ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ প্রেমিক হিসেবে কেমন?
Published: 28th, May 2025 GMT
দুইজনের সম্পর্কের সূত্রপাত হয়েছিল বেশ অস্বাভাবিকভাবে। তাদের বয়সের ব্যবধান ২৫ বছর। মাত্র ষোল বছরের এক কিশোর প্রেমে পড়েন ৪০ বছর বয়সী এক নারীর। যে নারী তিন সন্তানের জননী। বলা হচ্ছে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর কথা। যিনি তার স্কুল শিক্ষিকাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছেন।
তিন সন্তানের জননীর সঙ্গে প্রেম হলে মাঁখোর পরিবার এই প্রেম থামাতে চেয়েছিল। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। ব্রিজিত মাখোঁ এক সময় স্কুলের নাটকের শিক্ষিকা ছিলেন।
মাঁখো কখনোই রাজনীতিবিদ হতে চাননি। তিনি চেয়েছিলেন একজন ঔপন্যাসিক হতে। শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন খুবই মেধাবী। মাঁখোর স্কুল শিক্ষিকা এবং বর্তমানে তার স্ত্রী ব্রিজিত তোনিয়ো ছোট বেলা থেকেই তাকে চেনেন। ব্রিজিত মনে করেন, এমানুয়েল মাঁখো স্কুল জীবনে অন্যদের চেয়ে ব্যতিক্রমী ছিল।
আরো পড়ুন:
চমক রেখে নেশনস লিগের সেমিফাইনালের দল ঘোষণা ফ্রান্সের
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি যুক্তরাজ্য-কানাডা-ফ্রান্সের
এক সময় মাঁখো তার স্কুল ছেড়ে যান, ফলে ছেড়ে যেতে হয়েছিল শিক্ষিকা ব্রিজিত মাঁখোকেও। কিন্তু এতে তাদের সম্পর্ক আরও গভীর হয়ে ওঠে। স্কুল ছেড়ে যাবার পর তাদের দুইজনের মধ্যে টেলিফোনে দীর্ঘ কথোপকথন হতো। এই কথপোকথন থেকেই দুজনেই মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু তখন ব্রিজিত মাঁখো ছিলেন বিবাহিতা এবং তিন সন্তানের জননী।
মাঁখোর প্রেমের পড়ে আগের স্বামীকে ছেড়ে ২০০৭ সালে এমানুয়েল মাখোঁকে বিয়ে করেন। দুজনই প্রচারণা থেকে দূরে ছিলেন। মাঁখো যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য মনস্থির করেন, তখন তারা অনেক বেশি জনসম্মুখে আসেন। তাদের দুইজনের বয়সের ব্যবধান নিয়ে অনেক কথা শুনতে হয়েছে মাঁখো এবং ব্রিজিতকে। মাঝেমধ্যে এসব সমালোচনার জবাবও দিয়েছেন মাঁখো। তিনি একবার বলেছিলেন, ‘‘বয়সের ব্যবধানটা যদি উল্টো হতো তাহলে বিষয়টি নিয়ে কেউ এতো কথা বলতো না। মানুষ ভিন্ন কিছু দেখে অভ্যস্ত নয়।’’
এই যে ভিন্ন কিছুতে বিশ্বাসী হয়ে ওঠা, অনেকে মনে করেন এই অভিজ্ঞতা মাঁখোকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। একবার এক ফরাসি সাংবাদিক বলেছিলেন, এমানুয়েল মাখোঁ যদি নিজের চেয়ে ২৪ বছরের বড় তিন সন্তানের এক জননীকে আকর্ষণ করতে পারেন, তাহলে একই উপায়ে তিনি ফ্রান্সকেও জয় করতে পারবেন।’’
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এম ন য় ল ম খ
এছাড়াও পড়ুন:
হনুমান কি পর্বত কাঁধে করে উড়ে এসেছিলেন?
হিন্দু ধর্মগ্রন্থ রামায়ণের এক বিশিষ্ট অধ্যায়ে উঠে আসে এক অলৌকিক ঘটনার কথা। রাম-রাবণের মহাযুদ্ধে শ্রীরামচন্দ্রের ভাই লক্ষ্মণ অচেতন হয়ে পড়লে, তাঁকে জীবিত রাখতে প্রয়োজন হয় একটি বিশেষ ভেষজ উদ্ভিদের—সঞ্জীবনী বুটি। আয়ুর্বেদাচার্য সুষেণের পরামর্শে হনুমান ছুটে যান হিমালয়ের পাদদেশে গন্ধমাদন পর্বতে।
রামায়ণে বর্ণিত আছে, নির্দিষ্ট গাছটি শনাক্ত করতে না পারায় হনুমান পুরো গন্ধমাদন বা দ্রোণগিরি পর্বতটাই তুলে কাঁধে নিয়ে পা বাড়ান লঙ্কার উদ্দেশে। বিশ্বাস করা হয় যে তিনি দীর্ঘ আকাশপথ পাড়ি দেন এই পাহাড় বহন করে। পথিমধ্যে তিনি কিছু স্থানে বিশ্রামও নেন; যেসব স্থান আজও ‘হনুমান টোক’, ‘হনুমান চট’, ‘হনুমান ধারা’ নামে পরিচিত।
নির্দিষ্ট গাছটি শনাক্ত করতে না পারায় হনুমান পুরো গন্ধমাদন বা দ্রোণগিরি পর্বতটাই তুলে কাঁধে নিয়ে পা বাড়ান লঙ্কার উদ্দেশে।পৌরাণিক গ্রন্থগুলোয় সব ঘটনা রূপকভাবে লেখা আছে। এককথায় পুরাণের মধ্যে সবকিছু গোলমাল পাকিয়ে আছে। গোলটা ফেলে মালটা বের করতে পারলে পৃথিবীর অনেক কল্যাণ হয়। এই ঘটনার রূপকতা ব্যাখ্যা করতে একটা গল্পের উল্লেখ করছি।
আরও পড়ুনভারতের আদিতম মহাকাব্য রামায়ণ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩বাড়িতে ২০০ মানুষকে নিমন্ত্রণ করে এক ব্যক্তি বাজারে গিয়ে অনেক বাজার করেছেন। ফেরার সময় তিনি নিজের সাইকেলের দুই হ্যান্ডলে দুটো ব্যাগ ঝুলিয়েছেন, পেছনে দুটো ব্যাগ ঝোলানো, ক্যারিয়ারে একটা বস্তা বাঁধা। জায়গা না পেয়ে নিজের দুই কাঁধে দুটো ব্যাগ ঝুলিয়ে বাজার থেকে বাড়ির উদ্দেশে যাওয়ার পথে রাস্তায় এক লোক তাঁকে দেখে বললেন ‘কী হে ভাই, তুমি তো দেখি পুরা বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছ!’ এর মানে কিন্তু এই নয় যে সেই ব্যক্তি পুরো বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছেন।
তিনি আসলে অনেক বাজার করেছেন। হনুমানের ক্ষেত্রেও একই রকম ঘটেছিল।
রামভক্ত হনুমান ছিলেন যোগী পুরুষ। তিনি যোগবলে অনেক অলৌকিক শক্তি অর্জন করেছিলেন। তিনি যোগবলে নিজের আকার এত ছোট করে ফেলতে পারতেন যে তাঁকে খালি চোখে দেখা কষ্টকর হয়ে যেত। আবার তিনি ইচ্ছা করলে যোগবলে নিজের আকার অনেক বড় করে ফেলতে পারতেন। আর তিনি ছিলেন অত্যন্ত শক্তিশালী।
