কক্সবাজারের টেকনাফে বিএনপির বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেলে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক হুইপ শাহজাহান চৌধুরী এবং জেলার অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল্লাহর সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় নেতা-কর্মীদের ভাষ্য, সম্প্রতি একটি অনলাইন মাধ্যমে জেলা সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী ও তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতাদের বিরুদ্ধে কমিটি বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর কয়েক দিন পর আরেকটি অনলাইন মাধ্যমে আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে দখল ও সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই বিভাজন রয়েছে। এর মধ্যেই মঙ্গলবার একে অপরের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযোগ তুলে উভয় পক্ষ পৃথক বিক্ষোভ মিছিল করে। এর মধ্যে বিকেল চারটার দিকে সাবরাং থেকে শাহজাহান চৌধুরীর পক্ষের একটি মিছিল এলে পৌরসভা শাপলা চত্বরে আবদুল্লাহর পক্ষের মিছিলের মুখোমুখি হলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

আহত সবাই শাহজাহান চৌধুরীর সমর্থক। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন জেলা বিএনপির সদস্য রাশেদুল করিম, টেকনাফ উপজেলা আরাফাত রহমান কোকো ক্রীড়া সংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম, সাবরাং ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হুদা, বিএনপি নেতা এজাহার মিয়া, সাবরাং ইউনিয়ন যুবদলের সদস্যসচিব সাব্বির আহমদ, সাবরাং ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও ইউপি সদস্য কবির আহমদ, সাবরাং ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি আবদুল গফুর এবং টেকনাফ সদর বিএনপির ৮ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি ফরিদ আলমসহ ১০ জন।

টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চারজনকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের শরীরে মারাত্মক আঘাত রয়েছে।

টেকনাফ উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাসান সিদ্দিকী বলেন, ‘হামলাকারীরা বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত। পৌরসভার শাপলা চত্বর এলাকায় আবদুল্লাহর নেতৃত্বে শতাধিক ব্যক্তি হামলা চালায়। গুরুতর আহত ছয়জনকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

টেকনাফ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমাদের মিছিল ছিল পূর্বনির্ধারিত। জমায়েতের স্থানে আবদুল্লাহর পক্ষ থেকে জমায়েতের ঘোষণা দেওয়া হয়। সংঘাত এড়াতে আমরা স্থান পরিবর্তন করলেও সাবরাং থেকে আসার মিছিলে হামলা চালানো হয়।’

মোহাম্মদ আবদুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে টেকনাফ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হিমেল রায় বলেন, ‘ঘটনার বিষয়ে আমরা জানি না। তবে উভয় পক্ষের বিক্ষোভ মিছিল ছিল। কেউ পুলিশকে এ বিষয়ে জানায়নি। এরপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ হজ হ ন চ ধ র ব এনপ র স স ঘর ষ

এছাড়াও পড়ুন:

হনুমান কি পর্বত কাঁধে করে উড়ে এসেছিলেন?

হিন্দু ধর্মগ্রন্থ রামায়ণের এক বিশিষ্ট অধ্যায়ে উঠে আসে এক অলৌকিক ঘটনার কথা। রাম-রাবণের মহাযুদ্ধে শ্রীরামচন্দ্রের ভাই লক্ষ্মণ অচেতন হয়ে পড়লে, তাঁকে জীবিত রাখতে প্রয়োজন হয় একটি বিশেষ ভেষজ উদ্ভিদের—সঞ্জীবনী বুটি। আয়ুর্বেদাচার্য সুষেণের পরামর্শে হনুমান ছুটে যান হিমালয়ের পাদদেশে গন্ধমাদন পর্বতে।

রামায়ণে বর্ণিত আছে, নির্দিষ্ট গাছটি শনাক্ত করতে না পারায় হনুমান পুরো গন্ধমাদন বা দ্রোণগিরি পর্বতটাই তুলে কাঁধে নিয়ে পা বাড়ান লঙ্কার উদ্দেশে। বিশ্বাস করা হয় যে তিনি দীর্ঘ আকাশপথ পাড়ি দেন এই পাহাড় বহন করে। পথিমধ্যে তিনি কিছু স্থানে বিশ্রামও নেন; যেসব স্থান আজও ‘হনুমান টোক’, ‘হনুমান চট’, ‘হনুমান ধারা’ নামে পরিচিত।

নির্দিষ্ট গাছটি শনাক্ত করতে না পারায় হনুমান পুরো গন্ধমাদন বা দ্রোণগিরি পর্বতটাই তুলে কাঁধে নিয়ে পা বাড়ান লঙ্কার উদ্দেশে।

পৌরাণিক গ্রন্থগুলোয় সব ঘটনা রূপকভাবে লেখা আছে। এককথায় পুরাণের মধ্যে সবকিছু গোলমাল পাকিয়ে আছে। গোলটা ফেলে মালটা বের করতে পারলে পৃথিবীর অনেক কল্যাণ হয়। এই ঘটনার রূপকতা ব্যাখ্যা করতে একটা গল্পের উল্লেখ করছি।

আরও পড়ুনভারতের আদিতম মহাকাব্য রামায়ণ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

