একেবারে ‘মোয়া’ গোল যেটাকে বলে, সেটাই। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো গোল করলেন। ধারাভাষ‌্যকার শুধু বলেন, ‘পারফেক্ট ট‌্যাপ-ইন।’ ওতটুকু রোনালদোর গোলের বর্ণনা। বরং গোল করানোর পেছনের নায়কেই প্রশংসায় ভাসালেন।

বাম প্রান্ত থেকে নুনো মেনডেসের আনসেলফিস পাস। চাইলে নিজের পায়ে শটটা নিয়ে গোলের চেষ্টা করতে পারতেন। কিন্তু মেনডেস ডি বক্সের ভেতরে ফাঁকায় থাকা রোনালদোর দিকে বাড়িয়ে দেন। বলটা পায়ের ওপর তুলে দিয়েছিলেন। বাকি সহজ কাজটুকু সারেন রোনালদো।

৪০ বছর বয়সী সিআরসেভেন আরো একবার পর্তুগালকে বিপদ থেকে উদ্ধার করলেন। ওয়েফা ন‌্যাশন্স লিগ সেমিফাইনালে স্বাগতিক জার্মানিকে ২-১ গোলে হারিয়েছে পর্তুগাল। দলকে ফাইনালে তুলতে ম‌্যাচের ৬৮ মিনিটে গোল করেন সিআরসেভেন। ২১৯তম ম‌্যাচে এটি রোনালদোর আন্তর্জাতিক ফুটবলে ১৩৭তম গোল। যা তার পেশাদার ক‌্যারিয়ারের ৯৩৭তম গোল।

আরো পড়ুন:

গোল পেলেন হামজা, ভুটানকে ২-০ গোলে হারাল বাংলাদেশ

ঢাকায় এসেই অনুশীলনে হামজা

জার্মানির বিপক্ষে এই গোল পর্তুগালের জন‌্য অনেক অরাধ‌্য। ২০০০ সালের ইউরো কাপে শেষবার পর্তুগালের কাছে হেরেছিল জার্মানি। তারপর এই ২৫ বছরে ৫ বার মুখোমুখি হয়েছে দুই দল। সবকটা সাক্ষাতেই জিতেছে জার্মানি। শেষবার ২০২০ সালের ইউরোতে দেখা হয়েছিল দুই দলের। ৪-২ গোলে জয় পেয়েছিল জার্মানি। দুই যুগেরও বেশি সময় পর পর্তুগাল উড়াল বিজয়ের পতাকা। আরেকটি পরিসংখ‌্যানও আছে। ১৯৮৫ সালের পর প্রথমবার পর্তুগাল জার্মানিতে জিতেছে। আর এই জয়ে তারা চলে গেল ফাইনালে। শিরোপা নির্ধারণী ম‌্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ হবে স্পেন বা ফ্রান্স।

জার্মানির অ‌্যালায়েঞ্জ এরিনাতে প্রথমার্ধে গোল পায়নি কোনো দল। বিরতি থেকে ফিরে ওইটজের হেডে জার্মানি এগিয়ে যায়। ম‌্যাচের ৪৮তম মিনিটে এই গোলটি হয়। গোল হজমের পর শক্তভাবে পর্তুগাল ফিরে আসে। ম‌্যাচের ৬৩ ও ৬৮; পাঁচ মিনিটের ব‌্যবধানে দুই গোল করে পর্তুগাল।

৫৮ মিনিটে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে প্রবেশ করেন কনসেইকাও। রাইট উইঙ্গার পাঁচ মিনিটের মধ‌্যেই পর্তুগালকে সমতায় ফেরান। এরপর ৬৮ মিনিটে রোনালদোর গোলে পর্তুগাল লিড নেয়। তাতেই ম‌্যাচের ভাগ‌্য নির্ধারণ হয়ে যায়।

জার্মানির বিপক্ষে এর আগে পাঁচবারের দেখায় কখনো জিততে পারেননি রোনালদো। চল্লিশে অদম‌্য রোনালদো নতুন কিছুর স্বাদ পেলেন। দলকে তুললেন ফাইনালে। শিরোপা উঁচিয়ে ধরতে পারেন কিনা সময়ই বলে দেবে।  

ঢাকা/ইয়াসিন/বকুল 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল র পর ত গ ল ফ ইন ল গ ল কর

এছাড়াও পড়ুন:

হনুমান কি পর্বত কাঁধে করে উড়ে এসেছিলেন?

হিন্দু ধর্মগ্রন্থ রামায়ণের এক বিশিষ্ট অধ্যায়ে উঠে আসে এক অলৌকিক ঘটনার কথা। রাম-রাবণের মহাযুদ্ধে শ্রীরামচন্দ্রের ভাই লক্ষ্মণ অচেতন হয়ে পড়লে, তাঁকে জীবিত রাখতে প্রয়োজন হয় একটি বিশেষ ভেষজ উদ্ভিদের—সঞ্জীবনী বুটি। আয়ুর্বেদাচার্য সুষেণের পরামর্শে হনুমান ছুটে যান হিমালয়ের পাদদেশে গন্ধমাদন পর্বতে।

রামায়ণে বর্ণিত আছে, নির্দিষ্ট গাছটি শনাক্ত করতে না পারায় হনুমান পুরো গন্ধমাদন বা দ্রোণগিরি পর্বতটাই তুলে কাঁধে নিয়ে পা বাড়ান লঙ্কার উদ্দেশে। বিশ্বাস করা হয় যে তিনি দীর্ঘ আকাশপথ পাড়ি দেন এই পাহাড় বহন করে। পথিমধ্যে তিনি কিছু স্থানে বিশ্রামও নেন; যেসব স্থান আজও ‘হনুমান টোক’, ‘হনুমান চট’, ‘হনুমান ধারা’ নামে পরিচিত।

নির্দিষ্ট গাছটি শনাক্ত করতে না পারায় হনুমান পুরো গন্ধমাদন বা দ্রোণগিরি পর্বতটাই তুলে কাঁধে নিয়ে পা বাড়ান লঙ্কার উদ্দেশে।

পৌরাণিক গ্রন্থগুলোয় সব ঘটনা রূপকভাবে লেখা আছে। এককথায় পুরাণের মধ্যে সবকিছু গোলমাল পাকিয়ে আছে। গোলটা ফেলে মালটা বের করতে পারলে পৃথিবীর অনেক কল্যাণ হয়। এই ঘটনার রূপকতা ব্যাখ্যা করতে একটা গল্পের উল্লেখ করছি।

আরও পড়ুনভারতের আদিতম মহাকাব্য রামায়ণ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

বাড়িতে ২০০ মানুষকে নিমন্ত্রণ করে এক ব্যক্তি বাজারে গিয়ে অনেক বাজার করেছেন। ফেরার সময় তিনি নিজের সাইকেলের দুই হ্যান্ডলে দুটো ব্যাগ ঝুলিয়েছেন, পেছনে দুটো ব্যাগ ঝোলানো, ক্যারিয়ারে একটা বস্তা বাঁধা। জায়গা না পেয়ে নিজের দুই কাঁধে দুটো ব্যাগ ঝুলিয়ে বাজার থেকে বাড়ির উদ্দেশে যাওয়ার পথে রাস্তায় এক লোক তাঁকে দেখে বললেন ‘কী হে ভাই, তুমি তো দেখি পুরা বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছ!’ এর মানে কিন্তু এই নয় যে সেই ব্যক্তি পুরো বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছেন।

তিনি আসলে অনেক বাজার করেছেন। হনুমানের ক্ষেত্রেও একই রকম ঘটেছিল।

রামভক্ত হনুমান ছিলেন যোগী পুরুষ। তিনি যোগবলে অনেক অলৌকিক শক্তি অর্জন করেছিলেন। তিনি যোগবলে নিজের আকার এত ছোট করে ফেলতে পারতেন যে তাঁকে খালি চোখে দেখা কষ্টকর হয়ে যেত। আবার তিনি ইচ্ছা করলে যোগবলে নিজের আকার অনেক বড় করে ফেলতে পারতেন। আর তিনি ছিলেন অত্যন্ত শক্তিশালী।

