা এসব কাজে শ্রম দিচ্ছেন তাদের কখনোই ডাকতে হয়নি। তারা নিজেরাই এসি আকরাম ফাউন্ডেশনের সহায়তায় চরাঞ্চলের মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন।
ঢাকা/কাওছার/টিপু
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এল ক র র জন য য বকর
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় হামাসের প্রধান মোহাম্মদ সিনওয়ারকে হত্যার দাবি নেতানিয়াহুর
গাজা হামাসের প্রধান মোহাম্মদ সিনওয়ার নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। বুধবার ইসরায়েলের পার্লামেন্টে (নেসেট) এ কথা বলেন তিনি। তবে সিনওয়ারের মৃত্যু নিয়ে হামাস তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানায়নি।
২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলে হামলার পরিকল্পনাকারী ও হামাসের সাবেক প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ছোট ভাই মোহাম্মদ সিনওয়ার। ২০২৪ সালের অক্টোবরে গাজার রাফা এলাকায় ইয়াহিয়া সিনওয়ারও ইসরায়েলি সেনাদের হাতে প্রাণ হারান। তাঁর মৃত্যুর পর মোহাম্মদ সিনওয়ার গাজায় হামাসের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন।
মোহাম্মদ সিনওয়ারের অবস্থান নিশানা করে চলতি মাসে দক্ষিণ গাজার একটি হাসপাতালে হামলা চালায় ইসরায়েল। গত ২১ মে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছিলেন, খুব সম্ভবত মোহাম্মদ সিনওয়ার নিহত হয়েছেন। বুধবার নেসেটে নেতানিয়াহু বলেন, মোহাম্মদ সিনওয়ারকে ‘হত্যা’ করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রায় ২০ মাসে ইসরায়েলি সেনাদের হাতে নিহত হামাস নেতাদের নামও তুলে ধরেন তিনি।
নেতানিয়াহু বলেন, ‘গত দুই দিনে আমরা হামাসের পুরোপুরি পরাজয়ের দিকে একটি নাটকীয় মোড় দেখতে পেয়েছি।’ ইসরায়েল এখন গাজায় ‘খাদ্য বিতরণের নিয়ন্ত্রণও নিচ্ছে’ বলে উল্লেখ করেন তিনি। এখানে তিনি গাজায় নতুন ত্রাণ সহায়তা বিতরণ ব্যবস্থার কথা বলেছেন। যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত একটি সংগঠন তা পরিচালনা করছে।
নেতানিয়াহুর এই ঘোষণা এমন এক সময় এসেছে যখন ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় হামলা তীব্রতর করেছে। চলতি বছরের শুরুতে হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে ১৮ মার্চ থেকে উপত্যকাটিতে হামলা জোরদার করে ইসরায়েল। ইসরায়েল বলেছে, হামাসের শাসন ও সামরিক ক্ষমতা ধ্বংস করা এবং গাজায় বন্দী থাকা আটকদের মুক্ত করাই তাদের লক্ষ্য।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্ব ইসরায়েলে হামলা চালানো হয়। এতে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। সেদিন ২৫০ এরও বেশি মানুষকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যান হামাস যোদ্ধারা।
হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গাজায় পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধ শুরু করে ইসরায়েল। ইসরায়েলের হামলায় গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, উপত্যকাটিতে ৫৪ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ইসরায়েলে হামলার মুখে ২০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি স্থানচ্যুত হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, নিহতদের অধিকাংশই নিরীহ নাগরিক। কতজন যোদ্ধা মারা গেছে, সে বিষয়ে তারা কোনো তথ্য দেননি। ইসরায়েলের দাবি, তারা লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি যোদ্ধাকে হত্যা করেছে। কিন্তু তারা এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি।