আর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলের আধুনিক চেহারা এখন আগের থেকে অনেক বেশি সামগ্রিক এবং শক্তিশালী। এই পরিবর্তনের পেছনে রয়েছেন দলের প্রধান কোচ লিওনেল স্কালোনি, যিনি ২০২২ বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ী দলটির মস্তিষ্ক হিসেবে পরিচিত। বুধবার (১১ জুন) বুয়েনোস আইরেসে কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে আসন্ন বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচের আগে এক সাক্ষাৎকারে কোচ স্কালোনি স্পষ্ট করে জানালেন, আর্জেন্টিনার ফুটবল এখন আর এককভাবে লিওনেল মেসির ওপর নির্ভর করে না।

স্কালোনির ভাষায়, “আমাদের দল এমন এক স্তরে পৌঁছেছে যেখানে মেসি মাঠে থাকুক বা না থাকুক, আমরা একইভাবে আক্রমণাত্মক এবং ধারাবাহিক পারফরম্যান্স দেখাতে সক্ষম। আগে মেসির অভাব কিছু খেলোয়াড়ের ভূমিকা বদলানোর প্রয়োজন হত, এখন তা আর বাধ্যতামূলক নয়।”

এই মন্তব্য দলের গেমপ্লে ও স্ট্র্যাটেজিতে একটি মৌলিক পরিবর্তনের প্রতিফলন। আর্জেন্টিনার ফুটবল এখন গভীরতা, সামঞ্জস্য এবং দলীয় একাত্মতার ওপর দাঁড়িয়ে। মেসি, যিনি ২০০৫ সাল থেকে আর্জেন্টিনার জার্সিতে ১৯২ ম্যাচ খেলেছেন এবং ১১২ গোল করেছেন, তাঁর উপস্থিতি অবশ্যই দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও, দলের সাফল্য এখন নির্ভর করছে পুরো দলের শক্তি ও কৌশলের ওপর।

আরো পড়ুন:

সাত মাস পর জাতীয় দলে ফিরে নতুন মুখের মুখোমুখি মেসি

মেসির ম্যাজিকাল রাত, মায়ামির গোল বন্যায় ভেসে গেল কলম্বাস

চোটের কারণে ৩৭ বছর বয়সী মেসিকে মাঝে মাঝে বিশ্রাম নিতে হয়। মার্চ মাসে উরুগুয়ের বিরুদ্ধে ১-০ গোলের জয় এবং ব্রাজিলের বিপক্ষে ৪-১ গোলে জয়লাভের সময় মেসি ছিলেন না। তারপরও দল ২০২৬ সালের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের মূলপর্বে জায়গা করে নিয়েছে। জুন মাসের বাছাইপর্বে মেসি দলের হয়ে মাঠে ফিরলেও, চিলির বিরুদ্ধে ১-০ গোলের ম্যাচে তিনি দ্বিতীয়ার্ধে পরিবর্তন হিসেবে খেলেন। এই বিষয়টি প্রমাণ করে, আর্জেন্টিনার ফুটবল এখন আর একক খেলোয়াড়ের জাদুতে নির্ভর করে না, এটি একটি সম্পূর্ণ দলীয় কৌশল এবং অভিজ্ঞতার ফল।

ঢাকা/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল আর জ ন ট ন আর জ ন ট ন র ফ টবল ন র ভর

এছাড়াও পড়ুন:

গলের অতৃপ্তি দূর হবে কি কলম্বোতে

নাজমুল হোসেনের আঙুলের চোটের সর্বশেষ কী অবস্থা?

সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব (এসএসসি) মাঠের উইকেট দেখে কেমন মনে হচ্ছে বাংলাদেশের?

আজ থেকে শুরু কলম্বো টেস্টে মেহেদী হাসান মিরাজ খেললে কেমন হবে একাদশ?

বোলিং আক্রমণটাই বা কেমন হতে পারে?

গলের পর কলম্বোতেও ব্যাটিং উইকেটেই হবে খেলা। পরের দুটি প্রশ্নের উত্তর তাই অনুমান করে নিতে অসুবিধা হয় না। আঙুলে বয়ে বেড়ানো চোট অধিনায়ক নাজমুল হোসেনের খেলা নিয়েও কোনো সংশয় তৈরি করছে না। তবু সংবাদ সম্মেলনে যেহেতু এসেছেন, কাল দুপুরে কোচ ফিল সিমন্সের কাছ থেকে উত্তরগুলো মিলিয়ে নিলেন সাংবাদিকেরা।

না, নতুন কিছু বলেননি কোচ সিমন্সও। একাদশ বা বোলিং আক্রমণ নিয়ে ধারণা দেবেন না স্বাভাবিক। তবে সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠের উইকেট ব্যাটিং–বান্ধব হবে বলেছেন মানে তো দলটাও গড়া হবে সেভাবেই।

সিমন্সের আগে কাল শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা এসেও এসএসসির ব্যাটিং উইকেটের গুণগানই গেয়েছেন। স্পিনাররা সহায়তা পেলেও সেটা হয়তো টেস্টের শেষ দুই–এক দিনই পাবেন। এসএসসিতেও গলের পুনরাবৃত্তি দেখা গেলে তাই অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

