আবদুল হামিদের প্রস্থান ও প্রত্যাবর্তনের প্রশ্ন
Published: 10th, June 2025 GMT
সাবেক রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ গত মাসের শুরুতে চিকিৎসার জন্য দেশত্যাগ করার পর এ নিয়ে যে ব্যাপক হইচই বিশেষত সরকার ও তার সমর্থকদের মধ্যে দেখা গিয়েছিল, এর কিছুই দেখা গেল না সম্প্রতি তিনি দেশে ফেরার পর।
গত ৭ মে দিবাগত রাতে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে ব্যাংককের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন এই সাবেক রাষ্ট্রপতি। ব্যাংককে তিনি চিকিৎসার জন্য গিয়েছেন, বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে বিস্তারিতভাবে এলেও, অন্তর্বর্তী সরকারের সমর্থক দলগুলো এ নিয়ে তুমুল সমালোচনামুখর হয়ে ওঠে; এমনকি বিক্ষোভ শুরু করেন দলগুলোর নেতাকর্মী। তিনি কীভাবে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে দেশ ত্যাগ করলেন? কেন তাঁকে আটকানো হয়নি? সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে এই প্রশ্নগুলো উঠতে শুরু করে।
পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, তা সামাল দিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো.
এর জের ধরে প্রথমে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ তুলে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসান চৌধুরীকে প্রত্যাহার করা হয়। পরে বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে দায়িত্বে থাকা একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, উপপরিদর্শক ও সহকারী উপপরিদর্শক পদমর্যাদার দু’জন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়; যদিও সেই কর্মকর্তারা ঊর্ধ্বতনদের সম্মতি নিয়েই ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করেছিলেন বলে সব সংবাদমাধ্যম খবর দিয়েছে।
সম্ভবত ওই ঘটনারই জের ধরে তখন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সেলিনা হায়াত আইভীকেও গ্রেপ্তার করা হয়। আন্দোলনকারীদের দাবির মুখে অধ্যাদেশ জারি করে আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হয় সে সময়। আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনা তদন্তে তিন উপদেষ্টার সমন্বয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটিও গঠন করে সরকার।
অনেকেই তখন বলেছিলেন, হয় আবদুল হামিদ আর দেশে ফিরতে পারবেন না, নয় দেশে ফিরলে তাঁর বিরুদ্ধে সত্যিই শক্ত পদক্ষেপ গৃহীত হবে।
উল্লেখ্য, কিশোরগঞ্জে গত ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মিছিলে গুলিবর্ষণ, হামলা ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদেরসহ ১২৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ২৫০ জনের নামে মামলা হয়। গত ১৪ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ সদর থানায় দায়ের হওয়া এই মামলায় সাবেক রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদেরও নাম রয়েছে।
তবে শেষ পর্যন্ত এক মাসের চিকিৎসা শেষে রোববার রাতে আবদুল হামিদ দেশে ফিরে আসেন। ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে তিনি ৩টার দিকে বিমানবন্দর ছাড়েন। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে সূত্র হিসেবে উল্লেখ করে বিবিসি জানায়, উড়োজাহাজ থেকে হুইলচেয়ারে করে আবদুল হামিদকে নামিয়ে আনা হয়। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন ছোট ছেলে রিয়াদ আহমেদ এবং শ্যালক ডা. নওশাদ খান।
মজার ব্যাপার হলো, তাঁর এই দেশে ফেরা নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে বলেছেন, ‘আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট না থাকায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তদন্ত করার পর যে দোষী প্রমাণিত হবে তাঁকে আইনের আওতায় নেওয়া হবে’ (বিবিসি বাংলা)। মে মাসে দেশ তোলপাড় করা দলগুলোর নেতারাও প্রায় স্পিক টি নট।
পারিবারিক সূত্রের বরাত দিয়ে সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম লিখেছে, আবদুল হামিদ ফুসফুসের টিউমার ও কিডনি জটিলতায় ভুগছেন। এ ছাড়া তাঁর আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে। সেসব চিকিৎসার জন্য তিনি থাইল্যান্ডে যান। এ প্রেক্ষাপটে এটা স্বাভাবিক যে, গুরুতর একজন অসুস্থ ব্যক্তিকে নিয়ে টানাটানি না করাই ভালো। সংশ্লিষ্ট সবাই তাই এক মাস আগের উত্তেজনায় আর ভুগছেন না।
কিন্তু সাবেক রাষ্ট্রপতির এমন অসুস্থতার খবর তো তারা মে মাসেও জানতেন। তখন কেন তাঁর ব্যাংকক যাত্রা নিয়ে এত তুবড়িবাজি চলল?
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাব্বির আহমেদ এ নিয়ে বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘তিনি (সাবেক রাষ্ট্রপতি) দেশ ছাড়বেন জেনেও সরকার ইনটেনশনালি আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের ঘটনাটা ঘটিয়েছে। তার দেশ ছাড়াকে এক্সকিউজ হিসেবে নিয়ে এই ঘটনা হয়তো ঘটানো হয়েছে।’
কিন্তু পুরো ঘটনায় দেশে-বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি কী দাঁড়াল? এরপর জনগণ যদি অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যকেও হালকাভাবে নেয়, তাহলে হয়তো তাদের দোষ দেওয়া যাবে না।
সাইফুর রহমান তপন: সহকারী সম্পাদক, সমকাল
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আবদ ল হ ম দ দ শত য গ র জন ত স ব ক র ষ ট রপত আবদ ল হ ম দ র সরক র র
এছাড়াও পড়ুন:
সিনেমায় ফারিণ-সাবিলার শুভ সূচনা
বছরের পর বছর ধরে ছোট পর্দায় তাদের সরব উপস্থিতি, নাটক আর ওটিটি কনটেন্টে অভিনয়ের মুনশিয়ানা, নতুন প্রজন্মের চোখে ভরসার নাম হয়ে উঠেছেন তাসনিয়া ফারিণ ও সাবিলা নূর। তবে এবারের ঈদুল আজহা যেন তাদের জন্য ছিল এক বিশেষ মোড় ঘোরানো মুহূর্ত। পুরোপুরি বাণিজ্যিক সিনেমার নায়িকা হিসেবে পরিচিত হলেন তারা।
ঈদুল আজহায় বড় পর্দায় একেবারে বাণিজ্যিক ঘরানার চলচ্চিত্রে নায়িকা হিসেবে অভিষিক্ত হলেন তাসনিয়া ফারিণ ও সাবিলা নূর। একদিকে সাবিলা অভিষেক করলেন রায়হান রাফীর আলোচিত ছবি ‘তাণ্ডব’-এ, যেখানে তাঁর বিপরীতে আছেন ঢাকাই সিনেমার সুপারস্টার শাকিব খান। অন্যদিকে ফারিণ, যিনি প্রথমবারের মতো পুরোপুরি কমার্শিয়াল সিনেমায় এলেন সঞ্জয় সমদ্দার পরিচালিত ‘ইনসাফ’-এ। যেখানে তাঁর সহশিল্পী শরিফুল রাজ। রূপালি জগতে এই দুইয়ের অভিষেক যেন সমসাময়িক ঢাকাই সিনেমায় দুই ভিন্ন স্বাদের সংযোজনই ঘটল।
সাবিলা হয়ে উঠলেন পুরোদস্তুর নায়িকা
তাণ্ডব সিনেমায় শাকিব খানের বিপরীতে সাবিলা নূর থাকছেন কি থাকছেন না, তা নিয়ে চর্চা ছিল অনেক। গণমাধ্যমে নিউজও হয়েছে। কিন্তু সাবিলা ছিলেন নিশ্চুপ। মূলত প্রযোজনা সংস্থার নিষেধাজ্ঞা থাকাতেই মুখ খোলা হয়নি তাঁর। এ ছাড়া সাবিলা নিজের কাছেও বিষয়টি এক প্রকার ঘোরের মতোই মনে হয়েছে। বহু নাটকের এই অভিনেত্রীর বড় পর্দায় এভাবে, দেশসেরা নায়কের বিপরীতে সিনেমায় অভিষেক, এত বড় আয়োজনে শুটিংয়ে অংশ নেওয়া, সব যেন পরিকল্পনার বাইরেই ছিল। কিন্তু জীবনের সবকিছু তো আর পরিকল্পনামাফিক হয় না। সাবিলার বেলায়ও হয়নি। তাই অপরিকল্পিতভাবেই হয়ে উঠলেন এবারের ঈদুল আজহার অন্যতম চর্চিত নায়িকা। সিনেমা মুক্তির আগেই ‘লিচুর বাগানে’ গান দিয়ে আলোচনায় এলেন তিনি। সাবিলাকে কেন্দ্র করে এই গানের ভিডিও এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো ভাইরাল। হাস্যোজ্জ্বল, প্রাণবন্ত সাবিলা যেন গানটির প্রতিটি বিটে দর্শকের হৃদয় ছুঁয়েছেন। দর্শকের মুখে মুখে ফিরছে গানটির কথা।
