সাবেক রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ গত মাসের শুরুতে চিকিৎসার জন্য দেশত্যাগ করার পর এ নিয়ে যে ব্যাপক হইচই বিশেষত সরকার ও তার সমর্থকদের মধ্যে দেখা গিয়েছিল, এর কিছুই দেখা গেল না সম্প্রতি তিনি দেশে ফেরার পর।

গত ৭ মে দিবাগত রাতে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে ব্যাংককের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন এই সাবেক রাষ্ট্রপতি। ব্যাংককে তিনি চিকিৎসার জন্য গিয়েছেন, বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে বিস্তারিতভাবে এলেও, অন্তর্বর্তী সরকারের সমর্থক দলগুলো এ নিয়ে তুমুল সমালোচনামুখর হয়ে ওঠে; এমনকি বিক্ষোভ শুরু করেন দলগুলোর নেতাকর্মী। তিনি কীভাবে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে দেশ ত্যাগ করলেন? কেন তাঁকে আটকানো হয়নি? সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে এই প্রশ্নগুলো উঠতে শুরু করে।

পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, তা সামাল দিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো.

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী দাবি করে বসেন, ‘দরকার হলে তাঁকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরে আনা হবে।’ আর যারা সাবেক রাষ্ট্রপতিকে বিদেশে যেতে সহায়তা করেছেন, তাদের শাস্তির আওতায় না আনতে পারলে তিনি নিজে দায়িত্ব থেকে চলে যাবেন– এ অঙ্গীকারও করেন।

এর জের ধরে প্রথমে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ তুলে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসান চৌধুরীকে প্রত্যাহার করা হয়। পরে বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে দায়িত্বে থাকা একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, উপপরিদর্শক ও সহকারী উপপরিদর্শক পদমর্যাদার দু’জন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়; যদিও সেই কর্মকর্তারা ঊর্ধ্বতনদের সম্মতি নিয়েই ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করেছিলেন বলে সব সংবাদমাধ্যম খবর দিয়েছে।

সম্ভবত ওই ঘটনারই জের ধরে তখন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সেলিনা হায়াত আইভীকেও গ্রেপ্তার করা হয়। আন্দোলনকারীদের দাবির মুখে অধ্যাদেশ জারি করে আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হয় সে সময়। আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনা তদন্তে তিন উপদেষ্টার সমন্বয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটিও গঠন করে সরকার।

অনেকেই তখন বলেছিলেন, হয় আবদুল হামিদ আর দেশে ফিরতে পারবেন না, নয় দেশে ফিরলে তাঁর বিরুদ্ধে সত্যিই শক্ত পদক্ষেপ গৃহীত হবে। 
উল্লেখ্য, কিশোরগঞ্জে গত ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মিছিলে গুলিবর্ষণ, হামলা ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদেরসহ ১২৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ২৫০ জনের নামে মামলা হয়। গত ১৪ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ সদর থানায় দায়ের হওয়া এই মামলায় সাবেক রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদেরও নাম রয়েছে।

তবে শেষ পর্যন্ত এক মাসের চিকিৎসা শেষে রোববার রাতে আবদুল হামিদ দেশে ফিরে আসেন। ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে তিনি ৩টার দিকে বিমানবন্দর ছাড়েন। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে সূত্র হিসেবে উল্লেখ করে বিবিসি জানায়, উড়োজাহাজ থেকে হুইলচেয়ারে করে আবদুল হামিদকে নামিয়ে আনা হয়। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন ছোট ছেলে রিয়াদ আহমেদ এবং শ্যালক ডা. নওশাদ খান।

মজার ব্যাপার হলো, তাঁর এই দেশে ফেরা নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে বলেছেন, ‘আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট না থাকায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তদন্ত করার পর যে দোষী প্রমাণিত হবে তাঁকে আইনের আওতায় নেওয়া হবে’ (বিবিসি বাংলা)। মে মাসে দেশ তোলপাড় করা দলগুলোর নেতারাও প্রায় স্পিক টি নট।

পারিবারিক সূত্রের বরাত দিয়ে সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম লিখেছে, আবদুল হামিদ ফুসফুসের টিউমার ও কিডনি জটিলতায় ভুগছেন। এ ছাড়া তাঁর আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে। সেসব চিকিৎসার জন্য তিনি থাইল্যান্ডে যান। এ প্রেক্ষাপটে এটা স্বাভাবিক যে, গুরুতর একজন অসুস্থ ব্যক্তিকে নিয়ে টানাটানি না করাই ভালো। সংশ্লিষ্ট সবাই তাই এক মাস আগের উত্তেজনায় আর ভুগছেন না।
কিন্তু সাবেক রাষ্ট্রপতির এমন অসুস্থতার খবর তো তারা মে মাসেও জানতেন। তখন কেন তাঁর ব্যাংকক যাত্রা নিয়ে এত তুবড়িবাজি চলল?

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাব্বির আহমেদ এ নিয়ে বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘তিনি (সাবেক রাষ্ট্রপতি) দেশ ছাড়বেন জেনেও সরকার ইনটেনশনালি আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের ঘটনাটা ঘটিয়েছে। তার দেশ ছাড়াকে এক্সকিউজ হিসেবে নিয়ে এই ঘটনা হয়তো ঘটানো হয়েছে।’

কিন্তু পুরো ঘটনায় দেশে-বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি কী দাঁড়াল? এরপর জনগণ যদি অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যকেও হালকাভাবে নেয়, তাহলে হয়তো তাদের দোষ দেওয়া যাবে না।

সাইফুর রহমান তপন: সহকারী সম্পাদক, সমকাল

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আবদ ল হ ম দ দ শত য গ র জন ত স ব ক র ষ ট রপত আবদ ল হ ম দ র সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

চাঁদপুরে জীবন্ত নবজাতক দাফনের চেষ্টা, হাসপাতাল বন্ধ

চাঁদপুর পৌর কবরস্থানে নবজাতক দাফনের সময় নড়ে ওঠা এবং পরবর্তীতে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার পর মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেপ্তার হয় শহরের তালতলা দি ইউনাইটেড হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় ফারুক হোসেন গাজী (৪৫)। এই ঘটনায় আগামী দুই দিনের মধ্যে রোগীদের অন্যত্র স্থানান্তর করে হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। 

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় দি ইউনাইটেড হাসপাতালে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বাপ্পি দত্ত রনি।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন হাসপাতালটিতে নানা অবৈধ কার্যক্রম চলে আসছে। ওই নবজাতকের জন্মও হয় এই হাসপতালে। জীবন্ত নবজাতক দাফনের চেষ্টা করার ভিডিও ভাইরাল হলে বিষয়টি নজরে আসে প্রশাসনের এবং পুলিশ সুপারের নির্দেশে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) নবজাতককে কবরস্থানে নিয়ে আসা ওয়ার্ড বয় ফারুক গাজীকে গ্রেপ্তার করে।

এই ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় মামলা করেন পৌর কবর স্থানের কেয়ারটেকার মো. শাহজাহান মিয়াজী।

এদিকে দি ইউনাইটেড হাসপাতালে এ ঘটনায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকালে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বাপ্পি দত্ত রনি বলেন, “হাসপাতালে এসে ব্যবস্থাপনায় জড়িত কাউকে পাওয়া যায়নি। তাদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করেও কোন সাড়া মিলেনি। চিকিৎসক নেই, হাসপাতালের প্যাথলজি ও ওটির সঠিক পরিবেশ নেই। একই সাথে পোস্ট অপারেটিভ রোগীর জন্য কোন সুব্যবস্থা নেই এবং হাসপাতালের কাগজপত্রও নবায়ন নেই।”

তিনি আরো বলেন, “প্রাথমিকভাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা এবং ওটি, প্যাথলজি ও সংশ্লিষ্ট কক্ষ সীলগালা করা হয়েছে। একই সাথে রোগীদেরকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্য স্থানে সেবার ব্যবস্থা করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমাদের অভিযানে পরিচালিত কার্যক্রম সিভিল সার্জন বরাবর প্রদান করা হবে। সিভিল সার্জন হাসপাতালের নিবন্ধন বাতিলসহ পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে পারবেন।”

এ ভ্রাম্যমাণ আদালতে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রফিকুল হাসান ফয়সাল, জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মু. মিজানুর রহমান। অভিযানে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ সহযোগিতা করেন।

অপরদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত শেষে হাসপাতালের ড্রাগ সনদসহ যাবতীয় কার্যক্রম পরীক্ষা করে দেখেন জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মু. মিজানুর রহমান।

ঢাকা/অমরেশ/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