বাড়িতে ২০০ মানুষকে নিমন্ত্রণ করে এক ব্যক্তি বাজারে গিয়ে অনেক বাজার করেছেন। ফেরার সময় তিনি নিজের সাইকেলের দুই হ্যান্ডলে দুটো ব্যাগ ঝুলিয়েছেন, পেছনে দুটো ব্যাগ ঝোলানো, ক্যারিয়ারে একটা বস্তা বাঁধা। জায়গা না পেয়ে নিজের দুই কাঁধে দুটো ব্যাগ ঝুলিয়ে বাজার থেকে বাড়ির উদ্দেশে যাওয়ার পথে রাস্তায় এক লোক তাঁকে দেখে বললেন ‘কী হে ভাই, তুমি তো দেখি পুরা বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছ!’ এর মানে কিন্তু এই নয় যে সেই ব্যক্তি পুরো বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছেন।

তিনি আসলে অনেক বাজার করেছেন। হনুমানের ক্ষেত্রেও একই রকম ঘটেছিল।

রামভক্ত হনুমান ছিলেন যোগী পুরুষ। তিনি যোগবলে অনেক অলৌকিক শক্তি অর্জন করেছিলেন। তিনি যোগবলে নিজের আকার এত ছোট করে ফেলতে পারতেন যে তাঁকে খালি চোখে দেখা কষ্টকর হয়ে যেত। আবার তিনি ইচ্ছা করলে যোগবলে নিজের আকার অনেক বড় করে ফেলতে পারতেন। আর তিনি ছিলেন অত্যন্ত শক্তিশালী।

‘কী হে ভাই, তুমি তো দেখি পুরা বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছ!’ এর মানে কিন্তু এই নয় যে সেই ব্যক্তি পুরো বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছেন। তিনি আসলে অনেক বাজার করেছেন।

তিনি আসলে ‘সঞ্জীবনী বুটি’ চিনতে না পেরে যোগবলে নিজের শরীরটা অনেক বড় করে সামনে যত ধরনের বৃক্ষ ও লতাপাতা পেয়েছিলেন, সেই সবকিছু সংগ্রহ করে বিশাল এক বোঝা বানিয়ে নিজের পিঠের ওপর তুলে যখন অতি দ্রুত এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে লাফ দিচ্ছিলেন, তখন সেই বিশালদেহী হনুমানকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন গোটা পাহাড়টাই পিঠে তুলে নিয়ে লাফাচ্ছেন।

আরও পড়ুনদুর্গাপূজার কাহিনি২০ অক্টোবর ২০২৩

হনুমানের এই অসাধারণ কীর্তিকে অনেকেই অলৌকিক বলেই ভাবেন। কিন্তু অলৌকিকতা ছাপিয়ে এটা তাঁর গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা এবং গুরুর আদেশের প্রতি দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। ভারতের হিমাচল, উত্তরাখন্ড, মধ্যপ্রদেশ এমনকি বাংলাদেশের মহেশখালীর আদিনাথ ধামসহ কিছু স্থানে এই ঘটনার স্মৃতি বহন করে, এমন লোককথা এখনো প্রচলিত।

একটি পাহাড় কাঁধে বহন করে উড়ে যাওয়া প্রকৃতির নিয়মের বাইরে। আর অবতার, মহাপুরুষ বা প্রেরিত পুরুষেরা কখনো প্রকৃতির নিয়মের বাইরে যান না। রামায়ণের এ ঘটনাকে মূলত রূপক বা প্রতীকী ঘটনা হিসেবেই বিবেচনা করেন হিন্দুধর্মীয় অবতার-মহাপুরুষেরা। আর পৃথিবীতে অলৌকিক বলে কিছু নেই।

রামায়ণের এ ঘটনাকে মূলত রূপক বা প্রতীকী ঘটনা হিসেবেই বিবেচনা করেন হিন্দুধর্মীয় অবতার-মহাপুরুষেরা। আর পৃথিবীতে অলৌকিক বলে কিছু নেই।

মনে করেন, একজন যোগী পুরুষ নদীর তীর থেকে যোগবলে অদৃশ্য হয়ে নদীর মধ্যে ভেসে উঠলেন। আমি দেখতে পাচ্ছি না, জানতে পারছি না যে তিনি কীভাবে গিয়েছেন, তাই আমার কাছে অলৌকিক। আর ওই যোগী জানেন যে তিনি কীভাবে গিয়েছেন, তাই তাঁর কাছে লৌকিক।

যুগের পর যুগ ধরে লাখ লাখ ভক্তের হৃদয়ে এই ঘটনা গুরুর প্রতি শিষ্যের ভালোবাসা এবং নিজেকে গুরুর প্রতি সম্যকভাবে ন্যস্ত করার এক আস্থা ও অনুপ্রেরণার গল্প হয়ে রয়েছে। হনুমানের এই গাথা তাঁর ভক্তিমূলক চরিত্রকে যেমন সমৃদ্ধ করে, তেমনি মানবজাতির দুর্দম সাহস ও আত্মত্যাগের কথাও মনে করিয়ে দেয়।

তথ্যসূত্র: ১. বাল্মীকি রামায়ণ. ২. কৃত্তিবাসী রামায়ণ, ৩. শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র কথিত ‘আলোচনা প্রসঙ্গে’ গ্রন্থ, ৪. মহেশখালীর আদিনাথ ধাম অঞ্চলের লোককথা।

পার্থ দেব বর্মন: গবেষক, সৎসঙ্গ রিসার্চ সেন্টার

আরও পড়ুনরামচন্দ্র, বিষ্ণুর অবতার কিন্তু মানবিক১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

সম্পর্কিত নিবন্ধ