ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছেন, শিশুদের এই বড় বিপদ সম্পর্কে জানেন কি
Published: 4th, June 2025 GMT
ঈদের ছুটির আমেজ চারদিকে ছড়াতে শুরু করেছে। স্কুল–মাদ্রাসা বন্ধ হয়ে গেছে, তার মধ্যেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শিশুদের পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার খবর। গত ৩০ মে-১ জুন পর্যন্ত কমপক্ষে ১২ শিশুর মৃত্যুর খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে খালের পানিতে দুই বোন ও শেরপুরে ডোবার পানিতে ডুবে যমজ বোনের মৃত্যু হয়েছে।
এ ছাড়া হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে পুকুরের পানিতে পড়ে ভাই-বোন মারা গেছে। অন্যদিকে লক্ষ্মীপুরে তিন শিশু ও চকরিয়ায় এক শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। মামাতো-ফুফাতো ভাই মারা গেছে কিশোরগঞ্জে। তারা একটি নির্মাণাধীন ভবনের নিচে জমে থাকা পানিতে ডুবে মারা যায়।
বাংলাদেশে প্রতিবছর পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংখ্যা বছরের বড় ছুটিগুলোতে (ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, দুর্গাপূজায়) বেশি দেখা যায়। এই ছুটিগুলোতে শহরে থাকা অধিকাংশ মানুষই গ্রামের বাড়িতে যায়। ছুটিতে গ্রামের পুকুরে বা পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীতে গোসল করতে গিয়ে অহরহ পানিতে ডুবে মৃত্যুর দুর্ঘটনা ঘটে। এ দুর্ঘটনাগুলোতে শিশুদের সংখ্যা থাকে সবচেয়ে বেশি। সর্বাধিক।
গত বছর ঈদুল ফিতরে ৬২ জন ও ঈদুল আজহায় ৭৭ জন পানিতে ডুবে মারা যান। শূন্য থেকে ১৮ বছর বয়সীদের মৃত্যুর সংখ্যা দুই ঈদেই সর্বোচ্চ—যার মধ্যে ৬ থেকে ১০ এবং শূন্য থেকে ৫ বছরের শিশুর সংখ্যা বেশি।
আবার ১৯ বছর থেকে ৬০ বছর বয়সী পুরুষদের মধ্যে মৃতের সংখ্যা ঈদুল ফিতরে ৪ জন ও ঈদুল আজহায় ১০ জন এবং ৬০ বছরের ওপরে পানিতে ডুবে ঈদুল আজহায় একজন মারা যায়; তবে ঈদুল ফিতরে কেউ মারা যায়নি। ঈদুল ফিতরে ৫৮ জন ও ঈদুল আজহায় ৬৫ জন শিশু পানিতে ডুবে মারা গিয়েছিল। এককভাবে ছেলেশিশুর মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি (দুই ঈদে মোট ৭৮ জন)।
চলতি বছর ২৬ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত ঈদুল ফিতরের ছুটিতে অর্থাৎ ১২ দিনে মোট ৪৯ জন পানিতে ডুবে মারা গেছে। গড়ে প্রতিদিনই চারজন পানিতে ডুবে মারা গেছে। এর মধ্যে শিশু ৪৭ জন (ছেলেশিশু ৩০ এবং মেয়েশিশু ১৭ জন)।
ঈদুল আজহায় আনুষ্ঠানিক ছুটি শুরু না হলেও বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি শুরু হয়ে গেছে। দেশে কোনো লম্বা ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে আসা-যাওয়ার পথে কিংবা বাড়িতে থাকার সময় নানা ধরনের দুর্ঘটনার খবর প্রতিনিয়ত শোনা যায়। বিশেষ করে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর ঘটনা প্রতি লম্বা ছুটিতে আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যায়।
বাংলাদেশ সরকার ২০১১ সালের স্বাস্থ্যনীতিতে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুকে একটি জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে। শিশুর নিরাপত্তায় পাইলট প্রকল্পে পানিতে ডুবে মৃত্যু বিবেচনা করলেও সরকার কর্তৃক বাস্তবায়িত প্রকল্প এখনো সীমিত। জনসংখ্যার অনুপাতে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি শিশু পানিতে ডুবে মারা যায় বাংলাদেশে। গড়ে দিনে ৪০টি শিশু মারা যায় পানিতে ডুবে।এই ঈদে এমন যেন না হয়, সে জন্য নিতে হবে বাড়তি সতর্কতা। তা ছাড়া এখন কালবৈশাখী, বজ্রপাত ও বৃষ্টিপাতের মৌসুম শুরু হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে পুকুর ও নদ-নদীর পানি বাড়ছে। ছুটিতে অনেকে গ্রামে বা অন্য কোথাও বেড়াতে গেছে বা যাবে। এ সময় অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়াতে, বিশেষ করে পানিতে ডুবে যাওয়া থেকে শিশুদের রক্ষা করতে বিশেষ সুরক্ষাব্যবস্থা নিতে হবে সবাইকে। বিশেষ করে বাড়ির আশপাশে পুকুর বা নদীতে গোসল, নৌকা ভ্রমণ বা হাওর এলাকায় ভ্রমণ এ সময় এড়িয়ে যাওয়া ভালো।
