টেকনাফে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে আহত ১০
Published: 10th, June 2025 GMT
কক্সবাজারের টেকনাফে বিএনপির বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেলে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক হুইপ শাহজাহান চৌধুরী এবং জেলার অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল্লাহর সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় নেতা-কর্মীদের ভাষ্য, সম্প্রতি একটি অনলাইন মাধ্যমে জেলা সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী ও তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতাদের বিরুদ্ধে কমিটি বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর কয়েক দিন পর আরেকটি অনলাইন মাধ্যমে আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে দখল ও সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই বিভাজন রয়েছে। এর মধ্যেই মঙ্গলবার একে অপরের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযোগ তুলে উভয় পক্ষ পৃথক বিক্ষোভ মিছিল করে। এর মধ্যে বিকেল চারটার দিকে সাবরাং থেকে শাহজাহান চৌধুরীর পক্ষের একটি মিছিল এলে পৌরসভা শাপলা চত্বরে আবদুল্লাহর পক্ষের মিছিলের মুখোমুখি হলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
আহত সবাই শাহজাহান চৌধুরীর সমর্থক। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন জেলা বিএনপির সদস্য রাশেদুল করিম, টেকনাফ উপজেলা আরাফাত রহমান কোকো ক্রীড়া সংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম, সাবরাং ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হুদা, বিএনপি নেতা এজাহার মিয়া, সাবরাং ইউনিয়ন যুবদলের সদস্যসচিব সাব্বির আহমদ, সাবরাং ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও ইউপি সদস্য কবির আহমদ, সাবরাং ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি আবদুল গফুর এবং টেকনাফ সদর বিএনপির ৮ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি ফরিদ আলমসহ ১০ জন।
টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চারজনকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের শরীরে মারাত্মক আঘাত রয়েছে।
টেকনাফ উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাসান সিদ্দিকী বলেন, ‘হামলাকারীরা বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত। পৌরসভার শাপলা চত্বর এলাকায় আবদুল্লাহর নেতৃত্বে শতাধিক ব্যক্তি হামলা চালায়। গুরুতর আহত ছয়জনকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
টেকনাফ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমাদের মিছিল ছিল পূর্বনির্ধারিত। জমায়েতের স্থানে আবদুল্লাহর পক্ষ থেকে জমায়েতের ঘোষণা দেওয়া হয়। সংঘাত এড়াতে আমরা স্থান পরিবর্তন করলেও সাবরাং থেকে আসার মিছিলে হামলা চালানো হয়।’
মোহাম্মদ আবদুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে টেকনাফ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হিমেল রায় বলেন, ‘ঘটনার বিষয়ে আমরা জানি না। তবে উভয় পক্ষের বিক্ষোভ মিছিল ছিল। কেউ পুলিশকে এ বিষয়ে জানায়নি। এরপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ হজ হ ন চ ধ র ব এনপ র স স ঘর ষ
এছাড়াও পড়ুন:
এ ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়াল ও ব্যাশিং আমি ডিজার্ভ করি না: সারোয়ার তুষার
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার জানিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার ব্যক্তিগত কথোপকথন ফাঁস এবং তা ঘিরে সমালোচনার ঝড় উঠলেও তিনি কোনো অপরাধ করেননি। এ ঘটনাকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ ও ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার দুপুরে নিজের ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে সারোয়ার তুষার লিখেছেন, আমি ভুলত্রুটির ঊর্ধ্বে না। মানুষ হিসেবে আমার আরও ডেভেলপ করার স্কোপ আছে। যদি কোনো ভুল করি, অবশ্যই আপনারা আমাকে তা জানাবেন, আমি শুধরে নিতে প্রস্তুত আছি। কিন্তু আমি কোনো অপরাধ করি নাই৷ এ ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়াল ও ব্যাশিং আমি ডিজার্ভ করি না। কোনো মানুষই করেন না। এই স্মিয়ার ক্যাম্পেইন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমার দলের কেন্দ্রীয় একজন যুগ্ম আহ্বায়ক নারী সহকর্মীকে যেভাবে অপমান করা হচ্ছে, তার সাথে আমার ছবি জুড়ে দিয়ে, জঘন্য কুৎসিত কথাবার্তা লিখে, ভিডিও বানিয়ে আমার আর তার নামে প্রচার করা হচ্ছে। যারা এই কুৎসিত কাজগুলো করছেন, দয়া করে করবেন না। রাজনৈতিক বিরোধিতা রাজনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে রাখার আহ্বান জানাই। আমার দলের কেন্দ্রীয় ও মহানগর পর্যায়ের নারী সহকর্মীরা এর আগেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুৎসা ও হ্যারাজমেন্টের শিকার হয়েছেন। এখন আমার সঙ্গে তাদের জড়িয়ে এই নোংরামিগুলো করবেন না। তারা সম্মানিত ও সম্ভ্রান্ত নারী। রাজনীতির বাইরেও তাদের ব্যক্তিগত জীবন আছে৷ তাদের জীবন বিষিয়ে তুলবেন না। আমার চরিত্রহনন করতে গিয়ে তাদের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করবেন না৷ এটা আমার অনুরোধ৷ তারা কোনো দোষ করেননি। দুই ব্যক্তির ব্যক্তিগত কথোপকথন বিনা অনুমতিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেয়া জঘন্য কাজ। আমি ভুলের ঊর্ধ্বে না। কিন্তু আমার তিন মাস আগের ব্যক্তিগত কথোপকথন কাঁটছাঁট করে পরিপ্রেক্ষিহীনভাবে অনলাইনে ছেড়ে দিয়ে আমাকে অপদস্থ করার মধ্যে কোনো গৌরব নাই৷’
সারোয়ার তুষার বলেন, ‘এর আগেও আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ডিপার্টমেন্টের কালচারাল প্রোগ্রামের অভিনয়ের ছবিকে বিকৃত করে আমার বিরুদ্ধে স্মিয়ার ক্যাম্পেইন চালানো হয়েছে। আমি আমার জবান স্রেফ আমার রাজনৈতিক বিরোধীদের রাজনৈতিক সমালোচনায় খরচ করি। ব্যক্তিগত আক্রমণ, চরিত্রহনন ও কুৎসা রটনা করি না। একিলিস ও হেকটরের যুদ্ধে একিলিস হেকটরকে বধ করেন ঠিকই; কিন্তু একজন বীর যোদ্ধার প্রাপ্য সম্মানটুকু দিতে কুণ্ঠা করেন না।’
তিনি বলেন, ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চব্বিশের ৭ জানুয়ারির আগ পর্যন্ত আমি লাগাতারভাবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনে রাজপথে অংশ নিয়েছি। ৫ আগস্টের পর আমি বিএনপির ব্যাপারে বেশ সমালোচনামুখর হয়েছি আমার রাজনৈতিক অবস্থানের জায়গা থেকে৷ সমালোচনা ও ভিন্নমত বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রাণভোমরা।
তিনি আরও বলেন, পরিশেষে, সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়ালের অভিজ্ঞতা বীভৎস। কারণ সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়াল কিছু শুনতে চায় না; তার কাছে আগে থেকেই সিদ্ধান্ত থাকে। আমার শুভাকাঙ্ক্ষী, বন্ধু ও মিত্ররা আমার ওপর ভরসা করেন। আমার প্রতি তাদের প্রত্যাশাও অনেক। আমার কোনো সাময়িক বিচ্যুতির কারণে তারা বিব্রত হয়ে থাকলে তাদের প্রতি আমি দুঃখপ্রকাশ করছি। আমি জানি আমার জড়ানোর মাত্রা কতটুকু, আর কতটুকু আমি অর্গানাইজড ভার্চুয়াল মবের শিকার।
তুষার বলেন, ‘আমার নামে ভুয়া স্ক্রিনশট ও কনভার্সেশন ভাইরাল করা হয়েছে। স্ক্রিনশটের ওই কনভার্সেশনগুলো আমার না। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দল স্বপ্রণোদিত হয়ে আমার কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে, আমি লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দেব। ’
‘প্রসঙ্গত, আমি কাউকে কোনো ধরনের হুমকি-ধামকি দেই নাই। দেয়ার মতো পরিস্থিতিতেই আমি নাই। এ ব্যাপারে আমার নামে ফেসবুকে যা প্রচার করা হচ্ছে তা সর্বৈব মিথ্যা। আমি এমনকি আমার এই পোস্টেও সংশ্লিষ্ট অপরপক্ষের পরিচয় প্রকাশ করছি না। যা যা বলার আছে, তা আমি দলের কাছেই লিখিতভাবে বলব। সোশ্যাল মিডিয়ার সংশ্লিষ্টদের প্রতি আমার আহবান থাকবে, আমার দলের কেন্দ্রীয় কোনো নারী বা দলের বাইরের অন্য কোনো নারীকে ঘিরে কুৎসা রটনা করবেন না।’
তিনি বলেন, ভবিষ্যতে আমি আরও পরিশীলিত হওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখব। আমাকে যারা সমালোচনা ও বিরোধিতা করেন, তাদের প্রতিও আমার আহ্বান থাকবে আপনারা রাজনৈতিক বিরোধিতাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ ও চরিত্রহননে পর্যবসিত করবেন না। বাংলাদেশপন্থার জয় হোক।
এদিকে এনসিপির পক্ষ থেকে সারোয়ার তুষারের বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলনের অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়েছে। তাঁকে আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকেও বিরত থাকতে বলা হয়েছে।