‘কী হে ভাই, তুমি তো দেখি পুরা বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছ!’ এর মানে কিন্তু এই নয় যে সেই ব্যক্তি পুরো বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছেন। তিনি আসলে অনেক বাজার করেছেন।

তিনি আসলে ‘সঞ্জীবনী বুটি’ চিনতে না পেরে যোগবলে নিজের শরীরটা অনেক বড় করে সামনে যত ধরনের বৃক্ষ ও লতাপাতা পেয়েছিলেন, সেই সবকিছু সংগ্রহ করে বিশাল এক বোঝা বানিয়ে নিজের পিঠের ওপর তুলে যখন অতি দ্রুত এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে লাফ দিচ্ছিলেন, তখন সেই বিশালদেহী হনুমানকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন গোটা পাহাড়টাই পিঠে তুলে নিয়ে লাফাচ্ছেন।

আরও পড়ুনদুর্গাপূজার কাহিনি২০ অক্টোবর ২০২৩

হনুমানের এই অসাধারণ কীর্তিকে অনেকেই অলৌকিক বলেই ভাবেন। কিন্তু অলৌকিকতা ছাপিয়ে এটা তাঁর গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা এবং গুরুর আদেশের প্রতি দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। ভারতের হিমাচল, উত্তরাখন্ড, মধ্যপ্রদেশ এমনকি বাংলাদেশের মহেশখালীর আদিনাথ ধামসহ কিছু স্থানে এই ঘটনার স্মৃতি বহন করে, এমন লোককথা এখনো প্রচলিত।

একটি পাহাড় কাঁধে বহন করে উড়ে যাওয়া প্রকৃতির নিয়মের বাইরে। আর অবতার, মহাপুরুষ বা প্রেরিত পুরুষেরা কখনো প্রকৃতির নিয়মের বাইরে যান না। রামায়ণের এ ঘটনাকে মূলত রূপক বা প্রতীকী ঘটনা হিসেবেই বিবেচনা করেন হিন্দুধর্মীয় অবতার-মহাপুরুষেরা। আর পৃথিবীতে অলৌকিক বলে কিছু নেই।

রামায়ণের এ ঘটনাকে মূলত রূপক বা প্রতীকী ঘটনা হিসেবেই বিবেচনা করেন হিন্দুধর্মীয় অবতার-মহাপুরুষেরা। আর পৃথিবীতে অলৌকিক বলে কিছু নেই।

মনে করেন, একজন যোগী পুরুষ নদীর তীর থেকে যোগবলে অদৃশ্য হয়ে নদীর মধ্যে ভেসে উঠলেন। আমি দেখতে পাচ্ছি না, জানতে পারছি না যে তিনি কীভাবে গিয়েছেন, তাই আমার কাছে অলৌকিক। আর ওই যোগী জানেন যে তিনি কীভাবে গিয়েছেন, তাই তাঁর কাছে লৌকিক।

যুগের পর যুগ ধরে লাখ লাখ ভক্তের হৃদয়ে এই ঘটনা গুরুর প্রতি শিষ্যের ভালোবাসা এবং নিজেকে গুরুর প্রতি সম্যকভাবে ন্যস্ত করার এক আস্থা ও অনুপ্রেরণার গল্প হয়ে রয়েছে। হনুমানের এই গাথা তাঁর ভক্তিমূলক চরিত্রকে যেমন সমৃদ্ধ করে, তেমনি মানবজাতির দুর্দম সাহস ও আত্মত্যাগের কথাও মনে করিয়ে দেয়।

তথ্যসূত্র: ১. বাল্মীকি রামায়ণ. ২. কৃত্তিবাসী রামায়ণ, ৩. শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র কথিত ‘আলোচনা প্রসঙ্গে’ গ্রন্থ, ৪. মহেশখালীর আদিনাথ ধাম অঞ্চলের লোককথা।

পার্থ দেব বর্মন: গবেষক, সৎসঙ্গ রিসার্চ সেন্টার

আরও পড়ুনরামচন্দ্র, বিষ্ণুর অবতার কিন্তু মানবিক১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

সম্পর্কিত নিবন্ধ