বৃষ্টি এ বছর একটু আগেই শুরু হওয়ায় ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি। কোরবানি নিয়ে বাড়ির সবাই ব্যস্ত থাকায় শিশুদের প্রতি নজরদারির ফুরসত থাকবে না। কিন্তু শিশুর প্রতি নজর বন্ধ করা যাবে না। পানিতে ডোবা ছাড়াও কোরবানিকেন্দ্রিক অনেক দুর্ঘটনার শিকার হয় শিশুরা।
২০২৪ সালের ঈদের দিন প্রথম পাঁচ ঘণ্টায় শুধু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছিল প্রায় ১৫০ জন আহত ব্যক্তি। শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে-ছিঁড়ে যাওয়া এসব রোগীর সবাইকে সেলাইয়ের পাশাপাশি জরুরি চিকিৎসা দেওয়া হয়। কয়েকজনের অবস্থা বেশি খারাপ থাকায় হাসপাতালে রেখে দেওয়া হয়।
ঢাকার বাইরে থেকেও এ রকম খবরের কমতি ছিল না। কয়েক বছর আগে মাদারীপুর সদর উপজেলার দুধখালীতে কোরবানির গরু জবাইয়ের সময় কসাইয়ের হাত থেকে ছুরি ছুটে গিয়ে এক শিশুর পেটে ঢুকে গেলে শিশুটির মৃত্যু হয়। কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলায় কোরবানির সময় দড়ি ছিঁড়ে ছুটে যাওয়া মহিষের শিংয়ের গুঁতোয় অলি উল্লাহ নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়।
বাংলাদেশ সরকার ২০১১ সালের স্বাস্থ্যনীতিতে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুকে একটি জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে। শিশুর নিরাপত্তায় পাইলট প্রকল্পে পানিতে ডুবে মৃত্যু বিবেচনা করলেও সরকার কর্তৃক বাস্তবায়িত প্রকল্প এখনো সীমিত। জনসংখ্যার অনুপাতে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি শিশু পানিতে ডুবে মারা যায় বাংলাদেশে। গড়ে দিনে ৪০টি শিশু মারা যায় পানিতে ডুবে।
সরকারকে আমরা নানাভাবে কাজ করার জন্য অনুরোধ করতে পারি। রাস্তা বন্ধ করে দাবি মানার জন্য চিৎকার করতে পারি কিন্তু দিন শেষে আমার শিশুটিকে রক্ষার দায়িত্ব আমার নিজের। আনন্দ–খুশি সবই মাটি হয়ে যাবে আমি যদি শিশুটিকে রক্ষা করতে না পারি।
● গওহার নঈম ওয়ারা লেখক ও গবেষক
[email protected]
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ঈদ ল আজহ য় দ র ঘটন প রকল প ক রব ন সবচ য় সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
পদ্মা সেতুতে ২৪ ঘণ্টায় ৫ কোটি টাকার টোল আদায়ের রেকর্ড
কোরবানির ঈদ সামনে রেখে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় পদ্মা সেতু হয়ে ঘরমুখী যাত্রী ও যানবাহন পারাপার বেড়েছে। গত বুধবার দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত এই সেতু দিয়ে ৫২ হাজার ৪৮৭টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এ সময় টোল আদায় করা হয়েছে ৫ কোটি ৪৩ লাখ ২৮ হাজার ১০০ টাকা।
পদ্মা সেতুতে রেকর্ড পরিমাণ টোল আদায় ও যানবাহন পারাপারের বিষয়ে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ আজ শুক্রবার সকালে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানায়।
গত বছর পবিত্র ঈদুল ফিতরে এক দিনে টোল আদায় করা হয়েছিল ৪ কোটি ৮৯ লাখ ৯৪ হাজার ৭০০ টাকা, যা ছিল পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর সর্বোচ্চ টোল।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় মাওয়া প্রান্ত দিয়ে ৩৫ হাজার ৯৮৫টি যানবাহন পদ্মা সেতু পার হয়েছে। এতে এ প্রান্ত দিয়ে টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ১৬ লাখ ৪৩ হাজার ৮০০ টাকা। জাজিরা প্রান্ত দিয়ে পদ্মা সেতু পার হয়েছে ১৬ হাজার ৫০২টি গাড়ি। এ সময় এ প্রান্তে টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ২৬ লাখ ৮৪ হাজার ২০০ টাকা।
এর আগে ২০২৪ সালের ১৪ জুন টোল আদায় হয়েছিল ৪ কোটি ৮০ লাখ ৩০ হাজার ১০০ টাকা। এযাবৎকালের তৃতীয় সর্বোচ্চ ও চতুর্থ সর্বোচ্চ টোল আদায় করা হয় ২০২৩ সালের ২৭ জুন। এদিন ৪ কোটি ৬০ লাখ ৫৩ হাজার ৩০০ টাকা ও ২০২৪ সালের ১৫ জুন আদায় করা হয় ৪ কোটি ২৯ লাখ ১১ হাজার ৩০০ টাকা। এটি টোল আদায়ের রেকর্ডে পঞ্চম স্থানে রয়েছে। ঈদকে কেন্দ্র করে টোল আদায়ের এই রেকর্ড করা হয়।
২০২২ সালের ২৫ জুন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় স্থাপনা পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হয়। ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা বহুমুখী সেতু উদ্বোধনের পর থেকে দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলা ও দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।