‘কী হে ভাই, তুমি তো দেখি পুরা বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছ!’ এর মানে কিন্তু এই নয় যে সেই ব্যক্তি পুরো বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছেন। তিনি আসলে অনেক বাজার করেছেন।তিনি আসলে ‘সঞ্জীবনী বুটি’ চিনতে না পেরে যোগবলে নিজের শরীরটা অনেক বড় করে সামনে যত ধরনের বৃক্ষ ও লতাপাতা পেয়েছিলেন, সেই সবকিছু সংগ্রহ করে বিশাল এক বোঝা বানিয়ে নিজের পিঠের ওপর তুলে যখন অতি দ্রুত এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে লাফ দিচ্ছিলেন, তখন সেই বিশালদেহী হনুমানকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন গোটা পাহাড়টাই পিঠে তুলে নিয়ে লাফাচ্ছেন।
আরও পড়ুনদুর্গাপূজার কাহিনি২০ অক্টোবর ২০২৩হনুমানের এই অসাধারণ কীর্তিকে অনেকেই অলৌকিক বলেই ভাবেন। কিন্তু অলৌকিকতা ছাপিয়ে এটা তাঁর গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা এবং গুরুর আদেশের প্রতি দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। ভারতের হিমাচল, উত্তরাখন্ড, মধ্যপ্রদেশ এমনকি বাংলাদেশের মহেশখালীর আদিনাথ ধামসহ কিছু স্থানে এই ঘটনার স্মৃতি বহন করে, এমন লোককথা এখনো প্রচলিত।
একটি পাহাড় কাঁধে বহন করে উড়ে যাওয়া প্রকৃতির নিয়মের বাইরে। আর অবতার, মহাপুরুষ বা প্রেরিত পুরুষেরা কখনো প্রকৃতির নিয়মের বাইরে যান না। রামায়ণের এ ঘটনাকে মূলত রূপক বা প্রতীকী ঘটনা হিসেবেই বিবেচনা করেন হিন্দুধর্মীয় অবতার-মহাপুরুষেরা। আর পৃথিবীতে অলৌকিক বলে কিছু নেই।
রামায়ণের এ ঘটনাকে মূলত রূপক বা প্রতীকী ঘটনা হিসেবেই বিবেচনা করেন হিন্দুধর্মীয় অবতার-মহাপুরুষেরা। আর পৃথিবীতে অলৌকিক বলে কিছু নেই।মনে করেন, একজন যোগী পুরুষ নদীর তীর থেকে যোগবলে অদৃশ্য হয়ে নদীর মধ্যে ভেসে উঠলেন। আমি দেখতে পাচ্ছি না, জানতে পারছি না যে তিনি কীভাবে গিয়েছেন, তাই আমার কাছে অলৌকিক। আর ওই যোগী জানেন যে তিনি কীভাবে গিয়েছেন, তাই তাঁর কাছে লৌকিক।
যুগের পর যুগ ধরে লাখ লাখ ভক্তের হৃদয়ে এই ঘটনা গুরুর প্রতি শিষ্যের ভালোবাসা এবং নিজেকে গুরুর প্রতি সম্যকভাবে ন্যস্ত করার এক আস্থা ও অনুপ্রেরণার গল্প হয়ে রয়েছে। হনুমানের এই গাথা তাঁর ভক্তিমূলক চরিত্রকে যেমন সমৃদ্ধ করে, তেমনি মানবজাতির দুর্দম সাহস ও আত্মত্যাগের কথাও মনে করিয়ে দেয়।
তথ্যসূত্র: ১. বাল্মীকি রামায়ণ. ২. কৃত্তিবাসী রামায়ণ, ৩. শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র কথিত ‘আলোচনা প্রসঙ্গে’ গ্রন্থ, ৪. মহেশখালীর আদিনাথ ধাম অঞ্চলের লোককথা।
পার্থ দেব বর্মন: গবেষক, সৎসঙ্গ রিসার্চ সেন্টার
আরও পড়ুনরামচন্দ্র, বিষ্ণুর অবতার কিন্তু মানবিক১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