যখন ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুরু করে এবং পাকিস্তান অপারেশন ‘বুনিয়া উন মারসুস’ দিয়ে জবাব দেয়, তখন বিশ্বে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়। অসম্পূর্ণ জাতীয়তাবাদের স্মারক লাইন অব কনট্রোল আবারও জ্বলে উঠল।
হ্যাঁ, এটি একটি যুদ্ধ ছিল, কিন্তু শুধু ক্ষেপণাস্ত্রের যুদ্ধ ছিল না। এটি ছিল বয়ানের যুদ্ধ, যা শিরোনাম, হ্যাশট্যাগ ও রাতের সংবাদ কক্ষে সাজানো হয়। যুদ্ধক্ষেত্র ছিল মিডিয়া। আলোচনার বিষয় ছিল গোলাবারুদ। হতাহতের ব্যাপারে ছিল বয়ানের মধ্যকার সূক্ষ্মতা, জটিলতা ও সত্যতা।
আমরা দেখেছি, তর্কবিতর্কের মধ্য দিয়ে যুদ্ধের চূড়ান্ত পরিণতি। পরিকল্পিতভাবে ভাষার মাধ্যমে পরিচয়, বৈধতা ও ক্ষমতার নির্মাণ। ভারতীয় ও পাকিস্তানি মিডিয়ার হাতে প্রতিটি সহিংসতা ও চিত্র ছিল বানানো চিত্রনাট্য; হতাহতের প্রতিটি ঘটনার রাজনৈতিকীকরণ হয়েছিল। এটি কাভারেজ ছিল না। এটি ছিল কোরিওগ্রাফি।
ভারতের ক্ষেত্রে মিডিয়া এমন এক গল্প তৈরি করেছিল, যেখানে সামরিক শক্তিকে নৈতিক স্পষ্টতার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছিল। হামলাগুলো আগ্রাসন ছিল না, বরং পরিস্থিতি ঠান্ডা করার জন্য জরুরি ছিল। এগুলো যুদ্ধ নয়; থেরাপি।
তিন দিন পর পাকিস্তান অপারেশন বুনিয়ান উন মারসুসের মধ্য দিয়ে পাল্টা আক্রমণ চালায়। যার অর্থ ‘লোহার প্রাচীর’। নামটিই আপনাকে সবকিছু বলে দেয়। এটি কেবল প্রতিশোধমূলক হামলা ছিল না। এটি ছিল একটি ধর্মতাত্ত্বিক দাবি; একটি জাতীয় ধর্মোপদেশ। শত্রু অনুপ্রবেশ করার সাহস করেছিল। সুতরাং প্রতিক্রিয়া
হবে ঐশ্বরিক।
পাকিস্তানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ভারতীয় সামরিক স্থাপনাগুলোতে বর্ষিত বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ঘোষণা করেছেন– পাকিস্তান ‘১৯৭১ সালের যুদ্ধের প্রতিশোধ নিয়েছে,’ যেখানে তারা আত্মসমর্পণ করেছিল এবং বাংলাদেশকে স্বাধীন হতে দিয়েছিল। এটি যুদ্ধক্ষেত্রের কৌশল নয়। এটি একটি মিথ তৈরি ছাড়া ভিন্ন কিছু নয়।
পাকিস্তানের গণমাধ্যম দেশপ্রেমের উচ্ছ্বাসে এ আখ্যানটি আরও জোরদার করেছে। ভারতীয় হামলাকে যুদ্ধাপরাধ, মসজিদে আঘাত, বেসামরিক নাগরিক নিহতের মতো উপস্থাপন করা হয়েছিল। ধ্বংসস্তূপ ও রক্তের ছবি এবং শহীদদের ক্যাপশন দেওয়া হয়েছিল। বিপরীতে প্রতিক্রিয়া ছিল সুনির্দিষ্ট, নৈতিক ও অনিবার্য। এই মুহূর্তে নির্মিত পাকিস্তানের জাতীয় পরিচয় ছিল ন্যায়নিষ্ঠতার ওপর হামলা। যেখানে তুলে ধরা হয়েছে তারা শান্তিপ্রিয়, কিন্তু তাদের উস্কানি দেওয়া হয়েছে; তবে তারা সংযত, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমরা যুদ্ধ চাই না, কিন্তু আমরা এতে ভয়ও পাই না।
উভয় রাষ্ট্রই নিজেদের কখনও আক্রমণকারী হিসেবে দেখেনি; রক্ষক হিসেবে দেখেছে। উভয়েই নৈতিক শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করেছে। রাষ্ট্র দুটি জোর দিয়ে বলেছে– শত্রুই প্রথমে গুলি চালিয়েছে। উভয়েই বলেছে, তাদের কোনো বিকল্প নেই। শত্রু ও ঘোষিত শিকারের নির্মিত চিত্রেও এ অবস্থান ছিল।