সাবিলা নূর বললেন, ‘তাণ্ডব সিনেমা দিয়ে প্রথমবার শাকিব খানের সঙ্গে অভিনয় করা। প্রথমবার রায়হান রাফীর পরিচালনায় অভিনয় করলাম। প্রথমবার সিনেমার জন্য এভাবে নাচ করেছি। আমি মনে করি, আমি খুবই লাকি। আমার আসলে খুব বেশি মানসিক চাপ নিতে হয়নি। কারণ, আমি এত সুন্দর একটা টিম পেয়েছি। বিশেষ করে আমার নির্মাতা রায়হান রাফী শুরুতেই সহায়তা করেছিলেন আমার চরিত্র নিয়ে ভাবার।’
ঈদের সকালে সিনেমা হলে গিয়ে দর্শকেরা অবাক হয়েছেন তার উপস্থিতি দেখে। সাবিলা বরাবরই ক্যামেরার সামনে সাবলীল, কিন্তু এই সিনেমায় এসে যেন নিজের গণ্ডি ভেঙে নতুন এক সাবিলাকে তুলে ধরেছেন। চরিত্রে তাঁর আত্মবিশ্বাস, পর্দায় তাঁর সৌন্দর্য– সব মিলিয়ে সাবিলা হয়ে উঠেছেন বাণিজ্যিক সিনেমার পুরোদস্তুর নায়িকা।
ইনসাফের অনবদ্য ফারিণ
ইনসাফ সিনেমার মাধ্যমে নিজেকে একেবারেই আলাদা এক ঢঙে উপস্থাপন করেছেন তাসনিয়া ফারিণ। টেলিভিশনের নাটকে সংবেদনশীল ও জটিল চরিত্রে বারবার নিজের সক্ষমতা প্রমাণ করেছেন তিনি। সেই ফারিণ এবার নাচলেন আইটেম গানে, নাচালেন অন্যদেরও। আকাশেতে লক্ষ তারা চাঁদ কিন্তু একটাইরে... মিলার কণ্ঠের এই আইটেম গানে ফারিণকে একবারের জন্যও মনে হয়নি প্রথমবার এমন গানে পারফর্ম করলেন। শুধুই কি গানে! ফারিণের চরিত্র নিয়ে তৃপ্ত দর্শকরাও। সিনেমায় ফারিণকে দেখে প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন দর্শক। সিনেমাটিতে ফারিণ যেন কোনো ভান ছাড়াই চরিত্রে প্রাণ দিয়েছেন। এই সিনেমা প্রমাণ করেছে, তিনি শুধু ওটিটি বা নাটকের শিল্পী নন; বরং বড় পর্দায়ও তাঁর জায়গা অনেক প্রশস্ত।
এর আগে কলকাতায় ‘আরও এক পৃথিবী’ এবং বাংলাদেশে ‘ফাতিমা’ নামে দুটি ভিন্ন ধারার গল্পের ছবিতে অভিনয় করেছিলেন তাসনিয়া ফারিণ। কিন্তু ইনসাফ পুরোপুরি বাণিজ্যিক ধারার সিনেমা। তবে এ ধরনের সিনেমা এটাই শেষ নয় ফারিণের। বললেন, ইচ্ছে আছে এবার অনেক সিনেমা করব, ইনসাফ করে থেমে যাব না। থেমে যাওয়ার কথাও না। হল থেকে বের হয়ে যেভাবে দর্শকরা ফারিণের চরিত্র ও তাঁর অভিনয়ের প্রশংসা করছেন তাতে থেমে যাওয়ার কারণও নেই।
ফারিণ আরও বলেন, ‘আমি নিজেকে সব সময় ভিন্ন জায়গায় নিতে চেয়েছি। এখন আমার ধ্যান-জ্ঞান সিনেমা। সেই জায়গা থেকে মনে হয়েছে ‘ইনসাফ’ আমাকে ভিন্ন একটি জায়গা তৈরি করে দিতে সহায়তা করবে। তাই এই সিনেমায় যুক্ত হয়েছিলাম। এখন দর্শকদের ভালোবাসায় মনে হয়েছে আমি সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছি।’
দুই অভিনয়শিল্পীর অভিষেকেই একটা বিষয় স্পষ্ট– তারা কেউই হঠাৎ করে এ আসরে নামেননি। নাটক, ওটিটি কিংবা স্বল্পদৈর্ঘ্য কনটেন্ট– সব জায়গায় নিজেদের প্রস্তুত করেছেন, নিজেকে গড়েছেন ধৈর্য্য ও নিষ্ঠায়। ফলে বড় পর্দার ভাষা, কাঠামো কিংবা গ্ল্যামারের জগতে এসে তারা আলাদা করে নিজেকে প্রমাণের চেষ্টা করছেন না; বরং স্বাভাবিক গতিতেই হয়ে উঠছেন গ্রহণযোগ্য। তাই তাদের জন্য এই ঈদ শুধু উৎসব নয়, দুই প্রতিভাবান অভিনেত্রীর বড় স্বপ্নের প্রথম সিঁড়ি।