৩ ম্যাচে ২ সেঞ্চুরি, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নবীর ছেলের দাপুটে শুরু
Published: 30th, May 2025 GMT
ছেলে হাসান ইসাখিলের সঙ্গে আফগানিস্তান জাতীয় দলে খেলার স্বপ্নের কথা বহুবার বলেছেন মোহাম্মদ নবী। তাই ৪০ বছর পেরিয়েও নবী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দিব্যি খেলে যাচ্ছেন।
কিন্তু নবী চাইলেই তো আর হবে না। ঘরোয়া ক্রিকেটে ইসাখিলকে দারুণ কিছু করে নির্বাচকদের নজর কাড়তে হবে। এরপর জাতীয় দলে তাঁর ডাক পড়তে পারে।
নির্বাচকদের মন জিতে নেওয়ার কাজটা ভালোভাবে করে যাচ্ছেন ইসাখিল। এ মাসের মাঝামাঝি সময়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক ম্যাচেই সেঞ্চুরি করেন এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। মাঝে এক ম্যাচে বড় ইনিংস উপহার দিতে না পারলেও মাসের শেষ দিকে এসে পেলেন আরেকটি সেঞ্চুরি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিজের প্রথম তিন ম্যাচেই দুই সেঞ্চুরিকে দাপুটে শুরু বলাই যায়।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিজের অভিষেক ম্যাচেও সেঞ্চুরি করেছিলেন হাসান ইসাখিল.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম শ র ণ র ক র ক ট
এছাড়াও পড়ুন:
ভোজ্যতেলের অণুপুষ্টি রক্ষায় অস্বচ্ছ প্যাকেজিং
বাংলাদেশের জনগণের অণুপুষ্টি (মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট) নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০১৩ সালে ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সংযোজন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ভিটামিন ‘এ’ ঘাটতি মোকাবিলা তথা জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিঃসন্দেহে এটি একটি মাইলফলক। দেশে ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণে স্বচ্ছ প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করা হয়। ভোক্তারা তেলের রং দেখে নিশ্চিত হয়ে সেটি কিনতে চান। স্বচ্ছ প্লাস্টিক প্যাকেজিংয়ের আড়ালে অজান্তে কী ঘটে যাচ্ছে সেই স্বাস্থ্যগত প্রভাব সম্পর্কে অনেকেই জানেন না।
কী দোকানে, কী রান্নাঘরে সর্বত্রই ভোজ্যতেলের স্বচ্ছ প্লাস্টিকের বোতলটি আলোতেই রাখা হয়। ভোজ্যতেলে মিশ্রিত ভিটামিন এ প্রত্যক্ষ সূর্যালোক, পরোক্ষ আলো (সেমি-ডার্ক) এবং সাধারণ বাল্বের আলোর সংস্পর্শে ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, স্বচ্ছ বোতলে সংরক্ষিত ভিটামিনযুক্ত ভোজ্যতেলের ভিটামিন কয়েক মাসের মধ্যেই কমে যায়। এমনকি অক্সিজেনের উপস্থিতি এবং তেলের পারঅক্সাইড মান (অক্সিডেটিভ স্ট্যাটাস) বেশি হলে এই ক্ষয় আরও ত্বরান্বিত হয়ে গুণগত মান কমে যায়। ফলে, আমাদের অজ্ঞতার কারণে জনগণের পুষ্টির ঘাটতি পূরণের সরকারি প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যে কোনো তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের স্বাভাবিক আলো এবং অতিবেগুনি (ইউভি) রশ্মি ভোজ্যতেলের ভিটামিনের জন্য ক্ষতিকর। রেটিনল এবং রেটিনাইল পালমিটেট, ভিটামিন এ-এর রূপ। ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রে আলোর প্রভাবে আইসোমারাইজেশন প্রক্রিয়ায় ভিটামিনের আণবিক বিন্যাস পরিবর্তন অর্থাৎ ‘ট্রান্স’ থেকে ‘সিস’ হওয়াতে ভোজ্যতেলের অনেক ক্ষতি হয়, যথা (ক) ভিটামিন ‘এ’-এর কার্যকারিতা কমে যায়; (খ) জৈবলভ্যতা (বায়োঅ্যাভেইলেবিলিটি) কমে যায় এবং (গ) সুগন্ধ, দুর্গন্ধ এবং সার্বিক সংবেদনশীল বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন আসে।
ভোজ্যতেলে অণুপুষ্টি বজায় রাখতে আলো প্রতিরোধী অস্বচ্ছ প্যাকেজিং ব্যবহার একটি কার্যকরী সমাধান। ব্যয় সাশ্রয়ী সমাধানও অনেক আছে। এ ক্ষেত্রে, ভোজ্যতেলের মান অক্ষুণ্ন রাখতে পাউচপ্যাক, লেমিনেটেড পিইটি বোতল, এইচডিপিই জার, ইউভি দ্রব্য মিশ্রিত বোতল ব্যবহার করা যায়। অস্বচ্ছ বোতলের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি আলোক রশ্মিকে ভেতরে ঢুকতে বাধা দেয়। সাধারণ স্বচ্ছ বোতলে আলো সহজেই ঢুকে পড়ে, কিন্তু অস্বচ্ছ বোতল বাইরের আলোক রশ্মিকে আটকে দেয় এবং তেলের পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ন রাখতে সাহায্য করে। এই ধরনের প্যাকেজিং অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে তেলকে রক্ষা করে। এর ফলে তেলের ভেতরে থাকা ভিটামিন ও প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুলো দীর্ঘসময় ভালো থাকে। পণ্যের শেলফ লাইফ বা সংরক্ষণ সময় বেড়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, আলো প্রতিরোধী অস্বচ্ছ বোতলে সংরক্ষিত তেলে ভিটামিনের স্থায়িত্বকাল প্রায় দ্বিগুণ পর্যন্ত বেড়ে যায়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু তাই নয়, অস্বচ্ছ প্যাকেজিং ব্যবহারের ফলে তেলের স্বাদ, গন্ধ এবং রঙেরও কোনো পরিবর্তন হয় না, যা ভোক্তার জন্য একটি বাড়তি সুবিধা। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভোজ্যতেলে আলো প্রতিরোধী অস্বচ্ছ প্যাকেজিংয়ের ব্যবহার আলোক রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে তেলকে রক্ষা করতে পারে, যা পুষ্টির ঘাটতি রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন যে, অনেক উন্নত দেশেও ভোজ্যতেলের স্বচ্ছ প্যাকেজিং আছে। এ কথা ঠিক, তবে ওই সব দেশে ভিটামিন ‘এ’ ঘাটতি যদি না থাকে সে ক্ষেত্রে অস্বচ্ছ প্যাকেজিংয়ের প্রয়োজন হয় না বা ভিটামিন ‘এ’ ঘাটতি থাকলেও অন্য খাদ্য ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ করে থাকে। বিশ্বের অনেক দেশেই ভোজ্যতেল সংরক্ষণের জন্য অস্বচ্ছ প্যাকেজিং বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সৌদি আরব, ভারত ও ফিনল্যান্ডের মতো দেশগুলো ইতোমধ্যে অস্বচ্ছ বোতল ব্যবহার শুরু করেছে, যা ভিটামিন সংরক্ষণে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। এ ছাড়া, সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও ভোজ্যতেলের সঠিক সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে অস্বচ্ছ বোতল ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এর সুপারিশ অনুযায়ী খাদ্যদ্রব্যের সংরক্ষণের ক্ষেত্রে আলো প্রতিরোধী প্যাকেজিং ব্যবহার করা উচিত, যা বাংলাদেশেও দ্রুত বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।
ভোজ্যতেলে গুণগত প্যাকেজিং ব্যবহার নিশ্চিত করতে সরকারকে এখনই বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি ব্রান্ডিংয়ের সুবিধা নেওয়ার জন্য উৎপাদক এবং রিফাইনারি কোম্পানিগুলো নিজ স্বার্থে অস্বচ্ছ প্যাকেজিং চালুর উদ্যোগ নিতে পারে। সরকার ২০২২ সালে একটি নির্দেশনায় ভোজ্যতেল শতভাগ প্যাকেজিং করার কথা বলেছে কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়। এ সংক্রান্ত আইন ও বিধিমালা পর্যালোচনা করে সরকার উৎপাদক এবং রিফাইনারি কোম্পানিগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে পারে। প্রশ্ন উঠতে পারে, অস্বচ্ছ প্যাকেজিং ব্যবস্থায় উত্তরণে গড় খরচ বেড়ে যেতে পারে। তা কত হতে পারে এ নিয়ে কোনো গবেষণা নেই। তদুপরি, বর্তমানের স্বচ্ছ প্যাকেজিংয়ের কারণে যে রোগের আক্রমণ হতে পারে তাতে কত টাকার ক্ষতি হতে পারে সেটিও বিবেচনায় নেওয়া দরকার। অর্থাৎ উভয় প্রক্রিয়ার কস্ট বেনিফিট বা সুবিধা আর ক্ষতির বিশ্লেষণ এখানে গুরুত্বপূর্ণ। এসব হিসাবের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিলে দেখা যাবে এ কাজটি ‘করার ব্যয়, না করার ব্যয়ের তুলনায় অনেক কম’। প্রয়োজনে এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে আর্থিক প্রণোদনা ও নীতিগত সহায়তা দেওয়া যেতে পারে, যাতে তারা উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ভোজ্যতেল প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রে আলোপ্রতিরোধী বৈশিষ্ট্যের ওপর আরও বেশি জোর দেন। ভোক্তার মধ্যে এ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভোক্তা যদি সচেতন হন এবং স্বচ্ছ বোতলের তেল ক্রয় করতে নিরুৎসাহিত হন তাহলে উৎপাদক ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত হবে। প্রসঙ্গত, ইতোমধ্যে দেশে কিছু কিছু স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান এবং ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থা এ নিয়ে প্রচারাভিযান শুরু করেছে। সেসব সংগঠন দেশব্যাপী সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
বাংলাদেশে ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যাতে দেশের আপামর জনসাধারণের অণুপুষ্টির ঘাটতি পূরণ হয়। মানবদেহের জন্য ভিটামিন ‘এ’ কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা এখন সচেতন কারও অজনা নেই। কিন্তু ভালোর জন্য গৃহীত একটা সিদ্ধান্ত স্রেফ সঠিক ধারণার অভাবে ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ানো উচিত নয়। ভোজ্যতেলের অস্বচ্ছ প্যাকেজিং নিশ্চিত করা হলে জনগণই তার সুফল পাবে এবং একটি পুষ্টিসমৃদ্ধ স্বাস্থ্যবান জাতি দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবে।
মুশতাক হাসান মুহ. ইফতিখার, স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব
mustak.iftekhar@gmail.com