সেটা মাথায় রেখে সিমন্সও চান, গলের ক্রিকেটটাই ক্রিকেটাররা খেলুক কলম্বোতে, ‘আমরা গলে যেভাবে লড়াই করেছি, এখানেও তেমনই খেলতে চাই। কিছু ছোটখাটো জায়গায় উন্নতির সুযোগ আছে, সেটা করাটা জরুরিও। যেভাবে প্রথম টেস্টে খেলেছি, সেই মান ধরে রাখা কিংবা আরও ভালো কিছু করা দরকার।’

গল টেস্ট ড্র করলেও বাংলাদেশ দল কলম্বোতে এসেছে একটু অতৃপ্তি নিয়ে। টেস্টটা জিততে না পারার অতৃপ্তি। নইলে ওই ম্যাচের সব দিক দিয়ে তো বাংলাদেশই এগিয়ে ছিল! প্রথম ইনিংসে ৪৯৫ রান করে ১০ রানের লিড, দুই ইনিংস মিলিয়ে তিনটি সেঞ্চুরি, নাঈমের পাঁচ উইকেট এবং শেষ দিনে শ্রীলঙ্কার সামনে ২৯৬ রানের লক্ষ্য দিয়ে দিন শেষ হওয়ার আগেই তাদের ৪ উইকেট ফেলে দেওয়া। তবে এটাও ঠিক যে গলে বৃষ্টি বাংলাদেশের পরিকল্পনায় বড় বাধা ছিল এবং সেই শঙ্কা আছে কলম্বোতেও।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, আজ শুরু হওয়া টেস্টের প্রতিদিনই আছে বৃষ্টির শঙ্কা।
তারপরও গলে বাংলাদেশ দল অনেক কিছুই করতে পেরেছে। যেটুকু পারেনি, সেই মধুরেণ সমাপয়েৎও হতে পারত মেহেদী হাসান মিরাজ টেস্টটা খেললে। সেই বিশ্বাস থেকে গলে জিততে না পারার অতৃপ্তি তাঁকেও বেশ আক্রান্ত করছে বলে খবর। তবে অসুস্থতা কাটিয়ে ওঠা মিরাজের কলম্বো টেস্টের একাদশে থাকা নিয়ে কোনো সংশয় নেই। তাঁর নিজেরও মাঠে নামতে তর সইছে না।

মিরাজকে নিয়ে সিমন্সের আশা, টেস্টে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ অলরাউন্ডারের প্রত্যাবর্তন কলম্বোয় বাংলাদেশ দলকে ভালো কিছু এনে দেবে, ‘মিরাজ এখন বিশ্বের ২ নম্বর র‍্যাঙ্কে (টেস্ট অলরান্ডর) রয়েছে। সে ব্যাটিং ও বোলিং দুই ক্ষেত্রেই দলে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।’

সঙ্গে অবশ্য অন্যদেরও জাগিয়ে দিতে যোগ করেছেন, ‘শুধু তার ওপর নির্ভর করলেই হবে না, প্রত্যেককে নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। মিরাজ তার কাজ করবে, কিন্তু বাকিদেরও এগিয়ে আসতে হবে।’

মিরাজ খেললে গলে ৫ উইকেট পাওয়া আরেক অফ স্পিনার নাঈম খেলবেন কি না, সে প্রশ্ন আসেই। জবাবটা একটু ‘যদি’–‘কিন্তু’ রেখেই দিয়েছেন কোচ, ‘সিদ্ধান্ত নেওয়াটা কঠিন। গলে নাঈম অসাধারণ খেলেছে, তাকে বাদ দেওয়া কঠিন হবে। কিন্তু সবাই জানে, দলে থাকা না-থাকা নির্ভর করে কন্ডিশনের ওপর এবং দলের প্রয়োজনের ওপর।’

শ্রীলঙ্কায় দ্রুতই খেলার মধ্যে ঢুকে যাওয়ার মানসিকতা বাংলাদেশ দল ঢাকা থেকেই নিয়ে এসেছিল। গল টেস্টের ড্র সেই মানসিকতাকে আরও ইতিবাচক করে তুলেছে। কোচ তো সরাসরিই বলে দিয়েছেন, কলম্বোতে বাংলাদেশের লক্ষ্য জয়, ‘শ্রীলঙ্কা ভালো ক্রিকেট খেলছে, তাদের হারানো সহজ হবে না। কিন্তু গলের মতো এখানেও আমরা জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নামব। আমার মানসিকতা সব সময়ই এমন—কীভাবে জেতা যায়, সেটা খুঁজে বের করতে হবে।’

কলম্বো টেস্টের আগে অধিনায়ক নাজমুল হোসেনের আঙুলের আঘাত কিছুটা চিন্তার কারণ হয়েছে। কালও ফিল্ডিং অনুশীলনের সময় বল লেগেছে সে জায়গায়। পরে নেটে গিয়ে স্পিনারদের বলে ব্যাটিং অনুশীলন করেছেন। দ্বিতীয় টেস্টে তাঁর খেলা নিয়ে সংশয় দূর করেছেন কোচ, ‘ও ঠিক আছে। আঙুলে হালকা ব্যথা পেয়েছে, টেপ পেঁচিয়ে খেলতে পারবে। খেলতে কোনো সমস্যা হবে না।’

টেস্টের আগপর্যন্ত সব তো নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই আছে। গলের অসমাপ্ত কাজটা কি তবে কলম্বোতে করতে পারবে বাংলাদেশ দল? অবশ্য গলের মতো কলম্বোর আকাশও কাঁদতে থাকলে ভিন্ন ব্যাপার। ওই একটা বিষয় তো কারও নিয়ন্ত্রণেই নেই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