ভারত সন্ত্রাসবাদের কারখানা হিসেবে পাকিস্তানকে চিত্রিত করেছে। যেমন দ্বিচারী, দুর্বৃত্ত, জিহাদে আসক্ত পারমাণবিক অস্ত্রধারী স্পয়লার হিসেবে। পাকিস্তানি পরিচয়কে সবচেয়ে খারাপ বলে তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে তাকে প্রতারণামূলক ও বিপজ্জনকরূপে উন্মোচনের চেষ্টা লক্ষণীয়। এই বিশ্বদৃষ্টিতে শান্তি কায়েম করা
অসম্ভব। কারণ অপর পক্ষের বয়ানে যৌক্তিকতার অভাব।
পাকিস্তান এর বিনিময়ে ভারতকে একটি ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপন করে। একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসকগোষ্ঠীর নেতৃত্বে আপামর জনগোষ্ঠী অপমানে আচ্ছন্ন, যারা ইতিহাস থেকে মুসলমানদের মুছে ফেলতে আগ্রহী। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ছিলেন আগ্রাসী। ভারত ছিল দখলদার। তাদের হামলা সন্ত্রাসবাদবিরোধী যুদ্ধ হিসেবে নয়, বরং ধর্মীয় যুদ্ধ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছিল।
উভয় দেশে মিডিয়া সমানভাবে শোক প্রকাশ করেনি। কেবল স্বপক্ষীয় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্যই শোক প্রকাশ করা হয়েছিল। অন্যদের বেলায় বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কিংবা ভুলে যাওয়া হয়েছে।
সৈয়দা সানা বাটল: যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাংবাদিক; আলজাজিরা থেকে সংক্ষেপিত
ভাষান্তর- ইফতেখারুল ইসলাম
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: মত মত
এছাড়াও পড়ুন:
তথ্য উপদেষ্টার সঙ্গে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের সাক্ষাৎ
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএসআরএফ) কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যবৃন্দ।
রবিবার (২ নভেম্বর) বিকেলে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আরো পড়ুন:
‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
‘নো ওয়েজ বোর্ড, নো মিডিয়া’সহ ৩৮ দাবি সংবাদকর্মীদের
সাক্ষাৎকালে বিএসআরএফের সভাপতি মাসউদুল হক জানান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সচিবালয় বিটে কর্মরত অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডধারী সাংবাদিকদের সচিবালয়ের ক্লিনিকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ২০২৪ সালের ২২ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে পত্র পাঠানো হলেও এখনো তা বাস্তবায়িত হয়নি।
তিনি অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডধারী সাংবাদিকদের জন্য সচিবালয়ের ক্লিনিকে স্বাস্থ্যসেবা চালুর বিষয়ে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টার সহযোগিতা কামনা করেন। এছাড়া সচিবালয়ের ১ নম্বর গেটের পাশাপাশি ৫ নম্বর গেট দিয়েও অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডধারী সাংবাদিকদের সচিবালয়ে প্রবেশের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি উপদেষ্টাকে অনুরোধ জানান।
এ সময় তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা বিএসআরএফের সভাপতির প্রস্তাব আন্তরিকভাবে বিবেচনা করার আশ্বাস দেন।
সাক্ষাৎকালে বিএসআরএফের সহ-সভাপতি মাইনুল হোসেন পিন্নু, সাধারণ সম্পাদক উবায়দুল্লাহ বাদলসহ কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/এএএম/মেহেদী